উচ্চস্বরে দুরূদ শরীফ পাঠ করা

উচ্চস্বরে দুরূদ শরীফ পাঠ করা

।। পাঁচ।।
উচ্চস্বরে দুরূদ শরীফ পাঠ করা
দুরূদ শরীফ-এর মর্মার্থ হচ্ছে- আল্লাহ্ কর্তৃক নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শান ও মর্যাদা বৃদ্ধিকরণ। আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, আল্লাহ্ ও ফেরেশতাগণ আল্লাহর হাবীবের উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করেন। আল্লাহ্ কর্তৃক দুরূদ পড়ার অর্থ আল্লাহর নবীর মর্যাদা মুহূর্তে মুহূর্তে বৃদ্ধিকরণ। আর ফেরেশতা কর্তৃক পাঠ করার অর্থ হলো- আল্লাহর নিকট আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা বৃদ্ধিকরণের জন্য আল্লাহ্র দরবারে সালাত ও সালাম সম্বলিত বাক্য দিয়ে ফরিয়াদ করা। ঈমানদারের উপর নির্দেশ হল সালাত ও সালামের বাক্য দিয়ে আল্লাহর দরবারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শান মান বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা। এটাকে দুরূদ পাঠ বলা হয়। মূলত দুরূদ শরীফ আল্লাহ্, ফেরেশতাগণ ও বান্দাদের কাজ; যেখানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শান, মান, মর্যাদা বৃদ্ধি করার মর্ম রয়েছে।
এ দুরূদ শরীফ যেমনিভাবে চুপে চুপে পাঠ করা জায়েয, তেমনি উচ্চস্বরেও জায়েয। যেমন ক্বোরআন মাজীদে এরশাদ হয়েছে- فَاذْكُرُوْا اللهَ كَذَكْرِكُمْ ابَآئَكُمْ اَوْ اَشَدَّ ذِكْرًا অর্থাৎ তোমরা এভাবে আল্লাহর যিক্র করো, যেভাবে তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাকে স্মরণ করো; বরং এর চেয়ে আরও বেশি। এটা থেকে বুঝা গেলো, আল্লাহর যিক্র চুপে চুপে হোক কিংবা উচ্চস্বরে হোক, উভয় অবস্থায় জায়েয ও বৈধ।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নামায থেকে সালাম ফেরানোর পর উচ্চস্বরে-لآَ اِلهَ اللهُ وَحْدَه لاَ شَرِيْكَ لَه (লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহূ লা- শরীকা লাহু) পর্যন্ত পড়তেন।
হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন-
كُنْتُ اَعْرِفُ اِنْقِضَاءَ صَلواةِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالتَّكْبِيْرِ
অর্থাৎ তাকবীরের আওয়াজ উচ্চস্বরে শুনে আমি বুঝতে পারতাম রসূলুল্লাহর নামায শেষ হওয়ার কথা। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস তখন সাবালক ছিলেন না বিধায় মাঝে মধ্যে জামা‘আতে হাযির হতেন না।
আরো বর্ণিত আছে হাদীসে ক্বদসীতে, আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-
فَاِنْ ذَكَرَنِىْ فِىْ نَفْسِه ذَكَرُتُه فِىْ نَفْسِىْ ـ وَاِنْ ذَكَرَنِىْ فِىْ مَلَأَ ذَكَرُتُه فِىْ مَلْأَ خَيْرٍ مِّنْهُمْ
অর্থাৎ বান্দা যদি আমাকে জামা‘আত বা মজলিসে স্মরণ করে, তবে আমিও তাকে তদপেক্ষা উত্তম মজলিসে স্মরণ করি।
তাই দুরূদ শরীফ অন্যতম যিক্র। শুধু তা নয়, তা আল্লাহর যিক্রও। এ জন্য প্রত্যেক দো‘আ ক্ববূলের ব্যাপারে দুরূদ শরীফ অন্যতম ওসীলা; বরং এটা ছাড়া দো‘আ ক্ববুলও হবে না বলে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে। আরো উল্লেখ আছে হাদীসে ক্বুদ্সীতে جَعَلْتُكَ ذِكْرَا مِنِّىْ فَمَنْ ذَكَرَكَ ذَكَرَنِىْ অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘ওহে! আমার হাবীব, আপনাকে আমার পক্ষ থেকে যিক্র সাব্যস্ত করলাম। অতএব, আপনাকে যে যিক্র করলো, সে আমার যিক্র করলো।
