সুন্নাতের উপকারিতা ও সুন্নাত পরিহারের অপকারিতা

সুন্নাতের উপকারিতা ও সুন্নাত পরিহারের অপকারিতা

= সুন্নাতের উপকারিতা ও সুন্নাত পরিহারের অপকারিতা =

উপকারিতা

৮. হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল এরশাদ করেন-مَنْ تَمَسَّکَ بِسُنَّتِیْ عِنْدَ فَسَادِ اُمَّتِیْ فَلَہٗ اَجْرُ مِاءَۃِ شَہِیْدٍ

অর্থাৎ ‘‘আমার উম্মতের ফ্যাসাদ-বিপর্যয়ের মূহূর্তে যে ব্যক্তি আমার সুন্নত’র উপর আমল করবে, তার জন্য শত শহীদের প্রতিদান থাকবে।’’  [মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩০]

৯. হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদীসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- مَنْ اَحَبَّ سُنَّتِیْ فَقَدْ اَحَبَّنِیْ وَمَنْ اَحَبَّنِیْ کَانَ مَعِیْ فِی الْجَنَّۃِ

অর্থাৎ ‘‘যে আমার সুন্নাতকে ভালবাসলো, সে আমাকেই ভালবাসলো আর যে  আমাকে ভালবাসবে, সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে।’’         [তিরমিযী শরীফ]

১০. হযরত বেলাল ইবনে হারেস থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- مَنْ اَحَبَّ سُنَۃًّ مِّنْ سُنَّتِیْ قَدْ اُمِیْتَتْ بَعْدِیْ فَاِنَّ لَہٗ مِنَ الْاَجْرِ مِثْلَ اُجُوْرِ مَنْ عَمِلَ بِہَا مِنْ غَیْرِ اَنْ یَّنْقُصَ مِنْ اُجُوْرِہِمْ شَیْأً

অর্থাৎ যে ব্যক্তি আমার ইন্‌তিকালের পর আমার সুন্নাতসমূহ থেকে মিটে যাওয়া কোন সুন্নাতকে জীবিত করবে, তাকে ওই সুন্নাতের উপর সব আমলকারীর সমান সাওয়াব প্রদান করা হবে। তবে আমলকারীদের কোন সাওয়াব কমানো হবে না। [মিশকাত শরীফ]

১১. হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আল্লাহর রাসুল এরশাদ করেন- خَیْرُ الْہَدْیِ ہَدْیُ مُحَمَدٍ অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র জীবন-যাত্রাই হচ্ছে সর্বোত্তম জীবনযাত্রা।    [মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-২৭]

সুন্নাত পরিহারের অপকারিতা

১২. হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- اَمَا وَاللّٰہِ اِنِّیْ لَاَخْشَاکُمْ لِلّٰہِ وَاَتْقَاکُمْ لَہٗ وَلٰکِنِّیْ اَصُوْمُ وَاُفْطِرُ وَاُصَلِّیْ وَاَرْقُدُ وَاَتَزَوَّجُ النِّسَآءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِیْ فَلَیْسَ مِنِّیْ (متفق علیہ)

অর্থাৎ ‘‘আল্লাহর ক্বসম, অবশ্যই আমি তোমাদের সবার চাইতে বেশী খোদাভীতি ও পরহেযগারী সম্পন্ন। কিন্তু জেনে রেখো, আমি রোযাও রাখি, ইফতারও করি। (রাত জেগে) নামাযও পড়ি, আবার শয্যাও গ্রহণ করি। বিবিদের সাথে বিবাহও করি (এবং তাদের সাথে আমি দাম্পত্য সম্পর্কও রক্ষা করি)। যে ব্যক্তি আমার ‘সুন্নাত’ থেকে বিমুখ হয়, সে আমার (দলভুক্ত) নয়। [মিশকাত শরীফ]

১৩. দারেমী গ্রন্থে উল্লিখিত একটি হাদীসে বলা হয়েছে- اَوَّلُ ذِہَابِ الدِّیْنِ تَرْکُ السُّنَّۃِ অর্থাৎ ‘দ্বীন’ বিলুপ্তির প্রথম সোপান হলো সুন্নত পরিহার করা।

১৪. মু’মিন-জননী হযরত সাইয়্যেদাহ্‌ আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

صَنَعَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ شَیْءًا فَرَخَّصَ فِیْہِ فَتَنَزَّہَ عَنْہُ قَوْمٌ فَبَلَغَ ذَالِکَ رَسُوْلَ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ فَخَطَبَ فَحَمِدَ اللّٰہَ ثُمَّ قَالَ مَابَالُ اَقْوَامٍ یَتَنَزَّہُوْنَ عَنِ الشَّئِْ اَصْنَعُہٗ فَوَاللّٰہِ اِنِّیْ لَاَ عْلَمُہُمْ بِاللّٰہِ وَاَشَدُّ لَہٗ خَشْیَۃً (متفق علیہ)

