তাবলীগ জামাত ও তাদের ইজতিমার স্বরূপ (পূর্ব -১)

তাবলীগ জামাত ও তাদের ইজতিমার স্বরূপ (পূর্ব -১)

তাবলীগ জামাত ও তাদের ইজতিমার স্বরূপ (পূর্ব -১)
মাওলানা আবূ মাকনূন ইসলামাবাদী
===================
[মাসিক তরজুমান ১৪৩৮ হিজরি রবিউল আউয়াল সংখ্যা]….
আমাদের দেশের রাজধানীর অদূরে টঙ্গীতে প্রত্যেক বছর মুসলমানদের একটি সম্প্রদায় ‘বিশ্ব ইজতিমা’ শিরোনামে এক বিশাল জমায়েতের ডাক দেয় ও আয়োজন করে। এর বিশেষ কর্মসূচি থাকে ‘আখেরী মুনাজাত’। এ বছর দেখা যাচ্ছে যে, তারা বিভাগীয় পর্যায়ে ইজতিমা করছে।
এদেশের মানুষ সরলপ্রাণ ও ধর্মপরায়ণ। ইসলামের কথা ও মহান আল্লাহর দরবারে মুনাজাতের কথা শুনলে সেদিকে তাদের আগ্রহের সীমা থাকে না। অনেকাংশে তারা নির্বিচারে এহেন জমায়েতে শরীক হয়ে যান। এদেশের গণতান্ত্রিক সরকারকেও তখন জনগণকে সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও অসুবিধা এড়ানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। প্রচার মাধ্যমগুলোতো আছেই- যে কোন ঘটনার খবর প্রকাশে তৎপর। তাই, ওই ইজতিমায় আগত মানুষগুলোর আয়োজনকারীদের সাথে সরকারী সহযোগিতাও সংযুক্ত হয়ে আসছে।
এ ইজতিমার আয়োজনকারী হচ্ছে ওহাবী-দেওবন্দী সম্প্রদায়ের একটি শাখা-‘তাবলীগ জামাত’। এ জামাতটি সারা বছর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ‘ওহাবী মতবাদ’ প্রচার করে; তাও ‘ইসলামী’ নামের লেবাস পরে। আর প্রতি বছর ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে একটি ইজতিমা বা সমাবেশের আয়োজন করে; যার নাম দিয়েছে ‘বিশ্ব ইজতিমা’। আর এ বছর অঞ্চলভিত্তিকও ইজতিমার আয়োজন করছে।
যেহেতু ওই ইজতিমাকে ‘ইসলামী ইজতিমা’ বলে দাবী করা হচ্ছে সেহেতু এ জামাত ও তাদের ইজতিমার প্রকৃতি ও আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট করাও প্রয়োজন। এ বিষয়টি স্পষ্ট করেই ‘তাবলীগ জামাত ও তাদের ইজতেমার স্বরূপ’ নামে নিবন্ধ লিখা হয়েছে। এতে একথা প্রমাণ করা হয়েছে যে, এসব ইজতিমা একটি বিশেষ সম্প্রদায় (ওহাবী)-এরই জমায়েতের আয়োজন মাত্র। তাদের আক্বীদা বা ধর্মবিশ্বাস নিছক একটি বিশেষ সম্প্রদায়েরই। সুন্নী মুসলমানদের সাথে তাদের আক্বীদার যথেষ্ট গরমিল রয়েছে। তাই বাস্তব সত্যটি ব্যাপকভাবে প্রচার করা দরকার, যাতে সরলপ্রাণ মুসলমানগণ ধোঁকা না খায়। এ নিবন্ধে পাঠকগণ বিস্তারিতভাবে তাবলীগ জামাত ও তাদের ‘ইজতিমার’ বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং তাদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন- এ আশাই রইলো।
সরলপ্রাণ মানুষ যখন কোন বাতিল ও মিথ্যার বাহ্যিক চাকচিক্যপূর্ণ আয়োজনের গোলকধাঁধার আবর্তে সঠিক দিশা খুঁজে বের করতে হিমশিম খায়, তখন সচেতন সত্যপন্থীদের উপর ওয়াজিব (অপরিহার্য) হয়ে যায় ওই বাতিলের পরিচয় তুলে ধরে সরল পথের দিকে মানুষকে আহ্বান করা। অন্যথায় একদিকে হাদীসে পাকের নূরানী ভাষায় ‘সত্য বলার ক্ষেত্রে নীরবতা অবলম্বনকারী বোবা শয়তান’-এর অশুভ পরিণতির উপযোগী হতে হয়, অন্যদিকে যাদের উদ্দেশ্যে ওই সত্যপথ দেখানো হয়, তাদেরও ঈমানী দায়িত্ব হয়ে যায়- নিজেদের খোদাপ্রদত্ত বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ওই সত্য পথের আহ্বানে সাড়া দেওয়া।
ঢাকার টঙ্গীতে ‘তাবলীগ জামাত’ তাদের ‘ইজতিমা’ (সমাবেশ)-এর আয়োজন করে আসছে বেশ কয়েক যুগ ধরে। প্রাথমিক পর্যায়ে সেটা ওই জামাত ও ওই মতবাদীদের ‘মহাসমাবেশ’ হিসেবে অনুষ্ঠিত হত। পরবর্তীতে ‘ইসলামী’ শব্দের ব্যবহার ও ‘আখেরী মুনাজাত’-এর আয়োজনের ফলে দেশের অন্যান্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণও তাতে শরীক হতে থাকে। (যদিও ওই জামাতের অন্যতম মুরব্বী চট্টগ্রামের মুফতী ফয়যুল্লাহ্ সাহেব জমাতবন্দী হয়ে হাত তুলে মুনাজাত করার ঘোর বিরোধী! তিনি সেটা বিদ‘আত ও নিষিদ্ধ বলে ফাত্ওয়া দেন।) বিদেশ থেকেও কিছু লোক ওই ইজতিমায় শরীক হয় বলে প্রচার করা হয়। বস্তুত ওই মেহমানরা হয়তো একই মতবাদের প্রচারক, নতুবা ওই জামাতের প্রচারকদের দ্বারা প্রভাবিত ও আমন্ত্রিত। ব্যাপক প্রচারণা ও ব্যবস্থাপনার কারণে ওই ইজতিমার পরিসর ক্রমশ বাড়ছে। এ সুবাদে তারা সেটাকে এক পর্যায়ে হজ্বের সাথে তুলনা করতে লাগল এবং নানা বিশেষণ দিয়ে ব্যাপকতর প্রচারে লিপ্ত হল। কিন্তু তা সচেতন মুসলমানদের দৃষ্টি ও শ্রবণকে বিদ্ধ করল। তাঁরা এবং দেশের বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম এ ধরনের অমূলক প্রশংসার সমালোচনা করলেন। ফলে দেখা যায় ২০০৬ ইংরেজীতে তুলনামূলক বিশেষণ বাদ দিয়ে সেটাকে বলা হল- ‘ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বৃহত্তম সমাবেশ’ ও ‘মানবতার মহামিলন’ ইত্যাদি; অথচ তাদের ইজতিমাগুলো যে, একেকটা ওহাবী সম্মেলন তাতে সন্দেহ কিসের?
