মৃত ব্যক্তির ইসালে সাওয়াবের জন্য কি কি করা যায়?

মৃত ব্যক্তির ইসালে সাওয়াবের জন্য কি কি করা যায়?

প্রশ্নোত্তর : অধ্যক্ষ মুফ্তী সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান

 শাজরাইল আওয়াল শিফাইন, পোর্টসিটি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির ইসালে সাওয়াবের জন্য কি কি করা যায়, শরীয়ত সম্মত উপায় সমূহ জানানোর বিনীত নিবেদন রইল।

উত্তর: মুসলমান ব্যক্তির ইন্তেকালের পর মৃত ব্যক্তির কবরে সাওয়াব পৌছানোর ব্যবস্থা করাকে শরীয়তের ইমামগণ/আলেমগণ মুস্তাহাব হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন এবং তা শরীয়ত সম্মত। ফাতেহা বা ঈসালে সাওয়াব বা মৃত ব্যক্তির রূহে/কবরে সাওয়াব পৌছানো সকলের জন্য অতি উপকারী ও আযাব হালকা হওয়া বিশেষত: মর্যাদা বুলন্দ হওয়ার বড় উসিলা। ইন্তেকালের পর মৃত ব্যক্তির পক্ষে ভাল কাজগুলো মৃত ব্যক্তির কবরে পৌঁছে। যেমন- এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইমাম আলাউদ্দিন আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম বাগদাদী (রাহ.) বলেন-
ان الصدقة عن الميت تنفع الميت ويصله ثوابها وهو اجماع العلماء- (تفسير خازن- ج ৪-صفحه ২১৩)
অর্থাৎ নিশ্চয় মৃত ব্যক্তির পক্ষে সদকা করলে মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয় এবং তার সাওয়াবও তার কাছে পৌঁছে। আর এটার উপর ওলামায়ে কেরামের ইজমা তথা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা হয়েছে। [তাফসিরে খাজেন, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ২১৩]
তাই মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআনখানি, খতমে সহীহ বোখারী, খতমে মাজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম, ফাতেহা, চাহরম, চাল্লিশা, কুরআন তেলাওয়াত, মিলাদ-কিয়াম মাহফিল, দান-সদকা, খতমে গাউসিয়া-গেয়ারভী শরীফ, খতমে খাজেগান, মাসিক-বার্ষিক ফাতেহা, গরীব-মিসকিনদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা এবং সদকায়ে জারিয়া স্বরূপ মসজিদ-মাদরাসা রাস্তা ইত্যাদি নির্মাণ করে দেয়া অত্যন্ত উপকারী, এগুলো ঈসালে সাওয়াবের অন্তর্ভুক্ত। মৃত্যুর চতুর্থ দিবসে অথবা চল্লিশতম দিবসে অথবা মাসিক/বাৎসরিক ফাতেহাখানি, জিয়ারত ও খতমে ক্বোরআন ইত্যাদির ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্য হল মায়্যেতের মাগফিরাত ও রফে দরজাতের জন্য দোয়া করা আর তাঁর কবরে/রূহে সওয়াব পৌঁছানো। সুতরাং এখানে আপত্তির ও গুনাহের কোন কারণ নাই বরং এ সবগুলো নেক আমল ও ইবাদত। আর ইবাদতকে বিদআত ও গুনাহ্ বলা জঘন্যতম অপরাধ ও অজ্ঞতা।
[তাফসীরে খাজেন, জাআল হক, ২য় খন্ড, আমার রচিত যুগ-জিজ্ঞাসা]
ইমাম বায়হাকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি শুয়াবুল ঈমানে হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ما الميت فى القبر الأ كالغريق المتغوث ينتظر دعوة تلحقه من اب او ام او اخ او صديق فاذا لحقنة كان احب اليه من الدنيا وما فيها وان الله تعالى ليد خل على اهل القبور من دعاء اهل الارض امثال الجبال وان هدية الاحياء الى الاموات الاستغفارلَهُمْ-
অর্থাৎ কবর জগতে মৃত ব্যক্তি ডুবন্ত সাহায্য প্রার্থনা কারীর ন্যায় (পানিতে, নদী, সাগরে ডুবন্ত ব্যক্তি বাঁচার জন্য যেভাবে যতক্ষণ প্রাণ থাকে সাহায্যকারীর প্রতি অপেক্ষায় থাকে) তদ্রুপ কবরে দাফনকৃত ব্যক্তি পিতা-মাতা-ভাই-বেরাদর-বন্ধু-বান্ধবের দাওয়াত তথা দো‘আর প্রতি অপেক্ষায় থাকে। যখন তার নিকট উনাদের পক্ষ হতে যা দো‘আ/সাওয়াব/নেকী পৌঁছে তা তাদের নিকট গোটা দুনিয়া এবং দুনিয়ায় যা কিছু আছে, সবগুলো হতে বেশী প্রিয় হয়। নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা পৃথিবীবাসী তথা জিন্দা আত্মীয়-স্বজনের দো‘আ পাহাড় সমূহের সমান নেকী বানিয়ে কবরবাসীর নিকট (তাদের কবরে) প্রবেশ করান। নিশ্চয় কবরবাসীর নিকট জিন্দা মুসলমানের (উত্তম) হাদিয়া তাদের জন্য ইস্তেগফার তথা গুনাহারে ক্ষমা প্রার্থনা করা ।
উল্লেখ্য যে, মৃত ব্যক্তির ইসালে সাওয়াব বা তাদের কবরে পৌঁছানোর জন্য যত ইবাদত-বন্দেগী ইসালে সাওয়াব, খতমাত, ফাতেহাখানি, কুলখানি, মিলাদ শরীফ, জিয়াফত ইত্যাদির আয়োজন করা হয় এগুলো কবরবাসীর ইস্তেগফার ও গুনাহ্ মাফের জন্য করা হয়। এসব ইবাদত ও আমল জিন্দা-মুর্দা সকলের জন্য উপকারী। যারা এসব নেক আমলকে বিদআত ও হারাম বলে তারা বড়ই কপাল পোড়া ও বদনসীব। তাদের উপরোক্ত হাদীস শরীফ হতে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। [মেশকাত শরীফ: ১ম খণ্ড-২০৬ পৃষ্ঠা]

 মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, চট্টগ্রাম।

 প্রশ্ন:আমি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান। শিক্ষকরা ব্যাংক লোন পায় তাদের ‘এমপিও’-এর বিপরীতে। তাদের ঋণ আবেদন এর কপিতে দায়িত্বের কারণে প্রধান হিসাবে আমাকে সই করতে হয়। সুদের সাক্ষীও অপরাধী বলে জানি। এক্ষেত্রে আমি অপারগ হয়ে সই করলে গুনাহ্ হবে কিনা? জানালে উপকৃত হব।

 উত্তর: বর্তমান ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যেহেতু সুদের অবকাশ রয়েছে অর্থাৎ প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুদের অবকাশ হতে মুক্ত নয়। তাই লোন গ্রহণকালে যেহেতু সুদের শর্তারোপ করা হয় এবং লোন গ্রহীতার সম্মতি নেয়া হয়- উভয়ের রাজি বা সম্মতি সুদের ভিত্তিতে লোন গ্রহণ করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। পবিত্র ক্বোরআন ও হাদীস শরীফে সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত ও হাদীস শরীফ বর্ণিত রয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন- وَاَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا অর্থাৎ- আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। [সূরা বাক্বারা: আয়াত-২৭৫]
সুদের পরিমাণ এত ভয়াবহ যে, সুদ গ্রহীতা, সুদদাতা, এবং সুদ ভিক্তিক লেন-দেনের লেখক, সাক্ষী কেউ রেহায় পাবে না। এ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- عن ابن مسعود ان النبى صل الله عليه وسلم لَعَنَ اٰكِلَ الرِّبَا وَمُوْ كلهُ وَشاهديه وكاتبهِ- (رواه الترمذى)
অর্থাৎ- জলীলুল কদর সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, নিশ্চয় নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সুদ খোর, সুদদাতা, সুদের সাক্ষী, সুদের চুক্তিপত্র লেখক সকলের উপর অভিশাপ করেছেন। [সহীহ মুসলিম ও জামে তিরমিজি শরীফ]
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাদীস পাকে আরো ইরশাদ করেছেন, সুদের ৭০টি গুনাহ্ রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বনিন্ম গুনাহ্টি হলো আপন মায়ের সাথে যেনা করার সমতুল্য। [তাবরানী ও ইবনে মাজাহ্]
আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে সুদমুক্ত জীবন যাপনের তাওফীক দান করুন- আমীন।
উল্লেখ যে, আপনি যেহেতু প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত, আপনার দস্তখত ও সই ছাড়া শিক্ষকের ব্যাংক লোনের আবেদন পাশ/অনুমোদন হবে না, নিরূপায় অবস্থায় বিশেষ প্রয়োজনে ইচ্ছা না থাকলেও সই/দস্তখত করতে অসুবিধা নেই। নতুবা দায়িত্ব বানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হতে পারে। ইসলামী ফিকহ তথা আইন শাস্ত্রের ধারা আছে -الضرورة تبيح المخطورات অর্থাৎ- বিশেষ প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বস্তু মুবাহ্/বৈধ হয়ে যায়। অবশ্য আপনি মহান আল্লাহ্র দরবারে তাওবা/ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।
ان الله هو التواب الرحيم-
الله ورسوله اعلم باصواب

