বিশ্বনবী হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র জ্ঞান

বিশ্বনবী হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র জ্ঞান

বিশ্বনবী হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র জ্ঞান –
কাজী মুহাম্মদ ছালেকুর রহমান আলকাদেরী >

একক অদ্বিতীয় অতুলনীয় লা-শরীক সত্ত্বা, চিরন্তন, চিরঞ্জীব মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন জাল্লা-শানুহু তাঁর প্রিয় হাবীব হযরত নবী করীম রাউফুর রাহীম হুযূর পূরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে অজস্র কল্যাণ ও অসংখ্য নি’মাত এবং অসীম গুণাবলী দান করেছেন দয়া পরবশ হয়ে। তৎমধ্যে অন্যতম ও ব্যতিক্রমধর্মী পছন্দনীয় গুণ ও কল্যাণ হলো হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অনন্য অদ্বিতীয় ও অসাধারণ জ্ঞান-বিজ্ঞান।
পবিত্র ক্বোরআনুল করীম ও হাদীসে নববী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অতুলনীয়ভাবে কুল কায়েনাতের মধ্যে সর্বোচ্চ অসীম জ্ঞান-বিজ্ঞানের অধিকারী সত্ত্বা মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীনের দয়া ও মেহেরবানীতে। আর তামাম কায়েনাত তাঁরই জ্ঞান-বিজ্ঞানের ফয়েজ বরকত ও করুণার মুখাপেক্ষী ও প্রত্যাশী আপন আপন পদ মর্যাদার ভির্তিতে।
পবিত্র ক্বোরআনে এরশাদ হচ্ছে-
بسم الله الرحمن الرحيم- الرحمن- علم القران- خلق الانسان- علمه البيان-
আল্লাহর নামে আরম্ভ, যিনি পরম করুণাময় অসীম দযালু।

ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ:
সূরা: আর রাহমান, আয়াত- ১
ইরশাদ হচ্ছে- তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু মহিমান্বিত মর্যাদাবান সত্ত্বা রাহমান। যিনি পরিবেষ্টিত করে রেখেছেন কায়েনাতের সকল বস্তুকে তাঁর অসীম রহমতের মাধ্যমে আপন ইচ্ছা মোতাবেক।

সূরা: আর রাহমান, আয়াত- ২
ইরশাদ হচ্ছে- মহান দয়াময় দয়ালু সত্ত্বা রাহমান দয়া ও অনুগ্রহ পূর্বক তাঁর প্রিয় হাবীব হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সর্বোচ্চ অসীম জ্ঞান-বিজ্ঞানের অধিকারী করার নিমিত্তে সব কিছুরই বর্ণনা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের আসল ও উৎস তাঁরই চিরন্তন সত্য ঐশী বাণী অবতীর্ণ আসমানী মহাগ্রন্থ ক্বোরআন মজীদের শিক্ষা দান করেছেন।

সূরা: আর রাহমান, আয়াত- ৩
দয়াময় সত্ত্বা মহান আল্লাহ্পাক আপন মহিমায় মানবতার আত্মা ওর রূহ, সৃষ্টির শুরু ও আসল, উৎস হযরত মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সার্বিক বিষয়ে সর্বাধিক মর্যাদাবান করে সর্বপ্রথম সৃজন করেছেন।

সূরা: আর রাহমান, আয়াত-৪
ইরশাদ হচ্ছে- আল্লাহ্ পাক সুবহানাহু তা‘আলা আপন দয়া ও মেহের বানীতে প্রিয় হাবীব হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে যা কিছু হয়ে গেছে আর যা কিছু সামনে হবে সব বিষয়ের ব্যাখ্যামূলক জ্ঞান-গরিমার শিক্ষা দান করত: কুল কায়েনাতের মধ্যে অতিদ্বীয় অতুলনীয়ভাবে অসীম জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার প্রশিক্ষণ দান করেছেন, ক্বোরআন করীমের বর্ণনা ও উহার সাদৃশ্য জ্ঞান সমৃদ্ধ আল হাদীস বা আস্ সুন্নাহ্র জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে।
[তাফসীরে জীলানী, তাফসীরে কবির, তাফসীরে খাজেন, তাফসীরে জুমাল ইত্যাদি] উল্লেখ্য যে, এ পর্যায়ে আমি মুসলিম মিল্লাতের বরাবরে সদয় অবগতির জন্য আবু দাঊদ শরীফের একখানা হাদীস শরীফ পেশ করছি।
