ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব

।। দুই।।
ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব
ইসলামের নামে বিভিন্ন বাতিল ফির্ক্বা সৃষ্টি হয়ে তারা অনেক সাওয়াবদায়ক, বৈধ ও নেক আমল নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে। ক্বোরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা দিয়ে তারা অনেক নেক আমলকে মন্দ বিদ্‘আত বলে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পক্ষ থেকে যুগে যুগে ওই বাতিলপন্থীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব প্রদানের মাধ্যমে সঠিক মাসআলা উপস্থাপন করার প্রয়াসও চলমান আছে ও থাকবে। এ ক্ষুদ্র পরিসরে ইসলামী অনুষ্ঠানাদির আরো কিছু মাসআলা ক্বোরআন, সুন্নাহ ও ইমামদের মতামতের মাধ্যমে পেশ করার প্রয়াস পাচ্ছি। এমন উপকারী অনুষ্ঠানাদির মধ্যে ‘ফাতিহা’ অন্যতম।
‘ফাতিহা’-এর অর্থ হলো উম্মুক্ত করা। পরিভাষার মধ্যে ‘ফাতিহা’ ক্বোরআনের সূরা- ফাতিহাকে ‘ফাতিহা’ বলা হয়। অনুরূপ কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ করা ও তার দাফনের তিন দিন শোক পালনের পর খানা-পিনা ও ফলাহারের আয়োজন করে সেখানে সূরা ফাতিহাসহ ক্বোরআন মাজীদের আরো কিছু আয়াত ও সূরা তেলাওয়াত এবং যিক্র-আযকার ও মীলাদ পাঠ করে মুনাজাতের মাধ্যমে এগুলোর সাওয়াব মৃত ব্যক্তির রূহে পৌঁছিয়ে দেওয়াকে ফাতেহা বলা হয়। ক্বোরআন-সুন্নাহর আলোকে দৈহিক ও আর্থিক এবাদতের সাওয়াব অন্য ঈমানদারকে বখশিশ করা জায়েয। ক্বোরআন মাজীদে ঈমানদারদের জন্য একে অপরের অনুকূলে দো‘আ করার হুকুম রয়েছে। এমন কি জানাযার নামায মৃত ব্যক্তির দো‘আর জন্য আদায় করা হয়।
ফাতিহা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী অনুষ্ঠান
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের নাম। এতে ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের কর্ম বিধান রয়েছে। যে কর্মগুলো আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে তথা ক্বোরআন-সুন্নাহর দলীলের আলোকে এ উম্মতের জন্য প্রদান করা হয়েছে। বিনিময়ে পরকালে সাওয়াব প্রদানের সু সংবাদ দেওয়া হয়েছে। এককথায় আমলসমূহকে সালিহাত (صالحات) তথা সৎকর্মসমূহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ নেক আমলসমূহের জন্য আমলকারীর ঈমানকে আবশ্যক ও পূর্বশর্ত সাব্যস্ত করা হয়েছে। ঈমান ব্যতীত কোন নেক আমল তথা ফরয, ওয়াজিব সুন্নাত, মুস্তাহাব, শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। ঈমানবিহীন আমলের কোন সাওয়াব আল্লাহর পক্ষ থেকে না পাওয়া শরীয়তের সিদ্ধান্ত। ইসলামের নেক আমলসমূহের মধ্যে কিছু আমল সরাসরি ক্বোরআন-সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত। যেমনঃ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, বিবাহ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জিহাদ বা পারিবারিক কার্যক্রম ইত্যাদি। আর কিছু আমল ক্বোরআন-সুন্নাহর আলোকে শরীয়তের মৌলিক নিয়মাবলীর অনুসরণে সাব্যস্ত হয়েছে, মুজতাহিদ ইমামগণের ইজতিহাদের মাধ্যমে নেক আমল বলে সাব্যস্ত করেছেন।
হযরত সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কুপ খনন করে বলেন- هذِهِ لِاُمِّ سَعْدٍ অর্থাৎ এটা উম্মে সা’দের কূপ। এ হাদীস শরীফের আলোকে ফক্বীহ্গণ ঈসালে সাওয়াব করা (সাওয়াব পৌঁছানো)-এর পক্ষে মতামত দিয়েছেন; কিন্তু শারীরিক ইবাদতগুলোর মধ্যে নামায, রোযা ইত্যাদির বদলা অর্থাৎ অন্য কেউ আদায় করলে হবে না; কিন্তু হজ্জ্বের মধ্যে স্থলাভিষিক্ত বা বদলী করা জায়েয- ইবাদতে মালীও (আর্থিক ইবাদত) সামিল থাকার কারণে। যা হোক নামায রোযা সম্পন্ন করার মধ্যে বদলী জায়েয না হলেও এর সাওয়াব অন্য কাউকে দেওয়া যাবে। হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন-