এখানে আমার বক্তব্য হচ্ছে- একদিকে সরকার তো তার দায়িত্ব পালন করেছে, আর সরলপ্রাণ মুসলমানরাও বড় জমায়েতে ‘মুনাজাত’ করাকে একটি বিরাট ধর্মীয় কাজ মনে করছেন, অন্যদিকে এটা অত্যন্ত দুঃখের সাথে আশঙ্কাও করা যাচ্ছে যে, তাবলীগ জামাতের চতুরতা ও দেশের মুসলমানদের সরলতা, সর্বোপরি সচেতন সুন্নী মুসলমানদের নীরবতা ওই তাবলীগ জামাতের আসল পরিচয় ও উদ্দেশ্যকে এক গাঢ় আড়ালে দ্রুত ঢাকা দিতে যাচ্ছে কিনা! আর এ আড়ালের সুবাদে তারাও এ দেশকে সহসা ‘ওহাবীরাষ্ট্র’ বা জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করার সুযোগ নিতে যাচ্ছে কিনা! কারণ, বর্তমানে দমিত ও গা-ঢাকা দেওয়া ‘জঙ্গি-খারেজী’ (জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদ ইত্যাদি) অদূর ভবিষ্যতে এক পর্যায়ে গিয়ে আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে যাচ্ছে কিনা, তাও ভেবে দেখার সময় এসেছে।
তাই আমি দেশবাসী তথা বিশেষত সচেতন সুন্নী ওলামা ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে এ ‘তাবলীগ জামাত’ ও ‘তাদের মূল উদ্দেশ্য’ এবং এ জামাতের এ পর্যন্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ডের ফলাফল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করার চেষ্টা করব, যাতে ‘ইজতিমার আয়োজন’ ও ‘মুনাজাত’-এর আড়ম্বরতা’য় মুগ্ধ হয়ে এদেশের মুসলমানগণ যেন তাদের আসল পরিচয় ভুলে না বসেন। আমি আমার ঈমানী দায়িত্বটুকু পালন করতে চাই। সেটার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন যাঁরা তাদেরকে নির্বিচারে ‘ইসলামী জামাত’ মনে করেন বিশেষভাবে তাঁরা এবং সাধারণভাবে অন্যরা।
তাবলীগ জামাতের গোড়ার কথা
এ কথা সুস্পষ্ট যে, ভারতের সাইয়্যিদ আহমদ বেরলভী ও মৌলভী ইসমাঈল দেহ্লভী সৌদি আরব থেকে এ উপমহাদেশে ‘ওহাবী মতবাদ’ সর্বপ্রথম আমদানি করার পর ভারতে ‘দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসা’ ও ‘নাদওয়াতুল ওলামা’ ইত্যাদি ওহাবী মতবাদের যথাক্রমে শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ দেওবন্দ মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ওস্তাদ, শাগরিদ ও পৃষ্ঠপোষক ইত্যাদি হলেন- মৌং মুহাম্মদ কাসেম নানূতভী। মৌং আশরাফ আলী থানভী, মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী এবং মৌং খলীল আহমদ আম্বেটবী প্রমুখ। তারা ছিলেন এ দেশে ওই মতবাদ প্রচারের পুরোধা। এ মৌং আশরাফ আলী থানভী সাহেবের অন্যতম প্রধান শিষ্য ছিলেন মৌং ইলিয়াস মেওয়াতী। মৌং ইলিয়াস সাহেব এ মতবাদ প্রচারের জন্যই ‘তাবলীগ জামাত’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ জামাত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন যে, ‘তাবলীগ জামাতের কর্মপদ্ধতি হবে তার নিজের উদ্ভাবিত, কিন্তু প্রচারের বিষয়বস্তু ও শিক্ষা হবে তার পরম শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ মৌং আশরাফ আলী থানভীর।’ [তাবলীগী জামা‘আত কা খত্বরনাক প্রোগ্রাম, কৃত মাওলানা আরশাদ আলক্বাদেরী, ভারত]
এখন দেখুন, মৌং আশ্রাফ আলী থানভী সাহেবের ‘শিক্ষা’ কি? তার আক্বীদা ও শিক্ষা হচ্ছে অবিকল সমস্ত দেওবন্দী আলিমদের আক্বীদা ও শিক্ষা। আর এ ‘আক্বীদা ও শিক্ষা’র প্রচার ও প্রসারের একমাত্র উদ্দেশ্যেই মৌং ইলিয়াস সাহেব কায়েম করেছেন ‘তাবলীগের ছয় উসূল’। গোটা ‘তাবলীগ জামাত’ই এ ছয় উসূল প্রতিষ্ঠা করে বেড়ায়। টঙ্গীর তথাকথিত ‘বিশ্ব ইজতিমা’য় ছয় উসূল ও তাদের বাস্তবায়ন নিয়ে চিল্লাবদ্ধ মুসল্লীদের উদ্দেশে হিদায়তী (নির্দেশনামূলক) বয়ান দেওয়া হয়। [দৈনিক পূর্বকোণ, ২৯ জানু. ২০০৬ সংখ্যা ইত্যাদি]
উল্লেখ্য, ওই ছয় উসূলে ইসলামের পঞ্চবুনিয়াদ থেকে নেয়া হয়েছে মাত্র দু’টি- ১. কলেমা ও ২. নামায। আর বাকী ৪ টা হচ্ছে- ৩. ইকরামুল মুসলিমীন , ৪. নফর ফী সাবীলিল্লাহ , ৫. আমল ও যিক্র এবং ৬. তাসহীহ-ই নিয়্যত ।
আশ্রাফ আলী থানভীসহ দেওবন্দীদের আক্বীদা ও শিক্ষা হচ্ছে:
১. “আল্লাহ্ মিথ্যা বলতে পারেন।”
[ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৯,
কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী দেওবন্দী]
২. “আল্লাহ্ আগে জানেন না বান্দা কি কাজ করবে। বান্দা যখন কাজ সম্পন্ন করে নেয় তখনই আল্লাহ্ তা জানতে পারেন।”
[তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান, পৃষ্ঠা ১৫৭-৫৮, কৃত মৌং হুসাইন আলী ওয়াঁভচরান ওয়ালা দেওবন্দী]
৩. “শয়তান ও মালাকুল মাওত-এর জ্ঞান হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে বেশি।”
[বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃষ্ঠা ৫১, কৃত খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
৪. “আল্লাহ্র নবীর নিকট নিজের পরিণতি এবং দেয়ালের পেছনের জ্ঞানও নেই।”
[বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃষ্ঠা ৫১, কৃত খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
৫. “হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্ তা‘আলা তেমনি জ্ঞান দান করেছেন, যেমন জ্ঞান জানোয়ার, পাগল এবং শিশুদের নিকটও রয়েছে।”
[হিফযুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৭, কৃত মৌং আশ্রাফ আলী থানভী দেওবন্দী]
৬. “নামাযে হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি শুধু খেয়াল যাওয়া গরু-গাধার খেয়ালে ডুবে যাওয়া অপেক্ষাও মন্দতর।” [সেরাতে মুস্তাক্বীম, পৃষ্ঠা ৮৬, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
৭. “‘রাহমাতুল্লিল ‘আলামীন’ (সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাস উপাধি নয়। হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্যান্য বুযুর্গকেও ‘রাহ্মাতুল্লিল ‘আলামীন’ বলা যেতে পারে। [ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১২, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী দেওবন্দী]
৮. “‘খাতামুন্নবিয়্যীন’ অর্থ ‘আখেরী বা শেষনবী’ বুঝে নেওয়া সাধারণ লোকদের খেয়াল মাত্র। জ্ঞানী লোকদের মতে এ অর্থ বিশুদ্ধ নয়। হুযূর আক্রামের যুগের পরও যদি কোন নবী পয়দা হয়, তবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী হওয়ায় কোন ক্ষতি হবে না।”
[তাহযীরুন্নাস, পৃষ্ঠা ৩ ও ২৫, কৃত দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতভী]
৯. “হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেওবন্দের আলেমদের সাথে সম্পর্কের সুবাদে উর্দূ শিখতে পেরেছেন।” [বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃষ্ঠা ২৬, কৃত মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
১০. “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান শুধু বড় ভাইয়ের মতই করা চাই।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৫৮, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১১. “আল্লাহ্ তা‘আলা ইচ্ছা করলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমকক্ষ কোটি কোটি পয়দা করতে পারেন।” [তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ১৬, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১২. “হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করে মাটিতে মিশে গেছেন।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৫৯, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী]
১৩. “নবী-রসূল সবাই অকেজো।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ২৯, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১৪. “নবী প্রতিটি মিথ্যা থেকে পবিত্র ও মা’সূম হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।”
[তাস্ফিয়াতুল্ আক্বাইদ, পৃষ্ঠা ২৫, কৃত মৌং কাসেম নানুতভী]
১৫. “নবীর প্রশংসা শুধু মানুষের মতই কর; বরং তা অপেক্ষাও সংক্ষিপ্ত কর।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৬১, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী]
১৬. “বড় অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আর ছোট অর্থাৎ অন্যসব বান্দা বেখবর ও অজ্ঞ।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৩, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১৭. “বড় মাখলূক অর্থাৎ নবী, আর ছোট মাখলূক অর্থাৎ অন্যসব বান্দা আল্লাহর শান বা মর্যাদার সামনে চামার অপেক্ষাও নিকৃষ্ট।” [তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ১৪, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১৮. “নবীকে ‘তাগূত’ (শয়তান) বলা জায়েয।”
[তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান, পৃষ্ঠা ৪৩, কৃত. মৌং হুসাইন আলী ওয়াঁভচরান ওয়ালা]
১৯. “নবীর মর্যাদা উম্মতের মধ্যে গ্রামের চৌধুরী ও জমিদারের মত।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৬১, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
২০. “যার নাম মুহাম্মদ কিংবা আলী তিনি কোন কিছুর ইখতিয়ার রাখেন না। নবী ও ওলী কিছুই করতে পারেন না।” [তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৪১, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
২১. “উম্মত বাহ্যিকভাবে আমলের মধ্যে নবী থেকেও বেড়ে যায়।” [তাহযীরুন্নাস, পৃষ্ঠা ৫, কৃত মৌং কাসেম নানুতভী]
২২. “দেওবন্দী মোল্লা হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুলসেরাত হতে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।” [তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান, পৃষ্ঠা ৮, মৌং হুসাইন আলী]