عن المقدام بن معدى كرب (رضى الله عنه) عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال الا انّى اتيتُ الكتابَ ومثله معه الا يوشك رجل شبعان على اريكته يقول عليكم بهذا القران فما وجدتم من حلانٍ فاحلوه وما وجدتم فيه من حرام فحرموه الا لا يحل لكم الحمار الاهلى ولاكل ذى نابٍ من السبع ولا لقطة معاهد الا ان ستعنى عنها صاحبها ومن نزل بقومٍ فعليهم ان يقروه فان لم يقروه فله يعقبهم بمثل قراه- (ابوداؤد شريف- صفحه ৬৩২)

ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ:
প্রভূত জ্ঞান-বিজ্ঞানের অধিকারী সাহাবীয়ে রাসূল সাইয়্যেদুনা হযরত মেক্বাদাম ইবনে মা’দিকারিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত- তিনি অত্র হাদীস খানা প্রিয়নবী হযরত রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। অবশ্যই প্রিয় নবী হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া বাসীকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেন। হে দুনিয়াবাসী! তোমরা নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ! মহান আল্লাহ্ পাক সুবহানাহু তা’আলার পক্ষ হতে আমাকে রাসূল হিসেবে দয়া পরবশ হয়ে মহা আসমানী গ্রন্থ আল ক্বোরআনুল মজীদ দেওয়া হয়েছে। আর উক্ত ক্বোরআনে পাকের সাথে সাদৃশ্য আল্ হাদীস বা ওহীয়ে মাত্লু বা পঠিত ঐশী বাণী। আর হাদীসে পাক বা সুন্নাহ্ ওহীয়ে বাতেন অর্থাৎ অপ্রকাশ্য ঐশীবাণী গাইরে মাত্লু যা পঠিত হয় নাই। উভয় প্রকারের ঐশী বাণীর জ্ঞান-বিজ্ঞান দান করার মাধ্যমে আমি রাসূলকে সব ধরনের জ্ঞান যথাক্রমে উপস্থিত জ্ঞান, জরুরী ও আবশ্যকীয় জ্ঞান, আদৃশ্য জ্ঞান ও দৃশ্য জ্ঞান সহ সব বস্তুর জ্ঞান দান করা হয়েছে।
অতঃপর হুযূর পূরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মানব জাতিকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন- হে মানব জাতি! তোমরা জেনে রেখো! অচিরেই তোমাদের সমাজে পরিতৃপ্ত পৌভর ব্যক্তি দাম্ভিকতার সখে সুসজ্জিত ঘাটে বসে বলতে থাকবে। তোমরা সবাই ক্বোরআনকে মজবুতভাবে আকড়ে ধর। যা তোমরা ক্বোরআন মধ্যে হালাল হিসেবে পাবে, তাকে তোমরা হালাল মনে করবে। আর যে সমস্ত বস্তুকে তোমরা ক্বোরআনের মধ্যে হারাম হিসেবে পাবে ঐ সমস্ত বস্তুকে হারাম মনে করবে।
এ জাতীয় দাম্ভিক ব্যক্তির কথা সঠিক নয় মর্মে হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান- হে মানব জাতি! তোমরা জেনে রাখ। আমি রাসূল খোদাপ্রদত্ত অসীম জ্ঞানের অধিকারী হয়ে তোমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি যে, তোমাদের জন্য তোমাদের লালিত-পালিত গাধার গোস্ত হালাল নয়। আর প্রত্যেক প্রকারের হিংস্র প্রাণী নখ ও দাঁত দিয়ে ছিড়ে ফেটে ভক্ষণ করে এ জাতীয় হিংস্র শিকারী পশুর গোশত তোমাদের জন্য হালাল নয়। অর্থাৎ এ জাতীয় হিংস্র শিকারী পশুর গোশত আমি নবী পাকের পক্ষ হতে তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ বা হারাম ঘোষণা করা হলো যে গুলোর বিধান পবিত্র ক্বোরআনুল করীমে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ ফরমান- হে মানব জাতি! তোমরা জেনে রাখ! মালিক বিহীন পরিত্যাক্ত বস্তুর দায়-দায়িত্ব তোমাদের উপর বর্তাবে আপন মালিকের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়া পর্যন্ত। তার আমানত তার হাতে প্রদান করতে হবে শরীয়তের বিধান মোতাবেক কিন্তু যদি মালিক তার পরিত্যাক্ত বস্তু গ্রহণ করা থেকে বিরত হয়। তখন পরিত্যাক্ত বস্তু কুড়িয়ে সংগ্রহকারী ব্যক্তি হালাল হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে।
হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ ফরমান- হে মানব! তোমরা জেনে রাখ। আর কোন ব্যক্তির কোন গোত্রের নিকট আগমন করে। তখন ঐ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে উক্ত আগন্তুক ব্যক্তিকে অতিথি হিসেবে মেহেমানদ্বারী করা স্ববিশেষ কাজ হিসেবে গণ্য হবে। আর গোত্রের লোকেরা যদিও উক্ত আনন্তুক ব্যক্তিকে মেহেমানদ্বারী না করে, তা হলে উক্ত ব্যক্তি যদি নিতান্ত ক্ষুধার তাড়নায় জীবন রক্ষায় বাধ্য হয়ে যাবে। তখন ঐ ব্যক্তি গোত্রের লোকদের নিকট তার প্রয়োজনীয় মেহেমানদ্বারীর আহারের জন্য আবেদন করতে পারবে।
[আব দাঊদ শরীফ: বাবু লুজুমিস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা- ৬৩২] উল্লেখ্য যে, অত্র হাদীসের মাধ্যমে বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবীব হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে হালাল-হারাম, আদেশ-নিষেধ সহ যাবতীয় বিষয়ে অসীম জ্ঞান-বিজ্ঞান দান করেছেন।
যখনই যা-যা প্রয়োজন হয়েছির তখনই খোদা প্রদত্ত অসীম জ্ঞানের অধিকারী সত্ত্বা হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর নূরানী জীবনে বিশ্ববাসীর কাছে ইরশাদ করে ধন্য করেছেন। কোন কোন সময় হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উপস্থিত নিশ্চিত জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। আর কোন কোন সময় দৃশ্যমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে আর কোন কোন সময় অদৃশ্য জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা অতীত ও ভবিষ্যতের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। উক্ত বিষয়াদির কথা সমূহ পবিত্র ক্বোরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অথচ প্রিয়নবী হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সব বিষয়ে খোদা প্রদত্ত অসীম জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার ভিত্তিতে বিশ্ববাসীকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান দান করে গেছেন।
পবিত্র ক্বোরআনুল করীমের সূরায়ে নিসার ১১৩ নম্বর আয়াতের মধ্যে মহান আল্লাহ্ পাক উপরোক্ত বিষয়ে ইরশাদ করেন-
ولولا فضل الله عليك ورحمة لهمت طائفة منهم ان يضلوك ومايضلون الاانفسهم ومايضرونك من شئ وانزل الله عليك الكتاب والحكمة وعلمك مالم تكن تعلم وكان فضل الله عليك عظيما-

ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ:
সূরা: নিসা, আয়াত-১১৩
