শবে বরাতে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করা যাবে কিনা?

শবে বরাতে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করা যাবে কিনা?

 গাজী আলী নেওয়াজ, কাটিরহাট, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: অনলাইনে মিডিয়ায় কোন কোন মহল লায়লাতুল বরাত ও কদরের রাতে ইবাদত বন্দেগী করা নিয়ে কটাক্ষ করে এবং উক্ত বরকতময় রজনীতে এশার নামাযের পর নফল নামায জামাতে পড়াকে কেন্দ্র করে ফাসাদ সৃষ্টি করে। সুতরাং জানার বিষয় হলো লাযলাতুল বরাত তথা শবে বরাত ও কদরের রাতে, রাত জেগে এবাদত বন্দেগী করার প্রতি হাদীস/তাফসির ও তাসাওয়াফের নির্ভরযোগ্য কিতাবে উৎসাহিত করা হয়েছে কিনা? এবং উক্ত ফযীলতময় রজনীসমূহে নফল নামায জামাত সহকারে আদায় করতে অসুবিধা আছে কিনা? বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ রইলো।

উত্তর: হাদীস গ্রন্থ সমূহের মধ্যে অন্যতম গ্রন্থ- মিশকাতুল মাসাবিহ, জামে তিরমিজি, সুনানে ইবনে মাজাহ্ ও মুসনাদে আহমদসহ অনেক হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হাদীস সমূহে প্রিয় নবী সরকারে দু’আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম শবে বরাত তথা বরাত রজনীর অসংখ্য ফজিলত ও গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন, তদ্রুপ তাফসীর গ্রন্থ সমূহে যেমন তাফসীরে রুহুল বয়ান ও তাফসীরে ইবনে কাছিরসহ অসংখ্য তাফসীরের কিতাবে এবং গুনিয়াতুৎ তালেবীন ও নুজহাতুল মাজালেসসহ বহু ইলমে তাসাউফের কিতাব সমূহে পবিত্র বরাত রজনীতে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী, দান-সদকা, খায়রাত, ক্বোরআনে পাকের তেলাওয়াত, আপনজন ও অলি-বুযুর্গের কবর/মাজার শরীফ যিয়ারত, গরীব-অসহায়দের প্রতি উত্তম খাবার পরিবেশন, দরূদ-সালাম, মিলাদ-কিয়াম, দোয়া-মুনাজাতের মাধ্যমে শবে বরাত অতিবাহিত করার এবং পরের দিন (যাদের পক্ষে সম্ভব) নফল রোযা পালন করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। সুতরাং এ সব ইবাদত-বন্দেগী নিঃসন্দেহে পূণ্যময়, বরকত মন্ডিত ও সওয়াব জনক। যারা পবিত্রতম বরাত রজনীর বিশেষ ইবাদতসমূহ থেকে বঞ্চিত তারা অনেক কল্যাণ, ফজিলত ও নেকী- সওয়াব থেকে বঞ্চিত। যারা শবে বরাতে বিশেষত রাত জেগে নফল ইবাদত-বন্দেগী ও কবর জিয়ারতকে অস্বীকার করে মূলত তারা হাদীসে রাসূলকে অস্বীকার করে। হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নিজেই এ মহান রজনীতে বিশেষ ইবাদত, জান্নাতুল বকিতে (মদিনার কবরস্থান) জিয়ারত ও জিকির-আজকার, দোয়া-মুনাজাত এর মাধ্যমে অতিবাহিত করেছেন মর্মে মিশকাত শরীফ, সুনানু ইবনে মাজাহ্, জামে তিরমিজি ও মুসনদে আহমদে হাদীস বর্ণিত আছে।

উল্লেখ্য যে, বরাত-কদরের মত গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতমন্ডিত রাতসমূহের বিশেষ নফল নামায এশার নামাযের জামাতের পর মসজিদের ইমাম/খতিব ও মুসল্লিগণ ইচ্ছা করলে জামাত সহকারেও আদায় করতে পারে আর অন্যান্য সময়ের নফল নামাযের ন্যায় একা একা আদায়ও করতে পারে। এতে কোন অসুবিধা নাই। উভয় পন্থায় নফল নামায আদায়ের কথা বর্ণিত রয়েছে। বিধায় এটাকে কেন্দ্র করে অহেতুক ঝগড়া বিবাদ ও তর্ক করা সমীচিন নয়। হক্কানী ওলামায়ে কেরামের মধ্যে পীরানে পীর হযরত গাউসে পাক শেখ সৈয়্যদ আবদুল কাদের জিলানী কুদ্দিসা সিররুহুল আজিজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর গুনিয়াতুৎ তালেবীনে, প্রখ্যাত মুফাসসীর আল্লামা শেখ ইসমাঈল হক্কী হানাফী তাফসীরে ‘রুহল বয়ানে’ সুরা কদরের তাফসীরে, ইমামুদ দুনিয়া ফিল হাদীস হযরত ইমাম বোখারী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর সহি বোখারীতে এবং ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর সহি মুসলিম শরীফে আরো অনেক মনীষী ও ইসলামী বিশেজ্ঞরা বিশেষ রজনী ও সময়ের নফল নামায আলাদা আজান ও ইকামত ছাড়া জামা’আত সহকারে পালন করা জায়েজ ও উত্তম বলে ফায়সালা প্রদান করেছেন।

ইমামে আহলে সুন্নাত গাজীয়ে দ্বীন ও মিল্লাত আশেকে রাসূল আল্লামা গাজী সৈয়্যদ মুহাম্মদ আজিজুল হক হানাফী কাদেরী শেরে বাংলা রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর ফতোয়ায়ে আজিজীতে এ সব বিশেষ রজনীতে বিশেষ নফল নামাযসমূহ জামাআত সহকারে আদায়ের প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। ইমাম ও ফকিহগণের মধ্যে ইমাম ইবনে আবেদীন শামীসহ কেউ কেউ সাধারণত এ নফল নামায একাকী পড়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং তর্ক করার কোন অবকাশ নেই বরং কিছু নফল নামায জামাআত সহকারে আর কিছু একাকী পড়লে উভয় মতের উপর আমল হয়ে যায়। অথবা যার যে রকম ইচ্ছা জামাআত সহকারে বা একাকী আদায় করতে পারে। এ বিষয়ে ইতোপূর্বে একাধিকবার মাসিক তরজুমান, শা’বান ও রমজানুল মোবারক সংখ্যায় বিস্তারিত প্রামাণ্য আলোচনা করা হয়েছে। তা দেখার আহ্বান রইলো। আমার রচিত যুগ-জিজ্ঞাসা, গুনিয়াতুত্ তালেবীন ও তাফসিরে রুহুল বয়ান, সূরা কদরের তাফসির ইত্যাদি।

Share:

Leave Your Comment