২৩. “‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ আশরাফ আলী রসূলুল্লাহ্’ আর ‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা সায়্যিদিনা ওয়া নবীয়্যিনা আশরাফ আলী’ বলার মধ্যে সান্ত্বনা রয়েছে, কোন ক্ষতি নেই।” [রিসালা-ই ইমদাদ, পৃষ্ঠা ৩৫, সফর – ১৩৩৬ হিজরি সংখ্যা]
২৪. “‘মীলাদুন্নবী’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উদ্যাপন করা তেমনি, যেমন হিন্দুরা তাদের কানাইয়্যার জন্মদিন পালন করে।” [বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃষ্ঠা ১৪৮, ফাতওয়া-ই মীলাদ শরীফ, পৃষ্ঠা ৮]
২৫. “রসূল চাইলে কিছুই হয়না।” [তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৫৬, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
২৬. “আল্লাহর সামনে সমস্ত নবী ও ওলী একটা নাপাক ফোঁটা অপেক্ষাও নগণ্য।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৫৬, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
২৭. “নবীকে নিজের ভাই বলা দুরস্ত।”
[বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃষ্ঠা ৩, কৃত মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী]
২৮. “নবী ও ওলীকে আল্লাহর সৃষ্টি ও বান্দা জেনেও উকিল এবং সুপারিশকারী মনে করে এমন মুসলমান সাহায্যের জন্য আহ্বানকারী ও নযর-নিয়াযকারী মুসলমান, আর কাফির আবূ জাহ্ল-শির্কের মধ্যে সমান।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৭-২৭, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
২৯. “‘দরূদ-ই তাজ’ অপছন্দনীয় এবং পাঠ করা নিষেধ।”
[ফযাইলে দরূদ শরীফ, পৃষ্ঠা ৯২, ফাযাইলে আ’মাল তথা তাবলীগী নেসাব থেকে পৃথকীকৃত]
৩০. মীলাদ শরীফ, মি’রাজ শরীফ, ওরস শরীফ, খতম শরীফ, চেহলামের ফাতিহাখানি এবং ঈসালে সাওয়াব- সবই নাজায়েয, ভুল প্রথা, বিদ’আত এবং কাফির ও হিন্দুদের প্রথা।”
[ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫০ এবং ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৩-৯৪, কৃত প্রাগুক্ত]
৩১. “প্রসিদ্ধ কাক খাওয়া সাওয়াব।”
[ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩০, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী]
৩২. “হিন্দুদের হোলী-দেওয়ালীর প্রসাদ ইত্যাদি জায়েয।”
[ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩২, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী]
৩৩. “ভাঙ্গী-চামারের ঘরের রুটি ইত্যাদির মধ্যে কোন দোষ নেই, যদি পাক হয়।”
[ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩০, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী]
৩৪. “হিন্দুদের সুদী টাকায় উপার্জিত অর্থে কূপ বা নলকূপের পানি পান করা জায়েয।”
[ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৩-১১৪, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী] (না‘ঊযু বিল্লাহ্, সুম্মা না‘ঊযু বিল্লাহ্ মিন্হা)
এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, তাবলীগ জামাতের আক্বীদা ও আমল দেওবন্দী-ওহাবীদের আক্বীদা ও আমলের সাথে মোটেই বিরোধপূর্ণ নয়, বরং এক ও অভিন্ন। এসব আক্বীদা ও আমলকে তাবলীগ জামাত তার ছয় উসূলের মাধ্যমে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য তৎপর। টঙ্গীর ইজতিমার প্রধান লক্ষ্যও এটাকে আরো ব্যাপক করা। এখন বিভাগীয় তাবলীগী ইজতিমা গুলোর উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক।
“ইজতিমা প্যান্ডেলে তথাকথিত তাশকীলের কামরায় নতুন করে বিভিন্ন মেয়াদের চিল্লায় তালিকাভুক্ত মুসল্লীদের স্থান দেওয়া হয়। তালিকাভুক্ত জামাতীদের বিভিন্ন খেত্তা থেকে তাশকীলের কামরায় আনা হয় এবং জামাতবন্দী করা হয়।
চূড়ান্তভাবে এলাকা ভাগ করে তাদেরকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে পাঠানো হয়।” [দৈনিক পূর্বকোণ, ২৯ জানুয়ারি ২০০৬ সংখ্যা]
তাবলীগ ও তাদের ইজতিমা সম্পর্কে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি মনযোগ দেওয়া দরকারঃ
প্রথমত যেকোন আমল ক্ববূল হবার পূর্বশর্ত হচ্ছে বিশুদ্ধ আক্বীদা। আর এ বিশুদ্ধ আক্বীদা হচ্ছে একমাত্র ‘আহ্লে সুন্নাত ওয়া জামা‘আত’-এর আক্বাইদ। ভ্রান্ত আক্বাইদ পোষণ করলে কোন আমলই আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হয় না। এমনকি মুনাজাতও নয়।
দ্বিতীয়তঃ ইসলামের একমাত্র সঠিক রূপরেখা হচ্ছে ‘আহলে সুন্নাত ওয়া জামা‘আত’-এর মতাদর্শ। কিন্তু উক্ত ওহাবী-দেওবন্দী- তাবলীগীদের এমনসব আক্বীদা রয়েছে, যেগুলো ‘আহলে সুন্নাত ওয়া জামা‘আত’র সম্পূর্ণ বিপরীত। বস্তুত তাদের আক্বীদা ও আমল ওই খারেজী মতবাদেরই অনুরূপ, যারা পবিত্র হাদীসের ভাষায়, ইসলামী নামের ভ্রান্ত ৭২ (বাহাত্তর) দলের মধ্যে সর্বপ্রথম দল। [সেহাহ্ ও শরহে মাওয়াক্বিফ ইত্যাদি]