 মুহাম্মদ আবু হুরাইরা শাইয়ুন
পলিটেকনিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম।

 প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি সারারাত না ঘুমায় তাহলে কি তাহাজ্জুদের নামায পড়লে হবে না? তাহাজ্জুদের জন্য ঘুমানো কি শর্ত?
 উত্তর: তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ জাগ্রত হওয়া, ঘুম থেকে উঠা ইত্যাদি । এশার নামাযের পর নিদ্রা বা ঘুম হতে রাতে জাগ্রত হয়ে যে নামায তাহাজ্জুদের নিয়তে আদায় করা হয় সেটাই তাহাজ্জুদের নামায। এ প্রসঙ্গে হাদীসে পাকে বর্ণিত আছে-
عن ابن عباس رضى الله عنهما قال كان النبى صلى الله عليه وسلم اذا قام من الليل يتهجد-(رواه البخارى)
অর্থাৎ- প্রখ্যাত সাহাবী রঈসুল মুফাসসেরীন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন জাগ্রত হতেন তিনি তাহাজ্জুদের নামায পড়তেন। [সহীহ বুখারী শরীফ]
আর বিনা নিদ্রায় বা রাতে না ঘুমিয়েও এশার নামাযের আগে পরে নফল নামায আদায় করা যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই। বিনা নিদ্রায় রাত জেগে নামায আদায় করাকে সালাতু কিয়ামুল লায়ল বা নফল নামায বলা হয়। তাছাড়া কেউ যদি নিদ্রায় গিয়েও সারারাত নামায আদায়ের সাওয়াব লাভ করতে চায় এক্ষেত্রে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার এ হাদীস শরীফ খানা প্রণিধানযোগ্য। যেমন:
عن عثمان بن عفان سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من صلّى العشاء فى جماعة فكائما قام نصف الليل ومن صلّى الصبح فى جماعة فكانما صلى الليل كله- (رواه مسلم)
অর্থাৎ- আমিরুল মু’মিনীন হযরত ওসমান ইবনে আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইশার নামায জামা‘আত সহকারে পড়লো সে যেন অর্ধরাত অবধি নামায পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামা‘আতে পড়ল, সে যেন সারারাত নামায পড়ল। [সহীহ মুসলিম শরীফ: হাদীস নং- ১০৭১, পৃষ্ঠা- ৪৩১]
উপরোক্ত হাদীসে পাক হতে প্রমাণিত হয় যে, যথাসময়ে ফজর ও এশার নামায জামাআত সহকারে আদায় করলে আল্লাহ্ তা‘আলা দয়া ও অনুগ্রহ করে সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করার সাওয়াব দান করবেন। [মিরআতুল মানাজিহ শরহে মিশকাতুল মাসাবিহ্: কৃত- হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রাহ.)]
উপরোক্ত মাসআলা তরজুমান প্রশ্নোত্তর বিভাগে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে।

 মুহাম্মদ আবু কাউসার সিরাজী
বি-বাড়িয়া, চট্টগ্রাম।

 প্রশ্ন: ১.বর্তমানে প্রায় সময় মসজিদে নামায অবস্থায় মোবাইল ফোনে কল আসায় উভয় হাত ব্যবহার করে ফোন বন্ধ করতে নড়াচড়া বেশি করে। এ অবস্থায় নামায শুদ্ধ হবে কিনা? বিস্তারিত দলিলসহ জানানোর অনুরোধ রইল।

 উত্তর: মোবাইল ব্যবহারকারী মুসল্লীদের জন্য কিছু দায়িত্ব রয়েছে- ক. মসজিদে প্রবেশের পূর্বেই মোবাইল বন্ধ করে নিবে, খ. রিংটোন বন্ধ করে নিবে।
মোবাইল বন্ধ না করে শুধু ভাইব্রেশন দিয়ে রাখা ঠিক নয়। কেননা ভাইব্রেশন অবস্থায় কল আসার দরুন যে কম্পন অনুভব হয়, এতে নিজের এবং পার্শ্ববর্তী মুসল্লির নামাযের একাগ্রতায় বিঘœ ঘটে। মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়। ভুলে রিংটোন চালু করেই নামাযে দাঁড়িয়ে গেলে নামায অবস্থায় রিংটোন বন্ধ করার নিয়ম-
সম্ভব হলে মোবাইল পকেটে রেখেই নির্দিষ্ট বাটন চেপে রিং বন্ধ করে দিবে। পকেট থেকে বের করার প্রয়োজন হলে এক হাতেই বের করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব না দেখে দ্রুত বন্ধ করে পকেটে রেখে দেবে। কারণ নামাযে বিশেষ প্রয়োজনে কেবল এক হাত ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। যেমন- টুপি উঠানো, জামার হাত নামানো, সাজদার স্থানের কঙ্কর সরানো, শরীরের কোন স্থান চুলকানো ইত্যাদি কাজে এক হাত ব্যবহার করলে নামায ফাসিদ (নষ্ট) হয় না।

