কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন- মাওলানা মুহাম্মদ সোলাইমান আনসারী

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন- মাওলানা মুহাম্মদ সোলাইমান আনসারী

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার আগমনের দিন কেবল মুসলমানদের জন্য নয়,বরংসৃষ্টিজগতের সকলের জন্য আনন্দের ও রহমতের দিন। সেহেতু সারা বিশ্বের মুসলিমগণ অত্যন্ত ভক্তি ও মর্যদার সাথে রবিউল আউয়াল মাসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করে থাকেন। কিন্তু এক দল আলেম এটিকে অবৈধ ও বিদয়াতে সাইয়্যিাহ (মন্দ বিদআত) বলে প্রচার করছে। অথচ এটি একটি শরিয়ত সম্মত পুণ্যময় আমল, যা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। ঈদে মিলাদুন্নবি উদ্যাপন করা বৈধ হবার বিষয়টি পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে প্রমাণ করার প্রয়াস পেয়েছি।

১. ঈদে মিলাদুন্নবী’র পরিচিতি
ক.শাব্দিক পরিচয়: ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ শব্দটি যৌগিক শব্দ, যা তিনটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত । এক. ঈদ দুই. মিলাদ তিন. নবী। প্রথমত ঈদ শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ উৎসব, আনন্দ, খুশি। বিশ্ববিখ্যাত অভিধান প্রণেতা ইবনু মনযুর বলেন- العيد كل يوم فيه جمع অর্থ- ‘সমবেত হবার প্রত্যেক দিনকে ঈদ’ বলা হয়।
মুফতি আমীমূল ইহসান আলাইহির রাহমাহ বলেন-العيد كل يوم فيه جمع او تذكار لذي فضل অর্থ- ‘কোন মর্যদাবান ব্যক্তিকে স্মরণের দিন বা সমবেত হবার দিনকে ঈদের দিন বলা হয়।’
দ্বিতীয়ত মিলাদ শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ জন্মকাল, জম্মদিন। এ অর্থে মাওলিদ (مولد) শব্দের ব্যবহার আরবি ভাষায় অত্যধিক।
তৃতীয়ত নবী শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ দূত,খবরদাতা ইত্যাদি। এখানে নবী বলতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে।

খ. ‘ঈদে মিলাদুন্নবীর পারিভাষিক পরিচয়:
‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে এ ধরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আগমনে আনন্দিত হওয়া এবং এ অদ্বিতীয় নিয়ামত পাবার কারণে সৎকাজ ও ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করা।

ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন
ক. কুরআন মজীদের আলোকে 
নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনের নির্দেশ: মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে তার দেয়া নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি ইরশাদ করেছেন-
فاذكروني اذكركم واشكروا لي ولاتكفرون
অর্থ- ‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।
তাই আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপন করা প্রত্যেক মানুষের ওপর কর্তব্য। শোকরিয়া জ্ঞাপনের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে, যা মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন।

নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনের পদ্ধতি
১.নিয়ামতের স্মরণ: নিয়ামতের স্মরণ করাও শোকরিয়া জ্ঞাপনের একটি মাধ্যম। নিয়ামতের স্মরণ করার মাধ্যমে আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপন করা যায়। তাই মহান রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন-
يا بني اسرائيل اذكروا نعمتي التي انعمت عليكم
‘হে বণী ঈসরাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ কর যদ্দারা আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করেছিলাম’
তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেছেন-واذكروا نعمة الله عليكم
অর্থ- তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ কর।’
২.নিয়ামতের বর্ণনা দেয়া : নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনের আরেকটি মাধ্যম হল নিয়ামতের বর্ণনা দেয়া, অপরকে জানানো ইত্যাদি।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন- وأما بنعمة ربك فحدث
অর্থ- ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা জানিয়ে দাও।’
এ আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন মানুষদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা তাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা বর্ণনা করে।