ফতওয়া-ই শামীতে উল্লেখ আছে-
فَقَالَ بَعْضُ اَهْلِ الْعِلْمِ اِنَّ الْجَهْرَ اَفْضَلُ لِاَنَّه اَكْثَرُ عَمَلاً وَلِتَعَدِّىْ فَائِدَتِه اِلَى السَّامِعِيْنَ وَيُؤْقِظُ قَلْبَ الْغَافِلِيْنَ فَيَجْمَعُ هَمَّه اِلَى الذِّكْرِ وَيَصْرِفُ سَمْعَه اِلَيْهِ وَيَطْرُدُ النَّوْمَ وَيَزِيْدُ النَّشَاطَ
অর্থাৎ কোন কোন ফক্বীহ্ উচ্চস্বরে যিক্র ও দুরূদ শরীফ পড়াকে উত্তম বলেছেন। এর মধ্যে কর্ম বেশি। শ্রবণকারীর নিকট এর ফায়দা পৌঁছে, অলস ব্যক্তিদেরকে জাগ্রত করে দেয় এবং তাদের ধ্যান-ধারণাকে আল্লাহ্ ও রসূলের পথে নিয়ে আসে এবং নিদ্রা দূরীভূত করে আনন্দ সৃষ্টি করে দেয়।
তাই উচ্চস্বরে দুরূদ শরীফ পাঠ করা উত্তম কাজ। এর মধ্যে অন্যান্য শ্রোতারা এটা শ্রবণে উপকৃত হবে। পাশাপাশি অন্যান্য সৃষ্টি এ দুরূদ শরীফে যোগ দেবে এবং ও ক্বিয়ামতের দিন সাক্ষী হবে। সুতরাং এটা ইসলামের মধ্যে অন্যতম নিদর্শন।
তাই, দুরূদ শরীফ আল্লাহর যিক্র। আল্লামা ইসমাঈল হক্বক্বি তাফসীর-ই রুহুল বয়ানে উল্লেখ করেছেন:
رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هذَا اَلذِكْرُ بِرَفْعِ الصَّوْتِ جَآئِزٌ بَلْ مُسْتَحَبٌّ اِذَا لَمْ يَكُنْ عَنْ رِّيَاءٍ لِيَغْتَنِمَ النَّاسُ بِاِظْهَارِ الدِّيْنِ وَوُصُوْلِ بَرْكَةِ الذِّكْرِ اِلى السَّامِعَيْنَ فِى الدُّوْرِ وَالْبُيُوْتِ وَيُوَافِقُ الذِّكْرَ مَنْ سَمِعَ صَوْتَه وَىَشْهَدَلَه يَوْمَ الْقِيَامَةِ كُلَّ رَطَبٍ وَّيَابِسٍ سَمَعِ صَوْتَه
অর্থাৎ উচ্চস্বরে যিক্র করা শুধু জায়েয নয়; বরং মুস্তাহাব; কিন্তু রিয়া মুক্ত হতে হবে। আর এ উচ্চস্বরে যিক্র দ্বারা ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য প্রকাশ করাই উদ্দেশ্য হয়। এ যিক্রের বরকতে ঘরে অবস্থানকারীদের মধ্যে যেন পৌঁছে এবং যিক্রের মধ্যে যেন মশগুল হয়ে যায়। ক্বিয়ামতের দিন এ যিক্রের সাক্ষী প্রত্যেক কিছুই হবে, যাদের কানে এ যিক্রের আওয়ায পৌঁছেছে।
ফাতাওয়া-ই আলমগীরীতে আছে- قَاضٍ عِنْدَه جَمَعٌ عَظِيْمٌ يَرْفَعُوْنَ اَصْوَاتَهُمْ بِالتَّسْبِيْحِ وَالْتَّهْلِيْلِ جُمْلَةً لاَ بَأْسَ بِه অর্থাৎ কোন বিচারকের নিকট লোক সমাগম হয়ে উঁচু আওয়াজে যিক্র-আযকার করছে। তা শরীয়তের মতে অসুবিধা নেই। আরো উল্লেখ আছে- اَلْاَفْضَلُ فِىْ قِرَأَةَ الْقُرْانِ خَارِجَ الصَّلٰوةِ الْجَهْرُ
অর্থাৎ নামাযের বাইরে বড় আওয়াজে ক্বোরআন শরীফ পাঠ করা উত্তম।

টিকা: ১. মিশকাত, বাবুয্ যিক্রি বা’দাস সালাত, ২. মিশকাত শরীফ, ৩. মিশকাত শরীফ, ৪. শিফা, কৃত. ক্বাযী আয়ায, ৫. ফাতওয়া-ই শামী, ১ম খন্ড, মাতলবুন্ ফী আহ্কামিল মসজিদ, ৬. তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৪র্থ পারা এবং ৭. আলমগিরী, কিতাবুল কারাহিয়্যাহ।
—০—

দুরূদ শরীফ পাঠের ফজিলত- (তরজুমান থেকে)
