গরীবের সহায় খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী

গরীবের সহায় খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী

হাফেজ মুহাম্মদ আনিসুজ্জমান

আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দার প্রতি অতিশয় দয়ালু। তাঁর দয়া তিনি বিভিন্ন রূপে প্রকাশ করেন। তিনি পরম দয়ালু, অতিশয় দয়ায় তিনি নিজ সৃষ্টিকে লালন-পালন করেন। পিতা-মাতার অন্তরে তিনিই দয়ার উম্মেষ ঘটান, যার ফলে পরম মমতায় সন্তানের লালন-পালন করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা দয়া করে তাঁর বান্দার মধ্যে বিশ্বাসবোধের সঞ্চার করেন, যাতে বান্দা আখিরাতের মুক্তির বিষয় নিশ্চিত করে জান্নাতী হয়। তিনি রাব্বুল আলামীন বলেই তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ তথা নিখিল সৃষ্টির মূর্ত করুণারূপে প্রেরণ করেন। তাই তাঁর সৃষ্টির প্রতি প্রেম-ভালোবাসার দীক্ষা দিতে, মানুষকে প্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত করার জন্য তিনি অসংখ্য অলি, আওতাদ, সুফী-সাধক, পীর বুযুর্গের অবতারণা করেন, যাঁরা সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার অযাচিত করুণার প্রতিচ্ছবি হয়ে আবির্ভূত হন।

পাক-ভারত উপমহাদেশে ইসলামের শাশ্বত শান্তি ও মুক্তির মশাল নিয়ে যে সকল আধ্যাত্মিক মহাপুরুষের আগমন ঘটে, তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব দীপ্ত ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ হলেন গরীব নওয়ায হযরত খাজা মুঈন উদ্দীন চিশ্তী সৈয়দ হাসান সানজারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। তাঁর আসল নাম সৈয়দ হাসান। পিতাও ছিলেন একজন মহান অলি। পেশাগত জীবনে ব্যবসা পরিচালনা করলেও জীবনযাত্রায় তিনি ছিলেন পুরোমাত্রায় একজন দরবেশ ও তাপস প্রবর। তাঁর নাম হযরত খাজা গিয়াস উদ্দীন আহমদ সানজারী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তাঁর গর্ভধারিণী শ্রদ্ধেয়া আম্মাজানও ছিলেন একজন বিদূষী, পূণ্যবর্তী, তাপসী ও কোমলমতি মহিয়সী নারী। তাঁর নাম সায়্যিদা উম্মুল ওয়ারা বিবি মাহ্নূর। মাহ্নূর এর অর্থ চাঁদের আলো, সকলে তাঁকে এ নামেই ডাকত। পিতা-মাতা উভয়কুলে তাঁর বংশধারা মা’রেফাতের সম্রাট শেরে খোদা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সাথে মিলিত হয়েছে বলে তিনি হাসানী-হোসাইনী। অর্থাৎ উভয় ধারায় তিনি নবী বংশোদ্ভুত আলে রাসূল। মধ্য এশিয়ার সিস্তান প্রদেশের চিশত শহরের উপকন্ঠে সানজার নামক গ্রামে ৫৩৭ হিজরির ১৪ রজব তিনি জন্মগ্রহণ করেন। হাসান নাম হলেও বিশ্ববাসীর কাছে তিনি বিভিন্ন অভিধায় সম্বোধিত ও সমাদৃত। তিনি খাজা মুঈনউদ্দীন নামে সমধিক খ্যাত। কারো মতে এটি তাঁর মা-বাবার রাখা নাম, কারো কারো মতে এটি তাঁর উপাধি। অনেক জীবনীকার বর্ণনা করেছেন, দ্বিতীয়বার হজ্বব্রত পালনকালে খাজা মুঈনউদ্দীন চিশ্তী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হজ্বের কার্য সমাধার পর আল্লাহর রাসূলের দরবারে হাজির হন। ভক্তি মুহাব্বত সহকারে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সালাম আরয করলেন। তখন অবাক বিস্ময়ে শুনতে পেলেন হায়াতুন্নবী রওযায়ে আনওয়ার হতে সুস্পষ্টভাবে সালামের জবাব দিলেন। শুধু তাই নয়, রওযা-অভ্যন্তর হতে বলা হল, ‘‘হে আমার দ্বীনের মুঈন (সাহায্যকারী), তুমি মনে-প্রাণে নিজ কর্তব্যে ব্রতী হও। তুমি হিন্দুস্থান চলে যাও, আমি তোমাকে হিন্দুস্থানের বেলায়তের সালতানাৎ (বাদশাহী) দান করলাম, তোমাকে সুলতানুল হিন্দ বানিয়ে পাঠাচ্ছি।’’ এ ঘটনার পর তিনি একই সঙ্গে দু’টি অভিধায় ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেন। এক. মুঈন উদ্দীন, দুই. সুলতানুল হিন্দ। ‘সানজার’ নামক গ্রামে তাঁর জন্ম হওয়ায় তিনি সানজারী নামেও প্রসিদ্ধ হয়ে যান। এ ছাড়া তার জন্মস্থান চিশতী নামক শহরের অন্তর্গত বলে তাকে ‘চিশ্তী’ নামেও ডাকা হয়। চিশ্তী’ লকবটি তাঁর পরিচিতির সাথে এতটাই ব্যাপকতা পায় যে, চিশ্তী বলতে শুধু তাঁকেই বুঝানো হয়। যার ফলে তাঁর অনুসৃত আধ্যাত্মিক ধারার নামটি ‘চিশ্তিয়া তরিকা’ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে।

