কতিপয় কুফরী আক্বিদা

কতিপয় কুফরী আক্বিদা

নবী-রাসূলগণের প্রতি ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি…
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সর্বসম্মত আক্বীদা হচ্ছে- নবীগণ আলায়হিস্ সালাম নিষ্পাপ। আল্লাহ্ পাক সব সময় তাঁদেরকে স্বভাবগতভাবে নিষ্পাপ করে সৃষ্টি করেছেন। তদুপরি তিনি সব সময় তাঁদেরকে হেফাযত করেছেন। কিন্তু মওদুদী তাঁদের সম্পর্কে কি বিশ্বাস রাখেন দেখুন।
নবীগণ মাসূম নন। প্রত্যেক নবী গুনাহ্ করেছেন। [তাফহীমাত-২য় খণ্ড, পৃ.৪৩]
ইসমত বা নিষ্পাপ হওয়াটা মূলত নবীদের প্রকৃতিগত (جبلى) গুণ নয়। এখানে একটি সূক্ষ্ম বিষয় এই যে, আল্লাহ্ তা‘আলা ইচ্ছা করেই প্রত্যেক নবীর উপর থেকে কোন না কোন সময় হেফাযত উঠিয়ে নেন এবং তাদেরকে দু একটি গুনাহে লিপ্ত হতে দেন, যাতে করে মানুষ যেন তাঁদেরকে খোদা বলে ধারণা না করে এবং জেনে রাখে এরাও মানুষ। (নাঊযুবিল্লাহ্)
[মওদুদী কৃত.তাফহীমাত-২য় খণ্ড, ৪র্থ সংস্করণ ৫৬/৫৭ পৃ. এবং নির্বাচিত রচনাবলী (বাংলা), ২য় খণ্ড, ৭৪পৃ. আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করণ অক্টোবর ১৯৯১ ইং এবং ‘আল-ওস্তাদ আল-মওদুদী, ইয়ূসুফ বিন্নূরী, করাচী, পাকিস্তান, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক থেকে মুদ্রিত ও প্রচারিত]
অথচ নবীগণ যে খোদা নন, তা প্রমাণ করার জন্য মওদুদীর এ যুক্তিটা তার সম্পূর্ণ মনগড়া; আল্লাহ্ নবীগণের নামে জঘন্য অপবাদ। ফেরেস্তারাও তো নিষ্পাপ। তাঁদের বেলায় ভ্রান্ত মওদুদী কি বলবেন? আল্লাহ্ ও নবীগণের শানে এমন অপবাদ কুফরী বৈ কিছুই নায়।
বস্তুত নবীগণ মওদুদীর মতে নিছক মানুষ হয়ে থাকেন এবং মানুষই মুমিনের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ মাপকাঠিতে সর্বদা অটল থাকতে সক্ষম হতে পারে না। প্রায়শই মানবীয় নাজুক মুহূর্তে নবীর ন্যায় শ্রেষ্ঠ মানুষও কিছুক্ষণের জন্য মানবিক দুর্বলতার সামনে পরাভূত হয়ে যান। [তরজুমানুল কুরআন, ৩৫তম, ৩২৭পৃ.] অন্যদের কথা তো স্বতন্ত্র প্রায়শই পয়গম্বরগণও তাদের কু-প্রবৃত্তির মারাত্মক আক্রমনের সম্মুখীন হয়েছেন। (নাঊযুবিল্লাহ্)
[তাফহীমাত: ২য় খণ্ড, ৫ম সংস্করণ ১৯৫পৃ. এবং নির্বাচিত রচনাবলী (বাংলা) ২য় খণ্ড, ২৮ পৃ. আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করণ ১৯৯১ ইং]
এটাও মওদুদীর চরম ভ্রান্তি। কারণ, নবীগণ নিষ্পাপ, অসাধারণ ও নূরানী মানুষ; তাঁরা সাধারণ মানুষ নন। জন্মগতভাবেই তাঁরা কুপ্রবৃত্তি মুক্ত। পবিত্র ক্বোরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস শরীফে এর অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।
হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম সম্পর্কে কুফরী আক্বিদা
মওদুদীর মতে-হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম মানবিক দুর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট ত্বরিৎ জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফলে আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফরমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন। (নাঊযুবিল্লাহ্) [মওদুদী কৃত. তাফহীমুল কুরআন, (উর্দু) ৩য় খণ্ড, ১২৩ পৃ.] অথচ হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম-এর মধ্যে কোন মানবিক দুর্বলতা ছিলো না। তাঁর গন্ধম আহারের মধ্যে অগণিত হিকমত রয়েছে। তাঁকে আল্লাহ্ তা‘আলা পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি বানানোর জন্য সৃষ্টি করে প্রথমে বেহেস্তে রেখেছিলেন। গন্ধম আহার করা দুনিয়ায় আসার জন্য একটা হিকমতপূর্ণ কারণ বা মাধ্যম ছিলো। তাঁর ভুলে যাওয়া এ পৃথিবী আবাদ হওয়ার কারণ ছিলো। তা অগণিত সাধারণ মানুষের অসংখ্য এবাদতের চাইতেও উত্তম ছিলো। এ হিকমতের বহিঃপ্রকাশ সম্পর্কে গোমরাহ্ মওদুদীর একজন মহান নবীর বিরুদ্ধে কী ধরনের জঘন্য মন্তব্য করলো!
হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম সম্পর্কে কুফরী আক্বিদা
মওদুদীর মনে করে- হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের জযবা স্থান পেয়েছিল।(নাঊযুবিল্লাহ্) ‏[মওদুদী কৃত. তাফহীমুল কুরআন, ২য় খণ্ড, ৩৪৪ পৃ. ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪] এটাও মওদুদীর জঘন্য অপবাদ। বস্তুতঃ না হযরত নূহ আলায়হিস্ সালামের পবিত্র চিন্তাধারায় কোন ত্র“টি ছিলো, না জাহেলিয়াতের কোন জযবা তাঁকে স্পর্শ করেছিলো। জাহেলিয়াতের অন্ধকার দূরীভূত করার জন্যে নবী-রসূল প্রেরিত হন।
হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম সম্পর্কে কুফরী আক্বিদা
মওদুদী বলেন, এখানে আর একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয় যে হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সাল্লাম যখন নক্ষত্র দেখে বলেছিলেন ‘এটা আমার প্রতিপালক’ এবং চন্দ্র-সূর্য দেখে এগুলোকেও নিজের প্রতিপালক হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন তখন সাময়িকভাবে হলেও কি তিনি শিরকে নিপতিত হননি?
[তাফহীমুল কুরআন, ১ম খণ্ড, ৫৫৮পৃ.]
মওদুদী হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালামকে সাময়িকভাবে মুশরিক ছিলেন বলতে চেয়েছেন। (নাঊযুবিল্লাহ্)
এটাও মওদুদীর মৃত্যুদণ্ড উপযোগী অপরাধ। তার মনগড়া তাফসির ব্যতীত সব নির্ভরযোগ্য তাফসিরে আছে- ক্বোরআন শরীফে নক্ষত্র, চন্দ্র ও সূর্য সম্পর্কে তিনি যে ‘হা-যা- রাব্বী-’ বলছেন, তার পূর্বে একটি প্রশ্নবোধক (اَ) উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ প্রশ্নের আকারে তিনি বলেছিলেন, ‘এটা কি আমার রব?’ অথবা এর আগে ‘তোমাদের ধারণায়’ বাক্যটি উহ্য রয়েছে। কারণ হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম একেবারে শিশুকাল থেকেই যে ‘আ-রিফ বিল্লাহ্’ (খোদা পরিচিতি সম্পন্ন) ছিলেন তার অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।
হযরত ইউনুস আলায়হিস্ সালাম সম্পর্কে
হযরত ইউনুস আলায়হিস্ সালাম এর দ্বারা রিসালতের দায়িত্ব আদায় করার ব্যাপারে কিছু ত্র“টি হয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন। (নাঊযুবিল্লাহ্)
[তাফহীমুল কুরআন, ২য় খণ্ড, সূরা ইউনুস (টিকা দ্রষ্টব্য) ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪]
বস্তুতঃ হযরত ইউনুস আলায়হিস্ সালাম-এর ঘটনার মধ্যে এটাই প্রকাশ পেয়েছে যে, তিনি আল্লাহর একান্ত নৈকট্যধন্য ও প্রিয় বান্দা ছিলেন। মওদুদী সেটাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। বিস্তারিত জওয়াব বিশুদ্ধ তাফসির গ্রন্থাবলীতে রয়েছে।
হযরত মুসা আলায়হিস্ সালাম সম্পর্কে
নবী হওয়ার পূর্বে হযরত মুসা আলায়হিস্ সালাম দ্বারা একটি বড় গুনাহ্ হয়েছিল। তিনি এক ব্যক্তিকে কতল করেছিলেন। [রাসায়েল ও মাসায়েল-১ম খণ্ড, ৩১ পৃ.]