ইরশাদ হচ্ছে- এবং প্রিয় হাবীব রাহমাতুল লিল্আলামীন! মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন আপন অনুগ্রহ, করুণা ও রহমতে ধন্য করত: আপনাকে যদি নবী ও নিষ্পাপ করা এবং ঐশীবাণী দান করার মাধ্যমে প্রতি পক্ষ কাফির-মুশরিক সহ সব বিষয়ের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অবহিত করা না হতো তা হলে তাদের মধ্যে বনু জুফর বা তু’য়ামা সম্প্রদায়ের লোকেরা আপনাকে তাদের ইচ্ছা মোতাবেক সত্য পথ সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে পদষ্কলিত করার চেষ্টা চালাত যা তাদের জন্য একেবারেই সম্ভব হয়নি। আপনার উপর মহান আল্লাহ্র দয়া, ফজল ও রহমত বিদ্যমানও স্থিত থাকার আলোকে। আর তারা নিজেরা নিজেদের উক্ত হীনমান্য কৌশল অবলম্বন করার প্রেক্ষিতে পথভ্রষ্ট করেছে। এবং তারা কখনো কোন মুহূর্তে আপনাকে কোন ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক সুবহানাহু তা’আলা সর্বক্ষণের জন্য আপনাকে নিষ্পাপ করেছেন। আর আল্লাহ্ পাক সুবহানাহু তা’আলা দয়া পরবশ হয়ে আপনার উপর আসমানী মহান কিতাব আল্ ক্বোরআনুল কারীম ও হিকমত, প্রজ্ঞা অবতীর্ণ করেছেন। আর আপনাকে ঐ সব বিষয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান দান করেছেন যে সব বিষয়ে আপনি জানতে না। অর্থাৎ উপস্থিত জ্ঞান, জরুরী ও আবশ্যকীয় জ্ঞান, দৃশ্যমান বস্তুর জ্ঞান ও অদৃশ্যমান বস্তুর তথা অতীত ও ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান সহ সব কিছুর জ্ঞান যা তাঁর প্রিয় হাবীবের জন্য সমীচিন হবে প্রদান করত: অসীম জ্ঞান দান করেছেন। আর মহান আল্লাহ্ প্রদত্ত অসীম জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রাপ্তির মহান অনুগ্রহ আপনি সৃষ্টিকুলের আসল নবীর উপর রয়েছে যা নবুয়তের সভ্যতার জন্য সব চাইতে বড় ধরনের অনুগ্রহ ও করুণা। এ পর্যায়ে সূরায়ে জুমার ৩ নম্বর আয়াতের মধ্যে মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন- হে রাসূল! আর আপনি আপনার সাহাবা ও সাহাবাদের পরের প্রজন্ম কিয়ামত পর্যন্ত আগন্তুক সমস্ত মানব ও দানব জাতির একমাত্র মহান শিক্ষাদাতা হিসেবে প্রেরিত রাসূল অসীম জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার ভিত্তিতে এক শ্বাশ্বত ও চিরস্থায়ী জীবনের অধিকারী সত্ত্বা হায়াতুন নবী হিসেবে এ পবিত্র দায়িত্ব আপনার উপর অর্পিত। আর তিনি মহান আল্লাহ্ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় সত্ত্বা যিনি একমাত্র শিক্ষাদাতার মাধ্যমে কুল কায়েনাতকে শিক্ষা দিতে পারেন।
[তাফসীরে বায়জাভী, জালালাইন, জুমাল ইত্যাদি] এ জাতীয় অনেক ক্বোরআনে পাকের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিশ্ব নবী হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম খোদা প্রদত্ত অসীম জ্ঞান-বিজ্ঞানের অধিকারী সত্ত্বা।
উপরোক্ত বিষয়ে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত আছে। তৎমধ্যে আমি অধম আপনাদের বরাবরে মাত্র দু’টি হাদীস পেশ করতেছি-
وعن عبد الرحمن بن عائش رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم رأيت ربىّ عزوجل فى احسن صورة قال فيما يختصم الملاء الاعلى اقلت انت اعلم قال فوضع كفّه بين كتعنى فوجدت بردها بيه ثدى فعلمتُ مافى السموات والارض وتلا وكذالك نرى ابراهيم ملكوت السموات والارض وليكون من الموقنين- (رواه الدارمى مرسلا وللترمذى نحوه عنه- مشكوة شريف باب المساجد ومواضع الصلوة- صفحة ٦٩-٧٠)

ব্যাখ্যামুলক অনুবাদ:
