পবিত্রতা ও নামায

পবিত্রতা ও নামায

পবিত্রতা ও নামায

পবিত্রতা ও নামায ইসলামের অন্যতম দু’টি অঙ্গ। বিভিন্নভাবে মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা এ দুটি বিষয়ে পবিত্র ক্বোরআন মজীদে আলোচনা করেছেন।

যেমন তিনি এরশাদ করেছেন-

اِنَّ اللہَ یُحِبُّ التَّوَّابِیْنَ وَیُحِبُّ الْمُتَطَھِّرِیْنَ

(নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাওবাকারীদের এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন)।

অন্যত্র এরশাদ করেছেন-

فَوَیْلٌ لِّلْمُصَلِّیْنَ الَّذِیْنَ ھُمْ عَنْ صَلَاتِھِمْ سَاھُوْن

(অতঃপর অনিষ্ট ওই নামাযীদের জন্য, যারা নিজেদের নামাযকে ভুলে থাকে)।

পবিত্র কালামে মজীদে মহান রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-

قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ ھُمْ فِیْ صَلَاتِھِمْ خَاشِعُوْنَ

(নিশ্চয় ওই সমস্ত মু’মিন সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের নামাযের মধ্যে বিনয়ী)।

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-

اِلَّا الْمُصَلِّیْنَ الَّذِیْنَ ھُمْ عَلٰی صَلَاتِھِمْ دَآءِمُوْنَ

(কিন্তু, ওই সব নামাযী, যারা নিজেদেরকে সর্বাবস্থায় নামাযে বিদ্যমান রাখে)।

তিনি অন্যস্থানে এরশাদ করেন-

وَالَّذِیْنَ ھُمْ عَلٰی صَلَاتِھِمْ یُحَافِظُوْنَ

(আর যারা নিজেদের নামাযের প্রতি যত্নবান)।

উল্লিখিত পবিত্র আয়াতসমূহ দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হল যে, ইহ ও পরকালীন সফলতা ও কল্যাণের জন্য পাঁচ ওয়াক্ব্‌ত নামায অবশ্যই প্রয়োজন।

মূলতঃ শুদ্ধ ও পরিপূর্ণ নামায হল যা বিনয়, নম্রতা এবং পরিপূর্ণ ইখ্‌লাস সহকারে আদায় করা হয়। তাই পাঁচ ওয়াক্ব্‌ত নামায আদায় করার জন্য নামাযের আরকান-আহকাম এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসাইল ভালভাবে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। সাথে সাথে এও জেনে নেওয়া প্রয়োজন যে, যেভাবে সফলতার জন্য পাঁচ ওয়াক্ব্‌ত নামায প্রয়োজন, তেমনিভাবে নামাযের জন্য পবিত্রতা এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাও আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত সাহাবী হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আন্‌হু’র হাদীস শরীফটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, প্রিয়নবী রঊফুর রহীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘‘নামায হচ্ছে বেহেশ্‌তের চাবি, আর পবিত্রতা হচ্ছে নামাযের হচ্ছে চাবি।’’ কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ অহঙ্কারী বে-নামাযী লোক এর হাক্বীক্বত তথা মূল রহস্য সম্পর্কে জানে না। আর জানলেও অসম্পূর্ণতা ও উদাসীনতার কারণে নামাযের পরিপূর্ণ সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়। আবার কতেক মহিলা ও পুরুষ নামাযী নামায ও পবিত্রতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল না হওয়ার কারণে নামাযের পরিপূর্ণ সাওয়াব হতে বঞ্চিত হয়। এ জন্যই নামায ও পবিত্রতা সম্পর্কীয় জরুরী মাসআলা-মাসাইল এখানে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হয়েছে, যা দ্বারা অপবিত্র পবিত্র হবে এবং নামাযী তার নামাযসমূহ পরিশুদ্ধ করে জান্নাতের চাবি লাভ করার উপযোগী হবে।