তৃতীয়ত ওহাবী-তাবলীগপন্থী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ সরকারের অধীনে পরিচালিত ‘বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড’-এর পাঠ্যক্রম অনুসরণ করেনা, তারা অনুসরণ করে ভারতের দেওবন্দ মাদরাসার পাঠ্যক্রম, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি। [দৈনিক ইনকিলাব-এ প্রকাশিত ক্রোড়পত্র]
উল্লেখ্য, আহলে হাদীসের ড.গালিব, শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দীকুর রহমান বাংলাভাই প্রমুখ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত তাদের সংগঠনগুলোর সদস্যরা হয়তো এসব খারেজী মাদরাসায় শিক্ষাপ্রাপ্ত, নতুবা তাবলীগপন্থী। (বিটিভিতে প্রচারিত ‘অনুতাপ’কারীদের কেউ কেউ স্বীকারও করেছে যে, তারা তাবলীগপন্থী।) তাছাড়া, ‘আহলে হাদীস’ সম্প্রদায়টি মূলত ওহাবীদেরই একটি অংশ। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, আহলে হাদীসের লোকেরা মাযহাব মানেনা। অন্যান্য আক্বীদা ও আমল প্রায় এক ও অভিন্ন। সুতরাং তাবলীগ জামাতের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে প্রকারান্তরে ওই সব ধর্মের নামে বিশৃঙ্খলাবাদীদের ক্ষমতা বৃদ্ধির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেবার মত নয়।
চতুর্থত ‘তাবলীগ জামাত’ এ দেশকে একটি ওহাবীরাষ্ট্রে পরিণত করার অন্যতম কার্যকর হাতিয়ার। তারা হয়তো মুখে অরাজনৈতিক জামাত বলে হলফ করেও বলবে; কিন্তু তাদের ওই হলফ ও বাহ্যিক জুব্বা, পাগড়ি ও চিল্লা ইত্যাদি দিয়ে বিচার করলে চলবে না; বরং এরা যে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে এদেশের রাজনীতির সাথে জড়িত, বরং তৎপর -তাও বিবেচনায় আনা দরকার। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তাবলীগপন্থী ক্বওমী-ওহাবীদের ভূমিকা কি ছিল তা দেশবাসী ভালভাবে জানেন। তখন তারা মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে মারাত্মকভাবে অংশ নিয়েছিলো, এরপর ‘আমরা হব তালেবান-বাংলা হবে আফগান’ স্লোগানটিও তাদের। এসব বিষয়ের খোঁজ-খবর নিলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠবে। উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের তালেবান এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকপক্ষও খারেজী-ওহাবী মতবাদের লোক।
পঞ্চমত এদেশে সুন্নী মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, ওহাবীরা নয়। কিন্তু এসব ওহাবী-ক্বওমী-তাবলীগীরা সংখ্যালঘু সুলভ ঐক্য, বাহ্যিক বেশ-ভূষা, জমাতবন্দিতা ও সুচতুরতা, সর্বোপরি একই মতবাদী বিদেশীদের পৃষ্ঠপোষকতা (যেমন- বর্তমান সৌদিয়া প্রভাবিত আরবীয়রা) এবং অব্যাহত কর্মতৎপরতার মাধ্যমে তাদের অবস্থানকে উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের বলে প্রদর্শন করে আসছে। এরই পরম্পরায় এরা প্রাগ-একাত্তরকালীন সময়ে পাকিস্তানী হানাদারদের ছত্রছায়ায় কোন্ ভূমিকায় ছিল তা হয়তো দেশবাসী বিভিন্ন কারণে ভুলে যাচ্ছেন। এক কালের ক্ষমতাসীন জোটের সাথে অংশীদারিত্বের সুবাদে তারা সুন্নী মুসলমান ও নিরীহ্ মানুষের উপর নানাভাবে আঘাত হানতে আরম্ভ করেছিল। হযরত শাহ্জালাল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযারে ওরসের মুনাজাত চলাকালে বোমা মেরে যা-ইরীন হত্যা, ওই মাযার এবং চট্টগ্রামের হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযারের পুকুরে বিষপ্রয়োগ করে মাছ ইত্যাদি হত্যা করা এরই প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত বৈ-কি।
ষষ্ঠত ‘তাবলীগী ইজতিমা’র এ কয়েক বছরের জমায়েতকে তারা মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামী জমায়েত বলে চমক লাগাতে চাচ্ছে; অথচ জশনে জুলূস ও সুন্নী মুসলমানদের অন্যান্য বহু বিশাল বিশাল জমায়াতের তুলনায় তাদের ইজতিমার পরিসর অনেক ছোট।
সপ্তমত বিশ্বের কয়েকটা দেশের নিছক ওহাবী-তাবলীগীদের ইজতিমাকে ‘বৃহত্তর ইজতিমা’, ‘হজ্বতুল্য জমায়েত’ ইত্যাদি বলার পক্ষে যুক্তি অগ্রহণযোগ্য। দেশ-বিদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী খাঁটি সুন্নী, নবী-ওলীগণের প্রকৃত আশিক্ব-ভক্ত, সুন্নী পীর-মাশাইখ ও তাঁদের ভক্ত-মুরীদান এবং মাযারভক্ত মুসলমানরা এ তাবলীগ জামাত এবং ওহাবী-খারেজীদেরকে তাদের জঘন্য আক্বীদা ও কর্মকাণ্ডের কারণে মোটেই পছন্দ করেন না; বরং মানুষের ঈমান-আক্বীদা, এমনকি বিভিন্ন কারণে দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধির পথে হুমকি মনে করেন তা সরেজমীনে তদন্ত বা জরিপ চালালে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাবে। তদুপরি, একটি সুন্নী মতাদর্শবিরোধী সম্প্রদায়ের কর্মকাণ্ডকে ক্রমশ দেশের জাতীয় কর্মসূচিতে পরিণত করার মত বদান্যতা (!) প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহিত করার ফলে ক্ষমতাসীন সরকারগুলো দেশের বৃহত্তম সূন্নী জনগোষ্ঠীর বিরাগভাজন হচ্ছে। কারণ, এ তাবলীগী-ওহাবীদের উত্থানকে দেশের সুন্নী মুসলমানগণ এক অশুভ সঙ্কেত বলে মনে করেন। এ সঙ্কেত কখনো বাস্তবরূপ ধারণ করলে তা কারো জন্য মঙ্গলময় হবে না বলা যায়।