মোবাইল দেখে একহাত দ্বারা বন্ধ করার হুকুম-
দেখে দেখে এক হাত দিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করা আমলে কাছীরের সাদৃশ্য হওয়ায় তা করা যাবে না। কেননা এ অবস্থায় কেউ তাকে দেখলে বলবে সে নামাযে নেই। আর এতটুকু মনে করাই আমলে কাছীর হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
সুতরাং এমনটি করলে তাকে পুনরায় এ নামায আদায় করতে হবে। আল্লামা আমিন ইবনে আবেদীন শামী হানাফী (রাহ.) বলেন-
التفويض الى راى المصلى فان استكثره فكثير والافقليل- (رد المحتار-٢⁄٣٨٥)
মুসল্লির সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেয়া হবে যদি মুসল্লি আমলে কাছীর মনে করে তাহলে তা আমলে কাছীর, অন্যথায় কম বা আমলে কালিল। [রদ্দে মুহতার: ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৩৮৫]
আর আমলে কাছীর দ্বারা নামায ভঙ্গ হয়ে যায়। আমলে কালিল দ্বারা নামায ভঙ্গ হয় না।
আল্লামা আলা উদ্দীন খাসকপি হানাফী (রাহ.) দুররে মুখতারে উল্লেখ করেন-
اصحها مالا يشك بسببه الناظر من بعيد فى فاعله انه ليس فيها وان شك فيها ام لافقليل- (الدر المختار)
অর্থাৎ- বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী দূর থেকে যদি কেউ কোন মুসল্লির কর্ম দেখে নিশ্চিত মনে করে যে সে নামাযে নেই তাহলে সেটা আমলে কাছীর। আর যদি তার নামায অবস্থান নিয়ে সন্দেহ হয় তাহলে সেটা কম বলে গণ্য হবে।
[আদ্দুররুল মোখতার: ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৩৮৫]

দুই হাত দ্বারা মোবাইল বন্ধ করার হুকুম-
নামাযে মোবাইল বন্ধ করার জন্য এক সাথে দুই হাত ব্যবহার করা যাবে না। যদি একসাথে দুই হাত ব্যবহার করে তবে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ এটা আমলে কাছীরের অন্তর্ভুক্ত। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
القول الثانى ان ما يعمل عادة باليدين كثير وان عمل بواحدة كالتعميم وشد السر اويل وما عمل بواحدة قليل وان عمل بهما كحل السر اويل ولبس القلنسوة ونزعها الا اذا تكرر ثلاثا متواليه- (رد المحتار-৩৮৫⁄২)
অর্থাৎ- সাধারণত যে সমস্ত কাজ দুই হাত দ্বারা করা হয় তা যদিও এক হাত দিয়ে করে সেগুলো আমরে কাছীর। যেমন মাথায় পাগড়ী বাঁধা ও পায়জামা পরিধান করা। আর যেসব কাজ সাধারণত: এক হাতে করা হয় তা আমলে কলিল যদিও তা দু’হাত দিয়ে করা হয়। যেমন পায়জামা খোলা ও টুপি পরিধান করা ও মাথা হতে নিয়ে ফেলা। কিন্তু একই রোকনে যদি এক হাতে একবারের বেশি লাগাতার তিনবার করে, তাহলে তাও আমলে কাছীর হবে।
[রদ্দে মুহতার: ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৮৫]

