স্বাস্থ্য-তথ্য : নীরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপ

স্বাস্থ্য-তথ্য : নীরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বা হাই ব্লাডপ্রেশার হলো একটি জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যগত বিষয়। একবার উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা নিরাময়যোগ্য নয়। তবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ তা না করলে উচ্চ রক্তচাপ কোনো লক্ষণ ছাড়াই নীরবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করতে থাকে। এ জন্য একে বলা যায় সাইলেন্ট কিলার বা নীরব ঘাতক। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি অঙ্গে মারাত্মক জটিলতা হতে পারে। যেমন হৃদপিণ্ড, কিডনি, মস্তিস্ক ও চোখ। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে শারীরিক কোনো লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে। তবে কোনো কোনো
রোগীর উচ্চ রক্তচাপের কিছুকিছু লক্ষণ দেখা যায়, যেমন মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ঘাড়ের পেছনে ব্যথা, ক্লান্তি বা অস্বস্তি সমস্যা, দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, বুকে ব্যথা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা ইত্যাদি। আবার কেউ কেউ কোনো লক্ষণ ছাড়াই জটিলতায় আক্রান্ত হয়। যেমন মস্তিস্কের স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি বিকল এমনকি অন্ধত্ব। একবার এসব জটিলতায় আক্রান্ত হলে প্রায়ই তা নিরাময়যোগ্য হয় না। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই উত্তম। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে ধূমপান, তামাকজাত দ্রব্য যেমন তামাকপাতা, জর্দা, গুল ইত্যাদি, অতিরিক্ত অ্যালকোহল এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্য পরিহার করুন। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করুন। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সুষম খাবার খান। চর্বি, তৈলাক্ত ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার যেমন খাশি বা গরুর মাংস, কলিজা, মগজ, গিলা, গুর্দা কম খেতে হবে। বেশি আশযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো। প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান। দৈনিক কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন। সকাল-সন্ধ্যা হাঁটাচলা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি করা উচিত। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন। যত আগে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে, তত আগে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জটিলতা হতে রক্ষা পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন, সুস্থ থাকুন।
[ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, ডিন, মেডিসিন অনুষদ, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়]

বয়স্করা সুস্থ থাকতে খাদ্যতালিকায়
রাখবেন যেসব খাবার
সুস্থ থাকতে হলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। কারণ সঠিক খাদ্যাভ্যাসই পারে আপনাকে সুস্থ রাখতে। শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও সঠিক ওজন বজায় থাকলে বেশি বয়সেও থাকা যায় সক্রিয়। তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের খাদ্যগ্রহণের অভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে।
এর কারণ হচ্ছে- আমাদের মেটাবলিজম ধীরগতিতে হয়। বয়স বাড়তে থাকলে ক্যালোরির প্রয়োজনীয়তাও কমে আসে। বেড়ে যায় পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হজম ক্ষমতা কমে যায়। যারা ব্যায়াম করেন না বা কম পরিশ্রম করেন তাদের তখন ক্যালরি ক্ষয় করার ক্ষমতা কমে যায়। তাই পরিমাণ মতো খেয়ে শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখা ও ব্যায়াম করা জরুরি।