অষ্টমত ওহাবী-তাবলীগীদের সাথে সুন্নী মুসলমানদের বিরোধ কোন খুঁটিনাটি কিংবা ব্যক্তিগত বিষয়ে নয়; বরং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মৌলিকই। কারণ, ওহাবী-দেওবন্দী-তাবলীগীদের (পূর্বোল্লিখিত) আক্বীদা ও আমলগুলো কোন সুন্নী, বরং কোন মুসলমান মাত্রই বরদাশ্ত করতে পারে না। তবুও তারা ইসলামের আদলে ওইগুলোকে শুধু নিজেরা গ্রহণ করেনা, বরং মুসলিম সমাজে প্রচার এবং প্রতিষ্ঠা করতেও সোচ্চার। ওহাবী-দেওবন্দীদের উত্থানের গোড়ার দিক থেকেই বিশ্বের সুন্নী ওলামা-মাশাইখ, বিশেষত উপমহাদেশের সুন্নী মুসলিম ও ওলামা-মাশাইখ তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে আসছেন। সেই চ্যালেঞ্জের জবাবে তারা আত্মশুদ্ধির পরিবর্তে তাদের আসল পরিচয় গোপন করে অন্যভাবে মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস চালায়। যারা তাদের ওইসব ভ্রান্ত আক্বীদা ও আমলের কথা বলে মানুষকে সতর্ক করেন, তাদের বিরুদ্ধে সুকৌশলে অপ-প্রচার ও চক্রান্ত চালায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এভাবে তারা নিজেদের প্রকৃত পরিচয় গোপন করতে গিয়ে একতরফাভাবে এমনি প্রচারণা চালিয়ে এসেছে যে, এখন তাদের আসল পরিচয় তুলে ধরলে অনেকের নিকটই অবিশ্বাস্য মনে হবে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে, এমন জামাত ও জামাতের মুরব্বীদের এ ধরনের জঘন্য আক্বীদাও থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মৌং ইলিয়াসের শিক্ষাগুরু ও তার অনুকরণীয় বুযুর্গ এবং উপমহাদেশের গোটা ওহাবী সম্প্রদায়ের নিকট বরণীয় ব্যক্তি, তাদের হাকীমুল উম্মত মৌং আশরাফ আলী থানভী সাহেবের কথা ধরুন। ওহাবীরা প্রচার করেছে, তিনি বড় বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর নামে তারা ‘রহমাতুল্লাহি আলাইহি’ বলে থাকে। বহু কিতাব-পত্রও তিনি লিখেছেন। কিন্তু যখনই বলা হবে যে, তিনি তাঁর লিখিত ‘হিফযুল ঈমান’-এ হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’-এর জ্ঞানকে জানোয়ার, পাগল ও শিশুদের জ্ঞানের সাথে তুলনা করে কুফর করেছেন, তাকে আ’লা হযরত ইমাম শাহ্ আহমদ রেযা বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হেরমাঈন-শারীফাঈনের ৩৩ জন আলিম তার এবং আরো কয়েকজন দেওবন্দী আলিমের কুফর প্রমাণিত করে এ ফাতওয়া জারী করা সত্ত্বেও তিনি তার কুফরী বাক্যকে প্রত্যাহার করে ঈমানের পথ অবলম্বন করেননি, বরং তার মৃত্যুর পর দেওবন্দী-ওহাবীরাও তার ভুল স্বীকার করেননি, তখন হয়তো অনেকে আঁতকে ওঠবেন, আর দেওবন্দী ভাবধারার ওহাবী-তাবলীগীরা বলে বেড়াবেন সুন্নীরা তাদের মুরব্বীকে কাফির বলছেন ইত্যাদি।
এখানে একথা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় ও স্মরণীয় যে, ওহাবী-তাবলীগী-দেওবন্দীরা তাদের মুরব্বীদের কুফরীকেও মেনে নিয়ে তাদের পক্ষে প্রচারণা চালানোর যতই বাহ্যিক চাকচিক্যপূর্ণ আয়োজন ইত্যাদি করুক না কেন, উপমহাদেশের সুন্নী মুসলমানগণ তাদের মিষ্ট কথায় ভুলেননি, ভুলবেনও না; বরং তাদের ও তাদের মুরব্বীদের কুফরী ও গোমরাহীপূর্ণ আক্বীদাগুলো, আল্লাহ্ ও নবী-ওলীর শানে কৃত বেআদবীগুলো প্রত্যাহার করে নিয়ে তাওবা-পূর্বক আহলে সুন্নাতের মতাদর্শ অবলম্বন না করা পর্যন্ত তাদের সাথে কোনরূপ আপোস করবেন না, করতেও পারেন না। আর এ জন্য কোন বিবেকবান মানুষ সুন্নীদেরকে দায়ীও করবেন না। কারণ, ধর্মে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য ওই ওহাবী-দেওবন্দীরাই দায়ী, সুন্নীরা নন। সুন্নীগণ এ ক্ষেত্রে তাঁদের ঈমানী দায়িত্ব পালন করেন মাত্র।
নবমত প্রসঙ্গতঃ সচেতন সুন্নী কর্ণধারবৃন্দের ঈমানী দায়িত্ব পালন ও দেওবন্দী-ওহাবীদের হঠকারিতা প্রসঙ্গে আলোচনা করার প্রয়াস পেলাম। ভারতে ওহাবী মতবাদ প্রচারের প্রাথমিক পর্যায়ে মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর জঘন্য ও বিতর্কিত পুস্তক ‘কিতাবুত্ তাওহীদ’-এর ভাবানুবাদ ‘তাক্বভিয়াতুল ঈমান’ প্রকাশ করে বিশেষতঃ ‘নবী করীমের সমকক্ষ থাকা সম্ভব বলে প্রচার করে ‘খাতামুন্নাবীয়্যীন’ ইত্যাদি গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত আরো কেউ আত্মপ্রকাশ করাও সম্ভব বলে ফেললো, তখন আহলে সুন্নাতের ওলামা-ই কেরাম বিশেষ করে ‘খাতেমুল হুকামা’ আল্লামা মুহাম্মদ ফয্লে হক খায়রাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের ওই ভুল ও ঈমানবিধ্বংসী দৃষ্টিভঙ্গির খণ্ডন লিখিত ও মৌখিকভাবে করেছেন। তবুও না মৌং ইসমাঈল দেহলভী তার কথা প্রত্যাহার করেছেন, না ওহাবীরা এই ইসমাঈল দেহলভীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তাছাড়া, মীর্যা