অপসংস্কৃতি রোধে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই

অপসংস্কৃতি রোধে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই

মুহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত হোসেন>
সংস্কৃতি মানব জীবনের এক অপরিহার্য ও অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। সংস্কৃতি শব্দটি গঠিত হয়েছে সংস্কার শব্দ থেকে। সংস্কার অর্থ হলো- শুদ্ধি, পরিস্করণ, পরিমার্জন, মেরামত, সংশোধণ ইত্যাদি। আর সংস্কৃতি অর্থ সংস্করণ, বিশুদ্ধিকরণ, সুশোভিত, সভ্যতাজনিত উৎকর্ষ ইত্যাদি। সংস্কৃতি শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ হলো Culture যার আভিধানিক অর্থ মানবীয় বৈশিষ্ট্যের উৎকর্ষ সাধন। Culture শব্দটি ল্যাটিন Culture থেকে নেয়া হয়েছে যার অর্থ Cultivation বা চাষাবাদ। সংস্কৃতি শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবে আরবীতে ’সাকাফাহ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় যার অর্থ পরিশীলিত, মার্জিত, সচেতন, ও তীক্ষ্মবুদ্ধিসম্পন্ন ইত্যাদি।

সংস্কৃতি কী একথা শুনতেই আমরা সাধারণভাবে আমাদের চারপাশে চলমান নাট্য চর্চা, চিত্রকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ললিতকলা, সঙ্গীত, সাহিত্য ও কাব্যচর্চা বা বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসি এবং মনে করি এগুলিই আমাদের সংস্কৃতি। কিন্তু বিষয়টি শুধু সেরকম নয়। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও পন্ডিত বিভিন্ন ভাবে সংস্কৃতির ব্যাখ্যা বা মূল্যায়ন করেছেন। উনিশ শতকে এডওয়ার্ড টেইলরের দেয়া সংস্কৃতির সংজ্ঞাকে বেশ উপযোগী বলে ধরা হয়। সেই সংজ্ঞা মতে- মানুষের বিশ্বাস, আচার-আচরণ এবং জ্ঞানের একটি সমন্বিত প্যাটার্নকে সংস্কৃতি বলা যায়। ভাষা, সাহিত্য, ধারনা, ধর্ম ও বিশ্বাস, রীতিনীতি, সামাজিক মূল্যবোধ ও নিয়মকানুন, উৎসব, শিল্পকর্ম এবং দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার হয় এমন জিনিসপত্র বা হাতিয়ার ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই সংস্কৃতি। এমনকি, সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষ যেসব শিক্ষা, সামর্থ্য এবং অভ্যাস আয়ত্ত করে, তাও সংস্কৃতির অংশ।

সংস্কৃতি বিষয়ক উল্লেখিত ব্যাখ্যাগুলো পর্যালোচনা করলে একটি কথা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সংস্কৃতি হলো একজন মানুষের মধ্যে লুকানো মানবিক গুনাবলীর যথার্থ পরিস্ফুটন এবং মানবীয় ত্রুটি সংস্কারের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ও সফল মানুষ হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করা। একটি জমিকে যেমন ভালো করে কর্ষণ দিয়ে, বীজ বপনের উপযুক্ত করতে হয় তারপর উত্তম বীজ বপন করে, নিয়মিত পরিচর্যা, আগাছা দমন এবং সময়ানুযায়ী সেচ-নিকাশের ব্যবস্থা করে, পোকার আক্রমন থেকে রক্ষার জন্য কার্যকরী কীটনাশক ব্যবহার করে উত্তম ফলন নিশ্চিত করতে হয় তেমনি মানুষকেও সর্বোত্তম, নিস্কলুস ও ত্রুটিমুক্ত জীবন ব্যবস্থা এবং সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে নিজেকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে প্রমান করতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো এই নিস্কলুস, সার্বজনীন, ত্রুটিমুক্ত ও সর্বোত্তম সংস্কৃতি কোথা হতে আসবে? হ্যাঁ, এটি আসবে মহান রাব্বুল আলামীনের দেয়া বিধান থেকে। কারন তিনিই মানবের একমাত্র স্রষ্টা এবং বিধানদাতা। তিনি মানুষকে সৃষ্টির সেরা ঘোষণা দিয়েই শুধু পাঠাননি সাথে সাথে সৃষ্টির সেরা যোগ্যতা অর্জনের জন্য শাশ্বত জীবন দর্শন দিয়েছেন যার নাম ’ইসলাম’। ’ইসলাম’ নিছক কোন ধর্মের নাম নয়। এটি একটি পরিপূর্ণ, সফল, নিস্কলুস, নির্ভুল ও সার্বজনীন জীবন ব্যবস্থা। আমরা মুসলমান হিসেবে ইসলামকে যেহেতু আমাদের একমাত্র ’জীবন ব্যবস্থা’ হিসেব মেনে নিয়েছি সেহেতু সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও ইসলামি সংস্কৃতিকে আমাদের জীবনের অনুষঙ্গ হিসেবে মেনে নিতে হবে এবং চর্চা করতে হবে, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ মুসলমান হিসেবে আমাদের নেই। ইসলামি সংস্কৃতি বলতে আমরা কী বুঝি? সাধারণ ও সরল কথায় শাশ্বত জীবন বিধান ইসলাম মানবজাতির জন্য যে সংস্কৃতির শিক্ষা দেয় তা-ই হলো ইসলামি সংস্কৃতি। যার আদি বা মূল উৎস হলো ঐশী গ্রন্থ আল কোরআন ও প্রিয়নবী’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) সুন্নাহ বা হাদিছ। মিশরের প্রখ্যাত ইসলামি দার্শনিক অধ্যাপক হাছান আইয়ুব ইসলামি সংস্কৃতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন- “কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক মানুষের সামষ্টিক জীবনের চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস, প্রত্যয়, আবেগ-অনুভূতি, অনুরাগ, মূল্যবোধ, কর্মকান্ড, আচরণ, সৎকর্মশীলতা, উন্নত নৈতিকতা তথা জীবনের পরিমার্জিত ও পরিশোধিত সকল কর্মকান্ড, মানুষের পরিপূর্ণ জীবনধারা ও পরিমন্ডলই ইসলামি সংস্কৃতির আওতাধীন”।

