সালাত-সালাম ও মুনাজাত-দো‘আ

সালাত-সালাম ও মুনাজাত-দো‘আ

।। তিন।।

সালাত ও সালাম প্রসঙ্গে
সালাত ও সালামের প্রচলিত অর্থ দুরূদ শরীফ পাঠ করা। ক্বোরআন মাজীদে দুরূদ শরীফের আয়াতে صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا -এর মাধ্যমে দুরূদ শরীফ পূর্ণাঙ্গ হওয়ার জন্য সালাত ও সালাম এক সাথে হওয়ার বিধানও স্পষ্ট। এ জন্য মুহাক্বক্বিক্বগণ দুরূদ পূর্ণাঙ্গ হওয়ার ব্যাপারে সালাত ও সালাম দু’টাকেই একত্রিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। ইমাম বদর উদ্দীন ‘আইনী শুধু সালাত উল্লেখ করে দুরূদ শরীফ পড়াকে মাকরূহ বলেছেন; বরং বলেছেন-‘সালাতের সাথে সালামকেও উল্লেখ করতে হবে।’
ইমাম সাভী বলেন, সালাত ও সালাম উভয় উল্লেখ করতে হবে।
ইমাম নাওয়াভী সালাম ও ছাড়া শুধু সালাত দিয়ে দুরূদ শরীফ পড়া মাকরূহ বলেছেন। এভাবে আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী ‘জাযবুল ক্বুলূব’-এর মধ্যে অধিকাংশ আলিমের মতে সালাম ছাড়া সালাত দিয়ে দুরূদ পড়াকে মাকরূহ বলেছেন। নামাযে দুরূদে ইব্রাহীমীর মধ্যে সালাম না থাকলেও তাশাহ্হুদের সালামের সাথে মিলিত হবার কারণে পূর্ণ দুরূদে পরিণত হয়েছে। এ জন্য নামাযের বাইরে দুরূদে ইব্রাহীমী সালাম ব্যতীত পড়াকে ফক্বীহ্গণ মাকরূহ বলেছেন। তাফসীর-ই ইবনে কাসীরে ইমাম নাওয়াভীর বর্ণনার উপর আলোকপাত করে এবং ক্বোরআনে পাকের আয়াতের হুকুমের প্রতি নযর রেখে বলেন, صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلِّمَ تَسْلِيْمًا
ইমাম শাযলী বেশি পরিমাণে দুরূদে ইব্রাহীমী পড়তেন। স্বপ্নের মধ্যে হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁকে পূর্ণ দুরূদ শরীফ পড়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। ওই দুরূদ শরীফ হল দুরূদে ইব্রাহীমী এবং এর সাথে এটা সংযোজন করার জন্য নির্দেশ দিলেন, اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُه তাই দুরূদে ইব্রাহীমী সালাম সহকারে পড়লে পূর্ণ দুরূদ শরীফ হবে। পাশাপাশি দুরূদ শরীফের মধ্যে নবী করীমের বংশধরদেরকেও উল্লেখ করার তাকীদ এসেছে। যেমন বর্ণিত আছে- হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
لاَ تُصَلُّوْا عَلَىَّ الصَّلاَةَ الْبَتْرَآءَ فَقَالُوْا وَمَا الصَّلاَةُ الْبَتْرَآءُ قَالَ تَقُوْلُوْنَ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَتُمْسِكُوْنَ بَلْ قُوْلُوْا اَللهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّ عَلى الِ مُحَمَّدٍ
অর্থাৎ তোমরা আমার উপর অসম্পূর্ণ দুরূদ শরীফ পড়ো না। সাহাবা-ই কেরাম আরয করলেন, ‘‘হুযূর, অসম্পূর্ণ দুরূদ কি রকম?’’ উত্তরে হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘‘তোমরা- اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ (আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিন) বলে শেষ করে দাও আর আমার বংশধরদেরকে উল্লেখ করছেন; বরং দুরূদ শরীফ পড়ার সাথে সাথে আমার বংশধরদেরকেও উল্লেখ করবে।
আমাদের পাক ভারত উপমহাদেশে সালাত ও সালাম পাঠ করার অর্থ মীলাদ শরীফ পাঠ করাকে বুঝায়। মীলাদ শরীফ-এর মর্মার্থ হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বেলাদত শরীফ সম্বলিত দুরূদ শরীফের মাধ্যমে পাঠ করা।
পরিশেষে, ক্বিয়ামের মাধ্যমে সালাত ও সালাম পেশ করা। প্রত্যেক শুভ কাজের জন্য এ সালাত ও সালামের ব্যবস্থা করা অতি উত্তম কাজ এবং অধিক বরকতময়। সে হিসেবে এ উপমহাদেশে তা নিয়মিতভাবে সুন্নী মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত হয়ে আসছে। এ হিসাবে এ নিয়মে সালাত ও সালাম পাঠ করা ও ইসলামী অনুষ্ঠানাদির অন্যতম কাজ বা অনুষ্ঠান।
—০—

