প্রথম খুৎবা দেওয়ার পর মাঝখানে খুৎবায় টাকা তোলা যাবে কিনা? 

প্রথম খুৎবা দেওয়ার পর মাঝখানে খুৎবায় টাকা তোলা যাবে কিনা? 

 মুহাম্মদ ওসমান, বদলপুরা, একাডেমি, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: জুমার দিন প্রথম খুৎবা দেওয়ার পর মাঝখানে খুৎবায় টাকা তোলা যাবে কিনা?  এ বিষয়ে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: জুমুআহ্ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হল সাতটি। তন্মধ্যে একটি হল খোৎবা। খোতবা ছাড়া জুমুআহ আদৌ হবে না এবং খোতবাহর মধ্যেও রয়েছে কিছু শর্তাবলী, কিছু সুন্নাত ও মুস্তাহাব। দুই খোতবা পাঠ করা হল সুন্নাত এবং উপস্থিত মুসল্লীদের জন্য উভয় খোতবা নিরবে শ্রবণ করা ওয়াজিব। তাই খোতবা এভাবে শুনতে হবে, যেন শ্রোতাদের মনোযোগ শুধুমাত্র খোতবার দিকেই ধাবিত হয় এবং অন্য কোন কাজে ও কথার দিকে মনোনিবেশ করে খোতবা শ্রবণ থেকে বিমুখ না হয়। আর যে সমস্ত মুসল্লী ইমাম থেকে দূরে হওয়ার কারণে খোতবার আওয়াজ শুনতে না পায়, তাদের জন্যও চুপ থাকা ওয়াজিব।  [দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার]
 
মদীনা শরীফে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মসজিদ কায়েমের মুহূর্ত থেকে যুগ যুগ ধরে মুসলিম শাসকগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন, ধর্মীয় বিষয়গুলো তাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা হত। তাঁরা ধর্মের প্রচার ও প্রসারে মসজিদ, মাদরাসাসহ ও জনহিতকর প্রতিষ্ঠানসমূহ কায়েম করতেন এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হত। তাই জনগণের আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন হত না। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে যখন বিশেষত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মাদরাসা ইত্যাদি রাষ্ট্রনায়কদের ধর্মবিমুখতার কারণে রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে না, তখন ধর্মের ধারক-বাহক হক্কানী-ওলামা-ই কেরামের কেউ কেউ মসজিদের সুষ্ঠু পরিচালনার নিমিত্তে প্রথম খোৎবার সমাপ্তির পর দ্বিতীয় খোতবার সময় ফিকহ্ শাস্ত্রের অন্যতম ধারা- الضرورة تبيح المحظورات (অর্থাৎ বিশেষ প্রয়োজনীয়তা হারামকে মুবাহ্ বা হালাল করে দেয়) এর ভিত্তিতে মসজিদের স্বার্থে চাঁদা বা টাকা নেয়া যাবে মর্মে মত প্রকাশ করেছেন এবং সাথে সাথে হক্কানী ওলামা-ই কেরাম এটাও বলেছেন যে, টাকা উত্তোলনের কার্যাদি নীরবে সম্পন্ন করবে। স্বীয় মনোযোগ ও খেয়ালকে খোতবা শ্রবণে নিবিষ্ট রাখবে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ও মসজিদের উন্নতীর স্বার্থে খোতবার সময় টাকা গ্রহণের সময় অবশ্যই কোন প্রকারের কথাবার্তা যেন না হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবে। আবার ফক্বীহগণের মধ্যে কেউ কেউ খোতবা শুনার মধ্যে বিঘœতা ও ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণে উক্ত সময়ে চাঁদা গ্রহণ করা নিষেধ করেছেন। সুতরাং যে সব মসজিদে অর্থ সম্পদ ও ফান্ড ভাল, সেসব মসজিদে জুমুআর খোতবার সময় টাকা গ্রহণ করবে না। এটাই শ্রেয় ও উত্তমপন্থা। আর যেসব মসজিদ অর্থ সম্পদ ও ফান্ডের দিক দিয়ে নেহায়ত গরীব ও দুর্বল সেসব মসজিদে বিশেষ প্রয়োজনে জুমুআর ২য় খোতবার সময় মসজিদের স্বার্থে টাকা সংগ্রহ করবে। তবে যেন খোতবা শ্রবণে সামান্যতমও ব্যাঘাত না হয়, নতুবা গুনাহ্গার হবে।
 
উল্লেখ্য যে, দুই খোতবার মাঝখানে নয় বরং দুই খোতবার পর জুমার দু’ রাকাত ফরয নামাযের জমাত শেষ করে খতিব/ইমাম সাহেব মুক্তাদিগণের দিকে ফিরে ফরয নামাজের পর হাদিসে বর্ণিত দোয়া দরুদ তসবিহ ও জিকির সমূহ পড়তে থাকবেন এরই মধ্যে মুসল্লিগণের বসাবস্থায় মসজিদের ভিতরে, বারান্দায় এবং ২য় ও ৩ তলায় কিছু দায়িত্ববান মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য বা কিছু মুসল্লি মসজিদের জন্য চাঁদা/হাদিয়া মসজিদের থলিতে গ্রহণ করবেন। এটা বেশী নিরাপদ ও উত্তমপন্থা। যেহেতু ফরযের পর সুন্নাত ও নফল নামায পর্যন্ত বেশীর ভাগ মুসল্লি অপেক্ষা করেন না বরং চলে যান। আর ২য় খোতবার সময় মসজিদের জন্য যদি মসজিদের প্রয়োজনে চাঁদা বা অনুদান গ্রহণ করা হয় তখন অবশ্যই খতিব/ইমাম সাহেব বারবার খোতবার পূর্বে জোর-তাকিদ সহকারে এ মাসআলাটি যেন অবশ্যই বলে দেন যে, কেউ কথা-বার্তা বলবেন না, চুপ-চাপ মনোযোগ সহকারে নেহায়ত আদব-ভক্তি সহকারে খোতবা শ্রবণ করবেন, আর নিরবে মসজিদের বাক্সে/থলিতে মসজিদের জন্য হাদিয়া/সাদকা/অনুদান স্বীয় ইচ্ছানুসারে মুসল্লিরা প্রদান করবেন। তখন কথা বললে অবশ্যই গুনাহ্গার হবে। এ বিষয়ে তরজুমান প্রশ্নোত্তর বিভাগে পূর্বে আলোকপাত করা হয়েছে।

Share:

Leave Your Comment