مَنْ يَضْمَنُ لِىْ مِنْكُمْ اَنْ ىُّصَلِّىَ فِىْ مَسْجِدِ الْعَشَّارِ رَكْعَتَيْنِ وَيَقُوْلُ هذِه لِاَبِىْ هُرَيْرَةَ
অর্থাৎ ‘‘তোমাদের মধ্যে কে আমার জন্য আশ্শার মসজিদে দু’রাক্‘আত নামায পড়ে বলবে এটা আবূ হুরায়ার জন্য, এ আমলের কে জিম্মাদার হবে?’’ এটা দ্বারা বুঝা গেলো যে, ঈসালে সাওয়াব করা শরীয়ত মতে জায়েয।
এ ঈসালে সাওয়াবের শাখাসমূহের মধ্যে ফাতিহা দেয়া, যেমন, কারো মৃত্যুর পর চার দিনের ফাতিহা, দশ দিনের ফাতিহা, চেহলাম বা চল্লিশা এবং বার্ষিক ফাতিহা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। আর ফাতিহার মধ্যে ক্বোরআন তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ পাঠ, যিক্র-আয্কার করা, সাথে সাথে সদক্বাহ্-খয়রাত এবং খানা-পিনার ব্যবস্থার মাধ্যমে সবগুলোর সওয়াব সমস্ত নবী, ওলী, মু’মিন-মু’মিনাত, বিশেষত মৃত ব্যক্তি, যার উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, তার রূহে বখ্শিশ করা হয়।
ফাতিহার দলীল: ‘সূরা আন্‘আম- وَهذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে যে-
عَنْ حُمَيْدِ نِ الْاَعْرَجِ قَالَ مَنْ قَرَءَ الْقُرْانَ ثُمَّ دَعَا اَمَّنَ عَلى دُعَآئِه اَرْبَعَةُ الَافِ مَلَكٍ ثُمَّ لاَ يَزَالُوْنَ يَدْعُوْنَ لَه وَيَسْتَغْفِرُوْنَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ اِلَى الْمَسَاءِ اَوْاِلَى الصَّبَاحِ
অর্থাৎ: হযরত হুমাইদুল আ’রাজ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ক্বোরআনুল কারীম তেলাওয়াত করে ও খতম দিয়ে দো‘আ করবে, তার ওই দো‘আর সাথে চার হাজার নূরানী ফেরেশতা আমীন বলে। এরপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত অথবা সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দো‘আ করতে থাকে।
প্রতীয়মান হল যে, খতমে ক্বোরআনের সময় দো‘আ ক্ববূল হয়। আর ঈসালে সাওয়াবই দো‘আ। তাই সেখানে খতমে ক্বোরআন পড়া উত্তম।
দুররে মুখতার- بَابُ الدَّفْنِ -এ قِرَاةٌ لِّلْمَيِّتِ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
وَفِى الْحَدِيْثِ مَنْ قَرَءَ الْاِخْلاَصَ اَحَدَ عَشَرَ مَرَّةَ ثُمَّ وَهَبَ اَجْرَهَا لِلْاَمْوَاتِ اُعْطِىَ مِنَ الْاَجْرِ بِعَدَدِ الْاَمْوَاتِ
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, কোন এক ব্যক্তি ১১ বার সূরা ইখলাস পাঠ করে এর সাওয়াব মৃত ব্যক্তিদের রূহের পৌঁছাবে তাকে মৃতদের সংখ্যানুপাতে সাওয়াব দেয়া হবে।
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-
وَيُقْرَءُ مِنَ الْقُرْانِ مَاتَيَسَّرَلَه مِنَ الْفَاتِحَةِ وَاَوَّلُ سُوْرَةِ الْبَقْرَةِ اِلى اَلْمَفْلِحُوْنَ وَايَةُ الْكُرْسِىِّ وَامَنَ الرَّسُوْلُ وَسُوْرَةُ يٰس وَتَبٰرَكَ الَّذِىْ وَسُوْرَةُ التَّكَاثُرِ اِثْنَىْ عَشَرَةَ مَرَّةً اَوْاِحْدى عَشَرَةَ اَوْ سَبْعًا اَوْ ثَلاَثًا ثُمَّ يَقُوْلُ اَللهُمَّ اَوْصِلْ ثَوَابَ مَاقَرْأنًا اِلى فُلاَنٍ اَوْ اِلَيْهِمْ
অর্থাৎ এবং ক্বোরআন মজীদ থেকে পড়া হবে যা পড়া তার জন্য সহজ হবে। যেমন- সূরা ফাতিহা, সূরা বাক্বারার শুরুর আয়াতগুলো। ‘আল মুফলিহূন’ পর্যন্ত, আয়াতুর কুরসি, আ-মানার রসূলু…, সূরা ইয়া-সীন, তাবা-রাকাল্লাযী, সূরা তাকাসূর, ১২ বার, অথবা এগারবার, অথবা সাতবার অথবা তিনবার, অতঃপর বলবে, ‘আল্লা-হুম্মা.. ‘অর্থাৎ হে আল্লাহ্, আমরা যা পড়লাম তার সওয়াব অমুক অথবা অমুকের প্রতি পৌঁছিয়ে দাও!
