ইসলামের প্রচার-প্রসার ও আধ্যাত্মবাদে হযরত আব্দুল কাদির জিলানীর অবদান

ইসলামের প্রচার-প্রসার ও আধ্যাত্মবাদে হযরত আব্দুল কাদির জিলানীর অবদান

ইসলামের প্রচার-প্রসার ও আধ্যাত্মবাদে হযরত আব্দুল কাদির জিলানী ’র অবদান

শীর্ষক পিএইচ.ডি. গবেষণা: একটি পর্যালোচনা-
ইমরান হুসাইন তুষার >

আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ স্যারের তত্ত্বাবধায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসার অনার্স বিভাগের সাবেক প্রভাষক এস. এম. মাছুম বাকী বিল্লাহ্ “ইসলামের প্রচার-প্রসার ও আধ্যাত্মবাদে হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রাহ.) এর অবদান” শিরোনামে তাঁর উত্থাপিত পিএইচ.ডি.ডিগ্রি অর্জন করেন। উপরোক্ত অভিসন্দর্ভটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সালে ২৫ এপ্রিল অনুমোদন দেয়। এটি আমার জানামতে এদেশে বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর উপর প্রথম অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে উচ্চতর গবেষণা। নিঃসন্দেহে এটা গাউসে পাক প্রেমী এবং এই সিলসিলার অনুসারীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। দীর্ঘ ৫৩০ পৃষ্ঠার এই গবেষণাপত্রে গবেষক নয়টি অধ্যায়ে বিন্যাস করেছেন।

গবেষণাটির প্রাসঙ্গিকতা
পঞ্চম শতাব্দীর একজন মুজাদ্দিদ। আধ্যাত্মবাদের মহান দিকপাল, অলিকুল স¤্রাট, মাহবুবে সোবহানী, গাউসুল আ‘যম পীরানে পীর দস্তগীর শায়খ সৈয়্যদ মুহিউদ্দিন আব্দুল কাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি পবিত্র কুরআন ও হাদিসের অমূল্য বাণীর সঠিক ব্যাখ্যাদানে ইসলামের আসল রূপ জনসম্মুখে তুলে ধরেন। তাঁর জ্ঞানের পরিধি অপরিসীম। অকাট্যযুক্তি, ভাষার লালিত্য, বাগ্মিতা, গতিময় বাচনভঙ্গির মাধ্যমে অধঃপতিত মানব সমাজকে তিনি ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত করেন। পাশাপাশি সমসাময়িক তরিকতের শায়খদের উপর তাঁর ভীষণ প্রভাব ছিল। আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন- “চিশতিয়া, নক্শবন্দিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া ও হযরত খাজা আজমীর তরিকতরূপী শরিয়ত তরিকতের ক্ষেত্রগুলোর কোনটিতে (হে গাউসে আ’যম!) আপনার গাউসিয়াতের বৃষ্টি (ফায়েয্) বর্ষিত হয়নি? প্রতিটি তরিকতই আপনার প্রবর্তিত কিংবা ফায়েয প্রাপ্ত।

ইলমে তাসাওউফে যে সমস্ত তরিকা রয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ তরিকা হিসেবে বিবেচিত হয় বড়পীর হযরত আব্দুলকাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি কর্তৃক বিন্যাসকৃত ও প্রবর্তিত কাদেরিয়া তরিকা। এ তরিকার বিস্তৃতি ঘটেছে বিশ্বের নানা দেশে ব্যাপকভাবে, যা অন্য সব তরিকার ক্ষেত্রে দেখা যায় না। যে কারণে হযরত আব্দুলকাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর পরিচিতি বিশ্বজুড়ে প্রসারিত হয়েছে। কাদেরিয়া তরিকা অনুযায়ী আত্মশুদ্ধিতার পথ পরিক্রমা শিক্ষা গ্রহণের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বহু খানকা শরিফ ও তাসাওউফ চর্চাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সারা পৃথিবীতে কাদেরীয়া তরিকার নিসবত বা সম্বন্ধ অনুযায়ী রয়েছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। তদ্রƒপ বাংলাদেশেও গড়ে উঠেছে দ্বীনি প্রতিষ্ঠান, তাসাউফ চর্চা কেন্দ্র, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বাংলা সাহিত্যে মহাকবি আলাওল, হেয়াত মামুদ, জাতীয় মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হক, জ্ঞান তাপস ও বহুভাষাবিদ ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, ইসলামিক রেনেসার কবি ফররুখ আহমদ, ঊনবিংশ শতাব্দির বাঙালি মুসলমানদের প্রধান কবি কায়কোবাদের “গওছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ” নামে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা, আধুনিকালের কবি সুফিয়া কামাল, সাবির আহমেদ চৌধুরী, আলাউদ্দিন আহমাদ সহ আরো অনেকে লিখেছেন গাউসে পাকের প্রেম সাকির অমিয়ে স্বাদের বর্ণনা। কবি কায়কোবাদের ন্যায় ফররুখ আহমদের অনন্য প্রেম স্তÍুতি জীলান সূর্যের হাতছানি নামে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেন হাকিমাবাদের পীর সাহেব মুহাম্মদ মামুনুর রশীদ। যা বাংলা কথাসাহিত্যে বিশেষ সংযোজন। এছাড়াও অসংখ্য প্রকাশনাসহ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চতর গবেষণা। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ স্যারের তত্ত্বাবধায়নে ড. এস. এম. মাছুম বাকী বিল্লাহ’র এই পিএইচ.ডি. অভিসন্দর্ভটি হযরত গাউসুল আযম আব্দুলকাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও তাঁর প্রবর্তিত কাদেরিয়া তরিকা সম্পর্কে বাংলা ভাষাভাষিদের জ্ঞান জগৎকে আরো সমৃদ্ধ করবে। বইসই প্রকাশনী হতে প্রকাশিত ‘অ্যাকাডেমিক গবেষণায়: গাউসে পাক, আ’লা হযরত ও দরবারে সিরিকোট প্রসঙ্গ’ শিরোনামে গবেষণাপত্রেও এ অভিসন্দর্ভ পর্যালোচনাটি প্রথমেই সন্নিবেশিত রয়েছে।

