ইলমে গায়ব (অদৃশ্যের জ্ঞান) হুযূর আকরাম’র অন্যতম বৈশিষ্ট্য

ইলমে গায়ব (অদৃশ্যের জ্ঞান) হুযূর আকরাম’র অন্যতম বৈশিষ্ট্য

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান-

আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ঈমান ও আক্বীদা হচ্ছে- হুযূর সরওয়ার-ই আম্বিয়া, মাহবূবে কিবরিয়া আহমদ মুজতাবা মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যেভাবে সমগ্র সৃষ্টি-জগতে সর্বাপেক্ষা উঁচু মর্যাদার অধিকারী, তেমনি তিনি জ্ঞানেও সমস্ত জিন্, মানুষ ও ফেরেশতা, মোটকথা সকল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ, সমস্ত সৃষ্টির চেয়ে তাঁর জ্ঞান বেশী। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের, দুনিয়া ও আখিরাতের, আলমে শাহাদত ও আলমে গায়বের তথা সবকিছুর জ্ঞান তাঁকে দান করা হয়েছে। অনাদিকাল থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত যতকিছু হয়েছে, হচ্ছে ও হবে সবকিছু তাঁর রিসালতের ক্বলবের মধ্যে উদ্ভাসিত, সবকিছু তাঁর নুবূয়তের দৃষ্টির সামনে সুস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র ক্বোরআনের ‘সূরা নিসা’র ১১৩ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন- وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ (এবং তিনি আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা কিছু আপনার জানা ছিলোনা)। [কানযুল ঈমান]
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এ কথাই কাব্যাকারে ব্যক্ত করেছেন-
سر عرش پر هے تيرى گزر دل فرش پر هے تري نظر
ملكوت وملك ميں كوئي شئ نهيں وه جو تجھ په عياں نهيں
অর্থ: আরশের শিরের উপর আপনি গমন করেছেন। ফরশের হৃদয়ের উপর আপনার দৃষ্টি রয়েছে। ফেরেশতা জগত ও জড়জগতে এমন কিছুই নেই, যা আপনার সামনে সুস্পষ্ট নয়।

বেরাদরানে মিল্লাত!
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের এ আক্বীদা কোন অদম্য আবেগের তাড়না প্রসূত কিংবা কোন কবির কবি সুলভ ধারণা বা চিন্তা প্রসূত নয়; বরং এটা পবিত্র ক্বোরআনের আয়াতের নূর ও নবী-ই আক্রামের শিক্ষার সুবাসিত ফুলের সুবাসই।