মুসলমানদের জন্য রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা সকল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা স্বয়ং তা পাঠ করেন এবং নূরানী ফেরেশতাগণও। অতঃপর সকল ঈমানদারকেও পাঠের আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু অন্যান্য ইবাদত বন্দেগী এরূপ নয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা সকল ইবাদত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন বটে নিজে আদায় করেন না। যেমন নামায, রোজা, হজ্জ্ব ও যাকাত ইত্যাদির আদেশ আল্লাহ্ তা‘আলা দিয়েছেন; কিন্তু নিজে আদায় করেন না। কিন্তু দুরূদ-এর ব্যতিক্রম। যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন- اِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِىِّ ط يَايُّهَا الَّذِّيْنَ اَمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًَ-
তরজমা: নিশ্চয় আল্লাহ্ ও তাঁর ফিরিশতাগণ দুরূদ প্রেরণ করেন ওই অদৃশ্য বক্তা (নবী)’র প্রতি, হে ঈমানদারগণ তোমরাও তাঁর প্রতি দুরূদ ও খুব সালাম প্রেরণ করো। [সূরা আল্ আহযাব, আয়াত-৫৬ : কানযুল ঈমান] তাফসীরে নূরুল ইরফানে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হাক্বীমুল উম্মত আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন,

এক. দুরূদ শরীফ সমস্ত বিধানের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম কাজ। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা কোন বিধানে নিজের ও নিজের ফিরিশতাদের কথা উল্লেখ করেননি- আমিও এ কাজ করছি, তোমরাও করো। একমাত্র দুরূদ শরীফ ব্যতীত।
দুই. সমস্ত ফেরেশতা কোন নির্দিষ্টকরণ ছাড়াই, সর্বদা হুযূরে পাকের উপর দুরূদ শরীফ প্রেরণ করেন।

তিন. হুযূরে পাকের উপর আল্লাহ্র রহমত অবতরণ আমাদের দো‘আ-প্রার্থনার উপর নির্ভরশীল নয়। যখন কিছুই সৃষ্টি হয়নি তখনো মহান রব হুযূরে পাকের উপর রহমতের বারিধারা বর্ষণ করতে থাকেন। আমাদের দুরূদ শরীফ পাঠ করা মহান রবের দরবারে আমাদের ভিক্ষা প্রার্থনার জন্যই। যেমন ফক্বীরগণ দাতার জান-মালের মঙ্গল কামনা করে ভিক্ষা চায়। আমরা বিশ্বনবী হুযূরে পাকের মঙ্গল প্রার্থনা করে ভিক্ষা চাই।
দুরূদ শরীফ গোটা জীবনে একবার পাঠ করা ফরয। যিকরের এমন প্রতিটি মজলিস যেখানে বারংবার হুযূরে পাকের নাম আসে, একবার পাঠ করা ওয়াজিব। নামাযের অভ্যন্তরে ‘আত্তাহিয়্যাতু’-এর পর পাঠ করা ‘সুন্নাত’। আর সর্বদা পাঠ করা মুস্তাহাব।
আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর প্রিয় হাবীবের প্রশংসা ও গুণগান মর্যাদাময় স্থানে করেছেন এবং তাঁর উপর রহমত প্রেরণ করেছেন। ফেরেশতাগণও রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মহত্ব বর্ণনা করেছেন। অতএব, মুসলমানদের ও এরূপ মর্যাদা সহকারে দুরূদ সালাম প্রেরণ করা জরুরি। পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু মহান আল্লাহ্ তা‘আলার গুণগান করে, কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা স্বয়ং তাঁর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করেন। এজন্য দুরূদ শরীফ পাঠ করা একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত।
দুরূদ পাঠের অসংখ্য ফযিলত রয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় ফযিলত হল দুরূদ পাঠকারীর উপর আল্লাহর রহমত নাযিল হয়। কেননা, আল্লাহর এক বিন্দু রহমত সমগ্র পৃথিবীর চেয়েও বড় এবং প্রশস্ত।