।। চার।।

মুনাজাত ও দো‘আ
‘মুনাজাত’-এর অর্থ চুপে চুপে মনের কথা আপন প্রিয়ের নিকট পেশ করা। শরীয়তের পরিভাষায়, কোন প্রয়োজন কিংবা সমস্যা নিয়ে নিজ মুনিব আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে পেশ করাকে মুনাজাত বা দো‘আ বলা হয়। এ মুনাজাত বা দো‘আ এক পর্যায়ে এবাদতই। যেমন- আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَقَالَ رَبُّكُمْ اُدْعُوْنِىْ اَسْتَجِبْ لَكُمْ اَنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِىْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ وَاِذَا سَأَلَكَ عِبَادِىْ عَنِّىْ فَاِنِّىْ قَرِيْبٌ اُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ…
তরজমা: ‘‘এবং তোমাদের রব, এরশাদ করেন, আমার নিকট দো‘আ-মুনাজাত করো, আমি ক্ববূল করব। যারা আমার ইবাদত তথা দো‘আ-মুনাজাত থেকে বিরত থাকে, অহংকারবশতঃ তারা শীঘ্রই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে যাবে। আর হে! আমার হাবীব! আমার বান্দারা আপনাকে আমার অবস্থানের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করছে, তাদেরকে বলে দিন, ‘আমি তাদের নিকটেই। আমাকে আহবানকারীর আহ্বানে, (তা ক্বুবূলের মাধ্যমে) সাড়া দিই। তারা যেন (আপনার মাধ্যমে) আমার আহ্বানে সাড়া দেয় এবং আমার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। নিশ্চয়ই তখন তারা সঠিক পথ পাবে।’’
আয়াত দ্বারা দো‘আ ও মুনাজাত আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য এবাদাত হওয়াই সাব্যস্ত হল।
হাদীসে পাকে উল্লেখ আছে-
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلدُّعَآءُ هُوَ الْعِبَادَةُ ثُمَّ قَرَأَ وَقَالَ رَبُّكُمْ اُدْعُوْنِىْ اَسْتَجِبْ لَكُمْ الخـ
অর্থাৎ হযরত নো’মান ইবনে বশীর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, আমি হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে এরশাদ করতে শুনেছি, ‘‘দো‘আ এবাদতই এরপর তিনি ‘সূরা গাফির’-এর ৬০ নম্বর (উপরোল্লিখিত) আয়াতটি তেলাওয়াত করেন।
আরো বর্ণিত আছে- قَالَ لَيْسَ شَئٌ اَكْرَمَ عَلَى اللهِ مِنَ الدُّعَآءِ
অর্থাৎ আল্লাহর কাছে দো‘আ ও মুনাজাতের চেয়ে আর কোন বস্তু অধিক সম্মানিত নেই।
হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
مَنْ سَرَّه اَنْ يَّسْتَجِيْبَ اللهُ لَه عِنْدَ الشَّدَآئِدِ وَالْكَرْبِ فَلْيُكْثِرِ الدُّعَآءَ فِى الرَّخَآءِ
অর্থাৎ দুঃখ ও দুর্দশার অবস্থায় দো‘আ আল্লাহর দরবারে ক্ববূল হোক-এটা যে ব্যক্তি আশা রাখে, সে যেন স্বাভাবিক বা সচ্ছল অবস্থায় অধিকহারে দো‘আ মুনাজাত করে।
হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন- اَلدُّعَآءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ অর্থাৎ দো‘আ-মুনাজাতই ইবাদতের মগজ বা সারবস্তু। হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন-لاَ يَرُدُّ الْقَضَآءِ اِلاَّ الدُّعَآءُ الخـ অর্থাৎ দো‘আর দ্বারাই তাক্বদীর বদল হয়।
