হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র চেহারা মোবারক

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র চেহারা মোবারক

হযরত মুহাম্মদ  সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র চেহারা মোবারক
তানজিম আহমদ রেযা

শিশু কিশোর আসরের প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি ভাল আছ। বরকতময় মাহে রবিউল আউয়াল সমাগত। মাস সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস রবিউল আউয়াল, শ্রেষ্ঠ দিন সোমবার। যেহেতু এ মাসের এ দিনে ধরাবুকে শুভাগমন করেন আমাদের প্রিয় নবী হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কেমন ছিল তাঁর নূরানী অবয়ব তা জানার আগ্রহ আছে সবার মাঝে। তাই পবিত্র হাদীসের উদ্ধৃতিসহ চেহারা মোবারকের বর্ণনার প্রায়স পেলাম।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যখন ছিলেন গুপ্ত ভান্ডারের ন্যায়। নিজের পরিচয় প্রকাশ করার জন্য তিনি আপন সত্ত্বাগত নূর থেকে আপন হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নূর মোবারককে সৃষ্টি করলেন। তারপর ঐ নূর থেকেই আল্লাহ্ তা‘আলা আরশ-কুরছি, লৌহ-কলম সহ খোদার খোদায়ী সৃষ্টি করেছেন।
১. চেহারা মোবারক
হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার চেহারা মোবারক সৌন্দর্যমন্ডিত। এমন সৌন্দর্য দিয়ে আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য কাউকে সৃষ্টি করেননি। নূরানী চেহারা দেখে অনেক ইহুদী, নাসারা মসুলিম হয়ে গিয়েছিল। যেমন: হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ইরশাদ করেন-
مَا بعَثَ اللهُ نَبِيًّا قَطُّ اِلَّا بَعَثَه حَسَنَ الْوُجْهِ حَسَنَ الصَّوْتِ حَتَّى بَعَثَ نَبِيَّكُمْ صَلَّى الله عليه وسلم فَبَعَثَه حَسَنَ الْوَجْهِ حَسَنَ الصَّوْتِ-
মহান আল্লাহ্ তা’আলা কখনো কোন নবী প্রেরণ করেননি, তবে হ্যাঁ প্রেরণ করেছেন সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট এবং সুন্দর আওয়াজ বিশিষ্ট নবীকে। তিনি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন সুন্দর চেহারা ও সুন্দর আওয়াজ বিশিষ্ট করে।
[ইবনে আসাকির তারিখু মদীনাতি দামেশক্ব- ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৫-৬] ২. রং মোবারক
হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর রং মোবারক ছিলো বিরল, যা অন্যদের তুলনায় অদ্বিতীয়। তিনি (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন মধ্যম গড়নের; লম্বাও নয়, আবার খাটোও নয়। উজ্জ্বল মনোহর বর্ণের, যা অস্বাভাবিক সাদার মধ্যে লালচে আকার। সাদাও নয়, আবার তামাটে বর্ণেরও নয়। এ সম্পর্কে হযরত জেরাইরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন-
كنت أنا وابوا الطفيل نطوف البيت فقال أبو الطفيل ما بقى احد راى رسول الله صلى الله عليه وسلم غيرى قال قلت وما رايته؟ قال نعم قلت كيف كانت صفته؟ قال كان أبيصر مليحا مقصدا-
অর্থাৎ- আমি এবং আবু তোফাইল রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করতে ছিলাম আবু তোফাইল রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি ছাড়া রাসূলকে দেখেছি এমন কেউ অবশিষ্ট নেই। রভী বলেন, আমি বললাম, ‘‘আপনি তাঁকে কিরূপ দেখেছেন?’’ তিনি বলেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ছিলেন লাবণ্যময় সাদা। তিনি ছিলেন নয় মোটা, নয় লম্বা বরং তিনি মধ্যম গড়নের। অন্যত্র হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন- ‘‘আমি হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে সুন্দর অন্য কিছু দেখিনি। যেন তাঁর চেহারা মোবারকে সূর্য চলছে। আমি তাঁর চেয়ে অধিক দ্রুতগামী অপর কাউকে দেখিনি, পৃথিবী যেন তাঁর জন্য সংকোচিত, নিশ্চয় আমরা চেষ্টা করি, তিনি এ বিষয়ে অনাগ্রহী।
[ইমাম তিরমিযী: আলজামী, কিতাবুল মানাক্বিব, বাবু ফি সিফাতিন নাবিয়্যি, ইমাম আহমদ: আল মুসনাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৫৮] তবে জনসমাবেশে তাঁকে সবার চেয়ে লম্বা (সবার উপরে) দেখা যেতো।