ইসলামি সংস্কৃতির মূল ভিত্তি পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ বিধায় তা বাস্তবতা ও মানবিকতার উৎকর্ষতায় উত্তীর্ণ ও পরিপক্ষ। বিশ্বে একমাত্র সার্বজনীন, বিশুদ্ধ, পরিমার্জিত, পরিশীলিত, রুচি ও মর্যাদাপূর্ণ এবং কল্যাণকর সংস্কৃতি হচ্ছে ইসলামি সংস্কৃতি। এতে কোন সংশয়ের অবকাশ নেই। নেই কোন অবাস্তব, অসুন্দর, অনৈতিক, অশোভন, অশালীন ও অমর্যাদাকর বিষয়। ইসলামি সংস্কৃতি একটি মানবতাবাদী সংস্কৃতি এবং সম্পূর্ণভাবে একটি মানসিক শিল্প। ইসলামি সংস্কৃতি মানুষকে ইহজাগতিক সফলতা, শান্তি, মর্যাদা এবং পরজাগতিক মুক্তির পথকে সুগম করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের জন্য ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন হিসেবে প্রেরণ করেছেন যাতে জন্ম থেকে মৃত্যু এবং তার পরবর্তী অবিনশ্বর জগত পর্যন্ত নির্দেশিকা রয়েছে। পবিত্র কুরআনুল করীমে আল্লাহ পাক ঘোষণা দিলেন- “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং আমি ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম” (সূরা মায়েদা)।