এভাবে দো‘আ ও মুনাজাতের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক হাদীসে পাক রয়েছে। সুতরাং দো‘আই আল্লাহর দরবারে গ্রহণীয় ইবাদত।
দো‘আর মধ্যে হাত উঠানো এ প্রসঙ্গেও অনেক হাদীসে পাক বর্ণিত আছে। যেমন হযরত আবূ মূসা আশ্‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত-
دَعَا النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ وَرَأَيْتُ بَيَاضَ اِبِطَيْهِ
অর্থাৎ হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দো‘আ করার সময় হাত মোবারক উত্তোলন করেন। তখন তাঁর দু’বগল শরীফের শুভ্রতা দেখার আমার সৌভাগ্য হয়েছে।
হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর বর্ণনা-
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ فِى الدُّعَاءِ وَلَمْ يَحُطُّهُمَا حَتّى يَمْسَحَ بِهِمَا وَجْهَه
অর্থাৎ হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন দো‘আর জন্য হাত মুবারক উত্তোলন করতেন, তা চেহারা মুবারককে বুলিয়ে নেয়ার পূর্বে নামিয়ে নিতেন না।
হযরত ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বর্ণনা করেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ رَبَّكُمْ حَيْىٌ كَرِيْمٌ يَسْتَحْىٖ اَنْ يَرْفَعَ الْعَبْدُ يَدَيْهِ فَيَرُدَّهُمَا صَفْرًا لاَ خَيْرَ فِيْهِمَا الخـ
অর্থাৎ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চয় তোমাদের রব অত্যন্ত লজ্জাশীল দয়াময়। তিনি লজ্জাবোধ করেন যে, তাঁর কোন বান্দা (দো‘আর জন্য) দু’খানি হাত উত্তোলন করবে আর তিনি তা খালি ফিরিয়ে দেবেন।
ইমাম যুহ্রীর বর্ণনা-
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ عِنْدَ صَدْرِه فِى الدُّعَاءِ ثُمَّ يَمْسَحُ بِهَا وَجْهَه
অর্থাৎ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দো‘আ করার সময় উভয় হাত মুবারক পবিত্র বক্ষ মুবারক পর্যন্ত উত্তোলন করতেন। দো‘আ শেষে হাত দু’টি নিজ চেহারা মুবারকে বুলিয়ে নিতেন।
দো‘আ করার অনেক নিয়ম-কানূন রয়েছে। ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির পিতা আল্লামা নক্বী আলী খাঁন তার প্রসিদ্ধ লিখনী-اَحْسَنُ الْوِعَاءِ لِاٰدَابِ الدُّعَآءِ নামক কিতাবে দো‘আর ৬০টি নিয়ম বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে ২৪তম নিয়ম হল অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আপন দু’টি হাত আসমানের দিকে বক্ষ বা কাঁধ বরাবর অথবা চেহারা বরাবর উত্তোলন করা অথবা পুর্ণহাত উত্তোলন করা, যাতে বগল যুগল প্রকাশ পায়। ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি উক্ত কথার টিকায় বর্ণনা করেন, বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নি’মাত চেয়ে দো‘আর সময় হাত দু’টি আকাশের দিকে করবে। বালা-মুসীবত দূরীভূত করার জন্য দো‘আর সময় হাতের পিঠ দিয়ে দো‘আ করবে। কখনো কখনো শুধু শাহাদাত আঙ্গুলের ইঙ্গিত দিয়ে দো‘আ করার কথা বর্ণনায় এসেছে।