৩.ঈদ উদযাপন করা: আল্লাহর নিয়ামত পাবার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমেও নিয়ামতের শোকরিয়া করা যায়। যেমন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম বলেছিলেন-
ربنا أنزل علينا مائدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخرنا واية منك অর্থ- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন; এটি আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য হবে ঈদস্বরূপ এবং আপনার নিকট হতে নিদর্শন।’
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তায়ালার নিকট ফরিয়াদ করেছিলেন যেন তিনি তাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা অবতীর্ণ করেন। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম বলেছেন যে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা অবতীর্ণ হলে তারা সে দিনকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করবেন। মহান রাব্বুল আলামীন তাদের ওপর সেই নিয়ামত রবিবারে অবতীর্ণ করেছিলেন বিধায় তারা আজও রবিববারকে ঈদের দিন হিসেবে মেনে থাকে এবং এদিনকে তারা ছুটির দিন হিসেবেও পালন করে। কুরআন মজীদের এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, নিয়ামত পাবার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার স্বীকৃতি রয়েছে; কারণ তিনি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ঈদ উদযাপনের স্বীকৃতি দিয়ে তাঁর উক্তি পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন এবং কোন প্রকার নিষেধ করেননি। এটি অবৈধ হলে তিনি অবশ্যই তা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করতেন।
৪.খুশি উদযাপন করা: আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনের একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হল নিয়ামতের ওপর খুশি উদযাপন করা। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-
قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون অর্থ- ‘(হে রাসুল) আপনি বলুন, (সবকিছু) আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তারা (মুসলমান) যেন খুশি উদযাপন করে। তারা যা সঞ্চয় করছে তা থেকে এটিই শ্রেষ্ঠতর।’
এ আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন খুশি উদযাপনের দুটি উপকরণ সাব্যস্ত করেছেন। একটি হল (فضل) আর অপরটি হল (رحمة) । এতদুভয়ের মর্ম কী- এর ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত তাফসির বিশারদ আল্লামা মাহমূদ আলুসী , ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী, ইমাম আবু হাইয়ান আনদুলসী আলাইহিমুর রাহমান স্ব-স্ব তাফসীর গ্রন্থের তাফসিরকারকদের শিরোমণি হযরত ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন যে এখানে فضل)) দ্বারা জ্ঞান এবং (رحمة) দ্বারা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্দেশ্য।
আল্লামা ইবনু জাওযী (রহ.)বলেন-
ان فضل الله العلم ورحمته محمد صلى الله عليه وسلم رواه الضحاك অর্থ- ‘নিশ্চয় আল্লাহর ‘ফদ্বল’ হল জ্ঞান আর ‘রহমত’ হল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যা ইমাম দাহ্হাক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন।
আল্লামা তিবরিসী উল্লিখিত আয়াতের অর্থ করতে গিয়ে বলেন-
فافرحوا بفضل الله عليكم ورحمته لكم بإنزال هذا القرآن وإرسال محمد إليكم فانكم تحصلون بهما نعيما دائما مقيما هو خير لكم من هذه الدنيا الفانية অর্থ- ‘তোমাদের প্রতি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করে এবং কুরআন অবতীর্ণ করে আল্লাহ তায়ালা তোমদের ওপর যে দয়া ও করুণা করেছেন, তাতে তোমরা খুশি উদযাপন কর। কেননা উভয়ের (ফদ্বল ও রহমত) মাধ্যমে নিশ্চয় তোমরা চিরস্থায়ী নিয়ামত অর্জন করবে, যা এ নশ্বর পৃথিবী থেকে তোমাদের জন্য অধিকতর শ্রেয়।’
উল্লিখিত আয়াতে ‘রহমত’ দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহকে উদ্দেশ করে ইরশাদ করেছেন- وما أرسلناك إلا رحمة للعالمين
‘আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।’
প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা মাহমূদ আলূসী আলাইহির রাহমাহ প্রমুখের মতে ‘রহমত’ হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি নাম।
