নবীজীকে মাটির তৈরী বলা

নবীজীকে মাটির তৈরী বলা

রুনু, সরফভাটা, মীরেরখীল

প্রশ্নঃ  অনেকে বলে হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা মাটির তৈরি এ জন্য আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামও নাকি মাটির তৈরি। এমনকি এটিএন বাংলা চ্যানেলে মৌং আবুল কালাম আজাদ এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাটির তৈরি। এখন প্রশ্ন হল- আল্লাহ্‌র রসূল মাটির তৈরি নাকি নূরের তৈরি? দলীল সহকারে উত্তর দিলে উপকৃত হব।  

উত্তরঃ  কোরআন করীমের বর্ণনা মতে একমাত্র সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলায়হিস্‌ সালাম’র শরীর মুবারক মাটির তৈরি। অন্য কোন মানব সন্তানের শরীর সরাসরি মাটির তৈরি নয়। সুতরাং মাতা আমিনাকে সরাসরি মাটির তৈরি বলা মিথ্যার অপালাপ মাত্র। হুজূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টিগতভাবে মহান আল্লাহ্‌র পবিত্র নূর থেকেই সৃষ্ট এবং অন্যান্য সকল (নূরানী) বস্তু মহানবী রসূল আকরম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র উক্ত নূরে পাক থেকে সৃষ্টি হয়েছে।

যেমন ‘মতালেয়ুল মুসররাত শরহে দালায়েলুল খয়রাত’-এ উল্লেখ আছে, মহানবী হুজূর আকরম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- اول ماخلق اللہ نوری ومن نوری خلق کل شیء  অর্থাৎ সর্বপ্রথম আল্লাহ্‌ তা’আলা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমার নূর থেকেই প্রত্যেক (নূরানী) বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন। উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টিগত দিক দিয়ে নূর এবং হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার গর্ভেও নূর হিসেবে ছিলেন। বিধায়, হযরত আমিনার গর্ভকালীন সময়ে অন্য গর্ভবতী মহিলাদের মত ভারী বা গর্ভের বোঝা বা কোন প্রকার কষ্ট উপলব্ধি করেননি এবং প্রসবকালে কোন প্রকার ব্যাথা অনুভব করেননি এবং রসূলে পাক ও আল্লাহর প্রিয় মাহবূব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নূরানী মানব হিসেবে শুভাগমন করেছিলেন, যদ্ধারা হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা সুদূর বসরা শহরের রাজপ্রাসাদগুলো প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং সূর্য, চন্দ্র ও বাতির আলোতে কখনো রসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র শরীর মুবারকের ছায়া প্রদর্শিত হয়নি, যা এ কথার সাক্ষ্য বহন করে যে, তাঁর আপাদমস্তক (জাহের-বাতেন) নূর ছিলেন। যেমন বিখ্যাত হাদীস বিশারদ হযরত হাকিম তিরমিযী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি ‘নওয়াদেরুল উলূম’ নামক কিতাবে হযরত যকওয়ান রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি থেকে হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন-  انّ رسول اللہ ﷺ لم یکن لہٗ ظل فی الشمس ولافی القمر অর্থাৎ অবশ্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ছায়া মুবারক সূর্যের ও চন্দ্রের আলোতে দেখা যেত না।

মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়াহ্‌ ফিশ্‌ শামায়িলিল মুহাম্মদিয়্যা ও যুরকানী আলাল মাওয়াহেব গ্রন্থদ্বয়ে হযরত আবদুল্লাহ্‌ বিন মুবারক ও হাফেয ইবনে জুযীর বরাতে হযরত আবদুল্লাহ্‌ বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম থেকে বর্ণিত আছে- لم یکن لرسول اللہ ﷺ ظل ولم یقم مع شمس الا غلب ضوء ہ ضوء ھا ولا مع سراج الا غلب ضوء ہ ضوء ہ অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র (পবিত্র দেহ মুবারকের) কোন ছায়া ছিল না, সূর্যের রোদেও কোন ছায়া পতিত হত না, বাতির আলোতেও কোন ছায়া পড়ত না; বরং হুজূরের নূর মুবারক সূর্য ও আলোর উপর প্রভাব বিস্তারকারী ছিল। বস্তুতঃ চন্দ্র-সূর্য ও বাতির আলোর চেয়ে সরকারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র নূর বেশি প্রখর ও শক্তিশালী ছিল।

আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি খাসাইসে কুবরা শরীফে ইবনে সাবা থেকে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন-

ان ظلہ کان لایقع علی الارض لانہ کان نورا

অর্থাৎ অবশ্য যমীনের উপর তাঁর ছায়া পতিত হত না। কেননা তিনি নূর ছিলেন।

‘আফদ্বালুল কোরা’ কিতাবে ইমাম ইবনে হাজর মক্কী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি এরশাদ করেন- انہ ﷺ کان نورا انہ کان اذا مشٰی فی الشمس او القمر لایظھرلہ ظل لانہ لایظھر الا لکثیف وھو ﷺ قد خلصہ اللہ تعالی من سائر الکثافات الجسمانیۃ وصیرہ نورا صرفا ولا یظھر لہ ظلہ اصلا

 অর্থাৎ হুজূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপাদমস্তক নূর ছিলেন। অবশ্য যখন তিনি সূর্যের রোদে এবং চন্দ্রের চাঁদনিতে চলতেন তখন তাঁর ছায়া প্রকাশ পেত না। কেননা ছায়া একমাত্র প্রকাশ পায় স্থুল দেহ থেকেই। আর মহান আল্লাহ্‌ প্রিয় মাহবূব সাল্লাল্লাহু তাজ্ঞআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দৈহিক সকল স্থুলতা থেকে মুক্ত করেই প্রেরণ করেছেন এবং তাঁকে খালিস নূর বানিয়ে পাঠিয়েছেন। বিধায় তাঁর ছায়া মোটেই প্রকাশ পেত না। জ্ঞতাওয়ারীখে হাবীবে ইলাহঞ্চ কিতাবে মুফতী এনায়েত আহমদ আলায়হির্‌ রহমাহ্‌ উল্লেখ করেছেন-

آپ کا بدن نورتھا اس وجہ سے آپ کا سایہ نہ تھا  অর্থাৎ তাঁর দেহ মুবারক নূর ছিল; তাই তাঁর ছায়া ছিল না।

দেওবন্দী ওহাবীদের মুরুব্বী মৌং রশিদ আহমদ গাঙ্গূহী স্বীয় কিতাব জ্ঞএমদাদুস্‌ সুলুকঞ্চ (মুদ্রিত বেলালী দুখানী প্রেস, সাডোরা)- حق تعالیٰ آں جناب سلامہ علیہ را نور فرمود وبتواتر ثابت شد کہ آنحضرت عالی سایہ ندا شتہ وظاہر است کہ بجز نور ہمہ اجسا م سایہ می دارند

এ  অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তা’আলা হুজূর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে (কোরআনে করীমে) নূর বলেছেন এবং তাওয়াতুর বা সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত যে, হুজূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ছায়া ছিল না। আর এ কথা স্পষ্ট যে, নূর ছাড়া সমস্ত শরীর সমূহের ছায়া থাকে।

উল্লিখিত বর্ণনাসমূহ থেকে দ্বিপ্রহরের চেয়েও পরিস্কার শগ্ধহ বৎহ যে, হুজূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপাদমস্তক নূরই ছিলেন। অতঃপর নবীজীর দেহ মুবারককে মাটির তৈরি বলা অজ্ঞতা, পথভ্রষ্টতা ও নবীবিদ্বেষীর নামান্তর এবং তারা যে, কোরআন-হাদীস তথা দ্বীন সম্পর্কে একেবারে জাহেল ও অজ্ঞ তারই প্রমাণ বহন করে। এ ধরনের নবীবিদ্বেষী মুনাফিক্বদের চক্রান্ত হতে আল্লাহ্‌ পাক সবাইকে হিফাযত করুন। আমীন।

[সূত্র. যুগ জিজ্ঞাসা, পৃ. ৬৯-৭১]

www.anjumantrust.org