قال البخارى قال ابوالعالية صلوة الله ثناؤه عليه عند الملائكة وصلوة الملائكة الدعاء-
অর্থাৎ- ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, হযরত আবুল আলীয়া রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলার সালাতের অর্থ হল রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রশংসা করা ফেরেশতাদের সামনে আর ফেরেশতাদের সালাত অর্থ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের জন্য দো’আ করা ও সম্মান করা। [তাফসীরে ইবনে কাসির] وَفِى الْحَدِيْثِ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ فَدَخَلَ النَارَ فَاَبْعَدَهُ اللهُ- (فى تفسير الكشاف)
অর্থাৎ- হাদীস শরীফে আছে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নাম মোবারক যে ব্যক্তির নিকট উল্লেখ করা হবে, কিন্তু সে আমার (নবীয়ে পাক)’র উপর দুরূদ পাঠ করবে না সে ব্যক্তি (মৃত্যুর পর) দোযখে প্রবেশ করবে এবং তাকে আল্লাহ্ তা‘আলা রহমত হতে দূরে সরায়ে দেবেন। [তাফসীরে কাশ্শাফ] নাসায়ী শরীফে, প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عليهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ وَاحِدَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشَرَ صلواتٍ وحُطَّتْ عَنْهُ عَشَرَ خطيَّاتٍ وَرُفِعَتْ لَهُ عَشَرُ دَرَجَاتٍ-
অর্থ: প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করবেন এবং তার থেকে দশটি গুনাহ্ ও পাপ ক্ষমা করবেন আর দশটি মর্যাদা বুলন্দ করবেন।
তিরমিযী শরীফে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عليهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اَوْلَى النَّاسِ يَومَ الْقِيَامَةِ اَكْثَرُهُمْ عَلَىَّ صَلوةً-
অর্থ: প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ক্বিয়ামতের দিনে আমার সর্বাপেক্ষা নিকটতম ওই ব্যক্তিই হবে, যে আমার উপর অধিক দুরূদ পাঠ করে।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি- مَن صَلّى عَلَىَّ كُنْتُ شَفِيْعَه يَوْمَ الْقِيَامَةِ- অর্থ: যে ব্যক্তি আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, আমি ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশকারী হবো।  [আল্ ক্বওলুল বদী’] হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত- اِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوْفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْاَرْضِ لَا يَصْعَدُ مِنْهُ شَئٍ حَتّى تُصَلِّى عَلى نَبِيِّكَ- অর্থ: নিঃসন্দেহে প্রত্যেক দো’আ আসমান ও যমীনের মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে, তা থেকে কিছুই উপরে আরোহন করে না, যতক্ষণ না তুমি তোমার নবীর উপর দুরূদ শরীফ পড়বে।

হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَاَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّى الله عليه وسلم اَلْبَخِيْلُ الَّذِىْ من ذكرت عِندَه فَلَمْ يُصَلِّ عَلَىَّ- (رواه الترمذى)