এ ছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত। এতে কারো দ্বিমত নেই। তাই আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
ولقد من الله على المؤمنين إذ بعث فيهم رسولا من أنفسهم অর্থ- ‘আল্লাহ মুমিনদের ওপর অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন।’
সুতরাং বুঝা গেল যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য বড় অনুগ্রহ ও নিয়ামত। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ বড় অনুগ্রহ তথা রাসূলুল্লাহকে পাবার ওপর খুশি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। আর রাসূলুল্লাহকে পাবার দিন হল ‘মিলাদুন্নবী’ এবং ‘মিলাদুন্নবী’ কে কেন্দ্র করে খুশি উদযাপন করাই হল ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ যা পালন করার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন। দেওবন্দীদের গুরু মওলভী আশরাফ আলী থানভী সাহেব বলেন যে, “উল্লিখিত আয়াতে ‘রহমত’ও ‘ফদ্বল’ দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাকে বুঝানো হয়েছে,যার জন্মের ওপর আল্লাহ তায়ালা খুশি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ তিনি সকল নিয়ামতের মূল। তাই তাঁর আগমনে যতই খুশি উদযাপন করা হোক না কেন তা কমই হবে।”
এ ছাড়াও উপরিউক্ত আয়াতের ‘রহমত’ শব্দ দ্বারা রাসূলুল্লাহকে খাস বা নির্দিষ্ট অর্থে বুঝানো না হলেও ‘আম’ বা ব্যাপক অর্থে তাঁকে বুঝাতে কারো দ্বিমত থাকতে পারে না; কারণ তিনি সৃষ্টি জগতের প্রতি আল্লাহর বড় রহমত। আল্লাহর অন্যান্য নিয়ামতের মত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা যেহেতু একটি নিয়ামত, সেহেতু তার আগমনের ওপর খুশি উদযাপন করা আল্লাহর নির্দেশ পালন মাত্র। আর রাসূলুল্লাহর জন্ম উপলক্ষে খুশি উদযাপন করার নামই হল ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’।
অতএব কুরআনের আয়াত থেকে প্রমাণিত হল যে রাসূলের জন্ম উপলক্ষে খুশি উদযাপন করা আল্লাহর নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত । খুশি উদযাপনের ক্ষেত্রে সকল বৈধ পন্থা গ্রহণ করা শরিয়তসম্মত। তাই মুসলিমগণ একত্র হয়ে মানুষের প্রতি আল্লাহর বড় কৃপার কথা তথা রাসূলের আগমনের কথা স্মরণ করে, রাসুলের জীবন-বৃত্তান্ত বর্ণনা করে, ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে এবং দান-সদকা ইত্যাদি ব্যবস্থা করে। মোট কথা খুশি উদযাপনের বহিঃপ্রকাশ শরিয়ত সম্মত পন্থায় হলে কোন অসুবিধা নেই।
খ.হাদিস শরিফের আলোকে: ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করা হাদিস শরিফ দ্বারাও প্রমাণিত হয়। রাসূলুল্লাহ নিজেও শোকরিয়া স্বরূপ এ ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করেছেন, ছাগল জবাই করে এবং রোযা রেখে। এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস নিম্নে উল্লেখ করা হল।
১.প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু বলেন-
قدم النبي المدينة فرأى اليهود تصوم يوم عاشوراء فقال: ما هذا؟ قالوا: هذا يوم صالح هذا يوم نجى الله بني اسرائيل من عدوهم فصيامه موسى قال فأنا أحق بموسى منكم فصيامه وأمر بصيامه
অর্থ- ‘নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা শরিফ আগমন করলেন এবং সেখানে ইয়াহুদিদেরকে আশুরার দিনে রোযা রাখতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন- এটা কিসের রোযা? তারা বলল, এটা উত্তম দিন, আর এ দিনেই আল্লাহ বনি ইসরাঈলকে তাদের শত্র“দের থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তাই হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এ দিনে রোযা রেখেছিলেন। রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন, তোমাদের চেয়ে মূসা আলাইহিস সালামের আমিই অধিকতর হক্বদার। অতঃপর তিনি স্বয়ং রোযা রাখলেন এবং তার উম্মতদের এ রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন।’
২.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অন্য হাদিসে বর্ণনা করেন-
هذا اليوم الذي أظفر الله فيه موسى وبني اسرائيل على فرعون ونحن نصومه تعظيما له فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : نحن اولى بموسى منكم ثم امر بصومه
‘এ দিনেই আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এবং বনি ইসরাঈলদেরকে ফিরাউনের ওপর বিজয় দান করেছেন। আমরা এ দিনের সম্মানার্থে রোযা রাখছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-“আমরা তোমাদের চেয়ে মূসা আলাইহিস সালাম’র অধিকতর হক্বদার।” তারপর তিনি (মুমিনদেরকে)এ রোযা রাখার নির্দেশ দেন।’