সমগ্র দুনিয়া হুযূর-ই আকরামের দৃষ্টি মুবারকের সামনেই
খোদ নবী-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
اِنَّ اللهَ قَدْ رَفَعَ لِىَ الدُّنْيَا وَاَنَا اَنظُرُ اِلَيْهَا واِلٰى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيْهَا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَأَنَّمَا اَنْظُرُ اِلٰى كَفِّىْ هذِه
অর্থ: মহামহিম আল্লাহ্ আমার জন্য দুনিয়াকে এভাবে তুলে আমার সামনে পেশ করেছেন যে, আমি সমগ্র দুনিয়াকে এবং তাতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে, ওইসব কিছুকে ওইভাবেই দেখতে পাচ্ছিলাম, যেভাবে আমি আমার হাতের এ তালুকে দেখতে পাচ্ছি।
সুবহানাল্লাহ্! সুবহানাল্লাহ্! আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহ ও হুযূর মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টিশক্তির ব্যাপকতা সম্পর্কে আর কিছুই বলার অপেক্ষা রাখে না। অনুরূপ, রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অন্য হাদীসে এরশাদ করেছেন-
فَرَأَيْتُهٗ وَضَعَ كَفَّهٗ بَيْنَ كَتِفَىَّ فَوَجَدْتُّ بَرْدَ اَنَا مِلِه بَيْنَ ثَدِيَىَّ فَتَجَلّى لِىْ كُلَّ شَيْءٍ وَعَرَفْتُ ـ مشكواة : باب المساجد
অর্থ: আমি মহামহিম আল্লাহর দীদার (সাক্ষাৎ) এভাবে লাভ করেছি যে, তিনি আপন কুদরতের হাত আমার উভয় গর্দানের উভয় পাশের মধ্যখানে রেখেছেন, ফলে আমি তাঁর কুদরতের আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগের শৈত আমার উভয় পাঁজরের মধ্যভাগে অনুভব করেছি। এরপর আমার সামনে প্রত্যেক কিছু সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। আমি সব কিছু চিনে ফেলেছি। [মিশকাত: বাবুল মাসাজিদ]
এভাবে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্ব-ই আ’যম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেছেন-
قَامَ فِيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا فَاَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ الْخَلْقِ حَتّٰى دَخَلَ اَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِلَهُمْ وَاَهْلُ النَّارِ مَنَازِلَهُمْ ـ حَفِظَ ذٰلِكَ مَنْ خَفِظَهٗ وَنَسِيَهٗ مَنْ نَسِيَهٗ ـ مشكواة : باب بدء الخلق
অর্থ: ‘‘রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এক স্থানে দণ্ডায়মান হলেন। অতঃপর তিনি আমাদেরকে সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কে বললেন। আর ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবার ছিলো সব কিছু বর্ণনা করলেন। এ পর্যন্ত যে, জান্নাতীরা তাদের স্থানগুলোতে প্রবেশ করেছেন, আর দোযখীরা তাদের স্থানগুলোতে প্রবেশ করে ফেলেছে। যে ব্যক্তি তা স্মরণে রাখতে পেরেছে, সে তা স্মরণে রেখেছে, আর যে ব্যক্তি তা ভুলে গেছে, সে তা ভুলেই গেছে।’’
অন্য বর্ণনায় হাদীসটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
 ذٰلِكَ اِلى يَوْمِ الْقِيامةِ اِلاَّ حَدَّثَ بِه مَا تَرَكَ شَيْئًا فِىْ مَقَامِه
অর্থ: তিনি ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঘটবে এমন সব ঘটনা ও অবস্থা বর্ণনা করে ফেলেছেন, কোন কিছুই বাদ দেননি।
[মিশকাত: বাবুল ফিতান]
এভাবে হযরত সাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
اِنَّ اللهَ زَوىٰ لِىَ الْاَرْضَ فَرَأَيْتُ مَشَارِقَ الْاَرْضِ وَمَغَارِبَهَا
অর্থ: আল্লাহ্ তা‘আলা আমার জন্য যমীনকে ভাঁজ করে নিলেন। সুতরাং আমি যমীনকে সেটার পূর্ব ও পশ্চিমের সব কিছু দেখে নিয়েছি। [মিশকাত: বাবুল ফাযাইলে সাইয়্যিদিল মুরসালীন]

বেরাদরানে ইসলাম!
দেখুন নির্ভরযোগ্য কিতাবগুলোতে এ চমকিত হাদীস শরীফগুলো এ কথা ঘোষণা করেছে যে, হুযূর রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্ তা‘আলা দুনিয়ার সমগ্র সৃষ্টির গায়বী ইলম (অদৃশ্য জ্ঞান) ও ইলমে শাহাদত (চাক্ষুষ জ্ঞান) তথা সবকিছুর জ্ঞান এমনভাবে দান করেছেন যেন, দুনিয়ার সৃষ্টির শুরু থেকে জান্নাত কিংবা জাহান্নামে প্রবেশ করা পর্যন্তের সমস্ত ঘটনা ও অবস্থা হুযূর-ই আক্রামের চোখের সামনে রয়েছে।
আর হুযূর-ই আক্রাম তাঁর সাহাবীদেরকেও এসব অবস্থা ও ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেছেন। সুতরাং আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের এ সম্পর্কিত আক্বীদাও যে ক্বোরআন-হাদীস (কিতাব ও সুন্নাহর)’র একেবারে অনুরূপ তাতে সন্দেহের লেশ মাত্রও নেই। আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন-
وَعَلَّمَكَ مَالَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ عَظِيْمًا
(এবং তিনি আপনাকে ওইসব কিছুই শিক্ষা দিয়েছেন যেগুলো আপনার জানা ছিলোনা, আপনার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহ অনেক বড়।

