নবীজির গোলামের কোন চিন্তা নেই

নবীজির গোলামের কোন চিন্তা নেই

নবীজির গোলামের কোন চিন্তা নেই
عَنْ اِبْنِ الْمُنْکَدِرِ اَنَّ سَفِیْنۃَ مَوْلٰی  رَسُوْلِ اللّٰہِ  اَخْطَأَ الْجَیْشَ بِاَرْضِ الرُّوْمِ اَوْ اُسِرَ فَانْطَلَقَ هَارِبًا یَلْتَمِسُ الْجَیْشَ فَاِذَا هُوَ بِالْاَسَدِ فَقَالَ یَا اَبَا الْحَارِثِ اَنَا مَوْلٰی رَسُوْلِ اللّٰہِ کَانَ مِنْ اَمْرِیْ کَیْتَ وَکَیْتَ فَاَقْبَلَ الْاَسَدُ لَہ‘ بَصْبَصَۃٌ  حَتّٰی قَامَ اِلٰی جَنْبِہٖ کُلَّمَا سَمِعَ  صَوْتًا اَہْوَی اِلَیْہِ ثُمَّ اَقْبَلَ یَمْشِیْ اِلٰی جَنْبِہٖ حَتّٰی بَلَغَ الْجَیْشَ ثُمَّ رَجَعَ  الْاَسَدُ
অনুবাদ : হযরত মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার গোলাম হযরত সফীনা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রোম সম্রাজ্যে মুসলিম সৈন্যবাহিনীর কাছে পৌঁছার রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলেন অথবা কোন যুদ্ধে বন্দীশালা হতে বের হয়ে সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে দৌঁড়াচ্ছিলেন এমতাবস্থায় হঠাৎ একটি বাঘ সামনে হাজির। তিনি বাঘকে সম্বোধন করলেন- হে আবুল হারেছ (আরবী ভাষায় বাঘের উপনাম) আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার গোলাম। অতঃপর অবস্থা এমন হল যে, ওই বাঘটি কুকুরের মত নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে নিকটে আসল। একপর্যায়ে তাঁর একপাশে এসে অবস্থান নিল আর যখনই কোন জন্তুর আওয়াজ শুনে তৎক্ষণাৎ সেদিকে দৌড়ে যায় আবার ফিরে আসে। এভাবে সম্মুখপানে যেতে যেতে সৈন্যবাহিনী পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন। অতঃপর বাঘ ফিরে গেল। [মিশকাত শরীফ ৫৪৫ পৃষ্ঠা]
প্রাসঙ্গিক আলোচনা
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন আমাদের নবীকে কেবল মানব জাতির জন্য নয়; বরং আঠার হাজার সৃষ্টিজগতের জন্য নবী ও রহমত করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। তাই আকাশের পাখী, সাগরের মাছ আর জঙ্গলের প্রাণীরাও তাঁকে চিনত এবং গভীরভাবে শ্রদ্ধা করত। এমনকি নবী করীমের নাম শুনলেও তাদের অবনত মস্তক নিবেদিত হত। এসব তারই অন্যতম মু’জিযা আর বিশাল ক্ষমতার প্রমাণ বহন করে। তেমনি একটি ছোট ঘটনার বর্ণনা আলোচ্য হাদীস শরীফে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্‌সির আল্লামা জালালুদ্দীন সয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি খাসা-ইসে কোবরা কিতাবে এ ধরনের অনেক ঘটনার উদ্ধৃতি সংকলন করেছেন।
নিম্নে কয়েকটি পাঠক সমীপে উপস্থাপন করা গেল-
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, বনী সালমার এক ব্যক্তির পানি সেচের উট ক্ষিপ্ত হয়ে তার  উপর হামলা করল, এভাবে পানি সিঞ্চনে বিঘ্ন ঘটায় খেজুর বাগিচা শুকিয়ে যেতে লাগল। ঘটনাটি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলে তিনি বাগানের দরজায় এসে হাজির হলেন। এক সাহাবী দৌঁড়ে এসে বললেন এয়া রাসূলাল্লাহ বাগানের ভিতরে যাবেন না। কারণ ক্ষিপ্ত উটটি সবাইকে কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু নবী করীম বললেন, তোমরা নির্ভয়ে বাগানে প্রবেশ করো। উট কাউকে কিছু করবে না। যেমন কথা তেমন বাস্তবতা। এতক্ষণ ধরে দৌঁড়াদৌড়ি করা সেই উটটি নবীপাকের নূরানী চেহারা দেখা মাত্রই শান্ত হয়ে গেল আর অবনত মস্তকে তাঁর কদমে এসে হাজির হয়ে গেল। এবং গর্দান ঝুঁকিয়ে সাজদাহ্‌ করল। এদিকে নবী করীম ঘোষণা দিলেন উটের মালিক কোথায় চলে এসো আর উটের লাগাম পরিয়ে দাও।
অপর বর্ণনায় রয়েছে- একদা হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মসজিদে উপস্থিত ছিলেন এমন সময় একটি উট ছুটে এসে তাঁর ক্রোড়ে মস্তক রেখে বিড়বিড় করে কি যেন বলতে লাগল আর নবীপাক তার সাথে কী যেন বললেন। কথা শেষে আল্লাহ্‌র রসূল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, উটটি এসে আমাকে অভিযোগ করল তার মালিক উটটিকে জবেহ করতে চাই তাই সে আমার কাছে এসে অভিযোগটি পেশ করল। এ বলে নবীজি উটের মালিককে ডেকে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে মালিক সত্যি সত্যিই স্বীকার করলেন, হ্যাঁ আমি আমার পিতার ভোজ যিয়াফতের জন্য উটটি জবেহ করতে চায়। রাসূলে পাক তাকে বললেন উট যেহেতু আমার কাছে প্রাণের ভিক্ষা চেয়েছে সুতরাং তুমি উটটিকে জবেহ করিও না। মালিক নির্দেশ মেনে উট নিয়ে বিদায় নিল।
অনূরূপ হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তাঞ্চআলা আনহু ও হযরত আবূ হোরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহ’র দুই বর্ণনায় রয়েছে উট এসে নবী করীম কদমে সাজদা করেছিল। অপর বর্ণনায় রয়েছে উট নবীজির কদমে সাজদাহ্‌ করতে দেখে সাহাবীদের কেউ কেউ আবেদন করলেন, ‘‘এয়া রাসূলাল্লাহ! উটের মত চতুস্পদ জন্তু যদি আপনার কদমে সাজদাহ্‌ করতে পারে তাহলে আমরাও কি পারি না?’’ উত্তরে নবী করীম বললেন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সাজদাহ্‌ করার অনুমতি যদি আমি দিতাম তাহলে মহিলাদেরকে নির্দেশ দিতাম তাদের স্বামীদেরকে সাজদা করতে। ইসলামী শরীয়ত মতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সাজদাহ্‌ করা হারাম।