উপরিউক্ত হাদিসদ্বয় থেকে যা বুঝা যায় –
এক. ১০ মুহররম তারিখে আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এবং বনি ইসরাঈলকে ফিরাউন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এ কারণে আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম রোযা রেখেছেন। সুতরাং আমরা সবচেয়ে বড় নিয়ামত রাসূলুল্লাহকে পাবার দিনকে স্মরণ করে আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করি মিলাদুন্নবী উদযাপন মাধ্যমে।
দুই. ইয়াহুদিরা নিয়ামত পাবার দিনকে স্মরণ করে প্রতি বছর একই দিনে রোযা রাখতেন। এ কথা রাসূলুল্লাহ জেনেও নিষেধ করেননি যে, তোমরা তো অনেক বছর পূর্বে নিয়ামত পেয়েছ, তা এখন স্মরণ করে প্রতি বছর রোযা রাখার প্রয়োজন নেই; বরং নিয়ামত পাবার দিনকে স্মরণ করার সমর্থন জানিয়েছেন।
তিন. মূসা আলাইহিস সালাম’র মুক্তির দিনকে স্মরণ করে রাসূলুল্লাহ স্বয়ং নিজেও রোযা রেখেছেন এবং তাঁর উম্মতদেরকে এ রোযা রাখার নির্দেশ দেন। সুতরাং নিয়ামতের দিনকে সৎকাজের মাধ্যমে স্মরণ করা রাসূলুল্লাহকে পাবার দিনকে স্মরণ করে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা স্বয়ং রাসুলুল্লাহর সুন্নাত।
এ হাদিস শরিফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, নির্দিষ্ট দিনে আল্লাহর রহমত পাবার কারণে বা কোন বিপদ থেকে মুক্তি লাভের পর আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করা বৈধ। প্রতি বছর সেই একই দিনে আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করা যাবে আর আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া জ্ঞাপন বিভিন্ন রকম ইবাদতের মাধ্যমে করা যায় যেমন নামায, রোযা, সদকা এবং কুরআন তিলাওয়াত। আমাদের জন্য যেদিন নবী করিম রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আগমন করেছেন সেদিনের চেয়ে বড় নিয়ামত আর কী হতে পারে?
উল্লিখিত বর্ণনা থেকে বুঝা গেল যে, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম ইবনু হাজর আসকালানী আলাইহির রাহমাহ আশুরার হাদিস ‘ঈদে মিলাদুন্নবীউদযাপনের গ্রহণযোগ্য ভিত্তি বলেছেন এবং তা প্রতি বছর পালনের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবী দযাপন করা শরিয়ত সম্মত একটি সৎকাজ।
৩. হযরত আবু ক্বাতাদাহ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন-
إن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم يوم الاثنين قال: ذاك يوم ولدت فيه ويوم بعثت او أنزل على فيه
অর্থ- ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লামকে সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন, সেদিন আমার জন্ম হয়েছে, আমি নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছি এবং আমার ওপর কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।’
উল্লিখিত হাদিস শরিফ থেকে বুঝা গেল যে, রাসূলুল্লাহ সোমবারে রোযা রাখতেন। সাহাবায়ে কিরাম এর কারণ জানতে চাইলে তিনি ইরশাদ করেন যে, সেদিন তার জন্মদিন ও নবুয়ত প্রকাশের দিন। তার ওপর আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করে তিনি প্রতি সোমবার আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে রোযা রাখতেন।
তিনি জন্মদিনে আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করতেন। সুতরাং আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপন করা রাসূলুল্লাহর সুন্নাত।
৪. হযরত আউস বিন আউস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أن من أفضل اياكم يوم الجمعة فيه خلق آدم
অর্থ- ‘তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে শুক্রবার শ্রেষ্ঠতর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’
হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন-
أن يوم الجمعة يوم عيد
অর্থ- ‘নিশ্চয় শুক্রবার হল ঈদের দিন।’
উল্লিখিত হাদিসসমূহ থেকে বুঝা গেল যে, শুক্রবার হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার কারণে সেদিনকে উত্তম দিন এবং ঈদের দিন বলা হয়েছে। সুতরাং যেদিন সৃষ্টি জগতের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নবীর আগমন হয়েছে, সেদিনকে কেন ঈদের দিন হিসেবে মানা যাবে না?