গোলাম আহমদ ক্বাদিয়ানী ভণ্ড নুবূয়তের দাবিদার হয়ে মুরতাদ হল। মুসলমানরা একবাক্যে তাকে ধিক্কার দিল। এ দেশের সুন্নীদের সাথে ওহাবীরাও তাকে কাফির-মুরতাদ বলার ক্ষেত্রে সুর মিলালো। তারা সেটাকে রাজনৈতিক ইস্যু করে ক্বাদিয়ানীদের অমুসলমান ঘোষণা করার দাবিও করেছে। অথচ ইতোপূর্বে তাদেরই মুরব্বী, দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতভী সাহেব কোরআনী আয়াতের ‘খাতাম’ শব্দের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ‘আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরে কোন নবী আসলেও হুযূরের শেষনবী হবার মধ্যে অসুবিধা নেই’ বলে ফাত্ওয়া দিয়ে ওই গোলাম আহমদ ক্বাদিয়ানীর জন্য পথ খুলে দিয়েছেন। দেওবন্দী মুফতী মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী ‘আল্লাহর পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভব’ বলে ফাতওয়া দেন। মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জ্ঞান অপেক্ষা শয়তান ও মালাকুল মাওতের জ্ঞান বেশি বলে তাঁর কিতাবে লিখেছেন। (দু’জায়গায়) উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেওবন্দী ও তাবলীগীদের হাকীমুল উম্মত মৌং আশরাফ আলী থানভী হুযূর করীমের জ্ঞানকে গৃহপালিত পশু, শিশু ও পাগলের জ্ঞানের সাথে তুলনা করেছেন। বস্তুতঃ এসব মন্তব্য যে, যথাক্রমে আল্লাহ্ ও তাঁর হাবীবের শানে জঘন্য বেয়াদবী হবার কারণে নিশ্চিত ‘কুফর’ -তা বিবেকবান মাত্রই বলতে পারেন।
ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে মিল্লাত, শাহ-ই বেরেলী ইমাম আহমদ রেযা খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের ওই সব মন্তব্য ও আক্বীদা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছেন। শতাধিক বিষয়ের বিশারদ, সহস্রাধিক গ্রন্থ-পুস্তকের রচয়িতা, অদ্বিতীয় ফিক্ব্হশাস্ত্রবিদ আ’লা হযরতের দৃষ্টিতেও ওইসব মন্তব্য নিশ্চিত ‘কুফর’ বলে সাব্যস্ত হলে তিনি প্রত্যেকের নিকট জবাব চেয়ে চিঠি লিখেছেন। দীর্ঘদিন তাদেরকে সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনরূপ জবাব কিংবা অনুশোচনার মনোভাব না পেয়ে, বরং হঠকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ১৩২০ হিজরিতে ‘আল্-মু’তামাদ আল্-মুন্তাক্বাদ’ প্রণয়ন করে- মীর্যা ক্বাদিয়ানী, মৌং কাসেম নানুতভী, মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী, মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী এবং মৌং আশরাফ আলী থানভীর উপর, ওই সব মন্তব্যের ভিত্তিতে কুফরের ফাতওয়া আরোপ করলেন। (এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রণীত হয়- ‘আল্-মু’তামাদ আল্-মুস্তানাদ’ নামে।)
আমি আবারো জোরালোভাবে বলতে পারি যে, বস্তুতঃ আ’লা হযরতের এ ফাতওয়া দেওবন্দী আলিমদের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তিগত মনগড়া ভিত্তিতে ছিল না, বরং নিরেট আল্লাহ্ ও তাঁর নবীর মর্যাদা রক্ষার খাতিরেই ছিল। দ্বীন ইসলামের পবিত্রতা ও সত্যতাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে তিনি তাঁর ঈমানী দায়িত্বই পালন করেছেন। অতঃপর ১৩২৪ হিজরিতে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উপরোক্ত কিতাব থেকে উল্লিখিত ব্যক্তিদের উপর আরোপিত ফাতওয়ার অংশখানা ‘হেরমাঈন শরীফাঈন’-এর ওলামা কেরামের নিকট পেশ করলেন। যার উপর উভয় হেরমের ৩৩জন আলিম তাঁদের জোরালো সমর্থন সূচক মন্তব্য লিপিবদ্ধ করেছেন। এ ফাতওয়া ও ওই সব মন্তব্য সহকারে ১৩২৪ হিজরিতেই ‘হুসামুল হেরমাঈন ‘আলা মানহারিল কুফরি ওয়াল মায়ন’ (কুফর ও মিথ্যার গ্রীবাদেশে হেরমাঈন শরীফাঈনের শানিত তরবারী) নামে প্রকাশ করা হয়েছে। ওই কিতাব এখনো বিদ্যমান। বাংলায়ও অনূদিত এবং প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ওই ব্যক্তিরা আত্মশুদ্ধির পথ অবলম্বন করেন নি।
উল্লেখ্য, পরবর্তীতে মৌং হুসাইন আহমদ টাণ্ডভী ও মৌং মুরতাদ্বা হাসান দরভঙ্গীর মত দেওবন্দী আলিমগণও স্বীকার করেছেন যে, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর নবীর শানে এহেন বেআদবীপূর্ণ মন্তব্য করে তারা যে কোন অবস্থাতেই কাফির না হয়ে পারে না। আর ইমাম আহমদ রেযাও তাদের ওই সব কুফরিপূর্ণ মন্তব্য দেখে তাদের উপর কুফরের ফাত্ওয়া আরোপ করে শুধু তাঁর ঈমানী দায়িত্বই পালন করেন নি, বরং তা না করলে তিনি নিজেও কাফির হয়ে যেতেন। কারণ কুফরকে সমর্থন করা এবং কুফর মনে না করাও কুফর। [আশ্-শিহাবুস্ সাক্বিব ইত্যাদি দ্রষ্টব্য]