চক্ষু মোবারক
হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর চক্ষু মোবারক ছিলো অত্যন্ত সৌন্দর্যমন্ডিত, যা দিয়ে তিনি আল্লাহ্কে স্বচক্ষে দেখেছেন পবিত্র মিরাজ রজনীতে। তাঁর চক্ষু মোবারকের এমন আশ্চর্য ক্ষমতা ছিলো, যা দিয়ে আল্লাহ্কে দেখেছেন। [হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন- নিশ্চয় নিশ্চয় হুযুর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বীয় মহান রবকে দু’বার দেখেছেন। একবার কপালের চক্ষু দ্বারা, আরেকবার অন্তরের চক্ষু দ্বারা।
[জালালুদ্দিন সুয়ূতী: আল খাসায়েসুল কুবরা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬১] অন্যত্র হযরত জাবের ইবনে সামুরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন- ‘‘আপনি যখন তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করবেন দেখতে পাবেন তাঁর চোখ মোবারকে সুরমা লাগানো; কিন্তু তিনি কোন সুরমা ব্যবহার করেননি। তাঁর পায়ের গোড়ালী কোমল ও সুশ্রী এবং মুচকি হাসি হাসতেন, অট্ট হাসি হাসতেন না।
৩. নাক মোবারক
হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নাক মোবারক ছিলো সুউচ্চ, লম্বা, খুবই আকর্ষণীয়। এবং ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন- ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ছিলো প্রশস্ত কপাল, আকর্ষণীয় সুদীর্ঘ চোখের ভ্রু, যা যুক্ত ছিল, রাগান্বিত হলে উভয়ের মধ্যখানে মুক্তার ন্যায় উজ্জ্বল সুগন্ধময় ঘর্ম বের হতো। সুউচ্চ, লম্বা, চমৎকার জ্যোতির্ময় নাসিকা মোবারক নরম-কুসুম-কোমল গন্ডদেশ মোবারক, বড় মুখ এবং উজ্জ্বল দাঁত মোবারক বিশিষ্ট ছিলেন।
৪. মুখ মোবারক
হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মধুর কন্ঠের, গন্ডদেশ মসৃণ। হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর কন্ঠ এতো মধুর ছিলো যে মক্কার কাফিরদের সর্দার আবূ জাহেল রাতের আধারে হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরের সাথে কান লাগিয়ে ক্বোরআন তিলাওয়াত শুনতো। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন- ‘‘তিনি মনগড়া কোন কথা বলেন না, এতো ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।’’
অন্যত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন- ‘‘আল্লাহ্র কসম! যাঁর নিয়ন্ত্রণে আমার প্রাণ রয়েছে, এ মুখ থেকে সর্বাবস্থায় সত্য ব্যতীত অন্য কিছু বের হয় না।’’ [ইমাম আবু দাউদ: আস সুনান, কিতাবুল ইল্ম] ৫. দাড়ি ও চুল মোবারক
হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দাড়ি মোবারক ঘন অত্যন্ত সুন্দর ছিলো এবং চুল মোবারক খুবই সরু ও কালো ছিলো, কোকড়ানো নয় আবার পুরোপুরি সোজাও নয়, বাঁকাও নয়। যা দেখতে খুবই আকর্ষণীয় ছিলো। এ চুল মোবারক প্রায় কানের লতি মোবারক পর্যন্ত ঝুলে থাকতো। দাড়ি ও চুল মোবারকে তৈল ও চিরুনী ব্যবহার করতেন এবং কোন কলপ দিতেন না। দাড়ি ও চুল মোবারকে বিশটির বেশি সাদা বা পাকা চুল ছিলো।
হযরত সাঈন ইবনে মুসায়্যাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন- ‘‘হযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র দাড়ি মোবারক কালো ও সুন্দরভাবে খাজ কাটা ছিলো। [ইমাম বায়হাকী: দালায়েলুন নবুয়্যত, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২১৭] হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, ‘‘হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র চুল মোবারক ঝুলন্ত নয়। কোকড়ানো পরিপাটি করাও নয়। দু’কানের লতি পর্যন্ত লম্বা থাকতো, কখনো কাঁধ পর্যন্ত লম্বা থাকতো। [ইমাম বায়হাকী: প্রাগুক্ত, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২১৯]

লেখক: শিক্ষার্থী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, ষোলশহর, চট্টগ্রাম