৫. হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন-
إن النبي صلى الله عليه وسلم عق عن نفسه بعد النبوة
অর্থ- নবুয়ত প্রকাশের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের আক্বীক্বাহ করেছেন। ’
অন্য বর্ণনায় হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন
ان النبي صلى الله عليه وسلم عق عن نفسه بعد ما بعث نبيا
অর্থ- ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী হিসেবে প্রকাশ পাবার পর নিজে আক্বীকাহ করেন।’
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত ইমাম জালাল উদ্দিন সূয়ূতী (রাহ.) বলেন-
ان جده عبد المطلب عق عنه في سابع ولادته والعقيقة لاتعاد مرة ثانية فيحمل ذلك على أن الذي فعله النبي صلى الله عليه وسلم إظهارا للشكر على إيجاد الله تعالى رحمة للعالمين وتشريفا لامته كما كان يصلي على نفسه لذلك فيستحب لنا ايضا إظهار الشكر بمولده باجتماع الاخوان وإطعام الطعام ونحو ذلك من وجوه القربات وإظهار المسرات
অর্থ- ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র দাদা রাসুল্ল্লুাহ জন্মের সপ্তম দিনে তাঁর আক্বীক্বাহ সম্পন্ন করেছেন। বস্তুত: আক্বীক্বাহ্ দু’বার হয় না। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয়বার আকীকাহ তথা ছাগল জবাই করেছেন আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে। কেননা, আল্লাহ তায়ালা তাকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ এবং উম্মতের কাছে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে নিজের ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করতেন। অতএব রাসূলুল্লাহর জন্ম উপলক্ষে মুসলিম ভাইদের একত্র হবার মাধ্যমে, খাবার খাওয়ানো, অন্যান্য ইবাদত পালন এবং ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করা ও খুশী প্রকাশ করা আমাদের জন্যও মুস্তাহাব।’
উপরিউক্ত বর্ণনা থেকে বুঝা গেল যে, রাসূলুল্লাহর জন্ম উপলক্ষে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপন করা স্বয়ং রাসুলুল্লাহর সুন্নত আর আমরা এ সুন্নাতের উপরই আমল করি। এ ব্যাখ্যা বর্তমান সময়ের নয়; বরং শত শত বছর পূর্বের যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফিকাহবিদ ও ইতিহাসবিদের।
৬. সহীহ বুখারী শরিফে রয়েছে
فلما مات ابو لهب أريه بعض أهله شر حاله قال له : ماذا لقيت قال ابو لهب لم الق بعدكم غير أني سقيت في هذه بعتاقي ثوبية
অর্থ- ‘আবু লাহাবের মৃত্যুর পর তার পরিবারের কাউকে (হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) স্বপ্ন দেখানো হল যে, সে খারাপ অবস্থায় আছে। স্বপ্নদ্রষ্টা তাকে বললেন, তোমার কী অবস্থা? আবু লাহাব বলল, আমি অত্যন্তআযাবের মধ্যে আছি; তবে (রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর খুশি হয়ে) ছুয়াইবাহকে মুক্তি দেয়ার কারণে (সেদিন তথা সোমবার) আমাকে পান করানো হয়।’
ইমাম ইবনু হাজর আসকালানী আলাইহির রাহমাহ ইমাম সুহাইলী আলাইহির রাহমাহ থেকে বর্ণনা করেন-
إن العباس : قال لما مات ابو لهب رأيته في منامي بعد حول في شر حال فقال ما لقيت بعدكم راحة إلا أن العذاب يخفف عني كل يوم اثنين قال ذلك أن النبي صلى الله عليه وسلم ولد يوم الاثنين وكانت ثويبة بشرت ابا لهب بمولده فاعتقها
অর্থ- ‘হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখেছি যে, সে খুব খারাপ অবস্থায় আছে। অতঃপর সে বলল; তোমাদের ছেড়ে আসার পর আমি কোন শান্তি পাইনি; তবে প্রতি সোমবার আমার শাস্তি কিছুটা কমানো
হয়। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন আর আবু লাহাবের দাসী ছুয়াইবা রাসূলুল্লাহর জন্ম গ্রহণের সুসংবাদ আবু লাহাবকে দিলে সে তাকে (আনন্দিত হয়ে) স্বাধীন করে দিয়েছে।’
উল্লিখিত হাদিস থেকে কয়েকটি বিষয় বুঝা যায়-
এক. আবু লাহাব হল প্রথম সারির কাফির, যার নিন্দায় আল্লাহ তায়ালা সূরা লাহাব অবতীর্ণ করেছেন। এতদসত্ত্বেও সে রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর ভাতিজা হিসেবে খুশি হয়ে তার দাসী ছুয়াইবাকে স্বাধীন করে দেয়ার কারণে কবরে তার শাস্তি প্রতি সোমবার কমানো হয়। ভাতিজা হিসেবে সে রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর খুশি হবার কারণে যদি তার শাস্তি কমানো হয়, তাহলে মুমিনরা যদি আল্লাহর রাসূল যিনি সবচেয়ে বড় নিয়ামত তাঁর ওপর খুশি হয়, তাহলে উত্তম প্রতিদানের পরিমাণ কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
