তুরস্কে পশ্চিমাদের ‘বিদ্রোহী মিত্র’ এরদোয়ানের জয় ও আগামীর চ্যালেঞ্জসমূহ

তুরস্কে পশ্চিমাদের ‘বিদ্রোহী মিত্র’ এরদোয়ানের জয় ও আগামীর চ্যালেঞ্জসমূহ

আবসার মাহফুজ>

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদে টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। গত ২৮ মে ২০২৩ অনুষ্ঠিত টার্কিশ প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনে দ্বিতীয় দফা ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। এরদোয়ান পেয়েছেন ৫২ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। আর তার প্রধান বিরোধী জোটের প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোলু পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট। গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত তুরস্কের জাতীয় নির্বাচনে এরদোয়ানের জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও প্রেসিডেন্ট পদে তিনি ৪৯.৫ শতাংশ ভোট পান। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে প্রেসিডেন্ট পদে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হয়। ফলে কোন প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় তুরস্কের এবারের প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচনও গড়ায় দ্বিতীয় দফায়। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন হয় এরদোয়ান এবং বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোলুর মধ্যে। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটাভুটিতে শেষপর্যন্ত জয় পান এরদোয়ান।

উল্লেখ্য, এরদোয়ান একজন ফোড় খাওয়া রাজনীতিক। বলতে গেলে শুরু থেকেই তাঁকে চরম প্রতিকূলতার মধ্যেই রাজনীতি করতে হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল তাঁর প্রতিকূলে। এরদোয়ান ঠা-ামাথায় এসব মোকাবিলা করে রাজনীতির মাঠে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন তিনি। ২০০৩ থেকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিলেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী। এরপর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে টানা দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। এবার টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জনরায় পেলেন। পশ্চিমা সমর্থনে তুরস্কের সব বিরোধী দল একাট্টা হয়েও মজবুত জনভিত্তির কারণে তাঁকে পরাজিত করতে পারেনি। লক্ষণীয় বিষয়, দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনে জয়লাভের পর টানা ২৬ বছর ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড সৃষ্টি করতে চলেছেন এরদোয়ান, যা তুরস্কের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক! আরো লক্ষণীয়, একবিংশ শতাব্দীর প্রায় শুরু থেকেই তুরস্কের রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন তিনি। তিনি আধুনিক তুরস্কের জনক মোস্তফা কামালের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির অনুসারী হয়েও তুরস্কে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তিনি একজন কোরানে হাফেজ এবং ইসলামি স্কলার। ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবনে ইসলামের নির্দেশনাকে প্রাধান্য দেন। কামাল আতাতুর্ক যেখানে প্রকাশ্যে ইসলাম চর্চায় বিধিনিষেধ আরোপ করে পশ্চিমা সংস্কৃতি চর্চাকে উৎসাহিত করেছেন, সেখানে এরদোয়ান ইসলামি সংস্কৃতি চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে চলেছেন। শুধু তাই নয়, তুরস্ককে একটি বিশ্ব পরাশক্তি হিসেবে গড়ে তোলতেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শতবছর ধরে গ্রিসের দখলে থাকা ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপগুলোও ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সংঘাতসহ নানাক্ষেত্রে তাঁর সালিসি-ভূমিকা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তার নিরপেক্ষ প্রভাব বিশ্বকে তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে বাধ্য করেছে। তুরস্ককে দুর্নিবার গতিতে এগিয়ে নেয়া এবং বিশ্বের বুকে মর্যাদাপূর্ণ শক্তিমান রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও মুসলিমবিশ্বের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রচেষ্টার কারণে পশ্চিমাবিশ্ব এরদোয়ানের প্রতি চক্ষুশোল হয়ে উঠে। যার কারণে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে নানা ফন্দি-ফিকির করতে থাকে। সেনাবিদ্রোহ করতে ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে। এতেও ব্যর্থ হয়ে ব্যালট-বিপ্লবে গদিচ্যুত করার চেষ্টা করে। সে জন্যে ভিতরে ভিতরে সব বিরোধীদলকে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে একজোট করে নির্বাচনকালে। তারা এরদোয়ানের ত্রুটিগুলোকে জনগণের সামনে নিয়ে আসে, বিশেষ করে মাসকয়েক আগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্প মোকাবিলায় এরদোয়ান সরকারের ব্যর্থতা এবং ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। ব্যাপক মূল্যস্ফীতিও এরদোয়ানের জন্যে সমস্যা তৈরি করেছিল। এর ফলে স্বভাবতই নির্বাচনের আগে এরদোয়ানের ‘জয়-পরাজয়’ নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত তুরস্কের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা এরদোয়ানের ওপরেই ‘আস্থা’ রেখেছেন। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর তিনি একটি ঐক্যবদ্ধ সমৃদ্ধ তুরস্ক গড়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। ফলাফল ঘোষণার পর প্রাসাদের সামনে জড়ো হওয়া ৩ লাখের বেশি সমর্থকের উদ্দেশে ৬৯ বছর বয়সি এরদোগান বলেছেন, এটা তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এতে শুধু আমরাই জয় পাইনি, পুরো তুরস্ক জিতেছে। তাঁর স্বপ্ন ইস্পাতকঠিন জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বিশ্বের বুকে একটি পরাক্রমশালী রাষ্ট্র হিসেবে তুরস্ককে গড়ে তোলা।

