আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা ও ওলামায়ে মক্কা মুকাররমা

আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা ও ওলামায়ে মক্কা মুকাররমা

আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা ও ওলামায়ে মক্কা মুকাররমা –

অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভী >

ইসলামের প্রাণকেন্দ্র উম্মুল কুরা মক্কা মুর্কারমা যেখানে রয়েছে বিশ্ববাসীর হেদায়তের উজ্জ্বলতম নিদর্শন বায়তুল্লাহ্ শরীফ, মসজিদুল হারাম, মিযাবে রহমত,  মকামে ইবরাহীম, সাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয়, জবালে আবু কুবাইস, যমযম কূপ, গারে হেরা, সওর পর্বতসহ আরো অসংখ্য স্থাপনা, স্মৃতি স্মারক যা ইসলামের ঐতিহ্য গৌরব মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। এ পবিত্র পূণ্যভূমি নূরানী শহরে শুভাগমন করেন সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ইমামুল আম্বিয়া, সৈয়্যদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। এখান থেকেই মিরাজের সূচনা হয়েছিল, এ শহরের পাথরগুলো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র প্রতি সালাম নিবেদন করতেন।
আ’লা হযরত’র হারামাঈন শরীফাঈন গমন
আ’লা হযরত ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি জীবনে দু’বার হজ্বব্রত পালন ও যিয়ারতে রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র উদ্দেশ্যে এ পবিত্র শহরে উপস্থিত হন। প্রথমবার ১২৯৫ হিজরি মুতাবিক ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দ তাঁর বুজুর্গ পিতা আল্লামা নকী আলী খান রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র সাথে। দ্বিতীয়বার ১৩২৩ হিজরি মুতাবিক ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে। চতুর্দশ শতাব্দীতে মক্কা মুকাররমার রাষ্ট্র ক্ষমতা, ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ও তখনকার সময়ে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের আক্বিদাগত চিন্তাধারা পর্যালোচনা করলে তাঁদের সাথে আ’লা হযরতের চিন্তাধারার ঐক্য ও আক্বিদাগত অভিন্নতা আমরা খুঁজে পাই।
উল্লেখ্য যে, পবিত্র মক্কা নগরীতে এমন কতিপয় বংশের আবাদ ছিল, বংশ পরম্পরা যাঁদের মধ্যে এমন অসংখ্য ওলামা মাশায়েখ ও খ্যাতিমান আলেমেদ্বীনদের আবির্ভাব হয়েছিল। যাঁদের ইলমী যোগ্যতা ও দ্বীনি খিদমতের ফয়েজ বরকতে গোটা মুসলিম বিশ্ব উপকৃত হয়েছিল।
চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে মক্কা মুর্কারমায় ধারাবাহিক তিনটি বংশের শাসন ক্ষমতা প্রচলিত ছিল- ১. ওসমানী, ২. হাশেমী, ৩. সৌদি। তৎকালীন সময়ে দ্বীনি খিদমত আহলে সুন্নাতের আদর্শের প্রচার-প্রসার, মাযহাব অনুসরণের অপরিহার্যতার প্রেক্ষাপটে যেসব বংশধারার অবদান ও ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য ও লক্ষ্যণীয় তা নিম্নরূপ- মিরদাদ, উজায়মী, খুকীর, শত্বা, যাওয়াভী, মালেকী, বিন হুমাইদ, মুফতি কুর্দী, জমলুল লায়ল, তকী, দিহলান, হাবশী, বা-বছীল, গমরী ও দিহান ইত্যাদি বংশের নাম উল্লেখ্যযোগ্য। [সূত্র: ইলামুল হিজাজ কৃত: মুহাম্মদ আলী মাগরিবী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৬] মক্কা মুর্কারমাসহ সমগ্র আরব ভূখন্ড ৯২৩ হিজরি-১৩৩৫ হি: মুতাবিক ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুদীর্ঘ চারশত বৎসর পর্যন্ত তুর্কী ওসমানী খিলাফতের অধীন ছিল। এ সময়ে মসজিদুল হারামে দ্বীনি শিক্ষার চর্চা গবেষণা উন্নতির চরম শিখরে উপনীত ছিল, ফলশ্রুতিতে অসংখ্য যোগ্যতা সম্পন্ন ওলামা তৈরি হয়েছিল, ইসলামের খিদমতে যাঁদের উল্লেখ্যযোগ্য অবদান ছিল।