অর্থ: হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঐ ব্যক্তি বড় কৃপণ, যার সম্মুখে আমার নাম মুবারক উচ্চারিত হয় অথচ সে আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করে না। [তিরমীযি শরীফ] হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ نَسِىَ الصَّلواتِ عَلَىَّ نَسِىَ طَرِيْقَ الْجَنَّةِ-
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আমার উপর দুরূদ পাঠ করতে ভুলে গেলো সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে গেলো। [আল্ ক্বওলুল বদী’] আল্লামা আবদুর রহমান সফুরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, কতেক ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিনে বেহশতে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হবে, কিন্তু তারা বেহেশতের পথ ভুলে যাবে। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরয করা হলো- হে আল্লাহ্র রসূল! তারা কারা? قَالَ سَمِعُوا بِاِسْمِىْ وَلَمْ يُصَلُّوْا عَلَىَّ- অর্থাৎ- হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যারা আমার নাম শুনেছে, কিন্তু আমার উপর দুরূদ পাঠ করেনি। [নুজহাতুল মাজালিস] হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- مَنْ صَلّى عَلَىَّ فِىْ يَوْمٍ اَلْفَ مَرَّةٍ لم يَمُت حَتّى يَرى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ-
অর্থ: যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন আমার উপর এক হাজার বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, ওই মুহূর্ত পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না, যতক্ষণ না সে বেহেশতে তার ঠিকানা দেখতে পায়। [আল ক্বওলুল বদী’]

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ صَلّى عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمْعَةِ ثَمَانِيْنَ مَرَّةً غُفِرَتْ ذُنُوْبُه ثَمَانِيْنَ سَنَةً-
অর্থ: যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে ৮০ বার আমর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তার ৮০ বছরের গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে। [দালাইলুল খায়রাত] দালাইলুল খায়রাত শরীফে হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার নিকট ফেরেশতাকুল সর্দার হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম তাশরীফ এনে বলেন, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার উম্মতের মধ্য হতে যে ব্যক্তি আপনার প্রতি দুরূদ শরীফ প্রেরণ করবে তার প্রতি সত্তর হাজার ফেরেশতা দুরূদ পাঠ করবেন তথা রহমত বর্ষণ করবেন। আর যার প্রতি ফেরেশতাগণ দুরূদ পাঠ করবে, সে অবশ্যই জান্নাতী।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
اِنَّ الله تَعَالى لَيَنْظُرُ اِلَى مَنْ يُصَلِىْ عَلَىَّ مَنْ نَظَرَ اللهُ تَعَالى اِلَيْهِ لَايُعَذِّبُهُ اَبَدًا-
অর্থ: নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘আলা ওই ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দেন, যে আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করে। আর যে ব্যক্তির প্রতি আল্লাহর কুদরতের দৃষ্টি দান করেন, তাঁকে কখনো আযাব প্রদান করবেন না।
রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর অধিক হারে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তার মৃত্যুর সময়ে আল্লাহ্ তা‘আলা সকল সৃষ্টিকে আহ্বান করে বলবেন, হে আমার সৃষ্টি কুল! এ বান্দার মাগফেরাতের জন্য তোমরা দো’আ করো। [নূজহাতুল মাজালিস]

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, কোন এক সাহাবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ সব ব্যক্তির দুরূদ শরীফ সম্বন্ধে বলুন, যারা আপনার কাছ থেকে অনুপস্থিত বা দূরে অবস্থান করে। আপনার পবিত্র জীবদ্দশায় আপনার প্রতি দুরূদ প্রেরণ করবে এবং ভবিষ্যতে ওফাতের পর দুরূদ প্রেরণ করবে। আপনার নিকট এ দু’দলের কী অবস্থা হবে? তদুত্তরে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
اَسْمَعُ صَلواةَ اَهْلِ مُحَبَّتِىْ وَاَعْرِفُهُمْ وَتُعْرَضُ صَلواة غَيْرهِمْ عَرْضًا-
অর্থাৎ- আমার প্রতি ভালবাসা সম্পন্নদের দুরূদ শরীফ কোন প্রকার মাধ্যম ছাড়াই আমি স্বয়ং শ্রবণ করি এবং তাদেরকে আমি চিনি। এ ছাড়া অন্যান্যদের দুরূদ ফেরেশতাদের মাধ্যমে আমার নিকট পেশ করা হয়। [দালাইলুল খায়রাত] হযরত আনাস বিন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-زَيِّنُوْا مجالِسَكُمْ بِالصَّلواةِ فَاِنَّ صَلوتكُمْ عَلَىَّ نُوْرٌ لَّكُمْ يَوْمَ الْقِيْامَةِ-
অর্থ: হে লোক সকল (মুসলিম মিল্লাত)! তোমরা দুরূদ শরীফের মাধ্যমে মাহফিলের সৌন্দর্য ও শোভা বৃদ্ধি করো। কেননা, ক্বিয়ামত দিবসে আমার প্রতি প্রেরিত তোমাদের দুরূদ শরীফ তোমাদের জন্য আলো ও জ্যোতি স্বরূপ হবে। [রওদুর রিয়াহীন] ‘মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়্যাহ্’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে-
وَ فِى مَواهِبِ اللَّدُنِّية: عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ الله عَنْهُ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَرَفَعَ رَاسَه اِلَى السَّمَاءِ فَقَالَ وَعَلَىْكُمُ السَّلامُ وَرَحْمَةُ اللهِ فَقَالَ النَّاسُ يَارَسُوْلُ اللهِ مَا هذَا قَالَ جَعْفُرُبْنُ اَبِىْ طَالِبٍ فِىْ مَلَاءِ مِنَ الْمَلَائِكَةِ فَسَلَّمَ عَلَىَّ-
অর্থ: প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। হঠাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বীয় শির মুবারক আকাশের দিকে উত্তোলন করে বলেন, ওয়াআলাইকুমুস্ সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তখন উপস্থিত সাহাবীগণ আরয করলেন, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এ সালামের উত্তর আপনি কাকে দিলেন?’’ তিনি বলেন, ‘‘জাফর বিন আবি তালেব ফেরেশতাদের একটি দল নিয়ে ওপর দিয়ে অতিক্রম করে গেলেন। তিনি আমাকে সালাম দিলেন। আমি সালামের জবাব দিলাম।
এতে একথা প্রতীয়মান হলো যে, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র নূরানী কর্ণ দূর ও নিকটবর্তী সবই শ্রবণ করতেন। অতঃপর বলেন, এ নূরানী কর্ণের অলৌকিকত্ব হলো যে, ভিন্ন জগতের আওয়াজ সমূহও অনায়াসে শ্রবণ করে নিতেন। আর কোথায় অন্যান্য কান, যা অল্প দূরের ধ্বনিও (টেলিফোন ছাড়া) শ্রবণ করা সম্ভব নয়।