বেরাদরানে মিল্লাত!
এখন বলুন, জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন কোন্ বিষয় রয়েছে, যা হুযূর-ই আক্রামের জ্ঞানে নেই? বরং আলমে শাহাদত ও আলমে গায়ব (দৃশ্য ও অদৃশ্য জগত)-এর সব কিছুই হুযূর-ই আক্রামের সামনে রয়েছে। যে বরকতম-িত চক্ষু যুগল থেকে খোদ্ খোদা তা‘আলাও গোপন নেই, তাঁর চক্ষুযুগল থেকে সমগ্র সৃষ্টির আর কোন জিনিষ কিভাবে গোপন থাকতে পারে? মোটেই থাকতে পারে না।
আ’লা হযরত বলেছেন-
اور كوئي غيب كيا تم سےنهاں هو بھلا-جب خدا هي نه چھپا تم يه كروڑوں درود
অর্থ: হে আল্লাহর রসূল! যখন খোদ্ খোদা তা‘আলা আপনার নিকট থেকে গোপন থাকেননি, তখন আর এমনকি জিনিস থাকতে পারে, যা আপনার নিকট গোপন (অদৃশ্য)?
এখানে একটি অতি সুক্ষ্ম বিষয় এও রয়েছে যে, আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যম হচ্ছে- আমাদের ‘আক্বল (বিবেক) এবং আমাদের অনুভূতিশক্তি, যেগুলো দ্বারা আমরা অন্য মানুষের জ্ঞান ভা-ার আহরণ করি; কিন্তু নবীগণ আলায়হিমুস্ সালামের জ্ঞান ভা-ার অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলার ওহী। তাঁরা সরাসরি আল্লাহ্ তা‘আলার জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভা-ার থেকে অর্জন করে থাকেন। মিনিট নয় বরং সেকে-ের মধ্যে ইলহামী কিংবা মানামী ওহী (ইলহাম কিংবা নিদ্রাবস্থার ওহী) দ্বারা তাঁদের বক্ষগুলোতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভা-ার অর্জিত ও একত্রিত হয়ে যায়।

হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম-এর জ্ঞান-ভাণ্ডারের তালিকা
পৃথিবীতে আল্লাহর সর্বপ্রথম নবী হযরত আদম খলীফাতুল্লাহ্ আলায়হিস্ সালামের জ্ঞান ভাণ্ডারের তালিকা শুনুন। আলিমুল গায়বি ওয়াশ্ শাহাদাতি (আল্লাহ্ তা‘আলা) একটি মাত্র মুহূর্তে তাঁর বক্ষ শরীফে ইলহামের মাধ্যমে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন আর হযরত আদম আলায়হিস্ সালামও জ্ঞান-বিজ্ঞানের এতো উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে গেছেন যে, ফেরেশতাদের পবিত্র দলটি তাঁর জ্ঞানগত ভাব-গাম্ভীর্য ও ইরফানগত মহত্বের সামনে সাজদাবনত হয়ে গিয়েছিলেন।
ক্বুত্ববে যমান হযরত শায়খ ইসমাঈল হাক্বক্বী আলায়হির রাহমাহ্ তাঁর বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘রুহুল বয়ান’-এ আয়াত শরীফ وَعَلَّمَ ادَمَ الْاَسْمَآءُ كُلَّهَا -এর তাফসীরে বলেছেন ‘‘মহামহিম আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত আদম আলায়হিস্ সালামকে সমস্ত নামের জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। ওই ‘ইলমুল আসমা’ (নামগুলোর জ্ঞান)-এর ইজমালী তালিকা এযে-
وَعَلَّمَهٗ جَمِيْعَ اَسْمَآءِ الْمُسَمَّيَاتِ بِكُلِّ اللُّغَاتِ
অর্থ: আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত আদম আলায়হিস্ সালামকে সমস্ত জিনিসের নাম সমস্ত ভাষায় শিখিয়ে দিয়েছেন।
وَعَلَّمَهٗ اَسْمَآءَ الْمَلَآئِكَةِ وَاَسْمَآءَ ذُرِّيَّتِه كُلِّهِمْ
وَاَسْمَآءَ الْحَيَوَانَاتِ وَالْجَمَادَاتِ وَصُنْعَةِ كُلِّ شَيْءٍ
অর্থ: এবং তাঁকে সমস্ত ফেরেশতার নাম, সমস্ত আদম সন্তানের নাম, সমস্ত প্রাণী ও জড়বস্তুর নাম এবং প্রত্যেক বস্তুর কর্ম-শিল্পগুলোর নাম,
وَاَسْمَآءَ الْمُدُنِ وَالْقُرٰى وَاَسْمَاءَ الطَّيْرِ وَالشَّجَرِ وَمَا يَكُوْنُ
অর্থ: এবং সমস্ত শহর, সমস্ত গ্রাম, সমস্ত পাখী ও গাছপালার নাম এবং যা ভবিষ্যতে কখনো অস্তিত্ব-জগতে আসবে ওই সবের নাম,
وَكُلَّ نَسِمَةٍ يَخْلُقُهَا اِلى يَوْمِ الْقَيَامَةِ وَاَسْمَآءَ الْمُطْعُوْمَاتِ وَالْمَشْرُوْبَاتِ
এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত পয়দা হবে এমন সমস্ত প্রাণীর নাম
وَكُلِّ نَعِيْمٍ فِى الْجَنَّةِ وَاَسْمَآءَ كُلِّ شَيْئٍ حَتّٰى الْقَصْعَةِ وَالْقَصِيْعَةِ وَفِى الْخَبَرِ عَلَّمَه سَبْعَ مِائَةِ اَلْفِ لُغَةٍ
[روح البيان ـ ج ـ ১ ـ صفحه ـ ১০০]
অর্থ: আর পানাহারের সমস্ত জিনিসের, জান্নাতের সমস্ত নি’মাতের নাম এবং প্রতিটি জিনিসের নাম, এমনকি বড় পেয়ালা ও ছোট পেয়ালার নাম এবং হাদীস শরীফে আছে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে সাত লক্ষ ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। [রূহুল বয়ান, ১ম খন্ড, পৃ. ১০০]