অভিসন্দর্ভ বিন্যাস
(ক) প্রথম অধ্যায়ে গবেষক “গবেষণার প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য, পদ্ধতি ও সাহিত্যিক নিরীক্ষণ” এ অধ্যায়ে সাইয়্যিদ মুহিউদ্দিন আব্দুল কাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর জীবন ও কর্মের উপর আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে গবেষণা করা কেন প্রয়োজন এবং তার প্রাসঙ্গিকতার ব্যাখ্যা করেছেন। এছাড়াও বর্তমান বিশ্বে এ মহান মনীষী, তাঁর সূফী দর্শন ও কাদেরিয়া তরিকা সম্পর্কে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব এম.ফিল.ও পিএইচ.ডি. গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে সেগুলো সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। তাছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় লিখিত গবেষণা প্রবন্ধসমূহ, তাঁর লিখিত গ্রন্থসমূহের অনুবাদ ও ব্যাখ্যাগ্রন্থাদী, তাঁর সম্পর্কে পৃথিবী-বিখ্যাত রচিত গ্রন্থসমূহ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
(খ) দ্বিতীয় অধ্যায়ে তিনি “সমকালীন সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অবস্থা” তুলে ধরেন। হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র “মুহিউদ্দীন” বা দ্বীনের পূনর্জীবন দানকারী উপাধী এবং সমসাময়িক দ্বীনের রুগ্ন অবস্থাটি কেমন ছিল, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের তৎকালীন সামাজিক নির্যাতন-নিপীড়ন ও অত্যাচারের অবস্থা, রাজনৈতিক নির্মম অবক্ষয়, শাসকগোষ্ঠির বিভিন্ন অন্যায় আচরণ এবং সূফীবাদের ব্যানারে নানাবিধ ভণ্ডামী, আধ্যাত্মবাদের মোড়কে শরীয়ত বিরোধী ঘৃণিত কার্যকলাপ ও সমাজে চলতে থাকা কুসংস্কার মুক্ত করণে হুজুর গাউসে পাকের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
(গ) তৃতীয় অধ্যায়ে গবেষক শৈশব হতে প্রৌঢ় পর্যন্ত “হযরত আবদুল কাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর জীবন চরিতের নানা খুঁটিনাটি দিকগুলো তুলে এনেছেন। বিশেষভাবে বংশ পরিচিতি, জ্ঞান অর্জন, পরিবারিক ও কর্ম জীবন, তাসাউফ চর্চার বর্ণনাও রয়েছে।
(ঘ) চতুর্থ অধ্যায়ে “ইসলামের প্রচার-প্রসারে আব্দুল কাদির জিলানী (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি)” অবদানকে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে মানুষের কল্যাণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ ও ইসলাম প্রচারে নানাবিধ কর্মপন্থার কথা তুলে ধরেছেন। এছাড়াও তাঁর লিখিত কাসিদা-এ গাউসিয়ার কাব্যিক ভাবধারা, ব্যবহৃত আরবি-ফার্সি দূর্লভ শব্দের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং প্রতিটি লাইনের বিভিন্ন ভাষায় হওয়া অনুবাদসহ কয়েক ধরনের বাংলা কাব্যিক অনুবাদ সংযোজন করা হয়েছে। তাঁর সম্মানিত শিক্ষক ও ছাত্রদের সম্পর্কে ধারণা দেয়া আছে।
(ঙ) পঞ্চম অধ্যায়ে হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর বহুমাত্রিক ইসলামী জ্ঞান সম্পর্কে তুলে ধরেছেন বিজ্ঞ গবেষক। তিনি তাফসীর শাস্ত্র, হাদীস ও ফিক্হ শাস্ত্রসহ আরবি ব্যাকরণ বিদ্যায় তাঁর পারদর্শীতা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় অতুলনীয় দক্ষতা এবং বিভিন্ন বিষয়ে পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তব্যের সার তুলে এনেছেন।
(চ) ষষ্ঠ অধ্যায়ে হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সংস্কারের স্বরূপ, বিশ্ববাসীর জন্য তাঁর কল্যাণমূখী চিন্তাধারার ধরন ও আদর্শের প্রভাব উপস্থাপন করা হয়েছে। অমুসলিমদের প্রতি তাঁর আচরণ, অসাম্প্রদায়িক মানবতার চিন্তাধারা এবং তাঁর সার্বজনীন মানবতার দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
(ছ) সপ্তম অধ্যায়ে হুজুর গাউসে পাক আব্দুল কাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর আধ্যাত্মিক জীবন, তরীকতের সংজ্ঞা, কাদেরিয়া সিলসিলার মর্যাদা ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থাদির রেফারেন্সের মাধ্যমে জ্বীন জাতিকে তরীকত শিক্ষাদান তথ্যও উপস্থাপিত হয়েছে। তাছাড়া কাদেরীয়া তরিকার অনুসারীদের মর্যাদা, এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য, বিভিন্ন তাসাওউফ গ্রন্থে বিষয়টির সত্যায়ন। এবং খিলাফত ও খিরকাহ গ্রহণকারী মনীষীদের তালিকা সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, গিয়ারভি শরিফের নামকরণ, ইতিহাস, রহস্য। তাঁর নির্ভরযোগ্য কারামত ও পূর্ববর্তী আলিমদের ভবিষ্যদ্বাণী ও সমসাময়িক আলিমদের মূল্যায়নকে তুলে ধরেছেন গবেষক।
(জ) অষ্টম অধ্যায়ে গাউসে পাকের ব্যাপারে হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম-এর বিবৃতি উল্লেখসহ তাঁর ব্যাপারে তাঁর জন্মের পূর্ববর্তী আলিমদের মতামত। হুজুর গাউছে পাককে নিয়ে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী, কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী,আব্দুল হক্ক মুহাদ্দেস সহ বিভিন্ন আলিমগণ কর্তৃক রচিত আরবি, ফার্সি, উর্দু ও বাংলা ভাষার বিভিন্ন কাসিদা নির্ভরযোগ্য গ্রন্থাদিতে পাওয়া তাঁর প্রায় ৬০০ (ছয়শত) উপাধি তুলে ধরেছেন।
(ঝ) নবম এবং শেষ অধ্যায়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ অধ্যায়ে “আধুনিক মুসলিম বিশ্বে কাদেরিয়া তরিকা চর্চা” সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেমন, বিশ্বজুড়ে কাদেরিয়া তরিকার প্রচার-প্রসার প্রভাব ও শ্রেষ্ঠত্ব। ভারতবর্ষে কাদেরিয়া তরিকার প্রচার এবং বাবা আদম শহীদ কাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও শাহ মাখদুম রূপোস রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর বর্ণনা উল্লেখপূর্বক বাংলাদেশে তরিকাটির ইতিহাস, প্রসার, প্রভাব, উল্লেখযোগ্য কাদেরি মাশায়িখগণ ও চর্চাকেন্দ্রসমূহকে চিহিৃত করেছেন।
বিজ্ঞ গবেষক এই পিএইচ.ডি গবেষণা অভিসন্দর্ভটি তৈরিতে পবিত্র কুরআনুল করিমসহ ৫টি তাফসীর গ্রন্থ,৭টি হাদীস গ্রন্থ, ১২৯টি তাসাওউফ, কাদেরীয়া তরীকা ও হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি সম্পর্কীত গ্রন্থ, ১১টি পত্র-পত্রিকা/সাময়িকী/জার্নালের ২৪টি প্রবন্ধ এবং ৭টি অভিধান গ্রন্থের সহায়তা নিয়েছেন। এতে করে গবেষণাপত্র অত্যাধিক তথ্য ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ হয়েছে।