 প্রয়োজনীয়

উপরে বর্ণিত হাদীসে নববীতে ‘মিফতাহ্‌’ বা চাবি শব্দটি দ্বারা নামাযের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। এ জন্য যে, যেমন মানুষ চাবি ব্যতীত নিজের ঘর ও দোকান  ইত্যাদিতে প্রবেশ করতে পারে না, তেমনি জান্নাতে প্রবেশের জন্য চাবি হচ্ছে নামায। নামায ব্যতীত জান্নাতে কিভাবে প্রবেশ করবে? আর নামায না পড়া কিংবা বিনষ্ট হবার কারণে বেহেশত হতে বঞ্চিত হয়ে দোযখের শাস্তিও কীভাবে সহ্য করবে? জনৈক কবি কতই সুন্দর লিখেছেন-

ہے سوچنے کی بات ٭ اِسے بار بار سوچ

অর্থাৎ এ’তো চিন্তার কথা! সুতরাং বার বার চিন্তা কর।

নামায এবং পবিত্রতার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক দ্বারা প্রমাণিত হল যে, নামায মানুষকে ভিতর ও বাইরে পবিত্র করে। আর যেহেতু নামায থেকে বঞ্চিত হওয়া মানেই বিশুদ্ধ পবিত্রতা থেকে বঞ্চিত হওয়া, সেহেতু বে-নামাযী ও অপবিত্র ব্যক্তির জীবন একজন মুসলমানের জীবন হতে পারে না, বরং পশু ও কাফিরের মত অপবিত্র ওই জীবন। যেমন অধিকাংশ বে-নামাযী মহিলা ও পুরুষ, পায়খানা-প্রস্রাব থেকে ভালভাবে পবিত্রতা অর্জন করে না। পশ্চিমা স্টাইলে পুরুষরা দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে এবং মহিলারা নেইল পলিশসহ এমন ধরনের মেকআপ বা প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করে, যার ফলে শরীরের সে অঙ্গে পানি না পৌঁছার কারণে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জিত হয় না। ফলে, তার নামায হয় না; বরং ওই সমস্ত মেকআপকারী নারী-পুরুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে নামাযী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীই হয় না। আল্লাহ্‌ রক্ষা করুন। আ-মীন।

 ভোর থেকে

ফজরের আযানের সাথে সাথে ঘুম থেকে জেগে উঠবেন। তখন খুব অলসতার সময়। শয়তান এ সময়টিতে নানাভাবে ঘুম পাড়াতে সচেষ্ট থাকে যেন ফজরের নামায হাতছাড়া হয়ে যায়। তাতে সে সফলকাম হতে পারলে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে শেষ পর্যন্ত তার কানে প্রস্রাব করে দিয়ে চলে যায়। কাজেই সময়টিতে নিজের নাফ্‌স ও শয়তানের বিরোধিতা করে, কাল বিলম্ব না করে নিম্নলিখিত দুজ্ঞআ পড়তে পড়তে বিছানা ত্যাগ করবেন-

اَلْحَمْدُ لِلہِ الَّذِیْ اَحْیَانَا بَعْدَ مَا اَمَاتَنَا وَاِلَیْہِ النُّشُوْر

উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহ্‌য়া-না- বাজ্ঞদা মা- আমা-তানা- ওয়া ইলায়হিন্‌ নুশূ-র।

তারপর টয়লেটে প্রথমে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং প্রবেশ করার সময় পড়বেন-

اَللہُمَّ اِنِّیْ اَعُوْذُبِکَ مِنَ الخُبْثِ وَالخَبَآءِث

উচ্চারণঃ  আল্লা-হুম্মা ইন্নী- আজ্ঞঊ-যুবিকা মিনাল খুব্‌সি ওয়াল খাবা-ইস্‌।

টয়লেট থেকে প্রথমে ডান পা দিয়ে বের হয়ে পড়বেন-

غُفْرَانَکَ اَلْحَمْدُ لِلہِ الَّذِیْ اَذْھَبَ عَنِّیْ مَایُوْذِیْنِیْ وَاَمْسَکَ عَلَیَّ مَا یَنْفعُنِیْ