দুই. কাফেরদের কোন সৎকাজের প্রতিদান পরকালে দেয়া হবে না। কারণ তাদের ঈমান নেই। এরপরও আবু লাহাবকে সৎকাজের প্রতিদান কিভাবে দেয়া হল তার উত্তরে ইমাম কিরমানী বলেন-
العمل الصالح والخير الذي يتعلق بالرسول صلى الله عليه وسلم مخصوصا في ذلك كما أن ابا طالب ايضا ينتفع بتخفيف العذاب
অর্থ- ‘কাফেরদের সৎকাজ যেগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সাথে সম্পৃক্ত, সেগুলোর প্রতিদান দেয়া হয় যেমন আবু তালিব (রাসূলুল্লাহর খেদমতের কারণে) কম শাস্তি ভোগের মাধ্যমে উপকৃত হয়।’
একজন কাফেরের যদি এ প্রতিদান হয়, তাহলে একজন মুমিনকে কী প্রতিদান দেয়া হবে তা সহজেই বুঝা যায়।
তিন. রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর খুশি হয়েছে আবু লাহাব। এ খুশি হওয়াটা অন্তরের বিষয়, যা প্রকাশের জন্য সে তার দাসী ছুয়াইবাকে স্বাধীন করে দিয়েছে। মুমিনরাও রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর খুশি হয়ে বিভিন্ন সৎকাজ যেমন কুরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে রাসূলুল্লাহর জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা, খাবার খাওয়ানো, দান-সদকাহ প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করেন।
চার. যে কাজের মাধ্যমে পরকালে উত্তম প্রতিদান পাওয়া যায়, সে কাজ বিদয়াতে সাইয়্যিাহ বা মন্দ বিদয়াত কিংবা অবৈধ হতে পারে না; কারণ অবৈধ কাজে সওয়াব কিংবা উত্তম প্রতিদান নেই। একজন প্রথম সারির কাফের ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপন করে যেহেতু (পরকালে) উত্তম প্রতিদান পাচ্ছে, সেহেতু ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপন নিঃসন্দেহে একটি উত্তম ও সওয়াবের কাজ।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনুয জাযরী আলাইহির রাহমাহ বলেন-
فاذا كان ابو لهب الكافر الذي نزل القرآن بذمه جوزى في النار بفرحة ليلة مولد النبي صلى الله عليه وسلم فما حال المسلم الموحد م أمة محمد صلى الله عليه وسلم بنشره مولده وبذل ما تصل اليه قدرته في محبته صلى الله عليه وسلم لعمري إنما يكون جزاء من الله الكريم أن يدخله بفضله جنات النعيم
অর্থ- ‘কাফের আবু লাহাব যার নিন্দায় কুরআনের একটি সূরা (সুরা লাহাব) অবতীর্ণ হয়েছে সে যদি ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপনের কারণে কম শাস্তি ভোগ করে, তাহলে উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে সে মুসলিম ব্যক্তির কী প্রতিদান হতে পারে যে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপন করে এবং এ উপলক্ষে রাসূলূল্লাহর প্রেমে তার সামর্থ অনুযায়ী খরচ করে? আমার জীবনের কসম করে বলছি- দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতিদান হল, আল্লাহ তাকে ‘জান্নাতুন নয়ীমে’ প্রবেশ করাবেন।’
উপরিউক্ত হাদিসসমূহ থেকে প্রমাণিত হল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জন্ম উপলক্ষে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপন করা শুধু বৈধ নয়; বরং অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এটি স্বয়ং রাসূলুল্লাহর সুন্নাত। কারণ তিনি নিজেও আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে ছাগল জবাই করে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপন করেছেন এবং প্রতি সোমবার রোযা রাখতেন।
উপসংহার: আমাদের আলেমগণ যারা সত্যিকার দ্বীনের ধারক বাহক ছিলেন তাদের কেউ মিলাদুন্নবীর বিরোধিতা করেননি। বরং তাদের অধিকাংশই মিলাদুন্নবীর উপর কিতাব লিখে মুসলমানদেরকে রাসূলুল্লাহর ভালবাসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। কিন্তু বর্তমান সালাফী তথা লামাযহাবী সম্প্রদায়ের লোকেরা মিলাদুন্নবীর চরম বিরোধিতা করে। যারা ঈদে মিলাদুন্নবীকে বিদআত বলে তারাই মূলত বিদআতী । তাদের জন্ম ত্রয়োদশ শতাব্দীর পর । তেরশত বছর পর থেকে এ নতুন ফেরকার লোকেরা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য সুন্নাত ও মুসতাহসানকে বিদআত বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এদের গোমরাহী থেকে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের হেফাযত করুন।
লেখক: প্রধান মুহাদ্দিস,জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া, চট্টগ্রাম

সূত্র.