তবে এরদোয়ানের সামনে যে আরো চ্যালেঞ্জ ও কণ্টকাকীর্ণ পথ অপেক্ষা করছে তা সহজেই অনুমেয়। একদিকে পশ্চিমাবিশ্ব, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অন্যান্য বিষয়কে তাঁর চলার পথে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। এসব মোকাবিলা করেই তাঁকে পথ চলতে হবে ও অঙ্গীকার পূরণের মাধ্যমে ঠিকে থাকতে হবে। উল্লেখ্য, তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের শততম বার্ষিকী তথা ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ‘তুর্কি পুনরুজ্জীবনের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এরদোয়ান। এই সময়কালের মধ্যে ‘বিশ্বের শীর্ষ ১০ শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কথা ছিল তুরস্কের। কিন্তু বৈশ্বিক নানা প্রতিকূলতায় সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। তুরস্ক সবে শীর্ষ ২০-এ জায়গা পেয়েছে (১৯তম)। অর্থাৎ, এখনো বহু পথ বাকি! এরদোয়ানকে তাঁর তৃতীয় মেয়াদে সেদিকে পূর্ণ নজর দিতে হবে। বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে এ কাজটি খুবই কঠিন হবে। বর্তমানে অর্থনৈতিক দিক থেকে শীর্ষ ২০-এও নেই তুরস্ক। দেশটির অর্থনীতি গত তিন বছরে ভয়াবহ মন্দার সম্মুখীন। তুর্কি মুদ্রা লিরার মূল্য হ্রাস পেয়েছে, যা একটি ডলারভিত্তিক অর্থনীতির দিকে পরিচালিত করেছে। গত তিনবছর ধরে তুরস্কের অর্থনীতি এতটাই নাজুক অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আজকের তুরস্ক বড়ধরনের মন্দার সম্মুখীন। অর্থাৎ, নির্বাচন-পরবর্তী তুরস্কে অস্থিরতা-অস্থিতিশীলতা মাথাচাড়া দিতেই থাকবে নিয়মিত বিরতিতে। তুর্কি লিরার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। গত কয়েক মাসে নির্বাচনের ব্যয় মেটাতে রিজার্ভ খালি করে ফেলেছে তুর্কি কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তুরস্কের জনগণের জন্য যা বয়ে আনতে পারে ‘ব্যাপক বেকারত্ব ও জীবনযাত্রার ব্যয় সংকোচন’। তুরস্কে মুদ্রাস্ফীতির হার গত ২৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চপর্যায়ে পৌঁছেছে (৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ)। এ অবস্থায় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে বিশ্ব-অর্থনৈতিক পরাশক্তির হওয়ার স্বপ্ন পূরণ খুবই কঠিন হবে বৈ কি!

তাছাড়া ‘তুরস্ককে আবারও মহান’ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার রয়েছে এরদোয়ানের। সে অঙ্গীকারও পূরণ করতে হবে। কিন্তু এটিও সহজ হবে না। কারণ পশ্চিমারা এমনকি রাশিয়া বা ইরানও এক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে আছে। বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সে স্বপ্ন পূরণ প্রায় অসম্ভব। একসময় বিশেষত সুলতান সোলেমানের আমলে অটোমান সা¤্রাজ্য মধ্যপ্রাচ্যের সীমা ছাড়িয়ে ইউরোপ-আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বর্তমান বিশ্ব-বাস্তবতা এবং তুরস্কের অর্থনৈতিক-সামরিক শক্তি ও এরদোয়ানের বয়স বিবেচনায় তা পুনরুদ্ধার করে ‘মহান তুরস্কের’ স্বপ্ন বুনন ও স্বপ্ন পূরণ প্রায় অসম্ভব, সন্দেহ নেই। প্রসঙ্গত, ৬৯ বছর বয়সি এরদোয়ান শারীরিকভাবে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছেন। আগামী বছরগুলোতে এরদোয়ানের স্বাস্থ্য আরো খারাপ হতে পারে। সেক্ষেত্রে হয়তো এটিই তাঁর শেষ মেয়াদ হতে পারে। তাছাড়া তিনি এমন কোনো জাতীয়তাবাদী নেতা তৈরি করতে পারেন নি, যিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়ে তাঁর স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে তুরস্ককে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