হযরত খাজা মুঈন উদ্দীন সায়্যিদ হাসান যে লকব ভারত বর্ষের গুণগ্রাহী কোটি মানুষের মনের মনিকোটায় তাঁর দরদী সত্তার প্রতিভু হয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে। তা হল ‘গরীবের সহায়’। ফার্সিতে যৌগিক এ শব্দটির অর্থ গরীবের দাতা। তাঁর গরীব দরদী ইমেজ আউলিয়ায়ে কেরামের মধ্যে তাঁকে অনন্য স্বকীয়তায় ভাস্বর করে রেখেছে। একেতো তিনি রহমাতুল্লিল আলামীন’র বংশধর, অধিকন্তু তাঁর পিতা-মাতাও ছিলেন কুসুম কোমল অন্তরের অধিকারী।

দীন-দুঃখী, দরিদ্র-দুঃস্থ অনাথ মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে তাঁদের অন্তর ব্যতিত হয়ে উঠত। তাদের সাহায্য খয়রাতে তাঁরা উভয়ে ছিলেন মুক্তহস্ত। তাদের কষ্ট লাঘব না করা পর্যন্ত মনে শান্তি হত না কাজেই মমতাময় পিতা-মাতার সন্তানও যে গরীব-অন্তপ্রাণ হবেন। এটাই তো স্বাভাবিক। অতুলনীয় গরীব প্রীতিই গরীব-নওয়াযের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) চরিত্রের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। শৈশবের একটি ঘটনা তাঁর গরীব-নওয়ায হওয়ার সোনালী ভবিষ্যতের আভাস দেয়। এক ঈদের দিন তিনি বাবার সাথে ঈদের নামায পড়তে ঈদগাহতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় পথের ধারে এক অন্ধ বালককে দেখতে পেলেন, যার পরনে ছিন্ন-ময়লা বসন। দেখে গরীব নওয়াযের অন্তর কেঁদে উঠল। তিনি কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন, পরক্ষণেই বাবাকে কিছু না বলেই নিজের নতুন জামা খুলে তৎক্ষণাৎ অন্ধ গরীব ছেলেটির গায়ে পরিয়ে দিলেন। এরপর পরম আনন্দে আল্লাহর শুকরিয়া করতে করতে ঘরে ফিরে আসলেন। পিতা এ ঘটনায় তাঁকে কিছু তো বলেন নি, বরং সন্তানের এ দয়ার্দ্র চিত্তের পরিচয় পেয়ে যারপর নাই আনন্দ ও গর্বে তাঁর বুক ভরে গেল। প্রিয় নবীর বংশকুল গৌরব গরীব নওয়ায নিজেরও অজান্তে যেন রহমাতুল্লিল আলামীন’র যোগ্য উত্তরসূরির মত তাঁরই অনুসরণ করলেন। তাঁর ঘটনাটি আমাদেরকে রাসূলের করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পালকপুত্র হযরত যায়েদ বিন হারেসা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র প্রতি সেই মমতাবোধের কথা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়।