উচ্চারণ গুফরা-নাকাল হাম্‌দু লিল্লা-হিল্লাযী- আযহাবা আন্নী- মা ইয়ূ-যী-নী- ওয়া আমসাকা আলাইয়্যা মা ইয়ান্‌ফা’উনী-।

তারপর ওযূ করবেন। ওযূর বিবরণ সামনে আসছে।

পবিত্রতার্জন সম্পর্কে আরো কিছু কথা

পায়খানা-প্রস্রাবের জন্য টয়লেটে প্রবেশ করার সময় প্রথমে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। বের হওয়ার সময় ডান পা প্রথমে দিয়ে বের হতে হয়। পায়খানা-প্রস্রাব করার সময় এবং ইসতিনজা তথা পবিত্রতা অর্জন করার সময় ক্বেবলা শরীফকে সামনে কিংবা পেছনে রাখা যাবে না। এ বিধান সর্বাবস্থায় প্রযোজ্য- চাই খোলা ময়দান বা জঙ্গলে হোক কিংবা দেওয়াল বেষ্টিত ঘরে হোক। যদি ভুলক্রমে ক্বেবলার দিকে মুখ কিংবা পিঠ রেখে হাজত সেরে থাকে, তবে মনে পড়ার সাথে সাথে দিক পরিবর্তন করে নিতে হবে। যে মসজিদ বা ঘরের টয়লেট ক্বেবলামুখী কিংবা পেছনমুখী হয়, তা হলে তাৎক্ষণিকভাবে দিক পরিবর্তন করে ফেলেতে হবে। এ মাসআলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ অবহিত নয়, কিংবা উদাসীন। ছোট ছেলে-মেয়েকে পায়খানা- প্রস্রাব করানোর সময় যদি ক্বিবলামুখী কিংবা ক্বেবলা পেছনে রেখে করানো হয়, তাহলে ওই ব্যক্তি গুনাহ্‌গার হবে। এভাবে পুরুষের স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম। যদি ছোট ছেলেকেও স্বর্ণের আংটি বা চেইন পরানো হয়, তাহলে ওই ব্যক্তি গুনাহ্‌গার হবে, শিশু গুনাহ্‌গার হবে না। যেহেতু শিশু এখনো মুকাল্লাফ তথা শরীয়তের বিধানাবলীর আওতাভুক্ত হয়নি। খালি মাথায় পায়খানা -প্রস্রাবখানায় যাওয়া অথবা এমন বস্তু হাতে রাখা, যা’তে কিছু লাগার সম্ভাবনা থাকে অথবা হাতে আংটি থাকা অথবা ওখান থেকে কথা-বার্তা বলা- সবই নিষেধ, অপছন্দনীয় (মাক্‌রূহ)। পায়খানা-প্রস্রাব এক সাথে হলে ঢিলা-কুলূক ব্যবহার করা সুন্নাত। তবে শুধু পানি দ্বারা পরিস্কার করলেও যথেষ্ট হবে। কিন্তু পছন্দনীয় পদ্ধতি হচ্ছে ঢিলা-কুলূক ব্যবহার করার পর পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা। কাগজ দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা নিষেধ;  যদিও এতে কোন লেখা না থাকে; এমনকি যদি আবূ জাহলের নামও থাকে তবুও নিষেধ। ডান হাত দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা মাকরূহ। যদি কারো বাম হাত অকেজো হয়, তাহলে বৈধ। ঝমঝম কূপের পানি দিয়ে ইসতিনজা করা মাকরূহ।

 সাবধানতা

প্রস্রাব কিংবা পায়খানা করার সময় কাপড় একেবারে তুলে ফেলা নিষেধ। এমনভাবে পায়খানা-প্রস্রাব করতে হবে যাতে কেউ না দেখে এবং প্রস্রাবের ছিটকে গায়ে না লাগে এবং গুরুত্বসহকারে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। বড়দের মত ছোটদের প্রস্রাবও অপবিত্র। এ থেকে বেঁচে থাকা খুবই প্রয়োজন। এভাবে যদি দুগ্ধপোষ্য শিশু দুধ বমি করে দেয়, যদিওবা তা মুখেই ছিল, তবুও তা নাপাক।