নামাযে একাগ্রতার গুরুত্ব
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন- قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ -الَّذِيْنَ هُمْ فِى صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ(المؤمنون: ১، ২) অর্থাৎ- সফলকাম ওই সকল মু’মিন যারা তাদের নামাযে অধিক বিনয়ী। [সূরা মু’মিন: আয়া-১,২]
তাই কোন নামাযি ব্যক্তির পেশাব পায়খানার বেগ হওয়ার দরুন একাগ্রতা ও খুশু-খুজুর সমস্যা হলে তার নামায ছেড়ে দেয়ার অনুমতি রয়েছে। ফাতওয়ার কিতাবসমূহে এ ব্যাপারে নামায ছেড়ে দেয়া উত্তম বলা হয়েছে। আবার কেউ কেউ ওয়াজিবও বলেছেন। নামাযে মোবাইল বেজে উঠলে শুধু ব্যবহারকারীর নামাযেই বিঘœ ঘটে না বরং আশপাশের মুসল্লিদেরও বিঘœ ঘটে। তাই এক হাতে মোবাইল বন্ধ করা করা সম্ভব না হলে দুই হাত দ্বারা হলেও বন্ধ করা উচিত। যেমন রদ্দে মুহতার গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে- وكذا كل مؤذ ولو بلسانه- (الدر المحتار-٢⁄٥٣٤) অর্থাৎ- প্রত্যেক কষ্টদায়ক বস্তু যদিও তা মুখ দ্বারা হয় তা নিষিদ্ধ। [দুররে মুখতার: ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৩৫]
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- قال النبى صلى الله عليه وسلم المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده- অর্থাৎ- প্রকৃত মুসলিম ঐ ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ। [বুখারী শরীফ: ৬১১৯]
আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন আমার দ্বারা কোনো মুসলিম ও মুসল্লি ভাইয়ের ক্ষতি না হয়। আর একাধারে রিং বাজার কারণে নামায শেষে বাকি মুসল্লিদের যে অবস্থা সৃষ্টি হয় তা আগে-বাগে সতর্ক থাকা জরুরি। সুতরাং বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতম স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে একাধারে মোবাইল বেজে উঠলে দুই হাত দ্বারা মোবাইল বন্ধ করবেন। আর দুই হাত দ্বারা মোবাইল বন্ধ করলে যেহেতু নামায ভঙ্গ হয়ে যায় তাই নতুন করে নামায পুনরায় আদায় করবে। বস্তুত: নামায শুরু করার আগে মোবাইল বন্ধ করে অথবা রিংটোন বন্ধ করে নামায আরম্ভ করবে। এটাই নিরাপদ।

 মুহাম্মদ খান বাহাদুর বাবলু
বায়েজিদ, চট্টগ্রাম।

প্রশ্ন: ইদানিং কিছু ইমামকে দেখা যায় নামাযে পাগড়ী না বেঁধে রুমালকে মহিলার ঘোমটার ন্যায় দুই পাশে ঝুলিয়ে দেয়। রুকু সাজদার সময় টেনে টেনে ঠিক করতে দেখা যায়। ইমামের এহেন কাজ ইসলামী শরীয়তে কতটুকু বৈধ বা অবৈধ এ ব্যাপারে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর: পাগড়ী পরিধান করা সুন্নাতে মুস্তাহাব্বা। পাগড়ী পরিধান করার ফজিলত হাদীসে পাক দ্বারা সাব্যস্ত। পাগড়ী বেঁধে নামায আদায়ের সাওয়াব পাগড়ী ছাড়া নামায আদায়ের চেয়ে ২৫ থেকে ৭০ গুণ বেশি। যা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ ছাড়াও হাদীসে পাকে উল্লেখ রয়েছে- عليكم بالعمائم فانّها سيماء الملائكة-
অর্থাৎ- তোমরা পাগড়ী বাঁধবে, কেননা এটা ফেরেশতাদের প্রতীক। [শুয়াবুল ঈমান: হাদীস নম্বর- ৬২৬২, কৃত: ইমাম বায়হাকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি]
অপর হাদীসে পাকে রয়েছে ‘তোমরা পাগড়ী পরিধান কর, নিশ্চয় পাগড়ী ইসলামের নিদর্শন এবং তা মুসলমান ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্যকারী। [তিরমিযি শরীফ: ১ম খন্ড, ৩০৮ পৃষ্ঠা]
নামাযে ‘সদল’ বা কাপড় তথা চাদর বা রুমাল ঝুলিয়ে দেয়া মাকরূহে তাহরীমি। যেমন মাথা বা কাঁধের উপর চাদর, রুমাল, শাল ইত্যাদি এমনভাবে রাখা যে, উভয় প্রান্ত সরাসরি ঝুলতে থাকে। তবে যদি এক প্রান্ত এক কাধেঁর উপর রাখা হয় এবং অপর প্রান্ত ঝুলতে থাকে তাহলে অসুবিধা নেই। আজকাল দেখা যায়, কোন কোন নামাযী ও ইমাম মাথা বা কাধেঁর উপর এমনভাবে রুমাল ঝুলিয়ে রাখে যা রুকু অবস্থায় গলা, মাথা ও কাধেঁর উভয় প্রান্তে সরাসরি ঝুলে থাকে। এভাবে নামায পড়া মাকরূহ। এটা পাগড়ী বা আমামা নয় বরং নামাযের প্রতি অবহেলা। তাছাড়া নামায অবস্থায় বার বার নড়াছড়া করা বা নামাযে আস্তিন, রুমাল বা চাদর বারবার উপরের দিকে এমনভাবে কুড়িয়ে নেয়া যাতে হাতের কুনুইগুলো প্রকাশ পায় তখনও নামায মাকরূহ হবে। এটা নামাযের প্রতি চরম অবহেলা ও অবজ্ঞা। নামাযের প্রতি অবশ্যই যত্মবান ও আন্তরিক হতে হবে নতুবা অবশ্যই গুনাহগার হবে। এ বিষয়ে মাসিক তরজুমান প্রশ্নোত্তর বিভাগে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। তা দেখার অনুরোধ রইল। [ফাতহুল ক্বদীর, বাহরুর রায়িক এবং ফতোয়ায়ে রযভীয়া: ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৬ ও ৪২৩]