-ইবনু মনযুর, লিসানুল আরাব, দারু সাদির , বৈরুত, ১ম সংস্করণ, খ. ৩য়, পৃ.৩১৫
-মুফতি আমীমূল ইহসান, কাওয়ায়িদুল ফিকহ, আশরাফি বুক ডিপু, ভারত, ১ম সংস্করণ, ১৩৮১ হিজরী, পৃ.৩৯৫
-আলকুরআন, সূরা-বাকারা, আয়াত নং ১৫২
-আল-কুরআন, সূরা-বাকারা, আয়াত নং ৪৭
-আল-কুরআন, সূরা-আলে ইমরান, আয়াত নং:১০৩
-আল-মাওসূয়াতুল ফিকহিয়্রাহ আল-কুয়াইতিয়্যাহ, দারুস্ সালাসিল, কুয়েত, ১ম সংস্করণ, ১৪০৪ হিজরী, খ. ২৬, পৃ.১৭৮
-আল-কুরআন, সূরা:দুহা, আয়াত নং:১১
-আল-ুরআন, সূরা:মায়িদা, আয়াত নং:১১৪
আল কুরআন, সূরা:ইউনূস, আয়াত নং:৫৮
-আল্লামা আলূসী, রুহুল মায়ানী, দারু ইহইয়ায়িত্ তুরাসিল আরাবী, লেবানন, বৈরুত, খ. ১০ম, পৃ.১৪১
-ইমাম সূয়তী, আদ্ দুররুল মনছুর। দারুল মারিফা, লেবানন, বৈরুত, খ.৪র্থ, পৃ.৩৩০
-ইমাম আবু হাইয়ান, আল বাহরুল মুহীত,
-ইবনু জাওযী, যাদুল মাসীর, আল-মাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত, ১৪০৪ হিজরী, খ.৪র্থ, পৃ.৪০
-আল্লামা তিবরিসী, মাজমাউল বয়ান, ইনশরাতে নাসির খসরু, তেহরান, ইরান, তারিখ বিহীন, খ. ৫ম, পৃ. ১৭৭
-আল-কুরআন, সূরা: আম্বীয়া, আয়াত নং ১০৭
-প্রাগুক্ত, সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১৬৪
-মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, মিলাদুন্নবী, জীলি কুতুবখানা , লাহুর, তারিখবিহীন, পৃ. ১৫৪, ১২০, ১২১
-ইমাম বুখারী, আল জামেউল সহীহ, দারু ইবনে কাসীর, আল-ইমামা, বৈরুত, ১৪০৭ হিজরী, হাদিস নং:১৯০০, খ. ২য় , পৃ.৭০৪, ইমাম ইবনু মাজাহ, সুনান, দারূর ফিকর, বৈরুত, হাদিছ নং:১৭৭৪, খ. ১ম, পৃ. ৫৫২, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, আল মুসনাদ, আলামূল কুতুব, বৈরুত, হাদিছ নং: ২৬৪৪, খ.১ম, পৃ.২৯১ , ইমাম আবু ইয়ালা, আল মুসনাদ, দারুল মামূন লিত্-তুরাস, দামেস্ক, ১৪০৪ হিজরী, খ. ৪র্থ, পৃ.৪৪১
-ইমাম বুখারী, প্রাগুক্ত, হাদিছ নং:৩৭২৭, খ. ৩য়, পৃ.১৪৩৪, ইমাম মুসলিম, প্রাগুক্ত, হাদিছ নং:২৭১২, খ. ৩য় পৃ.১৪৯ , ইমাম আবু দাউদ, সুনান, দারুল ফিকর, বৈরুত, হাদিছ নং: ২৪৪৪, খ.১ম, পৃ.৭৪২ , ইমাম ইবনু খুযাইমাহ, সহীহ , আলমাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত, হাদিছ নঙ:২০৪৮,খ. ৩য়, পৃ. ২৮৬