আ’লা হযরত ফাযেলে বেরলভী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যথার্থই বলেছেন-
دور ونزديك كے سننے والے وه كان – كان لعل كرامت په لاكهوں سلام
ربّ اعلى كى نعمت په اعلى دورد- حق تعالى كى منت په لاكهوں سلام
هم غريبوں كے آقا په بے حد دورد- هم فقيرو كى تُروت په لاكهوں سلام

অর্থাৎ- দূরবর্তী ও নিকটবর্তীর শ্রবণকারী হচ্ছে ঐ কর্ণ, সুতরাং ঐ অলৌকিকত্বপূর্ণ কর্ণের ওপর লাখো সালাম।
সুমহান প্রতিপালকের নি’মাতের উপর সর্বোচ্চ দুরূদ, আল্লাহ্ তা’আলার ইহসানের ওপর লাখো সালাম।
আমরা গরীবদের মুনিবের উপর অসংখ্য দুরূদ। আমরা অভাবীদের ধনের উপর লাখো সালাম।
‘মতালিউল মুমিররাত’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ঐ সকল ব্যক্তির দুরূদ শরীফ আমি নিজে (আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) শ্রবণ করি। যারা মুহাব্বতের সঙ্গে উৎসাহ্-উদ্দীপনা এবং ভক্তি ও শ্রদ্ধাভরে আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করে।
হাদীস বিশারদগণ বলেন যে, আমার সান্নিধ্য অর্জনকারী নৈকট্য প্রাপ্তদের দুরূদ শরীফ আমি (মুহাম্মদ দ.) স্বয়ং (মুহাব্বত ও আন্তরিকতার সাথে) শ্রবণ করি। মুহাব্বত ও প্রেম-ভালবাসা বিবর্জিত দুরূদ ফেরেশতাগণ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনার্থে পৌঁছায় বটে, (তবে আমি মনোযোগ ও আন্তরিকতার সাথে শ্রবণ করি না।)
মুহাব্বত ও আন্তরিকতার সাথে দুরূদ পাঠকগণ বাহ্যিকভাবে দূরবর্তী মনে হলেও মূলত: তারা রওজা শরীফের নিকটবর্তী। মুহাব্বত বিবর্জিত ও প্রেমহীনরা নিকটবর্তী হলেও আসলে তারা দূরবর্তী।
সুতরাং বুঝা গেল যে, যার মধ্যে উৎসাহ্ নেই, তার মধ্যে মুহাব্বতও নেই। আর যার মধ্যে মুহাব্বত নেই, তার কাছে ঈমানও নেই। অতএব, বেঈমান ও মুনাফিক্বের দুরূদ হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম শ্রবণ করেন না। যদিও বা তার অবস্থান রওজা শরীফের নিকটে হয়।
মাওলানা রুমী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘‘মসনবী শরীফে’’ বলেন, একদা মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মৌমাছিদেরকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘তোমরা প্রত্যেক প্রকারের ফুল হতে রস আহরণ কর, এতে কিছু মিষ্ট, কিছু তিক্ত এবং কিছু টকও রয়েছে। এতদ সত্ত্বেও সমুদয় মধু কিভাবে মিষ্ট হয়ে যায়?’ মৌমাছিরা আরয করলেন, ‘‘হে সমগ্র সৃষ্টির পথ প্রদর্শক (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম)! আমরা ফুল হতে রস আহরণ করে ঘরে ফেরার সময় আপনার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করে থাকি। তাই সমুদয় রস এরই বদৌলতে সুমিষ্ট হয়ে যায়।
گفت چوں خواينم براحمد درود- مى شود شرلين وتلخى را بود-
অর্থ: যখন আমরা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করি, তখন তা মিষ্ট হয়ে যায় এবং তিক্ততা চলে যায়।