সে সময়ে হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী চার মাযহাবের অনুসারী ১০২ জন বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম মসজিদুল হারামের শিক্ষা বিভাগ, ইমামত, খিতাবত ও প্রশাসনসহ সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্তে বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ প্রাপ্ত ছিলো। [সূত্র: আল হরকাতুল আদবীয়্যা, পৃষ্ঠা ১৪২] মসজিদুল হারামে দিবা-রাত্রি দ্বীনি শিক্ষার্থীদের ভীড় ছিল লক্ষণীয়। ক্বোরআন-হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, উসুল, আকাঈদ, বালাগাত মান্তিক, নাহু-ছরফ,তাসাউফ জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখা প্রশাখার শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্জন শেষে সমাপনী সনদ অর্জন করতো। সমাপনী সনদে মক্কার গভর্ণর হোসাইন বিন আলী হাশেমী ১২৯৬ হিজরী-১৩৫০ হিজরী মুতাবিক ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ, মক্কা চীফ জাস্টিস শায়খ আবদুল্লাহ্ সিরাজ হানফী চার মাযহাবের মুফতিগণের সীল মোহরাঙ্কিত স্বাক্ষর যুক্ত হতো। তিনিই শায়খ আবদুল্লাহ্ সিরাজ হানফী যিনি পরবর্তীতে জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। যিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের ইলমে গায়েবের উপর আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি কর্তৃক লিখিত ‘আদ্দৌলাতুল মক্কীয়া’ কিতাবে লিখিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন।   [সূত্র: জাহানে ইমাম আহমদ রেযা, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৪] মসজিদুল হারামে প্রতিটি বিভাগে নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য এ সনদ বা সার্টিফিকেট ছিল মূল ভিত্তি। যা ছিল হুকুমত কর্তৃক অনুমোদনকৃত। সে সময়ে চার মাযহাবের জন্য ইমাম, খতীব, পরিচালক, সহকারী পরিচালক, শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ইত্যাদি পদে নিযুক্তির জন্য মাযহাবপন্থী বিশুদ্ধ সুন্নী আক্বিদা সম্পন্ন আলেম হওয়াটা ছিলো অত্যাবশ্যক ও অন্যতম শর্ত। সে সময়ে মসজিদুল হারামে ৫০জন খতীব ও ১২০ জন ইমাম একই সময়ে নিয়োগ প্রাপ্ত ছিলেন মর্মে মহকামা আত্তকাফ’র রেকর্ড সূত্রে প্রমাণিত। [সূত্র: এলামুল হিযায, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৬-৩৭]
মসজিদুল হারামের সাথে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ সুন্নী ওলামায়ে কেরাম
* আল্লামা শায়খ সৈয়্যদ আহমদ যিনী দিহলান মক্কী, শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি” যিনি ছিলেন হেরমের ইমাম, মুদাররিস, শাফেয়ী মাযহাবের মুফতি, ১২৩২ হি:- ১৩০৪ হিজরী মুতাবিক ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দ – ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ তিনি অসংখ্য ওলামা মাশায়েখ’র ওস্তাদ। তিনি শায়খুল ইসলাম অভিধায় ভূষিত ছিলেন। আ’লা হযরত মাওলানা আহমদ রেযা খান বেরলভী তাঁর ছাত্রত্ব গ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ওহাবী মতবাদের খন্ডনে আল্লামা দিহলান মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি লিখিত একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব-  الدرر السنية فى الرد على الوهابية- যা ১২৯৯ হিজরীতে মিশরের কায়রো থেকে প্রকাশিত।
* আল্লামা শায়খ সৈয়্যদ হোসাইন বিন সালিহ জামলুল লায়ল মক্কী শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, হেরমের ইমাম, খতীব, ১৩০২ হিজরী, মুতাবিক ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ। আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র সাথে পূর্ব পরিচিতি বিহীন কা’বা শরীফে মাগরিব নামায আদায় শেষে আ’লা হযরতের হাত ধরে অপলক দৃষ্টিতে আ’লা হযরতের নূরানী চেহারার দিকে তাকিয়ে আকস্মিক বলে উঠলেন- انى لا جد نور الله من هذا الجبين- অর্থ: আমি এ কপালে আল্লাহর নূর দেখতে পাচ্ছি।