হযরত মুসা আলায়হিস্ সালাম এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ অধৈর্যশীল বিজয়ীর মত যে তার শাসন ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত না করেই মার্চ করে সম্মুখে চলে যান আর পেছনে ফেলে যাওয়া এলাকায় বিদ্রোহের দাবানল দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তরজুমানুল কুরআন -২৯/৪-৫]
মূলতঃ উক্ত ঘটনায় অন্যায়ের প্রতি একজন মহান নবীর অসাধারণ ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বস্তুতঃ নবী যাকে হত্যা করেন সেও জাহান্নামী, নবীকে যে শহীদ করে, সেও জাহান্নামী। তাছাড়া তখনো হযরত মুসা আলায়হিস্ সালাম-এর নুবূওয়ত-এর ঘোষণা হয়নি। নবী হয়ে ফিরে আসার পর সত্যি তিনি সমাজ থেকে সব অনাচার দূরীভূত করেছিলেন।
হযরত ইউসুফ আলায়হিস্ সালাম সম্পর্কে
হযরত ইউসুফ আলায়হিস্ সালাম ‘আমাকে মিসরের রাজকোষের পরিচালক নিয়োগ করুন’ এ কথাটি বলে শুধু অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্যই প্রার্থনা করেননি, কারো কারো ধারণা, বরং তিনি রীতিমত ডিক্টেটর ‘সর্বাধিনায়ক’ হবারই প্রার্থনা করেছিলেন। এরই ফলশ্র“তিতে বর্তমান ইতালীর মুসোলিনির যে মর্যার্দা তিনিও এর কাছাকাছি মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন। (নাঊযুবিল্লাহ্)
[তাফহীমাত: ২য় খণ্ড, ১২২পৃ. ৫ম সংস্করণ এবং নির্বাচিত রচনাবলী (বাংলা) ২য় খণ্ড, ১৫১ পৃ আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করণ ১৯৯১ ইং, তরজুমানুল কুরআন, মুহররম সংখ্যা ১৩৬৪হি.]
বস্তুতঃ মওদুদী জানে না যে, গোটা দেশে যখন কর্তৃত্ব ভার গ্রহণ করে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য কেউ থাকে না, নিজে দেখতে পাচ্ছেন যে, তিনিই জাতিকে রক্ষা করার যোগ্যতা রাখেন, তখন এ সদুদ্দেশ্যে নিজেই কর্তৃত্ব ভার চেয়ে নেওয়া জায়েয বরং জরুরী। মওদুদী কি এটা জানে না যে, সে দিন হযরত ইউসুফ আলায়হিস্ সালাম কর্তৃত্ব ভার চেয়ে না নিলে গোটা মিশর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের লোকজনের ধবংস অনিবার্য ছিলো। আল্লাহর একজন মনোনীত প্রতিনিধি (নবী)-কে মুসোলিনীর সাথে তুলনা করা মওদুদীর চরম বেয়াদবীই ছিলো।
হযরত দাউদ আলায়হিস্ সালাম সম্পর্কে কুফরী আক্বিদা
হযরত দাঊদ আলায়হিস সালাম এক বিবাহিতা যুবতীর উপর আসক্ত হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার স্বামীর নিকট তালাকের দরখাস্ত করেছিলেন। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তাফহীমাত, ২য় খণ্ড, ৪২ পৃ.] হযরত দাঊদ আলায়হিস্ সালাম এক বিবাহিতা যুবতীর উপর আসক্ত হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার এলাকায় ইসরাঈলীদের সাধারণ রেওয়াজের বশবর্তী হয়ে তার স্বামী উরিয়ার কাছ থেকে তালাকের আবেদন করেন। (নাঊযুবিল্লাহ্)
[তাফহীমাত- ২/৪২, ২য় প্রকাশ, তাফহীমুল কুরআন (উর্দু), ৪র্থ খণ্ড, সূরা সাদ, ৩২৭ পৃ. ১ম সংস্করণ অক্টোবর ১৯৬৬ ইং]
হযরত দাঊদ আলায়হিস্ সালাম যে কাজটি করেছিলেন তাতে প্রবৃত্তির কামনার কিছু দখল ছিল শাসন ক্ষমতার অসংগত ব্যবহারের সাথেও তার কিছু সম্পর্ক ছিল এবং তা এমন কোন কাজ ছিল যা কোন ন্যায়নিষ্ঠ শাসকের জন্য শোভনীয় ছিল না। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তাফহীমুল কুরআন-১৩১৫, আধুনিক প্রকাশনী, ১১শ প্রকাশ] হায়রে মওদুদীর গুমরাহী! হযরত দাঊদ আলায়হিস্ সালাম তাঁর শরীয়তের বিধান অনুসারে তিনি কাজটি করেছেন। এ ক্ষেত্রে খোদায়ী ব্যবস্থাপনায় তিনি সাথে সাথে অধিকতর উত্তম কাজটিও সমাধা করেছেন। তিনি প্রথমে যা করতে চেয়েছিলেন তাতে খোদ্ আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে তার জন্য অনুমতি ছিলো। তিনি কখনো না ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, না তিনি ন্যায়নিষ্ঠার সীমা বিন্দুমাত্র অতিক্রম করেছেন। ঈমানী দৃষ্টিভঙ্গিতে পূর্ণ ঘটনা পর্যালোচনা করলে এটা সুস্পষ্ট হবেই।
হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম সম্পর্কে কুফরী আক্বিদা
হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম মারা গেছেন একথাও বলা যাবে না বরং বুঝতে হবে ব্যাপারটি অস্পষ্ট। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তাফহীমুল কুরআন-১ম খণ্ড, সূরা নিসা-৪২১পৃ.] অথচ হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম-এর এখনো জীবিত থাকার এবং আসমানে অবস্থান করার বিষয়টা পবিত্র ক্বোরআন দ্বারা একেবারেই স্পষ্ট। মওদুদী তো ক্বোরআনকেও মানল না। সূরা আলে ইমরানের ৫৫নং আয়াত ও এর তাফসীর দ্রষ্টব্য।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে মওদুদীর কুফরী আক্বিদা
আল্লাহ্ তা’আলার নিকট কাতর কণ্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্র“টি হয়েছে কিংবা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।
[তাফহীমুল কুরআন (বাংলা), ১১শ খণ্ড, ২৮০পৃ., মু:ওরিয়েন্টাল প্রেস ঢাকা ১১৮০ ইং
এবং কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষ্য (বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ আধুনিক প্রকাশনী: জুন ২০০২] মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশীভূত হয়ে গুনাহ করেছিলেন। [তরজুমানুল কুরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা ১৩৬৫হি.] হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম রিসালাতের দায়িত্ব পালনে ত্র“টি করেছেন তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। [তাফহীমুল কুরআান, সূরায়ে নসর এর তাফসীর]
মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তের বছর পর্যন্ত আরবের লোকদের মধ্যে ইসলামের মৌখিক ওয়াজ ও দাওয়াতের সর্বাত্মাক প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর শেষে যখন অস্ত্র ধারণ করেছিলেন তখন মানুষের মন আপনা-আপনি সত্য গ্রহণে বিগলিত ও ইসলামে শামিল হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। [আল জিহাদ ফিল ইসলাম ১৭৩-১৭৪ পৃষ্ঠা ২০০২ইং] ‘‘আরবের মত উপযুক্ত ক্ষেত্র পেয়েছিলেন বলেই তো হুযূর পাক (দ.) সফলকাম হয়েছিলেন, অন্যথায় তিনি কি এ সফলতা লাভ করতে পারতেন?’’ [আখলাকী বুনিয়াদেঁ, ১০পৃষ্ঠা]
বস্তুত সূরা ‘নসর’-এর ভুলব্যাখ্যা ইত্যাদির মাধ্যমে মওদূদী এসব ভ্রান্ত আক্বীদা রচনা করেছেন। তাও বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শানে। বিশুদ্ধ তাফসীরগুলোতে আছে, নবীগণ আলায়হিমুস্ সালাম নিষ্পাপ। এতদ্সত্ত্বেও তাঁদের ইস্তিগ্ফার করা দ্বারা হয়তো তাঁদের মর্যাদাবৃদ্ধি পায়, অথবা তা দ্বারা উম্মতের জন্য আল্লাহ্র দরবারে ক্ষমার জন্য সুপারিশ করা বুঝায়। কিন্তু এ ভ্রান্ত মওদূদী স্বয়ং নবীকুল সরদার সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শানে কী জঘন্য বললো দেখুন।
দাজ্জাল সম্পর্কিত হাদীস শরীফগুলোর আলোচনা প্রসঙ্গে মওদুদী বলেছেন এ সম্পর্কে যে সব কথা হুযূরের নিকট থেকে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে মূলত এগুলো ছিল তাঁর অনুমান (ক্বেয়াস)। এসব সম্পর্কে তিনি নিজেও সন্দিগ্ধ ছিলেন। এসব কথা তিনি ওহী লাভের ভিত্তিতে বলেননি বরং অনুমান করে বলেছিলন। (নাঊযুবিল্লাহ্) [রাসায়েল ও মাসায়েল ৫৫-৫৬পৃ.]