 গোসলের বর্ণনাঃ

যদি কারো গোসলের প্রয়োজন হয়, তাহলে সে গোসল করে নেবে। বিভিন্ন কারণে গোসল ফরয হয়। যেমন- লিঙ্গ থেকে ধাতু/বীর্য পূর্ণ উত্তেজনা সহকারে পৃথক হলে, পুরুষাঙ্গ যৌনাঙ্গে প্রবেশ করলে গোসল ফরয হবে, যদিও বীর্য নির্গত না হয়। ঘুম থেকে জেগে যদি কাপড়ে বীর্যের চিহ্ন দেখা যায় কিংবা ভেজা থাকে,  আর সে চিহ্ন যদি বীর্য (যা সঙ্গমের সময় বা পরে বের হয়) কিংবা মযী (যা সঙ্গমের পূর্বে নির্গত হয়) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তাতে গোসল ফরয হবে; যদিও স্বপ্নের কথা মনে না থাকে। এ তিন কারণে গোসল ফরয হয়।

এছাড়াও মেয়েদের ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হলে এবং নিফাস (প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ) থেকে পবিত্র হলেও গোসল জরুরী হয়।

গোসলের পদ্ধতি

গোসলের তিনটি ফরয রয়েছেঃ

১. এভাবে কুল্লি, করা যাতে ঠোঁট, জিহ্বা এবং কন্ঠনালীর কিনারা পর্যন্ত মুখের সম্পূর্ণ স্থানে পানি পৌঁছে। যদি দাঁতে কোন কিছু লেগে থাকে তাহলে তা ভালভাবে পরিস্কার করা প্রয়োজন, যদি পরিস্কার করতে কোন ক্ষতি কিংবা কষ্ট না হয়।

২.নাকে পানি দেওয়া, এমনভাবে যাতে, নাকের ছিদ্রের নরম অংশে পানি পৌঁছে, যাতে করে ওই স্থানের লোম ও অন্য কিছু থাকলে তাও পরিস্কার হয়ে যায়। এক কথায় নাকের ভিতরে ভাল করে পরিস্কার করে পানি পৌঁছাতে হবে।

৩.সমস্ত শরীর ভালভাবে ধৌত করা। এমনভাবে ধৌত করতে হবে, যাতে পানি মাথার তালু থেকে পায়ের নিচে পর্যন্ত শরীরের প্রত্যেক পরতে পরতে পৌঁছে, যাতে শরীরের প্রতিটি লোমকূপে পানি পৌঁছে যায়। একটি লোমও যাতে শুকনো না থাকে। যদি একটি লোম পরিমাণ জায়গাও শুকনো থাকে, তাহলে গোসল শুদ্ধ হবে না। যদি নাভীর নিচের লোমে পানি পৌঁছার ব্যাপারে সন্দেহ হয়, তাহলে সেখানে হাত দিয়ে ভালভাবে পানি পৌঁছাতে হবে।

উল্লিখিত ফরযসমূহসহ গোসলের সুন্নাতসম্মত পদ্ধতি হচ্ছে- প্রথমে গোসলের নিয়্যত করবে।

গোসলের নিয়্যত       

نَوَیْتُ الْغُسْلَ لِرَفْعِ الْجَنَابَۃِ

উচ্চারণ নাওয়াইতুল গোস্‌লা লিরফ্‌’ইল জানা-বাতি।

তারপর, প্রথমতঃ দু’হাতের কব্জি তিনবার করে ধৌত করবেন। তারপর প্রস্রাবের রাস্তা (লিঙ্গ) ভালভাবে পরিস্কার করবেন, সেখানে ‘নাজাসাত’ (অপবিত্র বস্তু) থাকুক বা না-ই থাকুক। অতঃপর যদি শরীরের অন্য কোন স্থানে অপবিত্র কিছু লেগে থাকে তা পরিস্কার করতে হবে। তারপর শরীরে ধীরে ধীরে পানি পৌঁছাতে হবে। প্রথমে ডান পার্শ্বে তিন বার পানি, তারপর বাম পার্শ্বে তিনবার পানি দেওয়ার পর সমস্ত শরীর হাত দ্বারা আস্তে আস্তে রগড়াতে বা মর্দন করতে হবে। অতঃপর মাথায় এবং সমস্ত শরীরে তিনবার পানি দিতে হবে। গোসলের সময় ক্বেবলামুখী হওয়া কিংবা কারো সাথে কোন প্রকার কথাবার্তা বলা এবং কোন দো’আও পড়া যাবে না বরং গোসল করা শেষ হলে এগুলো করবেন।