[সূত্র: ড. মুহাম্মদ মসউদ আহমদ ‘‘ইমাম আহমদ রেযা আওর আলমে ইসলাম’’  পৃষ্ঠা ১২, প্রকাশ এদারায়ে মসউদিয়া করাচি, ১৪২০ হিজর, ২০০০খ্রিস্টাব্দ] তিনি সাদরে আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হিকে নিজ ঘরে নিয়ে গেলেন, আ’লা হযরতকে সিহাহ সিত্তার সনদ দিলেন, সাথে  সাথে নিজ দস্তখতসহ সিলসিলায়ে আলীয়া কাদেরিয়ার এযাযত ও খিলাফত দানে ধন্য করেন। পরবর্তীতে আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হজ্ব ও যিযারত সম্পর্কিত আল্লামা হোসাইন বিন সালেহ মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি লিখিত একটি কিতাবের ব্যাখ্যা লিখেন। [জাহানে ইমাম আহমদ রেযা, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৫] * শায়খ আবদুর রহমান সিরাজ হানফী মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হেরমের ইমাম, খতীব, মুফতিয়ে আহনাফ, মুদাররিস, ১২৪৯ হিজরী – ১৩১৪ হিজরী মুতাবিক ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ – ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ ইসলামী আক্বিদা বিষয়ক ৪  খন্ডে বিন্যস্ত তাঁর ফতওয়া সমগ্র- ضوء السراج على جواب المحتاج-
নামক অনন্য কিতাবটি ইসলামের এক অমূল্য সম্পদ। ইমাম আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এ মহামনীষীর গর্বিত ছাত্র হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। [সূত্র: এলামুল হিজাজ: খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৩৯, মারেফে রেযা করাচি: ১৯৯৮ খ্রি. পৃষ্ঠা ১৬৫- ১৮১] * আল্লামা শায়খ সৈয়্যদ আবু বকর বিন সালিম আলবার মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি মুদাররিস ফকীহ, ১৩০১- হিজরী মুতাবিক ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ – ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দ। তিনি একজন প্রখ্যাত সূফী সাধক, পীরে তরিকত আ’লা হযরত ফাযেলে বেরলভীর অন্যতম খলিফা। [সূত্র: মারেফে রেযা: ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ২০০-২০২] * আল্লামা শায়খ আবুল খায়র মিরদাদ মক্কী হানফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ইমাম, খতীব, মুদাররিস ১২৫৯ হিজরী – ১৩৩৫ হিজরী মুতাবিক ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দ – ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ। যিনি আ’লা হযরত প্রণীত আদ্দৌলাতুল মক্কীয়া ও হুস্সামুল হারামাঈন কিতাবে লিখিত অভিমত ব্যক্ত করেন। তাঁরই আগ্রহ ও পরামর্শে আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘‘আদ্দৌলাতুল মক্কীয়া’’ কিতাবে আলোচনা দীর্ঘ করেছেন।  [সূত্র: জাহানে ইমাম আহমদ রেযা: খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৫] * শায়খ আহমদ খাদ্বরাভী মনসূরী, মক্কী, শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি মুদাররিস ১২৫২ হিজরী – ১৩২৭ হিজরী মুতাবিক ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দ – ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ। তিনি ছিলেন আ’লা হযরতের খলিফা, তিনি মদীনা মুনাওয়ারার ফযীলত ও যিয়ারতে রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের উপর এক নির্ভরযোগ্য প্রামাণ্য কিতাব রচনা করেন। যার নাম- نفخات الرضى والقبول فى فضائل المدينة وزيارة الرسول-