অথচ দজ্জাল সম্পর্কিত হাদীস শরীফগুলো একেবারে বিশুদ্ধ। সেহাহ্ সিত্তায় এর অকাট্য বর্ণনা এসেছে। কিন্তু ঈমানশূণ্য হৃদয়ে এর প্রতি বিশ্বাসটুকু স্থান পেলোনা। অথবা, তিনি নিজেও একজন পাতি দজ্জাল বিধায় আসল দাজ্জাল সম্পর্কিত বর্ণনাগুলো তার নিকট পছন্দ হলোনা।
পবিত্র কুরআন শরীফ সম্পর্কে মওদুদীর কুফরী আক্বিদা
কুরআন করীম হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট; কিন্তু নাজাত বা মুক্তির জন্য নয়। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তাফহীমাত- ১ম খণ্ড, ৩১২পৃ.] অথচ পবিত্র ক্বোরআন যেমন হেদায়তের জন্য যথেষ্ট, তেমনি মুক্তিদাতাও। কিন্তু বেঈমান মওদুদী পবিত্র ক্বোরআন সম্পর্কেও চরম বিভ্রান্তি ছড়ালো।
ফেরেশতা সম্পর্কে কুফরী আক্বিদা
ফেরেশতা প্রায় ঐ জিনিস যাকে গ্রীক ভারত ইত্যাদি দেশের মুশরিকরা দেবী-দেবতা স্থির করেছে। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন, ১০ পৃ.] এর মাধ্যমে মওদুদী প্রকারান্তরে ফেরেশতাদের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করার মতো বেঈমানী প্রদর্শন করলেন।
হাদীস সম্পর্কে মওদুদীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য
হাদীস কিছু লোক থেকে কিছু লোক পর্যন্ত অর্থাৎ মানুষের মুখে মুখে বর্ণিত হয়ে আসছে। এসবকে বড়জোর সঠিক বলে ধারণা করা যেতে পারে; কিন্তু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার কোন অবকাশ নেই। আর একথা স্পষ্ট যে আল্লাহর দ্বীনের যে সকল বিষয় এতো গুরুত্বপূর্ণ, যে এগুলো দ্বারা ঈমান ও কাফেরের মাঝে পার্থক্য নির্ণীত হয় সেগুলো গুটিকয়েক লোকের বর্ণনার উপর নির্ভর করে মানুষকে বিপদগ্রস্ত করা আল্লাহ্ তা’আলা কখনো পছন্দ করতে পারেন না। (নাঊযুবিল্লাহ্) [রাসায়েল ও মাসায়েল- ৬৭পৃ.]
বিশুদ্ধ হাদীস যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ইসলামের যে পদ্ধতি তা ইতিহাসে বিরল। বিবেকসম্পন্ন ও ঈমানদার মাত্রই এটা স্বীকার করতে বাধ্য। কিন্তু এ গোমরাহ্ মওদুদী ইসলামী শরীয়তের দ্বিতীয় মূলনীতি হাদিস শাস্ত্রকে সন্দেহপূর্ণ করার অপচেষ্টা চালিয়ে ইসলামের মূলে কুঠারাঘাত করলো।
সাহাবা কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বিদা
সাহাবীদিগকে সত্যের মাপকাটি জানবেন না। [দস্তরে জামাতে ইসলামী – ৭ পৃ.] সাহাবায়ে কেরাম সমালোচনার বাইরে নন। তাদের দোষ বর্ণনা করা যায়। সাহাবাদের সম্মান করার জন্য যদি জরুরি মনে করা হয় যে কোনভাবেই তাদের দোষ বর্ণনা করা যাবে না তবে আমার (মওদুদী) দৃষ্টিতে এটা সম্মান নয় বরং মূর্তি পূজা। যার মূলোৎপাটন এর লক্ষ্যে জামাতে ইসলামীর জন্ম।
[তরজুমানুল কুরআন-৩৫শ সংখ্যা, ৩২৭পৃ.]
সাহাবায়ে কেরাম অনেক মনগড়া হাদীস বর্ণনা করেছেন।
[তরজুমানুল কুরআন-৩৫ সংখ্যা ঙ/৩] সাহাবীদের মধ্যে জাহেলিয়াতের বদ-স্বভাবের পুনরাবৃত্তি ঘটে।
[তাফহীমাত ২য় খণ্ড, ১৫৫ পৃ.]
দীর্ঘদিনের শিক্ষা-দীক্ষার পর রাসূলুল্লাহ্ (দ.) তাঁদেরকে রণাঙ্গণে নিয়ে আসেন। তাদের মনমানসিকতায় মহাবিপ্লব চিত্রিত হওয়ার পরও ইসলামের প্রাথমিক যুদ্ধগুলোতে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের মূল তাৎপর্য অনুধাবনে সাহাবায়ে কেরামরা বারবার ভুল করতেন। (নাঊযুবিল্লাহ্)
[তরজুমানুল কুরআন, রবিউস সানী সংখ্যা ১৩৫৭ হি.]
অথচ সাহাবা-ই কেরাম সত্যের মাপকাঠি। এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। যারা সাহাবা-ই কেরামকে তাদের অপসমালোচনার পাত্র বানায় তারা ‘জাহান্নামের কুকুর’।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বিদা
হযরত আবু বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু খিলাফতের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ অযোগ্য ছিলেন। [তাজদীদ ও ইয়াহইয়ায়ে দ্বীন-২২পৃ.]
