খুতবার সময় খতীব মুহতারাম বাম হাতে লাঠি কেন নেয়

খুতবার সময় খতীব মুহতারাম বাম হাতে লাঠি কেন নেয়

 আহমদুল হক তালুকদার (আহমদ শাহ্)
৭নং ওয়ার্ড, ১১নং চ.ক. ইউনিয়ন পরিষদ,
রাঙ্গুনিয়া, সহ সভাপতি-গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ
১১নং চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়ন, রাঙ্গুনিয়া চট্টগ্রাম।

প্রশ্ন: জুমআর নামাযে খুতবা দেয়ার সময় কোন কোন জামে মসজিদে খতিব সাহেব বামে হাতে একঠি লাঠি (আছা) মোবারক ধরেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: জুুম‘আ ও দুই ঈদের খুৎবার সময় হাতে লাঠি নেয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিয়মিত সুন্নাত। হযরত হাকাম ইবনে হুযন আল কুফী বলেন, ‘আমি মদিনা শরীফে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম। অতঃপর বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার সাথে সাক্ষাতের জন্য এসেছি। আপনি আমাদের কল্যাণের জন্য দো‘আ করুন। আমরা সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করলাম। অবশেষে আমরা একদিন তাঁর সাথে জুমআর নামাজে যোগ দিলাম। তিনি লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবায় দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, ‘হে মানবমন্ডলী! আমি যা আদেশ করছি তোমরা তা পুরোপুরি আদায় করতে সক্ষম নও। কাজেই মধ্যম পথ অবলম্বন কর এবং মানুষকে সুসংবাদ দাও’। [আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-১০৯৬, সনদ হাসান]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবা প্রদান করতেন।’ [মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদিস/৫২৪৬, সনদ সহীহ্]
কোন কোন আলিম মসজিদে নববীতে মিম্বর তৈরীর পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাতে লাঠি নেননি বলে মত প্রকাশ করেছেন। [ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১ম খন্ড, ৪১১পৃ.] কিন্তু এ মতের পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল নেই বরং ফাতিমা বিনতে ক্বায়স রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হতে বর্ণিত হাদিসে দেখা যায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে মিম্বরে বসাবস্থায়ও হাতে লাঠি ব্যবহার করেছেন। [মুসলিম, মিশকাত, হাদীস নং-৫৪৮২]

এটি ছিল নবম হিজরীর ঘটনা। সুতরাং এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, মিম্বরে বসা অবস্থায় তাঁর হাতে লাঠি ছিল। এ ছাড়া সাহাবীগণের মধ্যেও মিম্বরে দাঁড়িয়ে হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন হযরত হিশাম বিন উরওয়া বলেন, ‘আমি প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন যুবায়ের রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে খুৎবা দিতে দেখেছি। এমতাবস্থায় তাঁর হাতে লাঠি ছিল’। [মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হা/৫৬৫৯]

উল্লেখ্য যে, ‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ থাকার কারণে হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দিয়েছিলেন বলে সমাজে প্রচলিত কথাটির স্বপক্ষে কোন মজবুত দলীল নেই। সুতরাং জুমু‘আ এবং অন্যান্য যেকোন খুৎবা বা বক্তব্য প্রদানের সময় হাতে লাঠি রাখা সুন্নাত, যা পরবর্তী যুগেও অনুসৃত হয়েছে। যেমন হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে- عن ابن شهاب قال فكان اذا قام اخذ عضا فتوكا عليها وهو قائم على المنبر ثم كان ابو بكر الصديق وعمر بن الخطاب وعثمان بن عفان يفعلون مثل ذلك অর্থাৎ হযরত ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন মিম্বরের উপর খুৎবাহর জন্য দাঁড়াতেন, তখন লাঠির উপর ভর দিতেন। অতঃপর হযরত আবূ বকর হযরত ওমর ও হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম আজমাঈনও একইভাবে লাঠির উপর ভর দিয়ে খুতবা প্রদান করতেন। [মারাসীলু আবী দাঊদ, ১ম খন্ড, ১০১পৃ. হাদিস নং-৫৫]

অপর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে- حدثنا هشام بن عمار حدثنا عبد الرحمن بن سعد بن سعد حدثنى ابى عن ابيه عن جده ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان اذا خطب فى الخرب خطب على قوس واذا حطب فى الجمعة خطب على عصا ـ سنن ابن ماجه] অর্থাৎ হযরত সা’দ বিন আয়িয রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধক্ষেত্রে খুতবাহ্ দিলে ধনুকে ভর করে খুতবাহ দিতেন এবং জুমুআর খুতবাহ্ দিয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে খুতবাহ্ দিতেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ্, -১১০৭]

সুতরাং অনেক ফকীহ্ খুতবাহ দেয়ার সময় লাঠি ব্যবহার করা জায়েয এমনকি সুন্নাতে মুস্তাহাব্বা বলেছেন। আর পাক-ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁর রচিত মাদারিজুন নুবূয়ত গ্রন্থে এ বিষয়ে উলামা-ই কেরামের ইখতিলাফ ও মতানৈক্য উল্লেখ করার পর জুমুআ ও ঈদের নামাযে খুতবা প্রদানের সময় লাঠি হাতে খুতবাহ্ দেয়া সুন্নাত ও উত্তম বলে মত প্রদান করেছেন। তবে এ ব্যাপারে বাধ্য বা নিষেধ করা উচিত না। কোন খতিব জুমা ও ঈদের নামাযের খুতবা প্রদানকালে লাঠি হাতে না নিলেও খুতবাহ্ আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য লাঠি হাতে নিয়ে খুতবাহ্ প্রদানে আলাদা একটি শান ও মর্যাদা রয়েছে।

Share:

Leave Your Comment