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কোন কাজ করলেন, তারঃপর তা অনুমোদিত হয়ে গেলো। কিন্তু কিছু লোক তা করা থেকে বিরত রইলো। বিষয়টির সংবাদ আল্লাহ্‌ রাসূলের কাছে পৌঁছে যায়। এতে তিনি এক খুৎবা দিলেন এবং আল্লাহর ‘হামদ’ বা প্রশংসা শেষে এরশাদ করলেন, ‘‘ওই লোকদের কী হলো? যে কাজটি আমি করছি, তা থেকে তারা বিরত থাকছে। আল্লাহ্‌র ক্বসম! আমি তাদের সবার চাইতে আল্লাহ তা’’আলাকে অধিক জানি। আর খোদাভীতির প্রশ্নে আমি তাদের সবার চাইতে বেশী সতর্ক।    [বুখারী মুসলিম ও মিশকাত শরীফ]

১৫. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস’ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন- لَوْتَرَکْتُمْ سُنَّۃَ نَبِیِّکُمْ لَضَلَلْتُمْ

অর্থাৎ-যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাতকে পরিহার করো, তবে নিশ্চিতভাবে তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। [মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৯৭]

অভ্যাসগত কাজগুলো পুণ্যে পরিণত করুন

আমাদের সুস্বাদু খাবার, উত্তম পরিধেয় বস্তুর মধ্যে আয়েশ-জৌলুস উদ্দেশ্য না হওয়া চাই বরং খানা-পিনার বস্তুগুলোতে সুন্নাত পালনের নিয়্যতের মাধ্যমে তা নেক কাজে পরিণত করে নেওয়া উচিত। সুন্নাতের নেক উদ্দেশ্যে সম্পাদন করলে আমাদের অভ্যাসগত কাজগুলোও বয়ে আনতে পারে পুণ্যের সওগাত।

প্রিয়জনের অনুসরণে প্রিয় হওয়া যায়

হুযূর সরওয়ারে কা-ইনাত সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রিয় প্রিয়জনের আচরণ, চলা-ফেরা, উঠা-বসা, বচন-বাচন এক কথায় সবকিছুই প্রিয় হয়ে থাকে। কাজেই নিজ হাবীবের আচরণও আল্লাহ তাজ্ঞআলার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। আর এ প্রিয় সুন্নাত যাঁরা মুহাব্বত সহকারে অনুসরণ করবে, তাঁরাও নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌র প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠবে। কারণ একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, প্রিয়জনের অনুসরণে প্রিয় হওয়া যায়। আসুন, তাঁর প্রিয় হাবীবের সুন্নাতে অভ্যস্ত হয়ে আমরাও তাঁর প্রিয় হয়ে ওঠি।

একটি শর’ঈ হুকুম মতে আমল সহস্র চিল্লাহ্‌র চেয়ে শ্রেয়

মুজাদ্দিদে আলফে সানী হযরত শেখ আহমদ সেরহেন্দী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি  এরশাদ করেছেন, শরীয়তের চাহিদা মাফিক যতটুকু আমল হবে, ঠিক ততখানি নাফসানী খাহেশ বান্দার অন্তর থেকে তিরোহিত হবে। সুতরাং শর’ঈ আহকাম থেকে একটি হুকুম পালন করা কুপ্রবৃত্তি বা নফসানী খাহেশ বিদূরিত করতে সহস্র বছর এমন রিয়াযত ও মুজাহাদা থেকে উত্তম, যা নিজ খুশীমত করা হয়।’’  [ইমামে রাব্বানী, মাকতুব, পৃষ্ঠা-৫২, ২য়খণ্ড]

কাজেই শরীয়ত প্রবর্তক ওই নবীর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করতে উদ্যোগী হওয়াই প্রকৃত মুঞ্চমিনের কর্তব্য।

উচ্চতর বেলায়ত পূর্ণাঙ্গ সুন্নাত অনুসরণেই অর্জিত হয়

ইমামে রাব্বানী মুজাদ্দেদে আলফে সানী হযরত শেখ আহমদ সেরহিন্দী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, বেলায়তের অনেক মক্বাম বা স্তর রয়েছে। আবার প্রত্যেক নবীর কদম বা অনুসরণে একেক বিশেষ বেলায়ত রয়েছে। যেমন বেলায়তে মুসাভী, ঈসাভী, মুহাম্মদী ইত্যাদি। কিন্তু সর্বোচ্চ বেলায়ত আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পদাঙ্ক অনুসরণেই নিহিত রয়েছে। আর এ বিরল মর্যাদা হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সুন্নাতকে পরিপূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। [জাহানে ইমামে রব্বানী,পৃষ্ঠা- ৮০৮, ইমাম রাব্বানী ফাউণ্ডেশন, করাচী]

অনুসরণের আলোয় আলোকিত না হলে ইবাদত মূল্যহীন

যদি সহস্র বছর ইবাদত করা হয়, কঠিন রিয়াযত, কঠোর সাধনা করা হয়, কিন্তু তা যদি নবীর আনুগত্য ও অনুসরণের আলোয় আলোকিত না হয় অর্থাৎ সুন্নাতে রাসূলের অনুবর্তী না হয়, তবে আল্লাহর কাছে তার মূল্য যবের দানা পরিমাণও নেই।             [মাক্বতূবাত, পৃষ্ঠা-১৯১, ৩য় খণ্ড]

কাজেই সুন্নাতের আলোতে আমাদের সব আমল আলোকিত করা চাই। সুন্নাতের অনুসরণে হয়নি এমন সব রিয়াযত থেকে সুন্নাত মতে শয্যা গ্রহণও অনেক শ্রেয়।