ইসলাম মানুষকে এই নির্দেশ দেয় যে, সে যেন কখনো রিপুর প্রভাবে প্রভাবিত না হয়। … এটা অত্যন্ত সূক্ষ্ম ব্যাপার। একবার হযরত আবু বকর সিদ্দিক্ব-এর মত রিপুর তাড়নামুক্ত খোদাভীরু ও আল্লাহতে নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিও তা পূরণ করতে ব্যর্থ হন। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তরজুমানুল কুরআন] অথচ হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু অন্ধকার যুগ থেকে নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন অসাধারণ জ্ঞানী। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও যোগ্যতার কারণে তিনি ইসলামের ত্রাণকর্তার আসনে সমাসীন। এটা মুসলিম, অমুসলিম নির্বিশেষে সবার নিকট স্বীকৃত। নবীগণের পর তিনি শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। এতে উম্মতের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু মওদুদী হযরত সিদ্দীক-ই আকবরের শানেও এমন অমূলক মন্তব্য দুঃসাহস দেখালো।
হযরত ওমর ফারূক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বিদা
বিশ্ব প্রতিটি উঁচুর সামনে মাথা নত করতে অভ্যস্ত ছিল এবং প্রত্যেক বুযুর্গ মানুষকে সাধারণ মানুষের স্তর থেকে কিছু না কিছু ঊর্ধ্বে ধারণা করে আসছিল। এই ধারণার প্রভাব বিলুপ্ত হওয়ার পথও কখনো কখনো স্পষ্ট হয়ে উঠতো…। সম্ভবত এই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্বের ধারণাই রাসূলুল্লাহর ইন্তেকালের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও কিছুক্ষণের জন্য হযরত ওমরকে পরাভূত করে ফেলেছিলো। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের সময় ব্যক্তি সম্মানের কু-মনোবৃত্তি হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে পরাভূত করেছিল। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তরজুমানুল কুরআন, রবিউস সানী- ৩৫৭ হি.]
ভ্রান্ত মওদুদী যে সব দৃষ্টান্তের ভিত্তিতে এসব মনগড়া কথা বললো, সেগুলো ছিলো বস্তুতঃ ফারূক্বে আ’যমের অকৃত্রিম নবী প্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু মওদুদী সেগুলো অপব্যাখ্যা দিলো। বস্তুতঃ ফারূক্বে আ’যমের মনের পবিত্রতা ও ইসলামের অসাধারণ খেদমত ইত্যাদির কারণে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। সর্বোপরি, দুনিয়ায় থেকে বেহেশতের সুসংবাদ প্রাপ্ত মহান ব্যক্তিত্ব। দুনিয়ায় সকলেই তাকে সম্মানের সাথে স্মরণ করে। কিন্তু মওদুদী এ ক্ষেত্রে বেঈমানী ও বেয়াদব শিয়া সম্প্রদায়ের জঘন্য পথ অবলম্বন করলো।
হযরত ওসমান যুন নূরাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বিদা
এক দিকে ইসলামী রাষ্ট্র সম্প্রসারণের দরুন কাজ দিন দিন কঠিনতর হচ্ছিল অপরদিকে হযরত ওসমান যার উপর এই বিরাট কাজের বোঝা ন্যস্ত করা হয়েছিল তিনি ততটা যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন না, যা তার পূর্বসূরিদের ছিলো। এজন্য জাহেলিয়াত ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় অনুপ্রেবেশের পথ পেয়ে যায়। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তাজদীদ ও ইয়াহইয়ায়ে দ্বীন-৩৩পৃ.]
হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর সাথে স্বজন-প্রীতির বদগুণ বিদ্যমান ছিলো। (নাঊযুবিল্লাহ্) [খেলাফত ও মুলকিয়াত-৯৯ পৃ.]
অথচ হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর শাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ জাহেলিয়াত মুক্ত ছিলো। মওদুদী যেগুলোকে স্বজনপ্রীতি বলেছেন, সেগুলোর যথার্থতার পক্ষে গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা ইতিহাসগ্রন্থগুলোতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ গুমরাহ্ মওদুদী এ ক্ষেত্রেও ইসলাম বিদ্বেষীদের পক্ষ নিলো।
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আল আনহু সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বিদা
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু স্বীয় খেলাফত কালে এমন কিছু কাজ করেছেন যাকে অন্যায় বলা ছাড়া উপায় নেই। (নাঊযুবিল্লাহ্) [খেলাফত ও মুলকিয়াত -১৪৩/১৪৬ পৃ.]
অথচ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও তাঁর প্রতিটি কাজ অন্যায় মুক্ত এবং ইসলাম সম্মত ছিলো। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র ভাষায় ‘জ্ঞান নগরীর মূল ফটক’ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর বিরুদ্ধে এমন অমূলক মন্তব্য করতে মওদুদী বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করলো না।
নামায রোযা হজ্ব যাকাত সম্পর্কে
দ্বীনের আসল মকসুদ হলো ইসলামী হুকুমত। নামায রোযা হজ্ব যাকাত ইত্যাদি সমস্ত ইবাদত হলো উক্ত মকসুদ অর্জনের মাধ্যম। (নাঊযুবিল্লাহ্)  [আকাবেরে উম্মত কী নজরমে-৬৪ পৃ. ২৭ ফেব্র“য়ারী ২০১৩] অথচ রাজনীতি হচ্ছে পার্থিব বিষয়, আর নামায, রোযা, হজ্ব ইত্যাদি ইসলামী অনুশাসন হলো দ্বীনিয়াত। দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী রাজনীতি। আর ধর্মকে রাজনীতি বা ক্ষমতা দখলের নিছক হাতিয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করলো ভ্রান্ত মওদুদী।
হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সম্পর্কে
হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু স্বার্থবাদী, গনিমতের মাল আত্মসাতৎকারী মিথ্যা সাক্ষ্যগ্রহণকারী ও অত্যাচারী ছিলেন। (নাঊযুবিল্লাহ্) [খেলাফত ও মুলকিয়াত ১৭৩ পৃ.]
অথচ হযরত আমির-ই মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মতো মর্যাদাবান ও ন্যায়পরায়ণ সাহাবীর শানে এসব অমূলক অপবাদ দিয়ে মওদুদী নিজেকে জাহান্নামের কুকুর বলে আবারো প্রমাণ করলো। হযরত আমির-ই মুয়াবিয়ার ন্যায়পরায়ণতা, অসাধারণ জ্ঞান ও ওহী লিখক সাহাবী হিসেবে তাঁর মর্যাদা ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বীকৃত।
পোশাক পরিচ্ছদ চাল-চলন ইত্যাদি সম্পর্কে
পোশাক পরিচ্ছদ চাল-চলন আকৃতি-প্রকৃতি চুল কার্টিং ইত্যাদির ব্যাপারে বিধর্মীদের অনুকরণ করতে কোন দোষ নেই। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তরজুমানুল কুরআন, সফর সংখ্যা ১৩৬৯ হি.] অথচ ইহুদী-খৃস্টানদের চাল-চলনের বিরোধীতার স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে বিশুদ্ধ হাদীস শরীফে।
দাড়ি কাটা ও রাখা ইত্যাদি সম্পর্কে
দাড়ি কাটা ছাঁটা জায়িয। কেটে ছেঁটে এক মুষ্ঠির কম হলেও ক্ষতি নেই। হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যে পরিমাণ দাড়ি রেখেছেন সে পরিমাণ দাঁড়ি রাখাকে সুন্নত বলা এবং এ অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে মারাত্মক অন্যায়। [রাসায়েল ও মাসায়েল ১ম খণ্ড, ২৪৭ পৃ.] সুন্নতে রাসূল সম্পর্কে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর আদত-আখলাককে সুন্নাত বলা এবং তা অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে সাংঘাতিক ধরণের বিদআত ও মারাত্মক ধর্ম বিকৃতি। (নাঊযুবিল্লাহ্) [রাসায়েল ও মাসায়েল-২৪৮ পৃ.] অথচ এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখার বিধান ইসলামে সুস্পষ্ট। এটাকে অস্বীকার করে মওদুদী আরেক মহাভ্রান্তি প্রদর্শন করলো।
রজম সম্পর্কে আক্বিদা
যে ক্ষেত্রে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা সেক্ষেত্রে যেনার কারণে (আল্লাহ্ পাকের আদেশকৃত) রজম শাস্তি প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তাফহীমাত, ২য় খণ্ড, ২৮১ পৃ.] অথচ বিবাহিত পুরুষ বা নারী স্বেচ্ছায় যেনা করলে তাকে রজম (পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া)। ইসলামের একটি অকাট্য বিধান। এটা অস্বীকার করা কুফরী।
হযরত ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি প্রসঙ্গে
ইমাম আবু হানিফার ফিকাহ ইসলামকে একটি স্থিতিশীল হিন্দু শাস্ত্রে রূপান্তরিত করেছে। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তরজুমানুল কুরআন, ১ম খণ্ড, ১৩৬ পৃ.] বস্তুতঃ এটাও মওদুদীর জঘন্য অপবাদ। লা-মাযহাব মওদুদীর এটা আরেক জঘন্য বিভ্রান্তি বৈ-কিছুই নয়।
হযরত ইমাম গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি সম্পর্কে
ইমাম গাজ্জালীর সংস্কারমূলক কাজে জ্ঞানগত ও চিন্তাগত দিক থেকে কয়েকটি ত্র“টিও ছিলো। এগুলো শিরোনামে বিভক্ত করা যেতে পারে। প্রথমত: হাদীসে দুর্বলতার দরুন তাঁর গবেষণায় কতগুলো ত্র“টি দেখা দেয়। দ্বিতীয়ত: তাঁর মধ্যে দর্শনের প্রাধান্য থাকায় কতগুলো গবেষণায় ত্র“টি-চিচ্যুতি দেখা দেয়। তৃতীয়ত: তাসাউফ বা আধ্যাত্মবাদের প্রতি তাঁর প্রয়োজনাতিরিক্ত আকর্ষণ থাকার দরুন সৃষ্ট ত্র“টি-বিচ্যুতি। (নাঊযুবিল্লাহ্) [তাজদীদ ও ইয়াহইয়ায়ে দ্বীন-৪৫ পৃ.] ধর্মীয় জ্ঞানশূন্য মওদুদী মুখে ইমাম গাজ্জালীর মতো দার্শনিকের সমালোচনা তার দুঃসাহস ও চরম বেয়াদবী ছাড়া আর কি হতে পারে?