গরীব নওয়ায শুধু রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র নূরানী আওলাদই নন, রাসূলে আরবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র আখলাকে পয়গম্বরীর তিনি ধারক বাহকও ছিলেন। চরিত্র বৈশিষ্ট্যেও তিনি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র যোগ্য অনুসারী ও প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি ‘নায়েবে মোস্তফা’ নামেও অভিহিত হন। এ ছাড়া নবীজির সরাসরি নির্দেশে এদেশে তাঁর আগমন হয় বলে তিনি ‘‘আতায়ে রাসূল’’ তথা হিন্দুস্থানে নবীর দান তাঁর অন্যতম লকব। মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র আর্বিভাবের পূর্বে আরবের অবস্থা যেমন দুঃসহ ও শোচনীয় ছিল, ঠিক সেই রূপ খাজা গরীব নওয়াযের আগমনপূর্ব ভারতের অবস্থাও করুন ছিল। দ্বীন প্রচারে আল্লাহর নবী যেরূপ দুঃখ-কষ্টের মধ্যে অতিবাহিত করেছেন, তেমনি ভারতবর্ষে দ্বীন’র প্রচার-প্রসারে গরীব নওয়াযকে অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট পোহাতে হয়েছিল। জর্জরিত হতে হয়েছিল নিপীড়নকারী শাসকের রাজ রোষানলে পড়ে। এতদসত্ত্বেও তিনি কারো প্রতি অত্যাচার অবিচার করেননি। কাউকে কটূ কথাও বলেননি। এমনকি কারো প্রতি কখনো অভিশাপ দেননি। তিনি ছিলেন উসওয়ায়ে হাসনার বাস্তব প্রতিবিম্ব। মানুষের প্রতি তাঁর মমতার অন্ত ছিল না। অন্য কারো দুঃখ-কষ্ট তাঁকে বিচলিত করে তুলত। তাঁর কাছ থেকে কেউ রিক্ত হস্তে ফিরে যায় নি। এ কারণেই বুঝি আ’লা হযরতের সহোদর উস্তাযে যমন শাহানশাহে সুখন হযরত হাসান রেযা বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর শানে লিখেছেন।
خواجهء هند وه دربار هے على تيرا
كبھى محروم نهيں ما نگنے والا تيرا-

উচ্চারণ: খাজায়ে হিন্দ উয়হ্ দরবার হ্যায় আ‘লা তেরা
কভী মাহরূম নেহী মাঙ্গনে ওয়ালা তেরা।

অর্থাৎ হে হিন্দুস্থানের সুলতান, আপনার সেই মহান দরবার এমন যে সেখান থেকে আপনার সাহায্য প্রার্থী কেউ বঞ্চিত হয় না। এ দু’টি লাইন গরীব নওয়াযের রওজা শরীফের দরজা (যেটা দক্ষিণ পাশে কদম শরীফের দিকে) দিয়ে প্রবেশকালে ডান দিকে উপরের কোণায় লিখিত আছে এখনও।

আল্লাহর কাছে গরীব নওয়ায রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর কী পরিমাণ আবদার ও মর্যাদা তা অবর্ণনীয়। আর এ শান-মান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েও তিনি তাঁর সাধারণ ভক্ত মুরিদানের কথা এক মুহূর্তের জন্য ভুলেননি। তাঁর জাদ্দে আমজাদ, পবিত্র বংশ লতিকার মুবারক উৎস হুযূর রহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও লা-মকানে আল্লাহ্র একান্ত সান্নিধ্যে পৌঁছেও ভুলতে পারেননি তার অসহায় গরীব উম্মতের কথা। এই গরীব নওয়াযও তো সেই রহমাতুল্লিল আলামীনের বংশজাত নূরানী যোগ্য সন্তান। তাঁর গরীব অন্তপ্রাণ মহানুভব সত্তাকে বিভিন্নভাবে উপলব্ধি করা যায়, যা তাঁর জীবনীকারগণের অনেকেই বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে এদেশেরই প্রথিতযশা লব্ধপ্রতিষ্ঠিত লেখক, ইসলামী সাহিত্যিক জীবনীকার, জ্ঞানতাপস আল্লামা ফজলুর রহমান মুনসীর কিঞ্চিত উদ্ধৃতি এ উপলব্ধিকে আরো উদ্দীপ্ত করবে।

‘‘একবার হজ্জ্বোপলক্ষে তিনি মক্কা গমন করিয়া কাবা গৃহে ইবাদাতে লিপ্ত থাকা অবস্থায় দৈব বাণী শ্রবণ করিলেন- ‘হে মুঈনুদ্দীন! আমি তোমার উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়াছি এবং তোমাকে মাগফিরাত ও উচ্চ মর্যাদা দান করিয়াছি। তুমি আমার নিকট যাহা কিছু প্রার্থনা করিবে আমি তোমাকে তাহাই প্রদান করিব।’ তখন খাজা সাহেব এইরূপ প্রার্থনা করিলেন, ‘‘হে মাবুদ, মুঈনুদ্দীনের মুরীদ এবং তাঁহার মুরীদগণের মুরীদগণের মুরীদ এইরূপে কিয়ামত পর্যন্ত যত লোক আমার সিলসিলায় মুরীদ হইতে থাকিবে এবং তাহাদের পীরের শাজরা আমার সহিত মিলিত হইবে তাহাদের প্রত্যেকের জন্য আমি তোমার নিকট মাগফিরাত কামনা করিতেছি।’’ [সূত্র: হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তী (রহ.) পৃষ্ঠা ৪৫-৪৬]