একজন শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার ডান কানে আযান দেয়া, একটি সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা, আকিকা করা, প্রথম পবিত্র বাক্য ’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শিক্ষা দেয়া, খতনা করানো, কুরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস করানো, নির্দিষ্ট বয়সে সালাতের তাগিদ দেয়া, উপযুক্ত ইসলামি শিক্ষার ব্যবস্থা করা, এভাবে ধীরে ধীরে ইসলামি সংস্কৃতিগুলো শিক্ষা দিয়ে একজন পরিপূর্ণ মুসলমান তথা মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার যে অনুপম শিক্ষা ইসলামে রয়েছে তা পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম বা দর্শনে নেই। একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি দুনিয়াতে কীভাবে চলবে, কী খাবে কী খাবে না, উঠা-বসা, আচার-আচরন, পারস্পরিক সম্পর্ক, সামাজিক, রাজনৈতিক, আর্থিক, আত্মিক, সামষ্টিক, শিল্পকলা, চিত্রকলা, সাহিত্য চর্চা, আনন্দ-বিনোদন সবকিছুই রয়েছে ইসলামি সংস্কৃতিতে। অন্যদিকে মানব মস্তিস্ক প্রসূত, ইসলামি রীতি-নীতি বিরুদ্ধ, অকল্যাণকর যা মানুষকে মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা না দিয়ে নগ্নতা ও বেহায়াপনা কিংবা ধর্মহীনতার শিক্ষা দেয় তা-ই অপসংস্কৃতি। এক কথায় ইসলামি সংস্কৃতির মানদণ্ডে  উত্তীর্ণ নয় এমন সব কর্মকা-ই অপসংস্কৃতি ও বর্জনীয়। মানবজীবনের এমন কোন অধ্যায়, বিভাগ কিংবা দিক নেই যেটির ব্যাপারে ইসলাম শিক্ষা দেয়নি। অথচ আজ মুসলিম জাতি তার নিস্কলুষ ও কালজয়ী সংস্কৃতিকে ভুলে গিয়ে আধুনিক সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতিকে জীবনের অনুষঙ্গ বানিয়ে দেদারছে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে যা সত্যিই দুঃখজনক, অপমানকর এবং ভয়ানক। আমরা যদি নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশের কথা চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলিম হয়েও ইসলামি সংস্কৃতি সম্পর্কে উদাসীন। দেশের অধিকাংশ মুসলমান ইসলামকে একটি সাংস্কৃতিক বিধান হিসেবে জানে না এবং ইসলামের অনুপম সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য্য সম্পর্কে তাদের ধারণা খুবই অপ্রতুল। যার ফলে আধুনিক সংস্কৃতির নামে পরদেশী নগ্ন অপসংস্কৃতিকে নিজেদের সংস্কৃতি মনে করে কাছে টেনে নিচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আদর্শহীন অন্ধকার পথে ঠেলে দিচ্ছে। একশ্রেণির স্বঘোষিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, পশ্চিমাদের দালাল, বিকৃত রুচির মানসিকতা সম্পন্ন লোক দেশে আধুনিক সংস্কৃতির নামে বিজাতীয়, অনৈসলামিক ও অপসংস্কৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে দেশের প্রচার মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগিয়ে অপসংস্কৃতির প্রচার-প্রসার করছে যার কারনে আজকের সমাজে সাম্য, সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ববোধ, পরমতসহিষ্ণুতা, আদব কায়দা, শিষ্টাচার ইত্যাদি লোপ পাচ্ছে। বার্থ ডে, ম্যারেজ ডে, লাভ ডে, এপ্রিল ফুল, থার্টি ফাস্ট নাইট, হ্যালোইন ডে, বিজয় মেলা, পহেলা বৈশাখ সহ বিভিন্ন বিশেষ দিন ও অনুষ্ঠান সমূহে যেভাবে অপসংস্কৃতি তথা ভিনদেশী ও নগ্ন সংস্কৃতির ছড়াছড়ি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বেশ ক’বছর যাবত আবার শুরু হয়েছে ভিনদেশী সংস্কৃতির ‘হোলি’ উৎসব যা নিতান্তই ভিনধর্মী উৎসব অথচ মুসলমানের ছেলে-মেয়েরাও এই বেহায়াপনায় গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের ফলে আজ আমরা পাপাচার, অত্যাচার, ইভটিজিং, বর্বরতা, হঠকারিতা, ধর্ষন, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ, দূর্নীতি, মাদকাসক্তি আর উচ্ছৃঙ্খলতায় জর্জরিত। মুসলিমপ্রধান এই মাতৃভূমির গৌরবময় জনপদের হাজার বছরের নিস্কলুষ মুসলিম সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে ধ্বংস করার এক হীন চক্রান্ত ও নীল নকশা প্রণয়ন করেছে খৃস্টান, ইহুদী ও ধর্মনিরেপেক্ষতার ধ্বজাধারী ভারতীয় আর্য ভ্রাহ্মনবাদী এবং এদেশীয় কিছু জ্ঞানপাপী, মুক্তমনা নামধারী দালাল। তারা মুসলমানদের ঈমান-আকিদা, মানবিক মূল্যবোধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কল্যাণকামী সর্বজনীন সমাজ ব্যবস্থা তথা সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও কার্যকর যে কাজটি করেছে তা হলো তাদের নিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেল ও সামাজিক মাধ্যমগুলোর দ্বারা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। আমরা যদি গভীরভাবে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশের জন্য যথেষ্ট ফাঁদ তারা পেতেছে। ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, শিল্প, সাহিত্য, এনজিও, চিকিৎসাকেন্দ্র, বিউটি পার্লার, সমিতি, সুন্দরী প্রতিযোগীতা, ফ্যাশন শো সহ বিভিন্ন উপায়ে তারা আমাদের মাঝে অপসংস্কৃতির বীজ বপন করছে আর ছড়িয়ে দিচ্ছে নগ্নতা ও বেহায়াপনা। কিন্তু তারা জানে না তাদের জন্য কত কঠোর শাস্তির বিধান রেখেছে মহান আল্লাহ। কুরআনের সূরা নূরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন- “যে সব লোক চায় যে, ঈমানদার লোকদের সমাজে নিলর্জ্জতা বিস্তার লাভ করুক তারা দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। আল্লাহই জানেন, তোমরা জানো না”। অপরদিকে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- “তিন প্রকার লোক আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত-১.) হারাম শরীফের পবিত্রতা বিনষ্টকারী ২. ইসলামে বিজাতীয় রীতি-নীতির(সংস্কৃতির) প্রচলনকারী, ৩. কোন মানুষকে অন্যায়ভাবে হ্ত্যার প্রচেষ্টাকারী (বুখারী)।

