নবীজীকে নেতা বলে সম্বোধন করা

নবীজীকে নেতা বলে সম্বোধন করা

মুহাম্মদ ওমর শাহেদ, আলমদারপাড়া, পটিয়া

প্রশ্নঃ  শুনেছি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু তাজ্ঞআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ‘হযরত’ বলে ডাকা গুনাহ্‌ ও বেআদবী। প্রশ্ন হল- আল্লাহ্‌র রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে হযরত, জনাব, ইমাম, নেতা এভাবে বলে সম্বোধন করা জায়েয হবে কি? কোরআন ও হাদীসের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলে উপকৃত হব। 

উত্তরঃ  আম্বিয়া-ই কেরাম বিশেষত হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র শানে সাধারণ শব্দসমূহ প্রয়োগ করা বা সাধারণ শব্দ দ্বারা আহ্বান করা কোরআন করীমের আয়াত দ্বারা নিষিদ্ধ। যেমন কোরআন শরীফে আল্লাহ্‌ তা’আলা এরশাদ করেছেন-

لَاتَجْعَلُوْادعَأ الرّسُوْل بَیْنَکُمْ کَدُعَاء بَعْضکُمْ بَعْضًا

অর্থাৎ তোমাদের প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে এমন সাধারণ শব্দ দ্বারা আহবান কর না যেমন তোমরা একে অপরকে (সাধারণ শব্দ দ্বারা) আহবান করে থাক।[সূরা নূর -৬৩]

উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা গেল প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা তথা আম্বিয়া কেরামের শানে যে শব্দ ব্যবহার করা হবে তা অবশ্যই এমন সম্মানসূচক শব্দ হতে হবে, যা তাঁদের মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ হয়। নেতা শব্দটি নবীগণের ক্ষেত্রে বিশেষ শব্দ নয়; বরং প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এমন কি বিধর্মীদের ক্ষেত্রে ও নেতা শব্দটি ব্যবহার করা হয়। হ্যাঁ রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সুন্দরতম নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সফলতার সাথে রাষ্ট্রও পরিচালনা করেছেন এতে সন্দেহের অবকাশ নেই, তবে রিসালাত ও নুবূয়তের আসন নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রপরিচালনা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। সাধারণ মানুষ নেতা হতে পারে কিন্তু সাধারণ মানুষ নবী ও রাসূল হতে পারে না। নবীগণ আল্লাহ্‌ কর্তৃক মনোনীত ও নির্বাচিত হয়ে থাকেন। নেতার মত একটা সাধারণ শব্দ দ্বারা নবীদেরকে সম্বোধন করা তাঁদের মান মর্যাদার পরিপন্থী।

তাই হক্কানী ওলামা-ই কেরাম এ ধরনের শব্দ দ্বারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামসহ সকল আম্বিয়া-ই কেরামকে সম্বোধন করতে নিষেধ করেছেন। ‘জনাব’ শব্দটি ঊর্দূ। বাংলা ও হিন্দী ভাষায় ও সম্মানিত ব্যক্তিদের নামের পূর্বে এ শব্দ ব্যবহার করা হয়। সম্মান প্রদর্শনের নিয়তে রসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র নামের পূর্বে এ শব্দ ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই। যেমন জনাবে আহমদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলা হয়। আরবী ভাষাতে ‘জনাব’র স্থলে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহৃত হয় হযরত ও হুজূর। যেমন নবী আকরম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র বেলায় ব্যবহার করা হয়েছে হযরত রিসালাতে মাআ-ব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বা হুজূর করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম।

আরো বলা হয় আঁ হযরত সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। তবে জনাব, হযরত ও ইমাম এ শব্দগুলো এককভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র শানে সম্বোধন করে ব্যবহারের সময় এয়া জনাবে আলী সাল্লাল্লাহু আলায়কা ওয়াসাল্লাম, এয়া হযরত সাল্লাল্লাহু আলায়কা ওয়াসাল্লাম, এয়া ইমামাল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলায়কা ওয়াসাল্লাম এভাবে বলবে যেন নবীজীর শান, মান ও উঁচু মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ হয়। [সূত্র. যুগ জিজ্ঞাসা, পৃ. ৭৩]