তাঁর গরীব নওয়ায সুলভ পরদুঃখ কাতরতা যে কারো হৃদয় গভীর রেখাপাত করবে। এমন একটি ঘটনা হল একবার একজন গরীব কৃষক খাজা গরীব নওয়াযের দরবারে এসে আরয করলেন, ‘‘হুযূর, স্থানীয় প্রশাসক আমাকে আমার জমির উৎপন্ন ফসল ভোগ করতে নিষেধ করে। সে আরও বলে, শাহী ফরমান না আসা পর্যন্ত এ অবস্থা জারী থাকবে। কিন্তু আমার এ জমি ছাড়া সংসার যাত্রা নির্বাহের আর কোন সম্বল নেই। আর অনেক দিন যাবৎ আমি অর্ধাহারে, অনাহারে কাটাচ্ছি। নিরূপায় হয়ে আপনার শরণাপন্ন হয়েছি এ আশায় যে, সুলতানের নিকট আপনার সুপারিশ যদি কিছুটা উপকার হয়। তার কথায় গরীব নওয়াযের অন্তরে ভীষণ সহানুভূতি জাগল। তখন দিল্লীর সুলতান ছিলেন ইলতুৎমিশ। গরীব নওয়ায স্থির করলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি স্বয়ং সুলতানের সাক্ষাৎ করবেন। সুলতান ইলতুৎমিশ ছিলেন দিল্লীতে গরীব নওয়াযের প্রধান খলীফা হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীর ভক্ত মুরীদ। তিনিও তখন দিল্লীতে অবস্থান করছিলেন। খাজা গরীব নওয়ায এক পর্যায়ে গরীব কৃষকটিকে সঙ্গে নিয়েই দিল্লীর উদ্দেশে যাত্রা করলেন। আর তাঁর এ যাত্রার সংবাদ লোক মুখে খাজা কুতুবের কানে গরীব নওয়াযের দিল্লী যাবার আগেই পৌঁছে যায়। খাজা কুতুব বিনা সংবাদে হঠাৎ পীরের দিল্লী আসার সংবাদে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। যা-ই হোক, তিনি স্বীয় পীর মুর্শিদকে সাদর অভ্যর্থনার পর একান্তে আগমনের কারণ জানতে চাইলেন। গরীব নওয়ায গরীব কৃষকের ব্যাপারটি তাঁকে খুলে বললেন এবং কারণও জানালেন। তখন অবাক বিস্ময়ে কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি আরয করলেন, ‘‘হুযূর, এ ক্ষুদ্র ব্যাপারে নিজে কষ্ট স্বীকার করে এতদূর পর্যন্ত আসলেন?’’ তখন গরীব নওয়ায রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন, তুমি কি জান না, হে কুতুবুদ্দনি? দুঃখ বরণের মধ্যেই মুমিন বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে? এ বেচারা বিপদে অসহায় বোধ করেই আমার কাছে ছুটে এসেছে। মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-আপদে সাহায্য করার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত। বিপন্ন বান্দার সাহায্যের মধ্যে আমি তাঁরই সন্তুষ্টির লক্ষ্যে বের হয়েছি।’’ তখন হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী পীর মুর্শিদের নিকট আরয করলেন, ‘‘হুযূর, ঠিক আছে, এই গরীব লোকটির প্রতি সদয় হয়ে না হয় আপনি কষ্ট করলেন, তবে বাদশার কাছে আপনাকে যেতে হবে না। লোকটির এ কাজ আপনার হয়ে আমিই সমাধা করে দেব।’’ পরে খাজা কুতুব বাদশাহর নিকট গিয়ে গরীব কৃষকের বিষয়টির সুরাহা করে দিলেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী রয়েছে যে, যতক্ষণ আল্লাহর বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ্ও তাঁর সেই বান্দার সাহায্য করতে থাকেন। আলে রাসূল গরীব নওয়ায তাই প্রতি নিয়ত আল্লাহর বান্দার, বিশেষ করে গরীব দুঃখী, দুস্থ,অনাথের সাহায্য করে যান প্রতি নিয়ত। তাই তার অনুরক্তগণের ফরিয়াদ-
معين الدين حسن عالم پناه هے
بسوئے ما غريبا يك نگاه هے-

উচ্চারণ: মুঈনুদ্দীন হাসান আলম পানাহ্ হ্যায়
বসুয়ে মা গরীবাঁ ইক নিগাহ্ হ্যায়।
অর্থাৎ মুঈনুদ্দীন হাসান, হে জগত ত্রাতা, গরীব আমাদের প্রতিও একটু দৃষ্টি দিন।

লেখক: সিনিয়র আরবী প্রভাষক, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।

Share:

Leave Your Comment