সুতরাং দেওবন্দী ওহাবী-তাবলীগীদের যেখানে ওইসব কুফরী বক্তব্য, আক্বীদা এবং এমন বক্তা ও আক্বীদাসম্পন্নদের প্রত্যাখ্যান ও বর্জন করা উচিত ছিল, সেখানে তাদেরকে মুরব্বী ও অনুকরণীয় হিসেবে গ্রহণ ও বরণ করে তাদেরই তথাকথিত শিক্ষার প্রসার ও প্রতিষ্ঠার জন্য ‘তাবলীগের ছয় উসূল’ কায়েম করছে, জামাতবন্দী হচ্ছে, বিশাল বিশাল ‘ইজতিমা’ ইত্যাদি করছে, কায়েম করছে কওমী ধাঁচের মাদরাসার পর মাদরাসা, প্রতিষ্ঠানের পর প্রতিষ্ঠান, অপরদিকে আ’লা হযরত ও সুন্নী মুসলমানদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সুন্নী মতাদর্শকেই অবলম্বন করার পরিবর্তে তাঁদের প্রতি উল্টো মিথ্যা অপবাদ দিলে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে নানা প্রপাগাণ্ডা ও চক্রান্ত করলে তাদের সম্পর্কে মন্তব্যও নি®প্রয়োজন বৈ-কি।
দশমতঃ সর্বোপরি, তাদের ইজতিমাগুলোতে সফর করে যাওয়া তাদের মুরব্বীর ফাত্ওয়া অনুযায়ীও হারাম এবং অবৈধ কাজ। কারণ, ‘তাবলীগ জামাত’-এর উৎসপুরুষ হলেন মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী। এ ইবনে আবদুল ওহাবের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক গুরু হলেন ইবনে তাইমিয়্যাহ্। দেওবন্দী আলিমগণও ইবনে তাইমিয়্যার চিন্তাধারার সমর্থক। ইবনে তাইমিয়্যার মতে, তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও এমনকি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকতময় যিয়ারতের উদ্দেশ্যেও সফর করা যাবে না। তারই অনুসরণে মৌং আবদুর রহীম ওহাবী তার ‘সুন্নাত ও বিদ‘আত’-এ লিখেছেন হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবেনা, যেতে চাইলে মসজিদে নববীর যিয়ারত বা তা’তে নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই যেতে হবে। ওহাবীপন্থী মি.মওদূদী-ওহাবীপ্রমুখ খাজা গরীব নাওয়ায ও হযরত সালার-ই মাস‘ঊদের মাযারে যাওয়াকে জঘন্য পাপ বলে ফাতওয়া দিয়েছে; অথচ নবী পাকের রওযা-ই পাকের যিয়ারত সম্পর্কে হাদীস শরীফে বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পবিত্র ক্বোরআনে হুযূরের দরবারে যাওয়ার মহা উপকার এরশাদ হয়েছে। বিশ্বের ইমামগণ পর্যন্ত নবী পাক এবং ওলীগণের রওযা ও মাযার শরীফে যিয়ারতের উদ্দেশে সফর করেছেন। কিন্তু টঙ্গীসহ বিভিন্ন স্থানে উদ্দেশ্যে সফর করার, ওইগুলোতে হাজীদের মত অবস্থান করার এবং তাদের চিল্লাগুলোতে যোগদান করে জামাতবন্দী হয়ে ওহাবিয়াত প্রচার করার পক্ষে শরীয়তের কোন প্রমাণ তো নেইই; বরং উল্টো তাদের মুরব্বীদের ফাত্ওয়ায় কঠোরভাবে নিষেধই পাওয়া যায়। সহীহ হাদীস শরীফে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এহেন ভ্রান্তদের প্রসঙ্গেই এরশাদ ফরমায়েছেন, “ইয়্যা-কুম ওয়া ইয়্যা-হুম” (তোমরা তাদের কাছে যেওনা, তাদেরকেও তোমাদের কাছে আসতে দিও না)। অথচ এ ইজতিমা আসলে তাবলীগীরা তো আছেই, তাদের সঙ্গে সরলপ্রাণ মুসলমানগণ জরুরি কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে ওদিকে ধাবিত হয়। ফলে অফিস-আদালত, এমনকি হাসপাতাল-ক্লিনিকের কাজকর্ম পর্যন্ত ব্যাহত হয়। সরকারকে ব্যস্ত থাকতে হয় তাদেরকে সামাল দিতে ইত্যাদি। রেল কর্তৃপক্ষ ঠিকমত ভাড়াও পায় না।
পরিশেষে, কারো নিছক বাহ্যিক অবস্থা দেখে ভুলে না গিয়ে তার মূল ও প্রকৃত অবস্থার খোঁজ-খবর নিয়ে পা বাড়ানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যথায়, মহাক্ষতির সম্মুখীন হওয়া অনিবার্য। উপরিউক্ত বর্ণনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট হল যে, তাবলীগ জামাত ও তাদের ইজতিমার বাহ্যিকরূপ যা-ই হোক না কেন, তাদের মূল হচ্ছে ওহাবী-খারেজীর মতবাদ অনুসরণ। তাদের আসল উদ্দেশ্যই হচ্ছে এ দেশে ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচার করা। এ মতবাদ সুন্নী মতাদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই তাদের ইজতিমা ও মুনাজাতেরও কোন গুরুত্ব নেই। আক্বীদা ও উদ্দেশ্য বিশুদ্ধ না হলে আল্লাহর দরবারে কোন আমলের গুরুত্বই নেই।
তাই এ ওহাবী তাবলীগ জামাত ও তাদের ইজতিমাগুলো সম্পূর্ণরূপে বর্জন ও প্রত্যাখ্যান করার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
ইসলামে তাবলীগ বা অমুসলমানদের নিকট ধর্মপ্রচার এবং তা’লীম বা দ্বীনের বিষয়াদির শিক্ষাদানের গুরুত্ব আছে। সুতরাং এ তাবলীগ ও তা’লীমের প্রসার উভয় জগতের কল্যাণ তখনই বয়ে আনবে যদি ইসলামের সঠিক রূপরেখা (সুন্নী মতাদর্শ)-এর প্রচারণা ও শিক্ষা দেওয়া হয়। সুখের বিষয় যে, সম্প্রতি হুযূর কেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাদের শাহ্ ও সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবের শাহ্ সাহেব ‘দাওরা-ই ‘দাওয়াত-ই খায়র’-এর প্রবর্তন করে। মুসলমানদের এ চাহিদা পূরণ করেছেন। তাই, এটিই ক্ষেত্রে এ’ দু’টি হচ্ছে যথার্থ বিকল্প। তাছাড়া, সম্প্রতি বৃহৎ পরিসরে ‘সুন্নী ইজতিমা’র আয়োজনও যুগের চাহিদা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আসুন! আমরা যেন সবসময় সুন্নী মতাদর্শের উপরই অটল থাকার চেষ্টা করি। আল্লাহ্ পাক তাওফীক্ব দিন; আ-মী-ন্।