মুহাম্মদ ইবনে হানীফা রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির মতে দো‘আ চার প্রকারঃ
১. আশা আকাক্সক্ষার দো‘আ। সেখানে হাত দু’টি আসমানের দিকে করবে।
২. ভয়ের দো‘আ। এখানে হাতের পিঠ নিজ চেহারার দিকে রাখবে।
৩. আহাজারীর দো‘আ। এখানে হাতের অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল দু’টি বন্ধ রাখবে। আর মাধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে বৃত্ত করবে এবং শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতে থাকা।
৪. গোপনে দো‘আ। এখানে মনে মনে ফরিয়াদ করা ও মুখে কিছু না বলা।
দো‘আ-মুনাজাতের আরো অনেক নিয়ম-কানূন রয়েছেঃ যেমন- আসমা-ই হুস্না, নবীগণের ওসীলা, ওলীগণের ওসীলা, মাতা-পিতার ওসীলা নিয়ে দো‘আ করলে তা ক্ববূল হওয়ার অধিক সম্ভাবনা থাকে।
সুতরাং দো‘আ করার ব্যাপারে উপরোল্লেখিত নিয়ম-কানূন পালন করাই শ্রেয়। আর কিছু দো‘আ আছে সেখানে হাত উঠানো নেই। যেমন নামাযে দো‘আ-ই মা’সূরাহ্ বা শেষ বৈঠকের দো‘আ, হাম্মাম তথা বাথরুমে যাওয়া আসার দো‘আ, খোৎবার দো‘আ ইত্যাদি।
নামায শেষে যে দো‘আ করা হয়, সেখানে হাতে উঠানোর বিধান ও নিয়ম আমাদের শরীয়তে প্রচলিত আছে।
হযরত আস্ওয়াদ আমেরী তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন-
صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْفَجْرَ سَلَّمَ اِنْحَرَفَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَدَعَا
অর্থাৎ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমি ফজরের নামায পড়েছি। সালাম ফেরানোর পর মুসল্লীদের দিকে ফিরে গেলেন এবং হাত মুবারক উঠিয়ে দো‘আ করলেন।
ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন, দো‘আর মধ্যে হাত উঠানোর ব্যাপারে ১০০টির মত হাদীস আছে। সবগুলোকে আমি فَضُّ الْوِعَاءِ فِىْ اَحَادِيْثَ رَفْعِ الْيَدَيْنِ فِى الدُّعَاءِ নামক কিতাবে সংকলন করেছি। সব ক’টির মধ্যে এ কথার উল্লেখ আছে যে, হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দো‘আ করার সময় হাত মুবারক উঠিয়েছেন। এ সব দো‘আ বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছে; কিন্তু সব ক’টিতে হাত উঠানোর কথা উল্লেখ আছে। তাই এ বিষয়টি সর্বত্তোমরূপে متواتر (মুতাওয়াতির) হাদীস দ্বারা সাব্যস্থ হল এবং দো‘আর মধ্যে হাত উঠানো সুন্নাত প্রমাণিত হল।

টিকা:
১. সূরা গাফির, আয়াত-৬০, ২. সূরা বাক্বারা, আয়াত-১৮৬, ৩. তিরমিযী, আবূ দাঊদ, হাকেম, ৪. তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, হাকেম, সূত্র. হযরত আবু হুরায়রা রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আৃলায়হি, ৫. তিরমিযী, হাকেম, সূত্র. হযরত আবূ হুরায়রা রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, ৬. তিরমিযী, দায়লামি, সূত্র. হযরত আনাস রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, ৭. তিরমিযী, সূত্র. হযরত সালমান ফারসী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, ৮. বুখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, ৯. ইবনে হাব্বান, ১০. তিরমিযী, হাকেম, বায্যার, ১১. ইবনে হাব্বান, ১২. আহসানুল ভি‘আ-ই লিআহাবিদ্দো‘আ-ই এবং ১৩. মুসান্নাফ-ই ইবনে আবী শায়বা। (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম আজমা‘ঈন)