অভিসন্দর্ভে দরবারে সিরিকোটের মাশায়েখে হাযরাত প্রসঙ্গ
গবেষক তার অভিসন্দর্ভে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য কাদেরিয়া তরিকার মাশায়িখের তালিকায় বিশেষভাবে শাহেনশাহে সিরিকোট হযরত স্যৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও গাউছে জামান হযরত হাফেজ স্যৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র নাম উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে কাদেরিয়া তরিকার প্রচার-প্রসারের প্রায় শতাব্দীকাল ধরে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। হুযুর গাউসে পাকের নামে গাউসে জামান হযরত হাফেজ সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ তরিকত ভিত্তিক সমাজসেবা মূলক সংগঠন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। তিন জেনারেশনের এই খেদমতের ধারাবাহিকতা বর্তমানে শাহানশাহে সিরিকোট হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র প্রপৌত্র ও গাউসে জামান হযরত হাফেজ স্যৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র দুই সাহেবজাদা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মাদ্দা জিল্লুহুল আলী) ও পীরে বাঙাল আল্লামা স্যৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মাদ্দা জিল্লুহুল আলী)’র হাত ধরে চলমান রয়েছে।
গবেষক তার অভিসন্দর্ভে গাউসে জামান হযরত হাফেজ স্যৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র মুরিদ শাইখুল ইসলাম অধ্যক্ষ হাফেজ
এম.এ.জলিল রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, খতিবে বাঙাল অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল-কাদেরি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এবং শেরে মিল্লাত মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি’র নাম বিশেষভাবে তুলে ধরেন। বিশেষত হুযুর গাউছে পাকের অমর কাব্য কাসিদায়ে গাউসিয়ার বাংলা ও কাব্যানুবাদ পর্যালোচনায় কাসিদায়ে গাউসিয়ার প্রথম বঙ্গানুবাদক বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র কাব্যানুবাদের পাশাপাশি তিনি জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া ও কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসাদ্বয়ের সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা হাফেজ এম.এ.জলিল রাহমাতুল্লাহি আলায়হি কাব্যানুবাদের পর্যালোচনাটি বিশেষভাবে আলোকপাত করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশে প্রসিদ্ধ কাদেরিয়া তরিকা চর্চাকেন্দ্রসমূহের মধ্যে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের অধীন শতাধিক মাদ্রাসা ও খানকার কথা উল্লেখ করেন।

