হযরত আবুদ্ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কেউ (দ্বীনী) ইল্ম অর্জনের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হলে আল্লাহ্ পাক তাঁকে বেহেশ্তের রাস্তায় পরিচালিত করেন এবং ফেরেশ্তারা (দ্বীনী) ইল্ম অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তাঁদের পায়ের নিচে নূরানী ডানাসমূহ বিছিয়ে দেন। আলিমদের জন্য গুনাহ্ মাফ চাইতে থাকে দুনিয়ায় যা কিছু আছে এবং আসমানে যা কিছু রয়েছে এমনকি সমুদ্রের মাছগুলো পর্যন্ত। আলিমের মর্যাদা আবিদ (সাধারণ ইবাদতকারী)-এর উপর আকাশের অসংখ্য জ্বলন্ত নক্ষত্রের মাঝে উজ্জ্বল চন্দ্রের মর্যাদার মত। নিশ্চয় আলিমগণ নবীদের ওয়ারিশ। কেননা নবীগণ কোন দীনার ও দিরহাম রেখে যান নি, বরং তাঁরা যা রেখে গেছেন তা হল ইল্ম। সুতরাং যে ব্যক্তি তা অর্জন করল সে অনেক বড় কিছু অর্জন করল। [তিরমিযী শরীফ : কিতাবুল ইল্ম, মুসনাদে আবী হানীফা, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ্, তাবরানী, বায়হাক্বী, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব’র বরাতে মিশকাত শরীফ ৩৪ পৃষ্ঠা]
প্রাসঙ্গিক আলোচনা
জ্ঞান মানুষকে আলোকিত করে; অবশ্য তা যদি দ্বীনী জ্ঞান হয়। পবিত্র ক্বোরআনে আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন “তারা (উভয়) কি সমান, যারা জানে এবং যারা জানে না?” নিশ্চয় না। দ্বীনী জ্ঞান এমন একটি নি’মাত; যারা এ নি’মাত পেয়ে ধন্য তারা দুনিয়ার অন্য সকল মানুষের চেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্টমণ্ডিত।
দ্বীনী জ্ঞানার্জনকারীগণ বেহেশ্তের রাস্তার পথচারী
দুনিয়াতে লোকেরা বিভিন্ন চাহিদা নিয়ে ঘুরাফিরা করে। মূলত যে যা তালাশ করে এক পর্যায়ে সে তা পেয়ে যায়। যেমন সহীহ বুখারী শরীফের প্রথম হাদীসে রয়েছে, যারা দুনিয়া অর্জনের জন্য হিজরত করে তারা দুনিয়া পায়, আর যারা আল্লাহ্-রসূলের নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে বের হয়, তারা আল্লাহ্-রসূলকে পেয়ে যায়। তদ্রুপ যারা দ্বীনী ইল্ম অর্জনের রাস্তায় বের হয়, আল্লাহ্ পাক তাদের জন্য বেহেশ্ত পাওয়ার রাস্তাও সহজ করে দেন। এক কথায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই যদি হয়ে থাকে জ্ঞান অর্জনের একমাত্র লক্ষ্য, তাহলে সে বান্দার বেহেশ্তের জিম্মাদারী স্বয়ং আল্লাহ্ই গ্রহণ করে নেন। হাদীসের ভাষ্যমতে অনুমেয় যে, আমাদের জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই হওয়া উচিত।
ফেরেশতাদের দোআ
ফেরেশতাগণ নিষ্পাপ। এদের কাজই হল আল্লাহ্র প্রশংসা করা। যিক্র-আয্কার করা এবং মানুষের জন্য দো’আ করা। জ্ঞান অর্জনকারী লোকদের জন্য নিষ্পাপ ফেরেশ্তারা তাদের নূরানী ডানাসমূহ বিছিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হন না; বরং রব্বুল আলামীনের মহান দরবারে প্রাণভরে দোআ করেন। শুধু তাই নয়, বরং আসমান-যমীনে যা কিছু রয়েছে এমনকি সাগরের মাছ পর্যন্ত দ্বীনী জ্ঞানার্জনকারীর জন্য দোআ করতে থাকে।
জ্ঞানীর মর্যাদা
সাধারণ ইবাদতকারী সারা রাত ধরে ইবাদত করেও যা অর্জন করতে পারেনা একজন আলিম-ই বাআমল সারারাত ঘুমিয়েও তার চেয়েও বেশি সাওয়াব অর্জন করতে পারে। কারণ সাধারণ ইবাদতকারীর ইবাদতে অনেক ভুল থাকার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু আলিমের ঘুমও ইবাদত। কারণ তা নবীপাকের তরীক্বামতে হয়। আর সাধারণ ইবাদতকারীর ইবাদতের মধ্যে শয়তান বিভিন্ন প্রকারের কুমন্ত্রণা দেয়ার সুযোগ খুঁজে, কিন্তু ইলমে দ্বীনের ধারক আমলসম্পন্ন আলিমের পাশে যেতেও শয়তান অনেক সময় ভয় করে। যেমন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা বর্ণিত হাদীসে, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- ‘‘একজন ফক্বীহ্ (দ্বীনী জ্ঞানের অধিক বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি) শয়তানের জন্য এক হাজার সাধারণ ইবাদতকারীর চেয়েও শক্তিশালী।’’ অন্য হাদীসে রয়েছে প্রত্যেক বস্তুর একটা ভিত্তি থাকে, আর এ ধর্মের ভিত্তি হল ‘ইল্ম-এ দ্বীন। [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্ ইত্যাদি]
আকাশের বুকে লক্ষ-কোটি তারকার মাঝে জ্বলন্ত চাঁদের আকর্ষণ যেমন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, তেমনি অন্যান্য আবিদের সামনে জ্ঞানীর অবস্থান স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। অপর হাদীসে রয়েছে- হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদীস শরীফে রসূল-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- ‘‘পৃথিবীতে আলিমের মর্যাদা ওই নক্ষত্রের মত, যা দেখে রাতের অন্ধকারে জল-স্থলের পথিক পথের সন্ধান পেয়ে থাকে। যদি সেই নক্ষত্র ডুবে যায়, তাহলে চলন্ত পথিক দিকভ্রান্ত হয়ে যায়।’’ অর্থাৎ ওলামা-ই কেরামের অভাবে সাধারণ লোক পথহারা হবেই।
ইল্ম নবীগণের মীরাস
মানুষ মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া পরিত্যক্ত সম্পত্তি ওয়ারিশদের মাঝে বন্টন করা হয়। কিন্তু নবীগণের সম্পত্তির কোন ওয়ারিশ নেই। তাদের মীরাস হল ‘ইল্মে দ্বীন’ তথা ধর্মীয় জ্ঞান। তাই নবী করীম এরশাদ করতেন- نَحْنُ مَعْشَرُالْاَنْبِیَاءِ لَانُوْرِثُ وَلَانُوْرَثُ
অর্থাৎ আমরা নবীগণের দল, আমরা কাউকে সম্পত্তির ওয়ারিশ করিনা এবং কেউ আমাদেরকেও ওয়ারিশ করেনা। পৃথিবীতে তাঁরা যা বন্টন করেছেন তাহল শুধুমাত্র ধর্মীয় জ্ঞান। আর সমস্ত নবী-রসূলের জ্ঞানের মূল উৎস হল আমাদের আক্বা ও মাওলা হযরত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। তাই আল্লামা বূসীরী আলায়হির রাহ্মাহ্ চমৎকার বলেছেন-