অভিশপ্ত ইসরাইলিরা অবরুদ্ধ করে রেখেছে পবিত্রতম ভূমি বায়তুল মোকাদ্দস

অভিশপ্ত ইসরাইলিরা অবরুদ্ধ করে রেখেছে পবিত্রতম ভূমি বায়তুল মোকাদ্দস

বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর নাম ‘ফিলিস্তিনি’। ফিলিস্তিনিরা আজ নিজ দেশেই পরবাসী। জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের দমন-নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনিরা প্রাণ বাঁচাতে আজ নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে দেশে দেশে উদ্বাস্তু জীবন বেছে নিয়েছে। একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্যে সুদীর্ঘ ৭৫ বছর অপেক্ষা করেও তারা পায়নি তাদের স্বপ্নের দেশ। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর সহায়তায় ইসরায়েল দখল করে আছে পুরো ফিলিস্তিন। দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে তারা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে একের পর এক ইহুদি বসতি নির্মাণ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের এনে পুনর্বাসন করে যাচ্ছে। গাজা ও পশ্চিম তীরসহ বিভিন্ন এলাকায় নানা ছুঁতোয় আরোপ করছে অর্থনৈতিক অবরোধ। অবরোধের কারণে খাদ্য ও ঔষধের অভাবে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে শত শত ফিলিস্তিনি শিশু ও বয়স্ক মানুষ। এখন সরাসরি হত্যাযজ্ঞে নেমেছে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনের যে মানুষগুলো ৫৬ বছর আগে জন্ম গ্রহণ করেছে-তারা জন্মের পর থেকে ইসরাইলের নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। তাদের নিপীড়ন ও নির্যাতনে নিহত হয়েছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। কারাগারে বছরের পর বছর ধরে দুর্বিষহ দিনাতিপাত করছে ফিলিস্তিনি জনগণ। কয়েক লক্ষ ফিলিস্তিনি জন্ম থেকেই উদ্বাস্তু জীবন-যাপন করছে। চরম অভিশপ্ত ইহুদীজাতি ইসরাইলিরা অবরুদ্ধ করে রেখেছে বহু সম্মানিত নবী-রাসূলের স্মৃতি ধন্য পবিত্রতম ভূমি মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মোকাদ্দস। ইসরাইলিদের ধারাবাহিক নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন-নির্যাতন সহ্য করেও ফিলিস্তিনবাসী চালিয়ে যাচ্ছে কঠিন এক অসম স্বাধীনতা সংগ্রাম। দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে চলমান এ অসম যুদ্ধে বহু ফিলিস্তিনি শাহাদাত বরণ করেছে তবুও নিজ মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার আন্দোলন থেকে পিছপা হননি। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস কর্তৃক প্রতিরোধ ও অস্তিত্ব রক্ষায় গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলী বাহিনীর উপর হামলা চালানোকে কেন্দ্র করে ইসরাইলি সৈন্যরা সাম্রাজ্যবাদিদের সহায়তায় ফিলিস্তিনের গাজা অবরুদ্ধ করে শুরু করে গণহত্যা। গাজায় ৩৫টি হাসপাতালের প্রায় অর্ধেক ধ্বংস করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ্ বন্ধ করে দিয়েছে। গাজার আশ্শিফা হাসপাতালে বোমা নিক্ষেপ ও রোগীদের ক্রসফায়ারে মেরে অমানবিকতার সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ইসরায়েলের অপরাধের মাত্রা এতই সীমাতিক্রম করেছে যেন মনে হয় তারা সকল আন্তর্জাতিক আইন কানুনের উর্দ্ধে এবং তাদের জন্য কোন আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য নয়। সভ্য দুনিয়ার সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তাদের বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলিরা। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে এগার হাজার ফিলিস্তিনি গণহত্যার শিকার হয়েছে। এর বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনের জনগণ কখনো ইসরাইলের আগ্রাসন, দখলদারিত্ব এবং পরাধীনতাকে মেনে নেবে না। একটি স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল ফিলিস্তিন সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব। এর কোন বিকল্প নেই। ফিলিস্তিনদের ভূমি তাদের ফেরত দিতে হবে এবং তাদের ভূমিতে তাদের নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে বসবাসের সুযোগ দিতে হবে। ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে হবে।

এ ব্যাপারে বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্ধকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানাই। একথা সত্য যে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত অসংখ্য নারী-পুরুষ-শিশু শাহাদাত বরণে বিশ্বের অন্যান্য সকল মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বিশ্ব মুসলিম সাধ্যমতো প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, নিন্দা জানানো সহ নানা পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। তুরস্ক, মিশর, সৌদি আরব সহ অপরাপর মুসলিম দেশগুলো ফিলিস্তিনের অসহায় মুসলমানদের জন্য ইতোমধ্যে ত্রাণভর্তি জাহাজ ও সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ অবরোধের কারণে বিধ্বস্ত দেশটির সকল নিয়ম-কানুন ভেঙ্গে পড়েছে, চারদিকে বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে, এমতাবস্থায় এসব সাহায্য সহযোগিতা যথাযথভাবে তাদের হাতে পৌঁছানো যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যপার হবে। তাই বিধ্বস্ত বিপন্ন ফিলিস্তিন বাসীর সত্যিকার মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্যে অতিদ্রুত বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস গ্রহণ সময়ের দাবী। পাশাপাশি সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র দরবারে ফরিয়াদ জানানো, রাহমানুর রহীম আপনি নির্যাতিত ফিলিস্তিন বাসীকে মুক্তি দান করুন। আপনার সাহায্য ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বিশ্ব মুসলিমের এ সম্মিলিত মুনাজাত ও ফরিয়াদ-ই হবে ফিলিস্তিন বাসীর মুক্তির পাথেয়। ওহে ফিলিস্তিন বাসী আল্লাহ্ আপনাদের সহায় হোন বিজয় অতি নিকটে-ইনশাআল্লাহ্।