বেরাদরানে মিল্লাত!
দেখলেন তো হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম-এর জ্ঞান-ভা-ারের তালিকা! এখন ভেবে দেখুন! যখন হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম-এর ইল্ম ও ইরফানের এমন উঁচু মর্যাদা, তখন হুযূর সাইয়্যেদে আদম ও সরদারে আওলাদে আদম খলীফাতুল্লাহিল আ’যম হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ইল্মের আধিক্য ও প্রশস্ততা এবং তাঁর মহা মর্যাদার অবস্থা কেমন? কোথায় উলূমে আদম আর কোথায় উলূমে সাইয়্যেদে আলম!

উপরোল্লিখিত আয়াতের কতিপয় তাফসীর
আয়াতটার অনুবাদ হলো, ‘‘হে মাহবূব! আপনার যা কিছু জানা ছিলো না, তার সবকিছু আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর আল্লাহর অনুগ্রহ আপনার উপর খুব বড়।’’
* ‘তাফসীর-ই জালালাঈন শরীফে’ এ আয়াতের তাফসীরে লিখা হয়েছে- اَيْ مِنَ الْاَحْكَامِ وَالْغَيْبِ অর্থাৎ আল্লাহ্ আয্যা ওয়াজাল্লা সমস্ত বিধান এবং ইলমে গায়ব আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।
* ‘তাফসীর-ই রূহুল মা‘আনী’তে আছে-
مِنْ خفِيَّاتِ الْاُمُوْرِ وَضَمَائِرِ الصُّدُوْرِ
اَوْ مِنْ اَخْبَارِ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ
অর্থ: সমস্ত গুপ্ত জিনিস এবং বক্ষগুলোতে গোপনকৃত কথাবার্তা খোদা তা‘আলা আপনাকে বলে দিয়েছেন।
[রূহুল মা‘আনী: ৫ম খ-: পৃ. ১৪৪]
* ‘তাফসীর-ই রূহুল বয়ান’ ৫ম খ-ের ২৮২ নং পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে- مِنَ الْغَيْبِ وَخَفِيَّاتِ الْاُمُوْرِ অর্থাৎ গায়ব ও সমস্ত গোপন জিনিসের জ্ঞান আপনাকে দান করেছেন।
* ‘তাফসীর-ই খাযিন’-এ লিপিবদ্ধ রয়েছে-
مِنْ اَحْكَامِ الشَّرْعِ وَاُمُوْرِ الدِّيْنِ
وَقِيْلَ مِنْ عِلْمِ الْغَيْبِ مَالَمْ تَكُنْ تَعْلَمْ
অর্র্থাৎ শরীয়তের সমস্ত বিধান এবং দ্বীনের সমস্ত কথা, এও কথিত আছে যে, ‘ইলমে গায়ব’, মোটকথা যা কিছু আপনার জানা ছিলোনা, ওই সবই আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।
আয়াতের শেষাংশও একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, আয়াতে উল্লিখিত ‘মা’ (ما) শব্দটি ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত। কারণ কোন খাস জিনিষের জ্ঞান তো আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য কাউকেও দান করেছেন। জ্ঞানের সমস্ত শাখা-প্রশাখা হুযূর-ই আক্রামকে দান করা তাঁর উপর মহা অনুগ্রহই। যেহেতু তাঁর জ্ঞান সমস্ত সৃষ্টির জ্ঞান অপেক্ষা বেশী, সেহেতু আল্লাহর অনুগ্রহও তাঁর উপর সর্বাপেক্ষা বড়। মোটকথা, এসব প্রমাণ ও উদ্ধৃতি হুযূর-ই আক্রামের ইলমে গায়ব ও যাবতীয় বিষয়ের জ্ঞানকে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদার কথা মেনে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ বুঝা ও মানার তাওফীক্ব দিন। আ-মী-ন।

মহাপরিচালক-আনজুমান রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম।

 

Share:

Leave Your Comment