তথা শরীয়তের এসব বিধানের গ্রন্থাবলীর ইবারতের মধ্যে প্রচলিত ফাতিহার নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে।
এভাবে হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফক্বীহ্ শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী বর্ণনা করেন, যে খাবার হযরত ইমাম হাসান ও হযরত হুসাইনের ফাতিহা-নিয়াযের নিয়্যতে হাযির করা হয় এবং সেখানে চার ক্বুল, সূরা ফাতিহা, ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা হয়, তা অধিক বরকতময়। তিনি আরো উল্লেখ করেন, কোন বুযুর্গ ওলীউল্লার ফাতেহা উপলক্ষে দুধ, শিরনী ইত্যাদি তৈরী করে খাওয়ানো শরীয়ত মতে জায়েয।
শাহ্ অলিউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী ইন্তিক্বালের ৩য় দিনে ফাতিহা প্রদান প্রসঙ্গে শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী বর্ণনা করেন যে, ৩য় দিনে এত লোকের সমাগম হল, যা গণনার বাইরে ছিল। সেখানে ৮১ বার-এর অধিক খতমে ক্বোরআন এবং অসংখ্য তাহলীল পাঠ করা হয়েছে।
ফাতিহার আরেকটি নিয়ম, খাবার সামনে রেখে কিছু সূরা-র্ক্বি‘আত, দুরূদ শরীফ পাঠ করে হাত উঠিয়ে দো‘আ করা এবং ওইগুলোর সাওয়াব নবী, ওলী ও মু’মিনগণকে বখশিশ করা। এই প্রচলিত নিয়মটি বিভিন্ন হাদীসে পাকের মাধ্যমে সাব্যস্ত। ফলে এটা শরীয়ত মতে এ সুন্নাতের পর্যায়ে পড়ে।
হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কিছু খেজুর হুযূর-ই পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে নিয়ে আসলাম এবং এর বরকতের জন্য দো‘আ করতে আরয করলাম, তখন-فَضَمَّهُنَّ ثُمَّ دَعَالِىْ فِيْهِنَّ بِالْبَرَكَةِ খেজুরগুলো নিয়ে মিশালেন এবং বরকতের জন্য দো‘আ করছেন।
তাবূকের যুদ্ধে মুসলমান সৈন্যদের রসদ ফুরিয়ে এলো। তখন হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন, যার কাছে যা অল্প-স্বল্প রসদ আছে, তা নিয়ে এসো। দস্তরখানা বিছানো হলো। সেখানে সকলেই কিছু কিছু রসদ রাখলেন-
فَدَعَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَرْكَةِ ثُمَّ قَالَ خُذُوا فِىْ اَوْعِيَتِكُمْ
অর্থাৎ ওই উপস্থিত রসদের উপর বরকতের দো‘আ করলেন এবং বললেন, ‘‘এখান থেকে তোমরা তোমাদের পাত্রে নিয়ে যাও।’’
হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শাদীর প্রাক্কালে উম্মে সুলায়ম (হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মাতা) ওয়ালীমা হিসাবে কিছু খাবার তৈরী করলেন, অনেক লোকজনকে দাওয়াত করা হল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম তিনি وَضَعَ يَدَه عَلى تِلْكَ الْحَيْسَةِ وَتَكَلَّمِ بِمَاشَآءَ اللهُ অর্থাৎ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওই খাবারের উপর হাত রেখে কিছু পড়লেন।
এভাবে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু খন্দকের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সামান্য খাবার তৈরী করে হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত করলেন। হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবা-ই কেরামকে নিয়ে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর বাড়ীতে তাশরীফ আনলেন। فَاَخْرَجَتْ لَه عَجِيْنًا فَبَصَقَ فِيْهِ وَبَارَكَ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সামনে খামিরা পেশ করা হলো। সেখানে হুযূর-ই আক্রাম ‘লুম‘আত মুবারক’ অর্থাৎ থুথু শরীফ দিলেন এবং বরকতের জন্য দো‘আ করলেন।