আসুন জেনে নিই কী ধরনের খাবার খাবেন
১. বয়স বাড়লে লোহিত রক্তকণিকা ও মস্তিষ্ক শুষ্ক রাখা জরুরি। এ সময় দুধের তৈরি খাবার, মুরগি, মাছ ও ডিম খেতে হবে।
২. এ বয়সে হাড়ের জন্য ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খান। হাড়ের ভর নিয়ন্ত্রণ করতে এস্ট্রোজেন উপকারী। তাই মেনোপোজের পর নারীদের হার অপেক্ষাকৃত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
৩. এ সময় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না নিলে হাড় থেকে এর ঘাটতি পূরণ হয়। ফলে হাড় দুর্বল হওয়া শুরু করে। ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়স্ক নারীদের জন্য দৈনিক এক হাজার মিলিগ্রাম এবং পুরুষদের জন্য ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীরা খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার যেমন- কাঠবাদাম, কমলা, মটর, কপি ও পালংশাক যুক্ত করলে উপকার পাবেন।
৪. এ সময় ত্বক ভালো রাখতে ও দেহে বয়সের ছাপ কমাতে এবং হৃদরোগ, ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ থেকে বাঁচতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি।
৫. তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা থ্রি হলো- ইপিএ, ডিএইচএ এবং এএলএ। ইপিএ ও ডিএইচএ পাওয়া যায় মাছ থেকে। এএলএ পাওয়া যায় উদ্ভিজ্জ খাবার যেমন- আখরোট, তিসির বীজ ও চিয়া বীজ থেকে।
ওমেগা থ্রি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। তাই ৪০-এর পর এই খাবারগুলো নিয়মিত খেতে হবে।
৬. বয়স হলে অনেকেরই দাঁতের সমস্যা হয় তাদের হালকা ও নরম খাবার খাওয়া উচিত। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন তাদের ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত যেমন দুধ, শস্যদানা, মুসলি, দই ইত্যাদি। এতে তারা প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পাবেন আবার পেটের সমস্যাও থাকবে না।
৭. যে কোনো ধরনের ওষুধ ও ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মাইগ্রেনের ব্যথা কেন হয়, কী করবেন
মাইগ্রেনের ব্যথায় ভুগে থাকেন অনেকেই। ঠাণ্ডার কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ে। শীতের সময় ঠাণ্ডা যেন না লাগে সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
মাইগ্রেনের ব্যথা পুরোপুরি নিরাময় হয় না। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে এ ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণ মাথাব্যথার মতোই। তাই মাইগ্রেনের ব্যথা কিনা তা বুঝতে কিছুটা সময় লেগে যায়। মাথার যে কোনো এক পাশ থেকে মাইগ্রেনের ব্যথা হয়ে থাকে। অনেক সময় এই ব্যথা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। মাইগ্রেনের যন্ত্রণা খুবই কষ্টদায়ক ও দীর্ঘস্থায়ী।

মাইগ্রেন কী?
মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত কপালের এক পাশে হয়ে থাকে। আর এই ব্যথা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে বমিভাব কিংবা বমি, আলো বা শব্দে খারাপ লাগা। ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যথা থাকতে পারে।
মাইগ্রেন সমস্যা হলে চোখের সামনে আলোজাতীয় কিছু দেখা, শরীরের এক পাশ ঝিনঝিন করার সমস্যা হতে পারে।
পনির, চকলেট, কফি, অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, দুর্গন্ধ, দীর্ঘসময় খালি পেটে থাকা, অতিরিক্ত আলো বা রোদ কিংবা খুব কম আলো, অতিরিক্ত শব্দ কানে এলে এ সমস্যা হতে পারে।

মাইগ্রেনের উপসর্গ
মাইগ্রেনের সমস্যা হলে মাথার ভেতরে ব্যথা হয়। এই ব্যথা সাধারণত মাথার একদিকে হয়, ডান অথবা বাঁ। তবে অনেক সময় মাথার দুদিকেই ব্যথা হতে পারে ও বমি ভাব থাকতে পারে।
মাইগ্রেনের ব্যথা পুরোপুরি নিরাময় হয় না। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে এ ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

ব্যথা কেন হয়?
চোখ, কান, নাক ও চোয়ালের জয়েন্টে সমস্যা, দুশ্চিন্তা, ব্রেইন টিউমার, মাইগ্রেন, ঘুম কম হওয়া এবং দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে বসে থাকাসহ অনেক কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। তবে মস্তিষ্কের পর্দা বা মেনিনজেসে কোনো সমস্যা হলে মাথার হাড়ের মধ্যকার সাইনাসে প্রদাহ (সাইনোসাইটিস) হলে কিংবা মস্তিষ্কের রক্তনালিতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে মাথাব্যথা হয়ে থাকে।
করোনা রোগীও নানা কারণে মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। শরীরে নানা জীবাণুর সংক্রমণেই হতে পারে মাথাব্যথা।

কী করবেন
মাথাব্যথা হলে আমরা সাধারণ নিউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হয়ে থাকি। তবে এর আগে একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তিনিই সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।

[ডা. নুজহাত চৌধুরী, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়]

 

Share:

Leave Your Comment