হযরত সাইয়্যেদানা আবদুর রহমান ইবনে আয়েশ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি ইরশাদ করেন- বিশ্বকুল সরদার হযরত রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াবাসীকে উদ্দেশ্যে করে ইরশাদ ফরামান- হে মানব জাতি! তোমরা জেনে রাখা। আমি আমার সৃষ্টিকর্তা নৈরাকার প্রভু, মহা পরাক্রমশালী, মহিমান্বিত লা-শরীক সত্ত্বাকে তাঁর সমীচিন প্রযোজ্য উত্তম গুণের গুণান্বিত রূপে দিদার-দর্শন তথা তাঁকে দেখার সুযোগ লাভে ধন্য হয়েছি। অর্থাৎ আমি তাঁকে দেখেছি। মহান প্রভু ইরশাদ করেন- হে প্রিয় হাবীব! উর্ধ্ব জগতে নৈকট্য প্রাপ্ত ফেরেশতাগণের পস্পর প্রতিযোগিতার রহস্যটা কি? তৎউত্তরে আমি সৃষ্টিকুলের আসল বান্দা প্রেরিত রাসূল হিসেবে মহান মালিক প্রভু আল্লাহ্ তা’আলার শাহী দরবারে বিনয়ের সহিত নিবেদন করলাম। হে প্রভু! মালিক, মহান আল্লাহ্ আপনি সব বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞাতময় সত্ত্বা। আপনি উক্ত বিষয়ে উত্তম রূপে জ্ঞাত আছেন। হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন। অতঃপর মহান রাব্বুল আলামীন আপন দয়া ও মেহেরবানীর ফয়েজ বরকত চলমান প্রবাহমান করার আলোকে আমি নবীর দু’কাঁেধর উপর তাঁর কুদরতী হাতের তালু মোবারক আপন সত্ত্বার সমীচিন মোতাবেক রেখেছেন। উক্ত রূপ করুণা দয়া ও মেহেরবানীর বিনিময়ে আমি নবীর ক্বলব ছিল বক্ষ মহান প্রভুর ফয়েজ বরকত, করুণা এবং দয়ার মাধ্যমে সমৃদ্ধশালী ও ফয়েজপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। অতঃপর আমি নবী রাসূল তাঁর কুদরতী ফয়েজ ও করুণার বিনিময়ে সপ্তম মজবুত আসমান সমূহ ও সপ্তম মজবুত জমীন সমূহের সব কিছুর জ্ঞান-বিজ্ঞান সহ সমস্ত ফেরেশতা ও বৃক্ষরাজী সহ সব বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেছি। এবং হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ক্বোরআন পাক থেকে তেলাওয়াত করেন- وكذالك نرى ابراهيم হে দুনিয়াবাসী তোমরা জেনে রাখ! এ ধরনের দয়া ও মেহেরবানী মহান আল্লাহ্ পাকের পক্ষ হতে সাইয়্যেদানা হযরত ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ্ আলায়হিস্ সালাম-এর উপরও করা হয়েছি। আল্লাহ্ পাক বলেন- আর আমি মহান আল্লাহ্ আমার খলিল বন্ধু (হযরত) ইব্রাহীম আলায়হিস সালামকে আপন দয়া ও মেহেরবানীতে সপ্তম আসমান ও জমীন সমূহের রহস্যময় বড় বড় জগত সমূহের স¤্রাজ্য প্রত্যক্ষভাবে দেখিয়ে দিয়েছি। আর যেন তিনি বিশ্বাস স্থাপনকারী মজবুত ঈমানদার হিসেবে পরিগণিত হয় আল্লাহর শাহী দরবারে। হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নিজেই ইরশাদ করেন- انما بعثت معلما এবং অবশ্যই আমি কুল কায়েনাতের সব বিষয়ে মাহন আল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমাবলে কিয়ামত পর্যন্ত মহান শিক্ষাদাতা হিসেবে প্রেরিত রাসূল। [মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা ৩৬] এ পযায়ে আমি অধম সম্মানিত পাঠক সমাজের বরাবরে বিশ্ববিখ্যাত ইমাম সাইয়্যেদানা হযরত ইমাম বুসিরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু রচিত বিশ্ববিখ্যাত ইশকে রাসূল সমৃদ্ধ কাব্যগ্রন্থ ‘ক্বাছিদায়ে বুরদাহ্’-এর দু’টি পংক্তি বিষয়ের আলোকে পেশ করছি।
كفاك بالعلم فى الامّى معجزة-
فى الجاهلية والتأديب فى اليتم-