 গাজী মুহাম্মদ আলী নেওয়াজ
কাটিরহাট, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

 প্রশ্ন: কোন মিডিয়া এবং কোন কোন মহল লায়লাতুল মিরাজ, লায়লাতুল বরাতে ও কদরে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা নিয়ে কটাক্ষ করে এবং উক্ত বরকতময় রজনীতে এশার নামাযের পর নফল নামায জামাতে পড়াকে কেন্দ্র করে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ রইল।

উত্তর: হাদীস গ্রন্থসমূহের মধ্যে অন্যতম গ্রন্থ ‘মেশকাতুল মাসাবিহ, জামে তিরমিজি, সুনানে ইবনে মাজাহ্ ও মুসনাদে আহমদসহ অনেক হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হাদীস সমূহে প্রিয় নবী সরকারে দু’আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম শবে মিরাজ, শবে কদর ও শবে বরাত তথা বরাত রজনীর অসংখ্য ফজিলত ও গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন, তদ্রুপ তাফসীর গ্রন্থসমূহে যেমন তাফসীরে রুহুল বয়ান ও তাফসীরে ইবনে কাছিরসহ অসংখ্য তাফসীরের কিতাবে এবং গুনিয়াতুত তালেবীন ও নুজহাতুল মাজালেস সহ ইলমে তাসাউফের কিতাব সমূহে পবিত্র রবাত ও মিরাজ রজনীতে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী, দান-সদকা, খায়রাত, ক্বোরআনে পাকের তেলাওয়াত, আপনজন ও অলি-বুযুর্গের কবর/মাজার শরীফ যিয়ারত, গরীব-অসহায়দের প্রতি উত্তম খাবার পরিবেশন, দরূদ-সালাম, মিলাদ-কেয়াম, দোয়া-মুনাজাতের মাধ্যমে শবে বরাত অতিবাহিত করার এবং পরের দিন (যাদের পক্ষে সম্ভব) নফল রোযা পালন করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। সুতরাং এসব ইবাদত-বন্দেগী নিঃসন্দেহে পূণ্যময়, বরকত মন্ডিত ও সওয়াব জনক। যারা পবিত্রতম বরাত রজনীর বিশেষ ইবাদতসমূহ থেকে বঞ্চিত তারা অনেক কল্যাণ, ফজিলত ও নেকী-সওয়াব থেকে বঞ্চিত। যারা শবে মেরাজ, শবে বরাত, শবে কদর ইত্যাদিতে রাত জেগে নফল ইবাদত-বন্দেগী ও কবর জিয়ারতকে অস্বীকার করে মূলত তারা হাদীসে রাসূলকে অস্বীকার করে। হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নিজেই এ মহান রজনীতে বিশেষ ইবাদত, জান্নাতুল বকিতে (মদিনার কবরস্থান) জিয়ারত ও জিকির-আজকার, দোয়া-মুনাজাত এর মাধ্যমে অতিবাহিত করেছেন মর্মে মেশকাত শরীফ, সুনানু ইবনে মাজাহ্, জামে তিরমিজি ও মুসনদে আহমদে হাদীস বর্ণিত আছে।
উল্লেখ্য যে, মি’রাজ, বরাত-কদরের মত গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতমন্ডিত রাতসমূহের বিশেষ নফল নামায এশার নামাযের জামাতের পর মসজিদের ইমাম/খতিব ও মুসল্লিগণ ইচ্ছা করলে জামাত সহকারেও আদায় করতে পারে আর অন্যান্য সময়ের নফল নামাযের ন্যায় একা একা আদায়ও করতে পারে। এতে কোন অসুবিধা নাই। উভয় পন্থায় নফল নামায আদায়ের কথা বর্ণিত রয়েছে। অতএব এটাকে কেন্দ্র করে অহেতুক ঝগড়া বিবাদ ও তর্ক করা সমীচিন নয়। হক্কানী ওলামায়ে কেরামের মধ্যে পীরানে পীর হযরত গাউসে পাক শেখ সৈয়্যদ আবদুল কাদের জিলানী কুদ্দিসা সিররুহুল আজিজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর গুনিয়াতুত তালেবীনে, প্রখ্যাত মুফাসসীর আল্লামা শেখ ইসমাঈল হক্কী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাফসীরে ‘রুহুল বয়ানে’ সুরা কদরের তাফসীরে, ইমামুদ দুনিয়া ফিল হাদীস হযরত ইমাম বোখারী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর সহি বোখারীতে এবং ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর সহি মুসলিম শরীফে আরো অনেক মনীষী ও ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বিশেষ রজনী ও সময়ের নফল নামায আলাদা আজান ও ইকামত ছাড়া জামা’আত সহকারে আদায় করা জায়েজ ও উত্তম বলে ফায়সালা প্রদান করেছেন।
ইমামে আহলে সুন্নাত গাজীয়ে দ্বীন ও মিল্লাত আশেকে রাসূল আল্লামা গাজী সৈয়্যদ মুহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর ফতোয়ায়ে আজিজীতে এ সব বিশেষ রজনীতে বিশেষ নফল নামাযসমূহ জামাআত সহকারে আদায়ের প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। ইমাম ও ফকিহগণের মধ্যে ইমাম ইবনে আবেদীন শামীসহ কেউ কেউ এসব নফল নামায একাকী পড়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং তর্ক করার কোন অবকাশ নেই বরং কিছু নফল নামায জামাআত সহকারে আর কিছু একাকী পড়লে উভয় মতের উপর আমল হয়ে যায়। অথবা যার যে রকম ইচ্ছা জামাআত সহকারে বা একাকী আদায় করতে পারে। এ বিষয়ে মাসিক তরজুমানে ইতোপূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ্
সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম।

