এ চাঁদ এ মাস : জমাদিউস্ সানী

এ চাঁদ এ মাস : জমাদিউস্ সানী

হিজরী বর্ষের ষষ্ঠ মাস ‘জমাদিউস্সানী’ সমাগত। এ মাসের প্রকৃত নাম জুমাদাল উখরা। আরবীতে জুমাদা মানে স্থির ও জমাট বাঁধা পাথর। যখন এ মাসের নামকরণ করা হচ্ছিল তখন সেখানে পানি বরফ হয়ে জমাট বাঁধার শেষ মাস ছিল। এ কারণে এর নাম জুমাদাল উখরা রাখা হয়েছে। হিজরীবর্ষেও এ নামটি বহাল রাখা হয়েছে। বর্ষপঞ্জীর পাতায় অর্ধাংশ উপনীত হয়ে জীবন ও মৃত্যু, ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে সচেতন মানুষ মাত্র অতীতের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে মৃত্যু ও পরকালের জন্য বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে রসদ সংগ্রহের কাজে মনোযোগ নিবন্ধ করবেন। মনে রাখা উচিত, সময় কারো জন্যই বসে থাকেনা। সময় নদীর স্রোতের মতই চলছে ফুরিয়ে যাওয়ার জন্য। এ সময় যারা হেলায় অতিবাহিত করবে, তাদের জন্য আফসোস ছাড়া কোন উপায় থাকেনা।

এ মাসের নফল ইবাদত
প্রথম তারিখের ১ম রাতে ৪ রাকাত নফল নামায অতি ফযীলতপূর্ণ। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১৩ বার সূরা ইখলাস পড়বে, এ নামায সম্পন্নকারীর আমলনামায় ১ লক্ষ নেকী লিপিবদ্ধ হয় ও ১লক্ষ গুনাহ্ মুছে ফেলা হয়।
১ম তারিখের ১ম সন্ধ্যায় বা’দ মাগরীব ১২ রাক’আত নামায হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আদায় করতেন বলে বর্ণিত আছে। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা ইখলাস এগার বার এবং তিন বার আয়াতুল কুরসী দ্বারা এ নামায আদায় করতেন।
১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে দুই রাকাত বিশিষ্ট ১২ রাকাত নামায আদায় করতে পারেন। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে পনের বার সূরা ইখলাস পাঠ করবেন। এ নামায আদায়কারীর সগীরা গুনাহ সমূহ মার্জনা করা হবে এবং আর্থিক স্বচ্ছলতা নসীব হবে।
এ মাসের ২০ তারিখের পর হতে অবশিষ্ট দিনগুলি নফল রোজা রেখে প্রতি রাতে ২০ রাকাত করে নামায আদায় করা সাহাবায়ে কেরামের আমলের অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা মাহে রজবকে স্বাগত জানানোর নিয়্যতে এ আমল করতেন। নামাযের পর নিম্নের দো‘আটি ১০০ বার পাঠ করলে পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনের সকল প্রকার অশান্তি হতে মুক্ত থাকবে।
এ ছাড়া দো‘আটি প্রত্যহ ফজর ও মাগরীব নামাযের পর ১০০ বার পাঠ করলে দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনের সকল প্রকার অশান্তি হতে মুক্ত থাকবে, ‘হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ূমু ওয়া হুয়াল গনিইয়ুল মাতীন।’
এ মাসে চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ হওয়া সাফল্য আসার পূর্বাভাস। অর্থাৎ ফসল বেশি জন্মাবে, দ্রব্যমূল্য কমবে, নি’মাতের ছড়াছড়ি হবে।