টিকা:

. অ্যাকাডেমিক গবেষণায়: গাউছে পাক, আ’লা হযরত ও দরবারে সিরিকোট প্রসঙ্গ: ইমরান হুসাইন তুষার, বইসই, ২০২৩, পৃষ্ঠা-১১।
. আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী, হাদাইক্বে বখশিশ, প্রাগুক্ত, পৃ.২৯; মাসিক তরজুমান, এপ্রিল-মে ২০০৮ সংখ্যা, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৯।
. বাংলা সাহিত্যে গাউছে পাক প্রসঙ্গ : মোহাম্মদ আবু সাঈদ, বইসই, ২০২১, পৃষ্ঠা-২০।
. মোহাম্মদ আবু সাঈদ, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৫৩।
. শাহানশাহে সিরিকোট হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ (রাহ.)’র পীর-মুর্শিদ হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী (রহ.) ১৮৫৪ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সে তাঁর পিতা গাউসে জামান হযরত ফকির খিজিরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর পীর কাদেরিয়া তরিকার মহান খলিফা হযরত শাহ্ মুহাম্মদ এয়াকুব শাহ গিনাছাতরী (রহ.)-এর ফয়েজ ও খেলাফত লাভ করেন। বিশেষ করে খাজা চৌহরভীকে খলিফা-ই-শাহে জিলান বলা হয়। কারণ, তিনি গাউছুল আযম বড়পীর হযরত সাইয়্যেদ আবদুল কাদের জিলানী রহ-এর মাযার জিয়ারতকালে তৎকালিন সাজ্জাদানশীন হযরত সায়্যিদ মোস্তফা কাদিরী ইবন সায়্যিদ মুহাম্মদ কাদিরী ইবন সায়্যিদ আবদুল আযীয (রহ.) আদিষ্ট হয়ে খাজা চৌরভীকে খিলাফত প্রদান করেন। আর হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌরভী (রহ.) কর্তৃক ১৯২৩ সালে শাহানশাহে সিরিকোট হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ (রহ.) খিলাফত লাভ করেন।
. ইসলামের প্রচার-প্রসার ও আধ্যাত্মবাদে হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রাহ.) এর অবদান-পিএইচ.ডি. অভিসন্দর্ভ:এস. এম. মাছুম বাকী বিল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,২৫ এপ্রিল, ২০১৯ খ্রি., পৃষ্ঠা-৪৬০।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা প্রধান, বইসই।