-ইমাম মুসলিম, প্রাগুক্ত, হাদিছ নং:১১৬২, খ. ২য়, পৃ.৮১৯, ইমাম বায়হাক্কী, আস্-সুনানুল কুবরা, মাকতাবাতু দারিল বায, মক্কা শরিফ, ১৪১৪ হিজরী, হাদিছ নং:৮১৮২, খ.৪র্থ, পৃ.২৮৬।
-ইমাম আবু দাউদ, প্রাগুক্ত, হাদিীছ নং:১০৪৭, খ. ১ম, পৃ.২৭৫, ইমাম ইবনু মাজাহ্, প্রাগুক্ত, হাদীছ নং:১০৮৫, খ.১ম, পৃ.৩৪৫
-ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, মুসনাদ, প্রাগুক্ত, হা. নং: ৮০১২, খ. ২য়, পৃ.৩০৩, ইমাম ইবনু খুযাইমা, প্রাগুক্ত, হা.নং:২১৬১, খ. ৩য়, পৃ.৩১৫, ইমাম হাকিম, আল-মস্তাদরাক, দারুল বায লিন-নশর ওয়াত্তাওযী, মক্কা শরিফ, সৌদিআরব, হাদীছ নং.১৫৯৫, খ. ১ম, পৃ.৬০৩
-ইমাম বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, প্রাগুক্ত, হা.নং:৪৩, খ.৯ম. পৃ.৩০০, ইমাম ইবনু হাজর আসালানী, প্রাগুক্ত, খ. ৯ম, পৃ.৫৭৫
-ইমাম তাবরানী, প্রাগুক্ত, হা. নং:৯৯৪, খ.১ম. পৃ.২৯৮, ইমাম যাহাবী, মিযানুল ইতিদাল, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১৯৯৫ ইং, হা.নং ৪৫৯৫, খ. ৪র্থ, পৃ.১৯৩
-ইমাম সুয়ূতী, হুসনুল মাকছাদ, প্রাগুক্ত, পৃ.৬৫, ইমাম সুয়ুতী, আল-হাবী লিল-ফাতাওয়া, প্রাগুক্ত, খ. ১ম, পৃ.১৮৮, ইমাম নাবহানী, হুক্কাতুল্লাহি আলাল আলামীন, মাকাতাবাতু নূরিয়্যাহ রিজায়্যিা, ফয়সালাবাদ, পাকিস্তান, পৃ.২৩৭
-ইমাম বুখারী, প্রাগুক্ত, হা.নং:৪৮১৩, খ.৫ম, পৃ.১৯৬১, ইমাম বায়হাকী, প্রাগুক্ত, হা: নং:১৩৭০১, খ. ৭ম, পৃ.১৬২, ইমাম আব্দুর রাজ্জআক, আল-মুছান্নাফ, আল-মাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত, ১৪০৩ হি., হা.নং:১৩৯৫৫, খ.৭ম, পৃ.৪৭৮। , ইমাম ইবনু কাসীর, আস্ সীরাতুন নববিয়্যাহ, দারুল মারিফাহ, বৈরুত, খ. ১ম, পৃ.২২৪
-ইমাম ইবনু হাজর আসকালানী, প্রাগুক্ত, খ. ৯ম, পৃ.১৪৫
-ইমাম কিরমানী, শরহু সহীহিল বুখারী,
-ইমাম নাবহানী, প্রাগুক্ত, পৃ.২৩৭,২৩৮, ইমাম সুয়ূতী, আল-হাবী লিল –ফাতাওয়া, প্রাগুক্ত, খ. , ইমাম সুয়ূতী, হুসনুল মাক্বছাদ, প্রাগুক্ত, পৃ.৬৫, আল্লামা আলাভী মালেকী, হাওলুল ইহতিফাল বিযিকরিল মাওলিদিন নববী আশ-শরিফ, মাতবায়াতু দারি জাওয়ামিয়িল কিলাম, কায়রো, মিশর, ১৪১৮ হি.পৃ.১৭