 প্রশ্ন: সম্প্রতি একজন মুসলিম ব্যক্তি আযান শুনতে বিরক্তি প্রকাশ করে থানায় জিডি করেছেন। তার এই হীন মনোভাবের শরয়ী বিধান কি? আযান কখন কিভাবে প্রচলন হয়? আযানের ফজিলত বর্ণনা করার নিবেদন রইল।

 উত্তর: একজন মুসলমানের কাছে আযান শুনতে ভালো লাগবে এটাই স্বাভাবিক। কেউ যদি মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়ে আযান শুনতে বিরক্ত বোধ করে, এব্যপারে থানায় জিডি করে মনে করতে হবে সে শয়তান, কপাল মন্দ ও বদনসিব ছাড়া আর কিছুই নয়। সর্বোপরি এটা বেঈমানীর নামান্তর। কারণ আযান শুনে শয়তান পালায়ন করে, যা হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে। কুরআন ও হাদিস শরিফে আযানের অসংখ্য ফজিলত উল্লেখ রয়েছে।
আযানের প্রচলন হিজরতের প্রথম বছর শুরু হয়েছে। আযান উম্মতে মুহাম্মদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য, ইসলামের নিদর্শন ও আদর্শ। এতে তৌহিদ, রিসালত ও আমলের উল্লেখ রয়েছে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য পাঁচবার আযান দেয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আযানের শব্দগুলো মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা এবং মুখে জবাব দেয়া নির্ভরযোগ্য অভিমত অনুযায়ী মুস্তাহাব। আযান শুনে মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায আদায় করা সক্ষম পুরুষের জন্য ওয়াজিব।
আযানের প্রচলন সম্পর্কে হাদীস শরীফের বিভিন্ন কিতাবে লম্বা একটি হাদীসে পাক পরিলক্ষিত হয়। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে যায়িদ বিন আবদে রাব্বিহী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন। স্বপ্নে আমার কাছে একজন লোক (ফেরেশতা) উপস্থিত হল, যে নিজের হাতে একটা ঘন্টা ধারণ করছিল। আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর বান্দা, এ ঘন্টাটি তুমি বিক্রয় করবে কি? সে বলল, এটা দিয়ে তুমি কি করবে? আমি বললাম, এর দ্বারা আমরা নামাজের জন্য আহ্বান করব। সে বলল, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম পদ্ধতি বলে দিব না? আমি বললাম হ্যাঁ, হযরত আব্দুল্লাহ্ বলেন, তখন সে আল্লাহু আকবর থেকে শুরু করে আযানের শেষ পর্যন্ত সবগুলো শব্দ বলল, এভাবে একামতেরও। যখন আমি ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম এবং রাতে স্বপ্নে যা দেখেছি তা তাঁকে বললাম, তখন তিনি বললেন, ইনশা-আল্লাহ্ এটি সত্য স্বপ্ন। যাও! বেলালের নিকট গিয়ে তাকে বলে দাও যা তুমি দেখেছ সে শব্দাবলী দ্বারা যেন সে আযান দেয়, কেননা সে তোমার অপেক্ষা উচ্চ কণ্ঠস্বরের অধিকারী। সুতরাং আমি হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর নিকট গিয়ে তাকে উক্ত শব্দাবলী বললাম। অতঃপর তিনি (হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) তা দ্বারা আযান দিলেন। আবদুল্লাহ্ বলেন, হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ঘর থেকে এ আযান শুনলেন আর নিজের চাদর টানতে টানতে বের হয়ে আসলেন এবং বলতে লাগলেন- والذى بعثك بالحق يارسول الله لقد رأيت مثل ما اُرى فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم فلله الحمد-
অর্থাৎ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ করে বলছি, আমিও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি, যা তাকে দেখানো হয়েছে, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য।