* শায়খ জামাল মক্কী মালেকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি মুদাররিস, ১২৮৫ হিজরী – ১৩৪৯ হিজরী মুতাবিক ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দ – ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ। যিনি আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র খলিফা। ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি প্রণীত আদ্দৌলাতুল মক্কীয়া ও হুসসামুল হারামাঈন কিতাবে অভিমত ব্যক্ত করেন।
* আল্লামা  শায়খ সৈয়্যদ ইসমাঈল বিন খলিল রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হেরমের লাইব্রেরীর পরিচালক ছিলেন। আদ্দৌলাতুল মক্কীয়া ও হুসসামুল হারামাঈন কিতাবে লিখিত অভিমত প্রদান করেন। আ’লা হযরতের খলিফা ছিলেন। তাঁর ভাই আল্লামা সৈয়্যদ মুস্তফা বিন খলিল রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তিনিও ফাযেলে রেবলভীর খলিফা ছিলেন। যাঁর বুজুর্গ পিতা আ’লা হযরতের বন্ধু ছিলেন।
* আল্লামা সৈয়্যদ ইসমাঈল রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ১৩২৮ হিজরিতে ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র সাথে সাক্ষাতের জন্য মক্কা মুকাররমা থেকে বেরেলী শরীফে এসেছিলেন। [সূত্র: আল মালফুজ: কৃত মাওলানা মুস্তফা রেযা খান রেবলভী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৯] * আল্লামা শায়খ সৈয়্যদ আলভী বিন আব্বাস মক্কী মালেকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হেরমের মুদাররিস ছিলেন, ১৩২৮ হিজরী – ১৩৯১ হিজরী মুতাবিক ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ – ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ। তিনি ‘‘মজমুয়া ফাতওয়া ওয়া রাসায়েল’’  কিতাবে নামাযের পর দু’আ, মৃত ব্যক্তির তালকীন, প্রিয় নবীজির আম্মাজান হযরত মা আমেনা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা’র কবর শরীফ, মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম  ইত্যাদি প্রসঙ্গে প্রামাণ্য দলীল উপস্থাপন করেছেন। ২৬৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত এ কিতাব ১৪১৩ হিজরিতে দশ হাজার কপি মুদ্রিত হয়। তিনি মুফতিয়ে আজম হিন্দ মাওলানা মুস্তফা রেযা খান রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (১৩১০ হিজরী – ১৪০৪ হিজরী মুতাবিক ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দ – ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ)’র খলিফা ছিলেন। খলিফায়ে আ’লা হযরত কুতুবে মদীনা মাওলানা জিয়াউদ্দীন কাদেরী মুহাজিরে মদনী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি  (১২৯৪ হিজরী – ১৪০১ হিজরী মুতাবিক ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দ -১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ)’র একনিষ্ঠ মুরীদ ছিলেন। আল্লামা সৈয়্যদ আলভী মালেকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র জীবন কর্মের উপর তদীয় পুত্র ড. সৈয়্যদ মুহাম্মদ আলভী মালেকী- العقود اللؤلوية بالاسانيد العلوية-
রচনা করেন।  [সূত্র: জাহানে ইমাম আহমদ রেযা কৃত: মাওলানা মুহাম্মদ হানিফ খান রিজভী বেরলভী, খন্ড ৩, প্রকাশ ২০১৮] ড. আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ বিন আলভী রুসা’হফা আলায়হি’র পরিবার মক্কা মুকাররমার মহল্লা রূসাইফা শা’রে মালেকী’তে অবস্থিত এক ঐতিহ্যবাহী সুন্নী পরিবার। যে পরিবার পূর্ব সূরীদের ঐতিহ্য সুরক্ষায় শত প্রতিকুলতার মধ্যদিয়ে ইলমী জগতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদার প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