সাবধানতা

মাথার চুল যদি ঘন না হয়, তাহলে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ফরয। আর চুল যদি ঘন হয়, তাহলে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো দরকার। চুলের খোঁপা খুলতে হবে না। চুল যদি এমন ঘন হয় যে, খোঁপা খোলা ব্যতীত চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে না, তাহলে খোঁপা খুলতে হবে।

নাকের ছিদ্রের বিধান হচ্ছে- যদি এগুলো বন্ধ না হয় তাহলে পানি পৌঁছানো প্রয়োজন। আর যদি ছিদ্র ছোট হয়, তাহলে নড়াচড়া করে পানি পৌঁছানো দরকার। কোন স্থানে যদি জখম হয় এবং ওই স্থানে ব্যান্ডেজ থাকে আর এটা খুললে যদি ব্যাথা কিংবা ক্ষতি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে অথবা কোন স্থানে কোন রোগ অথবা ব্যথার কারণে পানি প্রবাহিত করলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে ওই সব স্থানে সম্পূর্ণরূপে মসেহ করতে হবে। আর যদি ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে, তা’হলে শুধু ব্যান্ডেজ মসেহ করবে, সম্পূর্ণ স্থান নয় এবং ব্যান্ডেজও প্রয়োজনীয় ক্ষতস্থান ছাড়া বেশি স্থানে রাখবে না। নতুবা মসেহ যথেষ্ট হবে না। যার ওযু নেই অথবা ধৌত করার প্রয়োজন আছে অথচ পানি ব্যবহারে অক্ষম অথবা এমন রোগ হয়েছে যে, যদি ওযু কিংবা গোসল করে তাহলে রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে অথবা আরোগ্য লাভ করা বিলম্বিত হবার সম্ভাবনা থাকে -এসব অবস্থায় পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নামায আদায় করতে হবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই নামায ছেড়ে দেয়া যাবে না। তায়াম্মুমের বিবরণ পরবর্তীতে আসছে।

বিশেষ জ্ঞাতব্য

যার উপর গোসল ফরয, তার জন্য মসজিদে যাওয়া, বায়তুল্লাহ্‌র তাওয়াফ করা, ক্বোরআন মজীদ স্পর্শ করা, অথবা স্পর্শ করা ছাড়া দেখে দেখে মুখে পড়া বা কোন আয়াত লিখা ও স্পর্শ করা অথবা এমন আংটি পরা, যার উপর ক্বোরআন মজীদের কোন অংশ আছে -এসবই না-জায়েয।

ক্বোরআনের অনুবাদ ফার্সী অথবা উর্দূ অথবা যেকোন ভাষায় হোক না কেন স্পর্শ করা এবং পড়া ক্বোরআনের হুকুমের অনুরূপ।

দুরূদ শরীফ এবং অন্যান্য দোজ্ঞআ ইত্যাদি পাঠ করলে যদিও কোন অসুবিধা নেই, তবুও ওযূ কিংবা কুল্লি করে পাঠ করা উচিত। উল্লিখিত ব্যক্তিদের আযানের উত্তর প্রদানে কোন অসুবিধা নেই। এটা বৈধ।

যদি রাতে গোসল ফরয হয়, কিন্তু ফজরের নামাযের সময় গোসল করতে চায়, তাহলে রাতে প্রস্রাব সেরে ওযূ করে অথবা হাত-মুখ ধৌত করে ও কুল্লি করে পুনরায় ঘুমাবেন। এভাবে যদি খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলেও ওযূ করে, হাত ধৌত করে এবং কুল্লি করে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে।

নামায শিক্ষা