হযরত সুফিয়ান সওরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, পবিত্র মক্কা শরীফে এক ব্যক্তিকে এমতাবস্থায় তাওয়াফ করতে দেখেছি যে, তিনি প্রত্যেক স্থানে অধিক হারে দুরূদ শরীফ পাঠ করছেন। আমি তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, একদা আমি আমার পিতার সফরসঙ্গী ছিলাম। পথিমধ্যে অধিক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আমার পিতার মৃত্যু হলো এবং মৃত্যুর পর তার মুখাবয়ব খুবই কালোবর্ণ ও বিকৃত হয়ে গেল। এ দুঃখজনক অবস্থা দেখে আমি অত্যন্ত লজ্জিত ও মর্মাহত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আমার পিতাকে দাফন করতে চাইলাম, যাতে অন্য কোন লোক তা দেখতে না পায়। অতঃপর আমি তার সন্নিকটে বসে অজোর নয়নে ক্রন্দন করছিলাম। এমন সময় এক বুযুর্গ ব্যক্তি আমার নিকটবর্তী তাশরীফ এনে আমাকে বলেন, ‘‘তোমার পিতার কবর খনন কর। এমতাবস্থায় আমি খুবই চিন্তিত ও মর্মাহত ছিলাম। তথাপিও তাঁর নির্দেশ পালনার্থে কবর খনন করলাম। অতঃপর উক্ত বুযুর্গ আমার পিতার মুখমন্ডলে তাঁর নূরানী হাত মুছে দেয়া মাত্রই তাৎক্ষণিকভাবে আমার পিতার মুখমন্ডল আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল এবং তার আসল আকৃতি ফিরে এল। আমি আরয করলাম হুযূর! আপনার পরিচয় কি? তিনি বলেন, আমি আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম।
আজ তিনদিন অবধি তোমার পিতার দুরূদ শরীফ আমার নিকট পৌঁছায়নি। এমতাবস্থায় আমি ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করলাম অমুখ ব্যক্তি কোথায়? তদুত্তরে তাঁরা বলেন, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) সে মৃত্যু বরণ করেছে। (তখন হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান) আমার ঐকান্তিক ইচ্ছে হলো যে, ঐ ব্যক্তিকে অনুসন্ধান করি, যে শয়ন কালে আমার প্রতি তিনবার দুরূদ শরীফ পাঠ করত এবং আমাকে সর্বাবস্থায় স্মরণ করত।
অতএব, আমি কিভাবে তাকে ভুলতে পারি? পবিত্র কা’বা শরীফ যিয়ারতকারী বলেন, হে সুফিয়ান সওরী! এ কারণে আমি প্রত্যেক স্থানে দো’আ ও মাছুরা এর স্থলে দুরূদ শরীফ পাঠ করি। অধিকন্তু আমি দুরূদ শরীফের যে ফযিলত ও মাহাত্ম্য দেখেছি, সম্ভবত অন্য কোন দো’আয় এরূপ ফযিলত নেই।
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এবং ইমাম ক্বাস্তালানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, নিশ্চয়ই আমাদের মুহাক্বিক্ব ওলামায়ে কেরাম রাহিমাহুমুল্লাহু বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র জীবনকালে এবং ওফাত শরীফের পর এ বিষয়ে কোন পার্থক্য নেই যে, তিনি স্বীয় উম্মতকে দেখছেন এবং তাদের অবস্থাদি, নিয়ত, ইচ্ছে এবং সমুদয় হৃদয়ের দুঃখ-ব্যথা সমূহ অনুভব করছেন। এ সবই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সুষ্পষ্ট ও উজ্জ্বল।
যা কিছু লিপিবদ্ধ করেছি তা কেবল মাত্র দুরূদ শরীফের সংক্ষিপ্ত উপকারিতা ও ফযিলত। কেননা এর ফযিলত, মাহাত্ম্য ও উপকারিতা অগণিত এবং সীমাহীন। এর কোন পরিসীমা ও অন্ত নেই।
হে আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও আওলাদে রাসূলের ভালবাসা নিয়ে সঠিকভাবে আমল করার জন্য তওফিক দান করুন এবং সর্বদা মুহাব্বতের সাথে দুরূদ শরীফ পাঠের তওফিক দান করুন। আমীন! বেহুরমতে সাইয়েদিল মুরসালিন ওয়ালা আলিহি ওয়াসাহ্বিহী আজমাঈন।