[আবূ দাউদ, দারেমী, ইবনে মাজাহ্ ও তিরমিযি শরীফ এবং মিশকাত, পৃ. ৬৪]
আযান অধ্যায় উক্ত হাদীসে فقم سمع بلال فالق عليه ما رأيتَ অর্থাৎ- হযরত আবদুল্লাহ্ বিন যায়িদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি হযরত বেলালের সাথে যাও তুমি স্বপ্নে আযানের যে শব্দাবলী (বাক্য সমূহ) দেখেছ তা তাঁকে শিখিয়ে দাও। এটাই আযানের মূল বিধান। যেহেতু সরকারে দু’আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এভাবে নির্দেশ প্রদান না করলে শুধু সাহাবায়ে রাসূলের স্বপ্নের মাধ্যমে আযানের বিধান প্রচলিত হত না। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর হুকুম বা আযান প্রদানের আদেশ মূল দলিল। তদৃপরি মিরাজ রজনীতেও রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আযানের বাক্যগুলো শুনেছেন মর্মে বর্ণনা পাওয়া যায়।
[আশিয়াতুল লোমআত- কৃত: শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি,আযান অধ্যায়]
হাদীসে পাকে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن جابر قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان الشيطان اذا سمع النداء بالصلاة ذهب حتى يكون مكان الروحاء وقال الراوى من المد ينة الى الروحاء ستة وثلاثون ميلا-
অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। নিশ্চয় শয়তান যখন নামাযের আযান শুনে তখন সে পালাতে পালাতে রাওহা নামক জায়গায় পৌঁছে। রাবী বলেন রাওহা হলো মদিনা শরীফ হতে ৩৬ মাইল দূরে। [মুসলিম শরীফ]
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসা ইরশাদ করেছেন, মোয়াযযিনের আওয়াজ যত দূর পর্যন্ত পৌঁছে (আল্লাহর পক্ষ হতে) তার জন্য সে পরিমাণ দীর্ঘ মাগফিরাতের ফায়সালা হবে। যেসব বস্তু পর্যন্ত তার আওয়াজ পৌছবে প্রাণী হোক বা কোনো জড় পদার্থ সব কিছু কেয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষী দিবে। [সুনানে আবু দাউদ – ১ম খন্ড/৭৬]
অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি আযানের ফজিলত এবং পুরস্কার সম্পর্কে জানতে তাহলে আযান দেওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে লটারি করতে। অর্থাৎ সবাই আযান দেওয়ার জন্য এত আগ্রহী হতে, মিটানোর জন্য লটারি করার প্রয়োজন দেখা দিত। [সহীহ্ বুখারী শরীফ: ১খন্ড /৮৬]
অপর হাদীস পাকে উল্লেখ রয়েছে, যে ব্যক্তি সাত বছর যাবৎ কেবল সাওয়াবের উদ্দেশ্যে আযান দিবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তিনামা লিপিবদ্ধ করা হয়। [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, আবু দাউদ ও মিশকাত শরীফ, পৃ. ৬৫পৃ.]
তাছাড়া যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে আযান দেন আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। এভাবে আযানের ফজিলত ও মরতাবা হাদীসে পাকে আরো অনেক বর্ণিত আছে।

দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা  একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে
 প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তরদাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা:
প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।

 

Share:

Leave Your Comment