নির্বাচিত হওয়ার পর তুরস্কের রাজনীতিতে ঐক্যের যে ডাক দিয়েছেন এরদোয়ান তাও পূরণ হবে না। কারণ আদর্শ এবং স্বার্থগত কারণে তুরস্কের রাজনীতি নানা ধারায় বিভক্ত। আর এতে ইন্ধন যোগাচ্ছে পশ্চিমাবিশ্বসহ তুরস্কবিরোধী নানা শক্তি। কুর্দি-সংকটও এতে ইন্ধন যোগাচ্ছে। সামনে আরো নানা সংকট মোকাবিলা করতে হবে এরদোয়ানকে।
তবে এরদোয়ান দীর্ঘ সময় ধরে তুরস্ককে নানাদিক দিয়ে সমীহ করার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন। এখন পুরোবিশ্বের কাছে তুরস্ক আঞ্চলিক পরাশক্তির মর্যাদা পেয়েছে। তুরস্কের সমৃদ্ধি অর্জনের পথে এরদোয়ান অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে পশ্চিমাদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন। জনগণ কামালপন্থীদের শাসনের চেয়ে তার আমলে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত জীবনযাপন করছেন। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা, এক সময় ‘ইউরোপের রুগ্ন মানুষ’ বলে ব্যঙ্গ করা তুরস্ককে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেন এরদোয়ান। ২০১৩ খ্র্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এরদোয়ানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল তুরস্কের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। তাঁর সরকার তুরস্ক থেকে দারিদ্র্য বিদায় করে। ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। এক দশক আগের তিন অঙ্কে থাকা মূল্যস্ফীতিকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুর্কি মুদ্রা লিরার চাহিদা বাড়ান। অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সামরিক খাতে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি অর্জন করেন। এমন সাফল্যে রীতিমতো আকাশে উড়ছিলেন এরদোয়ান। যদিও বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে তুরস্ক অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে, তবে এরদোয়ানের দূরদর্শী নেতৃত্বে সংকট কেটে যেতে পারে। এরদোয়ান তার আমলে মুসলিমবিশ্বের সাথে সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ২০০২ খ্রিস্টাব্দের পর এরদোয়ান বিভিন্ন মুসলিম দেশ যেমন ইরাক, ইরান, উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে মনোযোগ দেন। বর্তমানে ইরান সিরিয়া ইস্যুর সমাধানসহ বেশ কয়েকটি ব্যাপারে বিশ্বস্থ অংশীদার। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকা-ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশ দুটির সম্পর্ক তলানিতে ঠেকলে সম্প্রতি তা উন্নত হয়েছে। রিজার্ভসঙ্কটে থাকা তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সৌদি আরব ৫০০ কোটি ডলার জমা বা মুদ্রা বিনিময় হিসেবে রাখবে, এমন আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। তুরস্কে বড় বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে আমিরাত। অন্য অনেক দেশও তুরস্কের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এরদোয়ানের পাশে থাকার কথা বলেছেন। এতে তুরস্কের অর্থনীতিতে স্বস্থির পথ তৈরি হবে, সন্দেহ নেই।

সামরিক দিক দিয়েও এরদোয়ান তুরস্ককে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন। তুরস্ক পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর অন্যতম সদস্য হওয়া সত্ত্বেও দাসত্ব মানেননি, তোষামোদ করেন না তিনি। ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়েও ন্যাটোর অন্যতম শত্রু রাশিয়ার সাথে সফল সম্পর্ক রেখে চলেছেন। আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব কর্তৃক মুসলিম শক্তির উত্থান ঠেকিয়ে রাখার নিরন্তর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তুরস্কের অত্যাধুনিক সমর শক্তির আবিষ্কার, ব্যবহার, রফতানি রীতিমতো বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। তুরস্ক এক সময় আমেরিকা ও রাশিয়ার অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও এখন অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের ১৪তম বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক দেশ এখন তুরস্ক। তুরস্কের সামরিক শক্তি এখন সমীহ করার মতো। আট লাখ সেনাসদস্যের দেশ তুরস্ক এরই মধ্যে সিরিয়া, সোমালিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন উপকূল ও ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে সামরিক উপস্থিতি তৈরি করে নিয়েছে। অধিকৃত উত্তর সাইপ্রাসে রয়েছে তুরস্কের বিশাল সামরিক ঘাঁটি। বসফরাস প্রণালী দিয়ে জাহাজ চলাচলের ওপর তুরস্কের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও করারোপের পর তুরস্কের অর্থনৈতিক চিত্র দ্রুত পাল্টে যাবে। যদিও সব স্বপ্ন পূরণ হবে না, তব সব মিলিয়ে এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্ক আগামিতে আরো এগিয়ে যাবে, সন্দেহ নেই। আর ভবিষ্যতে এরদোয়ানের মতো বিচক্ষণ ও জাতীয়তাবাদী নেতৃত্ব পেলে তুরস্ক এরদোয়ানের স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি চলে যেতে পরবে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক; সভাপতি-গ্রিন অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ।

Share:

Leave Your Comment