সময় এসেছে নতুন করে ভাববার এবং এসব অপসংস্কৃতি থেকে আগামী প্রজন্মকে বাঁচাবার। আমাদেরকে বুঝতে হবে এবং বুঝাতে হবে, যে কর্ম ব্যক্তি বা সমাজের সামগ্রিক, শান্তিপূর্ণ ও পবিত্র পরিবেশকে ব্যাহত করে তা নৈতিকতা বিরোধী এবং ইসলামি সংস্কৃতির পরিপন্থী। ইসলামি সংস্কৃতির সার্থক রূপায়ক হলেন মানবতার শ্রেষ্ঠ সংস্কারক, আল্লাহর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যার পুরো জীবন হলো আল-কুরআনের বাস্তব রূপ। তাই জীর্ণ কুঠিরে, ছিন্ন বস্ত্রে অর্ধভূক্ত অনাড়ম্বর মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকারাচ্ছন্ন আরব উপদ্বীপকে বিশ্ব শান্তির মডেলে পরিণত করেছিলেন যা পৃথিবীর প্রলয়দিন পর্যন্ত অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। ইসলামি সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য ’সত্যবাদীতা’র এক অদ্বিতীয় নজির স্থাপন করেছিলেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাঁর শৈশবেই। কাফের-মুশরিকরা পর্যন্ত তাঁকে আল-আমীন নামে সম্বোধন করতেন এবং বিশ্বাস করতেন। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ঘোষনা করেন- ”নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী”(সূরা ক্বলম)।
তাই আমাদেরকে ইসলামি সংস্কৃতির সূতিকাগার পবিত্র কুরআন ও প্রিয় নবীর জীবনাদর্শ অনুসরনের মাধ্যমে প্রচলিত অপসংস্কৃতিকে নির্মূল করে সমাজে ইসলামি সংস্কৃতির স্রোতকে আরো গতিময় করার পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসলামে এটা নেই, ওটা নেই বলে গলা ফাটালে ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশ হবেনা বরং ইসলামি সীমারেখার মধ্যে থেকে জীবনের জন্য উপাদেয়, আনন্দদায়ক, সর্বজনীন ও নিস্কলুষ সংস্কৃতি চর্চার বাস্তব দিকনির্দেশনা উপস্থাপন করতে হবে সাধারণের কাছে এবং প্রচলিত অপসংস্কৃতি ও বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রত্যেকটি অনুষঙ্গ চিহ্নিত করে তার বিকল্প হিসেবে ইসলামি সংস্কৃতির রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে অন্যথায় অপসংস্কৃতির ভয়াল স্রোতকে দমানো সম্ভব হবে না। উদাহরণ স্বরূপ বাংলা নববর্ষ ও খৃস্টিয় নববর্ষের অপসংস্কৃতি থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে হিজরী নববর্ষ উদযাপন করতে হবে এবং তুলে ধরতে হবে হিজরি নববর্ষের ইতিহাস, পালনীয় ও বর্জনীয় ইসলামি ঐতিহ্য। যেমন ঈদে মিলাদুন্নবী, লাইলাতুল কদর, লাইলাতুল নিছফ মিন শাবান (লাইলাতুল বরাত), শবে মেরাজ, আশুরা, সালাম, সাওম, যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি ইসলামি সংস্কৃতি চর্চা মানুষকে দ্বীনের পথে উজ্জ্বীবিত করে।

আসুন, আমরা তথাকথিত আধুনিক, ধর্মহীন, অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ, মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী বিজাতীয় অপসংস্কৃতিকে না বলি এবং ইসলামের শাশ্বত, কল্যাণকর ও সার্বজনীন সংস্কৃতিকে আলিঙ্গন করে সত্য ও সুন্দরর ছোঁয়ায় নিজেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে একটি আদর্শিক, শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় এবং ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে প্রার্থনা করি- “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের রক্ষা করুন”-(সূরা বাকারা)
লেখক: প্রাবন্ধিক, সৌদি আরব|