তাফসির সম্পর্কে বক্তব্য
কুরআন ও রাসূলের সুন্নতের শিক্ষাই সবার আগে। তবে তফসীর ও হাদীসের পুরনো ভাণ্ডার থেকে নয়। [তানকিহাত-১১৪ পৃ.] অথচ নির্ভরযোগ্য তাফসির ও বিশুদ্ধ হাদিস শরীফের জ্ঞান ব্যতীত ক্বোরআন- সুন্নাতের শিক্ষা অর্জন করা মোটেই সম্ভব নয়। মওদুদী তার মনগড়া তাফসিরকে জায়েয করার জন্য এ জঘন্য বিভ্রান্তির জন্ম দিলো।
ইসলাম প্রচার সম্পর্কে বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম কেবল অস্ত্রবল প্রয়োগ করে মানুষকে মুসলমান বানায় একথা বলা যেমন ভুল ঠিক তেমনি ইসলামের প্রচার ও প্রসারে অস্ত্রের কোন ভূমিকা নেই একথা বলাও সঠিক নয়। প্রকৃত সত্য এই দূয়ের মাঝামাঝি অবস্থিত। আর তা হলো অন্য সত্যতার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে ইসলামের প্রচারে ও প্রসারে ঠিক একইভাবে মৌখিক তাবলীগ ও অস্ত্রের প্রয়োগ উভয়ের ভূমিকা ছিল। তবলিগ বীজ বপনের কাজ করে আর তরবারি নিড়ানি দেয়। প্রথমে তরবারি মাটি নরম করে যেন এতে বীজ উৎগমের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরপর তবলিগের মাধ্যমে বীজ বপন ও সেচ পরিচর্যার কাজ সম্পন্ন হয়। [আল জিহাদ ফিল ইসলাম-১৭৪-১৭৫ পৃ.] অথচ উদারতা ও আদর্শের মাধ্যমেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তরবারি দ্বারা নয়। ইসলাম তরবারি (অস্ত্র) ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে শুধু আত্মরক্ষা ও তার শত্র“র সাথে মোকাবেলার জন্যই। কিন্তু মওদুদী তার অনুসারীদেরকে এর বিপরিত শিক্ষাটুকুই দিলো।
সত্য-মিথ্যা বলা জায়েজ
বাস্তব জীবনে এমন কিছু চাহিদা রয়েছে গেুলোর খাতিরে মিথ্যা বলা কেবল জায়েজই নয় বরং ওয়াজিব। [তরজুমানুল কুরআন, ৫০তম খণ্ড, ২য় সংখ্যা, ১১৮ পৃ. শাবান ১৩৭৭হি.] বস্তুত এরই মাধ্যমে মওদুদী তার গ্রহণযোগ্যতা হারালো।
রাষ্ট্রের কর্তৃত্বের আকাক্সক্ষা
রাষ্ট্রের কর্তৃত্বের আকাক্সক্ষা ছাড়া কোন দর্শনে আস্থাজ্ঞাপন করার কোন অর্থ নেই এবং কোনটি আইনসম্মত বা কোন নিষিদ্ধ অথবা নির্দেশিত আইন কোনটির কোন কোন মানে নেই। [তাজদীদ উদ দ্বীন, পৃ. ৩২-৩৩] অথচ দর্শন ও আইন গ্রহণযোগ্য হয় তা দালীলিক ও মানগত সমৃদ্ধির নিরীখেই। এগুলোকে নিছক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নিরীখেই বিবেচনা করার কোন অর্থ হয় না।
যুদ্ধবন্দী মহিলাদের সম্পর্কে বক্তব্য
এমনকি বর্তমানে যুগেও যুদ্ধবন্দী মহিলাদের সৈনিদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া উচিত এবং সৈন্যদেরকে তাদের ভোগ করার অনুমতি দেয়া উচিত।
[আল জিহাদ ফিল ইসলাম, পৃ. ১৭৪-১৭৫, এরা ১৯৭১ সালে ধর্মের ব্যবহার করে ফতোয়া দিয়েছিল যে ‘যুদ্ধে ক্ষেত্রে নারী নির্যাতন করা জায়েয’]
নাঊযুবিল্লাহ্। বস্তুতঃ যুদ্ধ বন্দী নারী ও পুরুষের নির্দ্ধারিত অধিকার এবং বিধান রয়েছে। যুদ্ধবন্দি নারী কারো আইনগত দাসী কিংবা কারো বিবাহ্ধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার আইনগত মুনিব কিংবা স্বামী ব্যতীত অন্য কারো ভোগের পাত্র হতে পারে না। এটা ইসলামেরও বিধান। কিন্তু মওদুদী না‘ঊযুবিল্লাহ্ যুদ্ধবন্দি নারীকে গণধর্ষণের অনুমতি দেওয়ার মতো জঘন্য প্রস্তাব দিলো। উল্লেখ্য যে, বর্তমান বিশ্বের কোথাও ক্রীতদাস প্রথা প্রচলিত নেই।
মুজাদ্দিদ সম্পর্কে বক্তব্য
মুজাদ্দিদের আগমন সম্পর্কে মওদুদীর বক্তব্য হচ্ছে ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে জানা যায় এ পর্যন্ত কোন কামেল মুজাদ্দিদের আর্বিভাব হয়নি। ওমর ইবনে আবদুল আজিজের এই মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু তিনি কামিয়াব বা সফল হতে পারেননি। তারপর যত মুজাদ্দিদের আগমন হয়েছে তাদের প্রত্যেকে কোন না কোন একটা বিশেষ বিভাগ কিংবা কয়েকটি বিভাগে কাজ করেছেন। কামেল মুজাদ্দিদ বা পরিপূর্ণসংস্কারের স্থান শূন্য রয়েছে। [তাজদীদ ও ইয়াহয়ায়ে দ্বীন, পৃ.৩১] অথচ বিশুদ্ধ হাদীস শরীফে আছে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক শতাব্দীপূর্তিতে একজন মুজাদ্দিদকে প্রেরণ করেন, যিনি মুসলিম উম্মাহর সংস্কার সাধন করেন। প্রত্যেক মুজাদ্দিদ সময়োচিত সংস্কার সাধন করে থাকেন। এখানে পূর্ণ সংস্কারের অযুহাত রচনা করে সমস্ত মুজাদ্দিদের প্রতি অপূর্ণতার অপবাদ রচনা করার সুযোগ নেই। সুতরাং মুজাদ্দিদ সম্পর্কে মওদুদীর উক্ত মন্তব্যটিও বিভ্রান্তিকর।
উল্লেখ্য, মওদুদীর এ সব ক’টি ভ্রান্ত আক্বিদার সপ্রমাণ খণ্ডন সুন্নী মুসলমানদের নিকট রয়েছে। এ ক্ষুদ্র পরিসরে সেগুলোর উল্লেখ করা সম্ভবপর হলো না।
পরিশেষে, উল্লেখিত আক্বিদাগুলো কোন মুসলমানতো দূরের কথা একজন বিবেকবান লোকও কখনও মেনে নিতে পারেন না। দুঃখের সাথে বলতে হয় বর্তমান যুগে অধিকাংশ জামাত শিবির কর্মীরা মওদুদী সাহেবের এ আক্বিদা সম্পর্কে হয়ত জানেন না কিংবা তাদেরকে জানতে দেয়া হয় না। তাই তাদেরকে এ মতবাদ ও দলকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব না করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, গোলাম আজম, সাঈদী, কাদের মোল্লা, মুজাহেদী এবং নেজামী প্রমুখ। মোটকথা, জামাত-শিবির ও ভ্রান্ত মওদূদীর অন্ধ অনুসরণে এ দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন এবং বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, পূতঃপবিত্র ধর্ম ইসলাম বিকৃত করেছেন এবং ইসলামের এ সব গর্হিত কাজ করে ইসলামের দুর্নাম করেছে। তাই দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবী জানিয়ে আসছি। আবারো এসব যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী, ধর্ম বিকৃতকারী ও নবী-ওলীর শানে বেয়াদবী প্রদর্শনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। সর্বোপরি, এদেরকে সমাজে চিহ্ণিত করে সবসময় প্রত্যাখ্যান করে চলার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
—০—
ওহাবী-দেওবন্দীদের জঘন্য আক্বীদা সমূহ-
[সর্বাগ্রে না‘ঊযুবিল্লাহ্ আল্লাহর পানাহ্ চেয়ে নিচ্ছি]
১. “আল্লাহ্ মিথ্যা বলতে পারেন।” [ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৯, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী দেওবন্দী] ২. “আল্লাহ্ আগে জানেন না বান্দা কি কাজ করবে। বান্দা যখন সম্পন্ন করে নেয় তখনই আল্লাহ্ তা জানতে পারেন।” [তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান, পৃষ্ঠা ১৫৭-৫৮, কৃত মৌং হুসাইন আলী ওয়াঁভচরান ওয়ালা দেওবন্দী] ৩. “শয়তান ও মালাকুল মাওত-এর জ্ঞান হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে বেশি।”
[বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃষ্ঠা ৫১, কৃত খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী] ৪. “আল্লাহ্র নবীর নিকট নিজের পরিণতি এবং দেয়ালের পেছনের জ্ঞানও নেই।” [বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃষ্ঠা ৫১, কৃত খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী] ৫. “হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্ তা‘আলা তেমনি জ্ঞান দান করেছেন, যেমন জ্ঞান জানোয়ার, পাগল এবং শিশুদের নিকটও রয়েছে।” [হিফযুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৭, কৃত মৌং আশ্রাফ আলী থানভী দেওবন্দী] ৬. “নামাযে হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি শুধু খেয়াল যাওয়া গরু-গাধার খেয়ালে ডুবে যাওয়া অপেক্ষাও মন্দতর।”
[সেরাতে মুস্তাক্বীম, পৃষ্ঠা ৮৬, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] ৭. “‘রাহমাতুল্লিল ‘আলামীন’ (সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাস উপাধি নয়। হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্যান্য বুযুর্গকেও ‘রাহ্মাতুল্লিল ‘আলামীন’ বলা যেতে পারে।”
[ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১২, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী দেওবন্দী] ৮. “‘খাতামুন্নবিয়্যীন’ অর্থ ‘আখেরী বা শেষনবী’ বুঝে নেওয়া সাধারণ লোকদের খেয়াল মাত্র। জ্ঞানী লোকদের মতে এ অর্থ বিশুদ্ধ নয়। হুযূর আক্রামের যুগের পরও যদি কোন নবী পয়দা হয়, তবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী হওয়ায় কোন ক্ষতি হবে না।”
[তাহযীরুন্নাস, পৃষ্ঠা ৩ ও ২৫, কৃত দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতভী] ৯. “হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেওবন্দের আলেমদের সাথে সম্পর্কের সুবাদে উর্দূ শিখতে পেরেছেন।”
[বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃষ্ঠা ২৬, কৃত মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী] ১০. “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান শুধু বড় ভাইয়ের মতই করা চাই।” [তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৫৮, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] ১১. “আল্লাহ্ তা‘আলা ইচ্ছা করলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমকক্ষ কোটি কোটি পয়দা করতে পারেন।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ১৬, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] ১২. “হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করে মাটিতে মিশে গেছেন।” [তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৫৯, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী] ১৩. “নবী-রসূল সবাই অকেজো।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ২৯, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] ১৪. “নবী প্রতিটি মিথ্যা থেকে পবিত্র ও মা’সূম হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।”
[তাস্ফিয়াতুল্ আক্বাইদ, পৃষ্ঠা ২৫, কৃত মৌং কাসেম নানুতভী] ১৫. “নবীর প্রশংসা শুধু মানুষের মতই কর; বরং তা অপেক্ষাও সংক্ষিপ্ত কর।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৬১, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী] ১৬. “বড় অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আর ছোট অর্থাৎ অন্যসব বান্দা বেখবর ও অজ্ঞ।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৩, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] ১৭. “বড় মাখলূক অর্থাৎ নবী, আর ছোট মাখলূক অর্থাৎ অন্যসব বান্দা আল্লাহর শান বা মর্যাদার সামনে চামার অপেক্ষাও নিকৃষ্ট।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ১৪, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] ১৮. “নবীকে ‘তাগূত’ (শয়তান) বলা জায়েয।”
[তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান, পৃষ্ঠা ৪৩, কৃত. মৌং হুসাইন আলী ওয়াঁভচরান ওয়ালা] ১৯. “নবীর মর্যাদা উম্মতের মধ্যে গ্রামের চৌধুরী ও জমিদারের মত।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৬১, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] ২০. “যার নাম মুহাম্মদ কিংবা আলী তিনি কোন কিছুর ইখতিয়ার রাখেন না। নবী ও ওলী কিছুই করতে পারেন না।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৪১, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] ২১. “উম্মত বাহ্যিকভাবে আমলের মধ্যে নবী থেকেও বেড়ে যায়।”
[তাহযীরুন্নাস, পৃষ্ঠা ৫, কৃত মৌং কাসেম নানুতভী] ২২. “দেওবন্দী মোল্লা হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুলসেরাত হতে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।”
[তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান, পৃষ্ঠা ৮, মৌং হুসাইন আলী] ২৩. “‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ আশরাফ আলী রসূলুল্লাহ্’ আর ‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা সায়্যিদিনা ওয়া নবীয়্যিনা আশরাফ আলী’ বলার মধ্যে সান্ত্বনা রয়েছে, কোন ক্ষতি নেই।” [রিসালা-ই ইমদাদ, পৃষ্ঠা ৩৫, সফর – ১৩৩৬ হিজরি সংখ্যা] ২৪. “‘মীলাদুন্নবী’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উদ্যাপন করা তেমনি, যেমন হিন্দুরা তাদের কানাইয়্যার জন্মদিন পালন করে।”
[বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃষ্ঠা ১৪৮, ফাতওয়া-ই মীলাদ শরীফ, পৃষ্ঠা ৮] ২৫. “রসূল চাইলে কিছুই হয়না।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৫৬, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] ২৬. “আল্লাহর সামনে সমস্ত নবী ও ওলী একটা নাপাক ফোঁটা অপেক্ষাও নগণ্য।” [তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৫৬, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] ২৭. “নবীকে নিজের ভাই বলা দুরস্ত।”
[বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃষ্ঠা ৩, কৃত মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী] ২৮. “নবী ও ওলীকে আল্লাহর সৃষ্টি ও বান্দা জেনেও উকিল এবং সুপারিশকারী মনে করে এমন মুসলমান সাহায্যের জন্য আহ্বানকারী ও নযর-নিয়াযকারী মুসলমান, আর কাফির আবূ জাহ্ল-শির্কের মধ্যে সমান।”
[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৭-২৭, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] ২৯. “‘দরূদ-ই তাজ’ অপছন্দনীয় এবং পাঠ করা নিষেধ।”
[ফযাইলে দরূদ শরীফ, পৃষ্ঠা ৯২, ফাযাইলে আ’মাল তথা তাবলীগী নেসাব থেকে পৃথীকৃত] ৩০. মীলাদ শরীফ, মি’রাজ শরীফ, ওরস শরীফ, খতম শরীফ, চেহলামের ফাতিহাখানি এবং ঈসালে সাওয়াব- সবই নাজায়েয, ভুল প্রথা, বিদ’আত এবং কাফির ও হিন্দুদের প্রথা।”
[ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫০ এবং ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৩-৯৪, কৃত প্রাগুক্ত] ৩১. “প্রসিদ্ধ কাক খাওয়া সাওয়াব।”
[ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩০, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী] ৩২. “হিন্দুদের হোলী-দেওয়ালীর প্রসাদ ইত্যাদি জায়েয।”
[ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩২, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী] ৩৩. “ভাঙ্গী-চামারের ঘরের রুটি ইত্যাদির মধ্যে কোন দোষ নেই, যদি পাক হয়।” [ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩০, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী] ৩৪. “হিন্দুদের সুদী টাকায় উপার্জিত অর্থে কূপ বা নলকূপের পানি পান করা জায়েয।” [ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৩-১১৪, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী]
উল্লেখ্য, ওহাবী-দেওবন্দিদের এসব ভ্রান্ত আক্বিদার সপ্রমাণ খণ্ডন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিভিন্ন সপ্রমাণ পুস্তকে বিস্তারিতভাবে করা হয়েছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে এসব বাতিল মতবাদী সুন্নী ওলামা-মাশাইখের সাথে তর্ক-মুনাযারায় উপনীত হয়ে শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়েছে। আগামীতেও এ সত্য বাস্তবে প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ্।
প্রসঙ্গতঃ সচেতন সুন্নী কর্ণধারবৃন্দের ঈমানী দায়িত্ব পালন ও দেওবন্দী-ওহাবীদের হঠকারিতা প্রসঙ্গে আলোচনা করার প্রয়াস পেলাম। ভারতে ওহাবী মতবাদ প্রচারের প্রাথমিক পর্যায়ে মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর বিতর্কিত পুস্তক ‘কিতাবুত্ তাওহীদ’-এর ভাবানুবাদ ‘তাক্বভিয়াতুল ঈমান’ প্রকাশ করে বিশেষতঃ ‘নবী করীমের সমকক্ষ থাকা সম্ভব বলে প্রচার করে ‘খাতামুন্নাবীয়্যীন’ ইত্যাদি গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত আরো কেউ আত্মপ্রকাশ করাও সম্ভব বলে ফেললো, তখন আহলে সুন্নাতের ওলামা-ই কেরাম বিশেষ করে ‘খাতেমুল হুকামা’ আল্লামা মুহাম্মদ ফয্লে হক খায়রাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের ওই ভুল ও ঈমানবিধ্বংসী দৃষ্টিভঙ্গির খণ্ডন লিখিত ও মৌখিকভাবে করেছেন। তবুও না মৌং ইসমাঈল দেহলভী তার কথা প্রত্যাহার করেছেন, না ওহাবীরা এই ইসমাঈল দেহলভীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তাছাড়া, মীর্যা গোলাম আহমদ ক্বাদিয়ানী ভণ্ড নুবূয়তের দাবিদার হয়ে মুরতাদ হল। মুসলমানরা একবাক্যে তাকে ধিক্কার দিল। এ দেশের সুন্নীদের সাথে ওহাবীরাও তাকে কাফির-মুরতাদ বলার ক্ষেত্রে সুর মিলালো। তারা সেটাকে রাজনৈতিক ইস্যু করে ক্বাদিয়ানীদের অমুসলমান ঘোষণা করার দাবিও করেছে, এখনো করছে। ‘হেফাযতে ইসলাম’-এর সাম্প্রতিককালীন দাবীগুলোর মধ্যে এটাও অন্যতম। অথচ ইতোপূর্বে তাদেরই মুরব্বী, দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতভী সাহেব কোরআনী আয়াতের ‘খাতাম’ শব্দের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ‘আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরে কোন নবী আসলেও হুযূরের শেষনবী হবার মধ্যে অসুবিধা নেই’ বলে ফাত্ওয়া দিয়ে ওই গোলাম আহমদ ক্বাদিয়ানীর জন্য পথ খুলে দিয়েছেন। দেওবন্দী মুফতী মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী ‘আল্লাহর পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভব’ বলে ফাতওয়া দেন। মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জ্ঞান অপেক্ষা শয়তান ও মালাকুল মাওতের জ্ঞান বেশি বলে তাঁর কিতাবে লিখেছেন। (দু’জায়গায়) উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেওবন্দী ও তাবলীগীদের হাকীমুল উম্মত মৌং আশরাফ আলী থানভী হুযূর করীমের জ্ঞানকে গৃহপালিত পশু, শিশু ও পাগলের জ্ঞানের সাথে তুলনা করেছেন। বস্তুতঃ এসব মন্তব্য যে, যথাক্রমে আল্লাহ্ ও তাঁর হাবীবের শানে জঘন্য বেয়াদবী হবার কারণে নিশ্চিত ‘কুফর’ -তা বিবেকবান মাত্রই বলতে পারেন।
ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে মিল্লাত, শাহ-ই বেরেলী ইমাম আহমদ রেযা খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের ওই সব মন্তব্য ও আক্বীদা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছেন। শতাধিক বিষয়ের বিশারদ, সহস্রাধিক গ্রন্থ-পুস্তকের রচয়িতা, অদ্বিতীয় ফিক্ব্হশাস্ত্রবিদ আ’লা হযরতের দৃষ্টিতেও ওইসব মন্তব্য নিশ্চিত ‘কুফর’ বলে সাব্যস্ত হলে তিনি প্রত্যেকের নিকট জবাব চেয়ে চিঠি লিখেছেন। দীর্ঘদিন তাদেরকে সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনরূপ জবাব কিংবা অনুশোচনা-প্রত্যাহারের মনোভাব না পেয়ে, বরং হঠকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ১৩২০ হিজরিতে ‘আল্-মু’তামাদ আল্-মুন্তাক্বাদ’ প্রণয়ন করে- মীর্যা ক্বাদিয়ানী, মৌং কাসেম নানুতভী, মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী, মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী এবং মৌং আশরাফ আলী থানভীর উপর, ওই সব মন্তব্যের ভিত্তিতে কুফরের ফাতওয়া আরোপ করলেন।
[এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রণীত হয়- ‘আল্-মু’তামাদ আল্-মুস্তানাদ’ নামে।]