এ মাসের স্মরণীয় ঘটনাবলী
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের খিদমতে হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম সর্ব প্রথম আগমন করেন এ মাসের ১ তারিখ। এ মাসের ৬ তারিখে হযরত ওমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলীফা নির্বাচিত হন। এ মাসের ১৪ তারিখ হযরত মূসা ইবনে জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং ২০ তারিখ হযরত ফাতিমাতুয্ যাহ্রা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র জন্ম। ৮০ হিজরির এ মাসে হযরত ইমাম আবূ হানীফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র বরকতময় জন্ম হয়।
৪ হিজরির এ মাসে প্রসিদ্ধ ‘ইফক’-এ ঘটনা সংঘটিত হয়। যার উপর ভিত্তি করে হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বার পবিত্রতা ও প্রশংসায় পবিত্র ক্বোরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে এবং অপবাদের শাস্তির বিধানও এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছে। তায়াম্মুমের বিধানও এ ঘটনার সময় এসেছিল।
এ মাসের ১৫ তারিখ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা কা’বাহ্-ই মু’আয্যমাকে নতুনভাবে নির্মাণ করে সেটাকে ওই কাঠামোতে নিয়ে আসেন যা সাইয়্যিদুনা হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ্ আলায়হিস্ সালাম’র পবিত্র যুগে ছিল।
৪৮ হিজরিতে এ মাসেই হযরত আমীর-ই মু’আবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ডাক ব্যবস্থার প্রবর্তণ করেন।
১৭ হিজরিতে এ মাসেই মসজিদ-ই নববী শরীফকে প্রথমবার প্রশস্ত করা হয়।

এ মাসে যাঁরা ওফাত লাভ করেন
১ জমাদিউস্ সানী: হযরত আবু আহমদ আবদাল চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। (৭৫৫ হিজরী)
৫ জমাদিউস্ সানী: আল্লামা জালালুদ্দীন রূমী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। (৬৭২ হিজরী) মসনবী শরীফের প্রণেতা।
১৪ জমাদিউস্ সানী: ইমাম গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (৫০৫ হি.)।
২২ জমাদিউস্ সানী : হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু। (হিজরী ১৩ সাল)
২৫ জমাদিউস্ সানী: হযরত খাজা বাকী বিল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। (১০১২ হিজরী)

আগামী চাঁদ : মাহে রজব
সম্মানিত মাস সমূহের অন্যতম এবং ‘আল্লাহর মাস’ রূপে আখ্যায়িত রজব মাস। আল্লাহর রহমত, করুণা ও দয়া লাভের এ মাসে মহিমান্বিত লায়লাতুল মি’রাজ, লায়লাতুর রাগায়িব ও লাইলাতুল ইস্তিফতাহ্, রাতে ইবাদত বন্দেগী করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের মহা সুযোগ আনয়ন করে। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র বর্ণনানুযায়ী রজব মাসের চাঁদ দেখে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মোবারক হাতদ্বয় তুলে দো‘আ করতেন –

‘আল্লাহুম্মা বারিক্লানা ফী রজবা ওয়া শা’বানা ওয়া বাল্লিগনা রমদ্বান’।
লায়লাতুর রাগায়িব (এ মাসের সর্ব প্রথম শুক্রবারের পূর্ব রাত) দুই রাকাত করে ১২ রাকাত নামায আদায় করতে ভুলবেন না। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে তিনবার সূরা ক্বদর (ইন্না আনযালনাহু ফী লায়লাতিল্ ক্বদ্র) ও ১২ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবেন। নামায শেষ করে ৭০ বার দরূদ শরীফ পড়ে সাজদায় পতিত হয়ে ‘সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুনা ওয়া রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ’ এ দোয়াটি ৭০ বার পড়ে মাথা উঠিয়ে আরো ৭০ বার দো‘আটি পড়ে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করবেন।
এ মাসের ১৫ তারিখ রাত (লায়লাতুল ইস্তিফতাহ) নফল নামায পড়ে কাটানো আল্লাহর করুণা লাভের কারণ হবে। বিশেষতঃ সূরা ফাতিহার সাথে তিন বার সূরা ইখলাস দ্বারা দুই রাকাত বিশিষ্ট ৭০ রাকাত নামায আদায়ে অশেষ সাওয়াব নিহিত রয়েছে।
এ মাসের ২৭ তারিখ রাতে (লাইলাতুল মি’রাজ) ইবাদতে অতিবাহিত করার জন্য বিশেষ ভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।
বিশেষতঃ যে ব্যক্তি ১২ রাকাত নফল নামায আদায় করে অতঃপর দো‘আয়ে ইস্তিগফার (আস্তাগফিরুল্লাহ) ১০০ বার, কালেমায়ে তামজীদ ১০০ বার ও ১০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করবে, তার দোয়া কবূল হবে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ রাতে ইবাদত করে পরের দিন রোজা রাখে তাঁর আমল নামায় ১০০ বছর ইবাদতের সাওয়াব লিখা হবে।

Share:

Leave Your Comment