অর্থাৎ হে প্রিয় পাঠক নবী প্রেমিক আল্লাহ্র বান্দা! আপনার নিকট নবী কারীমের নবুয়তের সত্যাতা এবং সত্যায়ানের জন্য অগণিত হতবাককারী ও অক্ষমকারী মু’জেজা সমূহের মধ্যে অন্যতম পড় ধরনের মু’জেজা ও অলৌকিক নিদর্শন সমূহের মধ্যে একেবারে ধ্রুব সত্য নবীর নবুয়তের প্রামান্য বড় দলীল ও মু’জেজা হলো যে, আপনার কাছে সৃষ্টিকুলের আসল ও উত্তম নবী-রাহমাতুল লিল্আলামীন এর সত্ত্বার মধ্যে অসীম জ্ঞান-বিজ্ঞানের অধিকারী হওয়ার নিদর্শন ও গুণটিই তাঁর সত্ত্বা মোবারকের মধ্যে অগণিত মু’জেজা সমূহের মদ্যে অন্যতম বড় মু’জেজা হিসেবে যথেষ্ট হয়ে যাবে। মহান নবী যাঁর অসীম জ্ঞান-বিজ্ঞানের করুণা ও ফয়েজ-বরকতের মাধ্যমে অন্ধকার যুগে অজ্ঞ , ভ্রষ্ট এবং বর্বর জাতির মধ্রে জ্ঞান ও হেদায়তের আলো প্রজ্জ্বলিত করে তাদের অন্ধকার, অজ্ঞতা, ভ্রষ্টতা এবং বর্বরতা দুরিভূত করত: আল্লাহ্র দ্বীন- দ্বীনে ইসলাম-সিরাতুল মুস্তাকীম তথা তাঁর সুন্নাত-আদর্শ কায়েম করেছেন। যাঁর জ্ঞান গরিমার অজ¯্র বর্ষণ ধারা থেকে এক আজলা ও এক চুমুক জ্ঞানের সার ও নির্যাশ অর্জনের জন্য হযরতে আম্বিয়া কেরাম ও হযরতে রাসূলগণ আলায়হিমুস্ সালামও প্রত্যাশি ও ফরিয়াদি ছিলেন অসীম জ্ঞানের অধিকারী সত্ত্বা নবীর শাহী দরবারে। কেননা লওহ ও কলমের জ্ঞান তাঁর অসীম জ্ঞান গরিমার খনির অংশ বিশেষ মাত্র। আর অসহায় ও পিতৃহীন হওয়া সত্তেও খোদা প্রদত্ত অসাধারণ শিষ্ঠাচার ও আদব আখলাকের গুণের মাধ্যমে শিষ্ঠাচারের শিক্ষাদান করত: জগতবাসীকে মুগ্ধ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, উক্ত পংক্তিদ্বয়ের মধ্যে (الامى) ‘আল উম্মি’-এর অর্থ সৃষ্টিকুলের আসল, উৎস নবী বা কুল কায়েনাতের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নবি বা বিশ্ববাসীর লক্ষ্য বস্তু নবীই হবে। অর্থাৎ ‘উম্মি’ (الامى) শব্দটি যখনই প্রিয়নবীর শানে ব্যবহৃত হবে তখনই উপরোক্ত বর্ণিত অর্থ ছাড়া ভিন্ন কোন অর্থ শুদ্ধ হবে না।
উহার প্রমাণ স্বরূপ আমি আপনাদের সমীপে কুতবে আলম গাউছে দাওরাঁ খাজায়ে খাজেগান খলিফায়ে শাহে জীলান রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি রচিত মাজমুআয়ে সালাওয়াতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) নামক বিশ্ববিখ্যাত দরূদ গ্রন্থ হতে দরূদে পাক সংক্রান্ত একটি রেওয়াতের উদ্ধৃতি পেশ করছি-
اللهم صل وسلم على سيدنا محمد وعلى ال سيدنا محمد النبى الامى الذى لولاه لما خُلِقَ الجِنُّ والانس والملائكة والسموات والارضون-
[মাজমুআয়ে সালাওয়াতে রাসূল: উর্দ্দু ১৬ পারা, পৃষ্ঠা ১৪১৬ (৫৪)] অর্থাৎ হে আল্লাহ্ মালিক! আপনি দয়াময় প্রভূ অনুগ্রহ পূর্বক আমাদের পক্ষ হতে আমাদের মুনিব-আক্বা অধিপতি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফার সত্ত্বার উপর দরূদ সালাম অবতীর্ণ করুন। আর আমাদের মুনিব-আক্বা, অধিপতি হযরত মুহাম্মদ মুজতবা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টিকুলের আসল ও উৎস বা তিনি নবী কুল-কায়েনাতের লক্ষ্য উদ্দেশ্য অথবা কুল মাখলুকাতের লক্ষ্য বস্তু। যদি তাঁকে সৃষ্টি করা না হতো তাহলে মানব ও দাবন জাতি আর ফেরেশতাকুল ও মজবুত সপ্তম আসমান এবং মজবুত সপ্তম জমীন সহ কোন প্রকারের মাখলুককে সৃজন করা হতো না। কুল কায়েনাতকে সৃষ্টির আসল উৎস নবী নবীয়ে উম্মির শানের খাতিরেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনিই সৃষ্টির আসল ও মুল অসীম জ্ঞান-বিজ্ঞানের অধিকারী সত্ত্বা মাহন সৃষ্টি কর্তা দয়াময় আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীনের মেহেরবানীতে। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে উক্ত বিষয়ে বুঝার, জানার ও মানার আর আক্বিদা পোষণ করার তৌফিক দান করত: উভয় জগতে কামিয়াবী ও সফলতা নসিব করুন।