২০০৩ সনে এ অধমের হারামাঈন শরীফাইনে প্রথমবার হজ্ব ও যিয়ারতকালে এ মহান দরবারে উপস্থিতির সৌভাগ্য নসীব হয়েছিল। দরবারের মহান শায়খ  ও আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ বিন আলভী মালেকীর দরসে হাদীসের মজলিসে বসার ও দু’আ ফয়েজ বরকত লাভে ধন্য হয়েছি। ২০০৪ সনে আরব বিশ্বের এ মহান দ্বীনি সুন্নী ব্যক্তিত্ব ইহধাম ত্যাগ করেন। বর্তমানে তাঁর বাসভবন সংলগ্ন আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বিশাল খানকা শরীফ ও দ্বীনি শিক্ষার্থীদের দরসে তাদরীসের মাধ্যমে দরসে নিযামীর আদলে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ইসলামী জ্ঞান বিতরণের ধারা অব্যাহত রয়েছে। তাঁর বুজুর্গ পিতা হেরমের মহান ইমাম সৈয়্যদ আলভী মালেকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ১৩৯১ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
ড. মালেকী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদার আলোকে বিশদ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও তথ্য সমৃদ্ধ ‘‘الزخائرالمحمديه’’ ‘‘আয্ যাহায়েরুল মোহাম্মদ্দীয়া’’ নামে একটি কিতাব রচনা করেন। যে গ্রন্থটি মিসর থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
এ কিতাব নজদী ওহাবী ওলামাদের সম্মুখে প্রকাশিত হওয়া মাত্রই তিনি সুন্নী বিরোধী নজদী ওহাবীদের চতুর্মূখী চক্রান্ত ষড়যন্ত্র ও প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। নজদীদের রোষাণলের শিকার হন। শরয়ী আদালতে তাঁকে তলব করা হয়, তাঁর আক্বিদাগত দাবী প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। মসজিদুল হারামের দরসের দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহিত দেয়া হয়। শুধু তা নয়, তাঁর কিতাবের বিরোধীতায় حوار مع المالكى নামে কিতাব রচনা করেন।
যা সৌদি আরবের রিয়াদ ‘‘দারুল ইফতা’’ হতে সরকারী অর্থায়নে বহুবার সংস্করণ মুদ্রিত হয় এবং বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। ২০৫ পৃষ্ঠা সম্বলিত এ গ্রন্থ ১৪০৫ হিজরীতে প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ আলভী মালেকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি শত বাধা বিপত্তি প্রতিরোধ সত্ত্বেও থেমে যাননি। আদর্শ থেকে বিচ্যূত হননি, তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল ভিত্তিহীন অভিযোগের দাত ভাঙ্গা খন্ডনে উপরন্তু আকায়েদে আহলে সুন্নতের সত্যতা প্রমাণে পুনরায় তাঁর ক্ষুরধার কলম গর্জে উঠলো – مفاهيم يجب ان تصح নামে আরো একটি কিতাব প্রণয়ন করেন। মুসলিম দুনিয়ার খ্যাতিমান ওলামাদের অভিমত সংগ্রহ করলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে এ মূল্যবান গ্রন্থটি অসংখ্য সংস্করণ প্রকাশিত হলো। এ ছাড়াও ১৯৯৪ সন পর্যন্ত আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ আলভী মালেকীর রচনাবলীর সংখ্যা ৩৭ অতিক্রম করেছে। পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র সমূহে ত্রিশটির অধিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা তাঁর তত্ত্বাবধান ও পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত। [সূত্র: জাহানে ইমাম আহমদ রেযা: খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৫০] হিজাজে মুক্কাদ্দাস, ইয়ামেন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রে তাঁর তাবলীগে দ্বীনের কাজ সম্প্রসারিত। তাঁর মুরীদ রূহানী সন্তানরা ও ছাত্ররা আহলে সুন্নাতের আদর্শ প্রচারে খিদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে।  এভাবে মক্কা মুকাররমার আরো অসংখ্য মজলুম সুন্নী মনীষা ওলামা মাশায়েখগণ নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সুন্নীয়তের চর্চা ও দ্বীনি খিদমতের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। মক্কা মুকাররমার ওলামা মাশায়েখ এর সাথে ফাযেলে বেরলভীর যে যোগসূত্র তাঁর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত হলো। আল্লাহ্ তা’লা ইমাম আ’লা হযরতের ফয়ূজাত আমাদের নসীব করুন। আ-মী-ন।