আমি আবারো জোরালোভাবে বলতে পারি যে, বস্তুতঃ আ’লা হযরতের এ ফাতওয়া দেওবন্দী আলিমদের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তিগত মনগড়া ভিত্তিতে ছিল না, বরং নিরেট আল্লাহ্ ও তাঁর নবীর মর্যাদা রক্ষার খাতিরেই ছিল। দ্বীন ইসলামের পবিত্রতা ও সত্যতাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে তিনি তাঁর ঈমানী দায়িত্বই পালন করেছেন। অতঃপর ১৩২৪ হিজরিতে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উপরোক্ত কিতাব থেকে উল্লিখিত ব্যক্তিদের উপর আরোপিত ফাতওয়ার অংশখানা ‘হেরমাঈন শরীফাঈন’-এর ওলামা কেরামের নিকট পেশ করলেন। যার উপর উভয় হেরমের ৩৩জন আলিম তাঁদের জোরালো সমর্থন সূচক মন্তব্য লিপিবদ্ধ করেছেন। এ ফাতওয়া ও ওই সব মন্তব্য সহকারে ১৩২৪ হিজরিতেই ‘হুসামুল হেরমাঈন ‘আলা মানহারিল কুফরি ওয়াল মায়ন’ (কুফর ও মিথ্যার গ্রীবাদেশে হেরমাঈন শরীফাঈনের শানিত তরবারী) নামে প্রকাশ করা হয়েছে। ওই কিতাব এখনো বিদ্যমান। বাংলায়ও অনূদিত এবং প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ওই ব্যক্তিরা আত্মশুদ্ধির পথ অবলম্বন করেন নি।
উল্লেখ্য, পরবর্তীতে মৌং হুসাইন আহমদ টাণ্ডভী ও মৌং মুরতাদ্বা হাসান দরভঙ্গীর মত দেওবন্দী আলিমগণও স্বীকার করেছেন যে, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর নবীর শানে এহেন বেআদবীপূর্ণ মন্তব্য করে তারা যে কোন অবস্থাতেই কাফির না হয়ে পারে না। আর ইমাম আহমদ রেযাও তাদের ওই সব কুফরিপূর্ণ মন্তব্য দেখে তাদের উপর কুফরের ফাত্ওয়া আরোপ করে শুধু তাঁর ঈমানী দায়িত্বই পালন করেন নি, বরং তা না করলে তিনি নিজেও কাফির হয়ে যেতেন। কারণ কুফরকে সমর্থন করা এবং কুফর মনে না করাও কুফর।
[আশ্-শিহাবুস্ সাক্বিব ইত্যাদি দ্রষ্টব্য]
সুতরাং দেওবন্দী ওহাবী-তাবলীগীদের যেখানে ওইসব কুফরী বক্তব্য, আক্বীদা এবং এমন বক্তা ও আক্বীদাসম্পন্নদের প্রত্যাখ্যান ও বর্জন করা উচিত ছিল, সেখানে তাদেরকে মুরব্বী ও অনুকরণীয় হিসেবে গ্রহণ ও বরণ করে তাদেরই তথাকথিত শিক্ষার প্রসার ও প্রতিষ্ঠার জন্য ‘তাবলীগের ছয় উসূল’ কায়েম করছে, জামাতবন্দী হচ্ছে, বিশাল ‘ইজতিমা’ ইত্যাদি করছে, কায়েম করছে কওমী ধাঁচের মাদরাসার পর মাদরাসা, প্রতিষ্ঠানের পর প্রতিষ্ঠান, অপরদিকে আ’লা হযরত ও সুন্নী মুসলমানদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সুন্নী মতাদর্শকেই অবলম্বণ করার পরিবর্তে তাঁদের প্রতি উল্টো মিথ্যা অপবাদ দিলে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে নানা প্রপাগাণ্ডা ও চক্রান্ত করলে তাদের সম্পর্কে মন্তব্যও নি®প্রয়োজন বৈ-কি।
উল্লেখ্য, উক্ত সব ভ্রান্ত আক্বীদা বা বিশ্বাস পোষণ করে বাংলাদেশের ওহাবী, কওমী, নেজামে ইসলাম ও হেফাজতে ইসলামের লোকেরা। তাছাড়া, হেফাযতে ইসলামের প্রধান মৌং শফী সাহেবসহ অনেক নেতার রাজনৈতিকভাবে জামাতের সাথে সম্পর্ক অনেক পুরানো বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন- স্বাধীনাত্তোরকালে জামাত ও নেজামে ইসলাম সম্মিলিতভাবে ‘আইডিএল’ গঠন করেছিলো। তারাই যে মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে স্বাধীনতা ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তা এখনো এলাকায় প্রসিদ্ধি আছে। তদুপরি, মৌং শফি তার বক্তব্য ও লেখনীতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শানে যেসব বেয়াদবী প্রদর্শন করেছেন সেগুলো এখনো প্রসিদ্ধ।
বিগত ২২ জানুয়ারী ১৯৭৯ইং সোমবার, ফটিকছড়ির বক্তপুর গ্রামের মহতের দীঘির পাড়ে অনুষ্ঠিত এক মাহফিলে নবী করীমের শানে বেয়াদবীর কারণে তিনি শ্রোতাদের দ্বারা প্রত্যাখাত হন ও ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যান। তিনি বলেছিলেন- ‘নবী কোথায় দেখোতো- আমার চেয়ারের নিচে, না টেবিলের নিচে…? নাঊযুবিল্লাহ্। ইত্যাদি। শুধু নবী করীমের শানে জঘন্য বেয়াদবী করে তিনি ক্ষান্ত হননি, বরং আল্লাহ্ তা‘আলার শানেও তাঁর আক্বিদা আরো জঘন্যতর।
তিনি বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ্ মিথ্যা বলতে পারেন, ওয়াদা খেলাফ করতে পারেন; কিন্তু করেন না। এগুলো ঈমান বিধবংসী আক্বীদা। কারণ পবিত্র ক্বোরআনে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘ওয়া মান আসদাক্বু মিনাল্লা-হি ক্বী-লা।’ (অর্থাৎ আল্লাহ্ অপেক্ষা বেশী সত্যবাদী আর কে? অর্থাৎ কেউ নেই।) তারা আরো বলেন, ‘শয়তানের জ্ঞান নবী করীমের জ্ঞান অপেক্ষা বেশী। এর বিপরীত বিশ্বাস করা কুফরী’। অথচ শয়তানের পক্ষে ওকালতি করতে গিয়ে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপক জ্ঞানকে অস্বীকার করাই জঘন্যতম কুফরী। তারা বলেন- ‘নবীগণ মৃত’। অথচ নবীগণ আলায়হিমুস্ সালাম তাঁদের রওযা শরীফে জীবিত ইত্যাদি মর্মে বিশুদ্ধ হাদিস শরীফ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু মৌং শফী সাহেবের লিখিত ‘ভিত্তিহীন প্রশ্নাবলীর মূলোৎপাটন’, রশিদ আহমদের লিখিত পুস্তিকা ‘হাতেফ’, নযীর আহমদের লিখিত ‘আল হাদী’, শফি সাহেবদের সম্মিলিতভাবে লিখিত ‘সত্যের দিকে করুন আহ্বান’ এবং ‘আল বয়ানুল ফাসিল’ ইত্যাদিতে এ ধরনের একাধিক বিভ্রান্তিকর, ঈমান বিধবংসী ও অমূলক উক্তি-বক্তব্য উল্লেখিত রয়েছে।
পরিশেষে, এসব হিফাজত পার্টির স্বরূপ উন্মোচন করে তাদেরকে খোদা ও নবীদ্রোহীদের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং তাদের উদ্দেশ্যমূলক দাবীগুলোর ব্যাখ্যার আড়ালে তাদের জঘন্য আক্বীদা ও আমলকে ধামাচাপা দেওয়ার কৌশল এবং কর্মসূচীতে বিভ্রান্ত না হয়ে সুন্নী মতাদর্শের অনুসরণ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আরো লক্ষ্যণীয় যে, সারাদেশে তারা যে হারে মাদরাসার নামে প্রতিষ্ঠানগুলো করে যাচ্ছে, সেগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম ও কর্মকাণ্ডকে সরকারী নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে এগুলো অদূর ভবিষ্যতে আরো বড় বড় জঙ্গী প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়ে জাতি ও দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বকে হুমকির দিকে ঠেলে দেবে কিনা তা ভেবে দেখে বাস্তব প্রদক্ষেপ গ্রহণের উপযুক্ত সময় এসেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সরকার ও দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।