এভাবে আরো ফাতিহার অনেক দলীল রয়েছে, যেগুলো দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ফাতেহা দেয়া শুধু বৈধ নয় বরং তা অনেক বরকত হাসিলের ওসীলাও।
আর আমরা মুসলমান সদা-সর্বদা বরকতের মুখাপেক্ষী। তাছাড়া ফাতিহার মধ্যে দু’ধরনের ইবাদতের সংমিশ্রণ হয়ঃ তিলাওয়াতে ক্বোরআন ও যিক্র এবং সদক্বা-খয়রাত। এ উভয় কাজ পৃথকভাবেও সাওয়াবের হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ফাতিহার মধ্যে এ দুই ইবাদতকে একত্রিত করা হয়। তাই এটা কিভাবে হারাম হয়? কোন ঈমানদার ব্যক্তি এটাকে হারাম ও অবৈধ বলতে পারে না। আর যদি বলে, তবে শরীয়তে হালাল বস্তুকে হারাম বললে যে অপরাধ হয়, সে অপরাধে অপরাধী হবে। এমনকি তার ঈমানের ব্যাপারেও সন্দেহ থাকবে। বিরানী খাওয়া ক্বোরআনের ও হাদীসের সরাসরি দলীল দ্বারা সাব্যস্ত নয়; কিন্তু তা হালাল হলো এ কারণে যে, বিরানী তো চাউল, গোশত এবং ঘি-মসল্লা ইত্যাদি দিয়ে পাকানো হয়। এসব ক’টি বস্তুই হালাল খাবার। এভাবে ফাতিহায়ও হালাল খাবার তৈরী করা হয়; তারপর ক্বোরআন তেলাওয়াত ও যিক্র-আযকার করা হয়। পরিশেষে দো‘আ ও ঈসালে সাওয়াব করা হয়। যেহেতু এ সব বস্তু পৃথক পৃথকভাবে জায়েয, সুতরাং সম্মিলিতভাবেও জায়েয।
ফাতেহার খাবারকে সামনে রেখে দো‘আ করা সুন্নাত। (উপরে উল্লেখিত বর্ণনাদি দ্বারা সাব্যস্ত;) যেমনিভাবে জানাযার নামাযে মৃতকে সামনে রেখে নামায ও দো‘আ করা হয়, অনুরূপভাবে কবরকে সামনে রেখে দাঁড়িয়ে যিয়ারত ও দো‘আ করা হয়। যা হাদীসে পাক দ্বারা সাব্যস্ত। হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ক্বোরবানীর ছাগল জবেহ করার পর সামনে- اَللهُمَّ هَذَا مِنْ اُمَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলে দো‘আ করেছেন।
ফাতিহার মধ্যে যদি খাবার সামনে রেখে ঈসালে সাওয়াব করা হয়, তাহলে শরীয়তের পক্ষ থেকে বাধা কিসের? কোন ঈমানদার নিষেধের পক্ষে যাবে না। আর যদি বলা হয় ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে খাবার শুরু কলে ফাতিহা হয়ে যায়, প্রচলিত ফাতিহার প্রয়োজন নেই, তখন বলা যাবে ‘বিসমিল্লাহ্ও ক্বোরআন শরীফের আয়াত। খাবারের সামনে ক্বোরআন পাঠ করে ফাতিহা দেয়া যদি নিষেধ হয়, তাহলে খাবারের পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ্’ পড়াও নিষেধ হবে। সম্ভবত ফাতিহার বিরোধিরা বিস্মিল্লাহ পড়াও বাদ দেয়, তাদের সঙ্গী শয়তানকে শরীক করার জন্য।’
মোটকথা, ফাতেহা ইসলামী অনুষ্ঠানাবলীর অন্যতম অনুষ্ঠান, যা ১৪০০ বছরাধিকাল যাবৎ ঈমানদাররা পালন করে আসছেন। সুতরাং এটা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো।
এ ফাতেহা বিভিন্ন নামে প্রচলিত যথা- ৪ দিনের ফাতেহা, ১০ দিনের ফাতেহা, ৪০ দিনের ফাতিহা, বাৎসরিক ফাতেহা, নতুন নতুন ফলাদির ফাতেহা ইত্যাদি। এ সব ফাতেহাও বরকতের ওসীলা হয়।
টিকা: ১. মিশকাত, ফদলিস সাদকাহ্, ২. মিশকাত, বাবুল মোলাহেম, ২য় অধ্যায়, ৩. তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৭ম খন্ড, ৪. দুররে মুখতার, ৫. দুররে মুখতার, ৬. ফতোয়া-ই আজিজিয়া, পৃ. ৪১ ও ৭৫ , ৭. মালফুযাতে শাহ্ আবদুল আজিজ, পৃ. ৮০, ৮. মিশকাত, মু’জিযা অধ্যায়, ৯. মিশকাত, মু’জিযা অধ্যায়, ১০. মিশকাত, মু’জিযা অধ্যায়, ১১. মিশকাত, মু’জিযা অধ্যায়।