জশনে জুলূসে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ ওবাইদুল হক নঈমী

জশনে জুলূসে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ ওবাইদুল হক নঈমী

জশনে জুলূসে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-
শেরে মিল্লাত আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ ওবাইদুল হক নঈমী >

আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ ফরমান-
قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ  -(سورة يونس: ايت ٥٨)
তরজমা: আপনি বলুন, ‘আল্লাহ্রই অনুগ্রহ ও তাঁরই দয়া, সেটারই উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিৎ। তা তাদের সমস্ত ধন-দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়। [সূরা ইয়ূনুস: আয়াত -৫৮: কানযুল ঈমান] وَاذْكُرُواْ نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاء فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا- (سورة ال عمران: ايت١٠٣)
তরজমা: এবং তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো যখন তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ছিলো, তিনি তোমাদের অন্তরগুলোতে সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দিয়েছেন। সুতরাং তাঁর অনুগ্রহ ক্রমে তোমরা পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছো।
[সূরা আ-লে ইমরান: আয়াত-১০৩, কান্যুল ঈমান] উপরোক্ত আয়াত দু’টি অনুসারে, রহমত ও ফদ্বল মানে হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সত্তা, যা সমস্ত ধন-দৌলত অপেক্ষা উত্তম। আরবের মুশরিকদের মধ্যে যে-ই শত্রুতা ছিলো হুযূর-ই আকরামের শুভাগমনের ফলে তাদের অন্তরগুলোতে ঈমানের নূর উদ্ভাসিত হয়েছে। আর এর বদৌলতে তাদের হৃদয়গুলো শত্রুতার স্থলে ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসার দোলনায় (আধার) পরিণত হয়েছে।
প্রসিদ্ধ বর্ণনানুসারে, আক্বা-ই দু’জাহানের বেলাদত শরীফ (পবিত্র জন্ম) ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফে হয়েছে।
উপরোক্ত আয়াত দু’টির আলোকে একথা মধ্যাহ্ন সূর্যের চেয়েও বেশী স্পষ্ট হয়েছে যে, হুযূর-ই আকরামের পবিত্র সত্তা সমগ্র দুনিয়ার জন্য অনুগ্রহও এবং রহমতও। আর যেসব হৃদয়ে পারস্পরিক শত্রুতা ছিলো, হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা ওয়াসাল্লাম দুনিয়ায় তাশরীফ এনে ওই সব হুদয়ে শত্রুতাকে গভীর ভালবাসায় বদলে দিয়েছেন। ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হুযূর-ই আকরামের বেলাদত শরীফ ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফে হয়েছে। এ বেলাদত শরীফের খুশীতে বৃক্ষ-পাথর, ময়দান-পাহাড়, পশু-পাখি, খানা-ই কা’বা এমনকি পাথরের মূর্তিগুলোও সাজদায় পড়ে ‘আল্লাহু আহাদ’ (আল্লাহ্ এক) বলে জপনা করতে আরম্ভ করেছিলো। পশুগুলোও এর খুশীতে পরস্পর রসূলে আকরামের মীলাদে পাকের সুসংবাদ শুনাতে লাগলো। সুতরাং মুসলামানদের উপর ওয়াজিব (অপরিহার্য) হচ্ছে হুযূর-ই আনওয়ারের বেলাদতে পাকের শোকরিয়ায় খুশী উদ্যাপন করা।
দীর্ঘকাল থেকে প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়াল বিশ্বের মুসলমানগণ মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে জুলূস (বর্ণাঢ্য মিছিল) বের করে আসছেন। বাংলাদেশে ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফে ‘জশনে জুলূসে ঈদে মীলাদুন্নবী’ (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রথম প্রবর্তক হলেন রাহবারে শরীয়ত ও ত্বরীক্বত মুর্শিদুনা ক্বুত্ববুল ইরশাদ আওলাদ-ই নবী (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) হযরত আল্লামা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু। তিনি বিগত ১৯৭৪ ইংরেজীতে ‘আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া’কে বলেছিলেন- রবিউল আউয়াল শরীফের ১২ তারিখে পবিত্র মীলাদুন্নবী হুযূর-ই আকরামের বেলাদত শরীফ উপলক্ষে জশনে জুলূসে ঈদে মীলাদুন্নবী’র ‘আন্জুমান’-এর ব্যবস্থাপনায় আয়োজন করা হোক! সুতরাং ওই বছর থেকেই ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ উদ্যাপন উপলক্ষে, মুর্শিদে করীমের নির্দেশানুসারে ‘খানকাহ্-ই ক্বাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া, বলুয়ার দিঘী পাড় থেকে জুলূসের সূচনা হয়েছিলো। তারপর লালদিঘী ময়দান থেকে লক্ষ লক্ষ আশেক্বে রাসূল রিসালত-প্রদীপের আলোয় প্রাণ-উথসর্গকারী পতঙ্গের ন্যায়, জুলূসে সামিল হন। ওই দিনে আল্লাহ্ তা‘আলার হামদ, হুযূর মোস্তফার না’ত, কালামুল্লাহ্ শরীফের তিলাওয়াত, না’রা-ই তাকবীর, না’রা-ই রিসালঅত, না’রা-ই গাউসিয়ার ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়েছিলো যেন মদীনাতুল আউলিয়া চট্টগ্রাম পুরোটাই জুলূসে শামিল হয়েছিল। (এ জুলূস বিশেষ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে ‘ষোলশহরস্থ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া ময়দানে, বিশাল মাহফিলে জমায়েত হয়। বিগত ১৯৭৬ সাল থেকে খোদ্ হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু  প্রতিবছর এ জুলূসের সদারত করেন। হুযূর ক্বেবলার ওফাত শরীফের পর থেকে প্রতি বছর বর্তমান হুযূর কেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ সাহেব অথবা দরবারে আলিয়া সিরিকোটিয়া শরীফের কোন প্রতিনিধি (আওলাতে পাক) এ জুলূসের সদারত করেন।  আরো উল্লেখ্য যে, হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ পরবর্তীতে প্রতি বছর ৯ই রবিউল আউয়াল শরীফে রাজধানী ঢাকায়ও জশনে জুলূসের আয়োজনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। সেখানেও এভাবে জাঁকজমক সহকারে জুলূস বের হয়ে আসছে।)
এখানে আরো উল্লেখ থাকে যে, জশনে জুলূসের সূচনা লগ্ন থেকে জুলূস চলাকালে এবং আগে ও পরে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার সম্মানিত মুহাদ্দিস, মুফাস্সির ও ফক্বীহগণ এবং বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত প্রসিদ্ধ ওলামা-ই কেরাম ক্বোরআন হাদীসের আলোকে হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মু’যিজাদি ও ফযীলতসমূহ, হুযূর-ই আকরামের সুন্নাত অনুসারে আমল করার গুরুত্ব বর্ণনা-তাক্বরীর করেন। এর ফলে উপস্থিত শ্রোতাদের আক্বাইদ ও আমলাদি সংশোধনের সুযোগ হয়। তাছাড়া মীলাদে পাক উপলক্ষে গরীব-মিসকীন ও অভাবীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার প্রতিও উৎসাহিত করা হয়। আর উরসুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাহফিল অনুষ্ঠানের বৈধতা ও মুস্তাহাব হবার পক্ষে আমাদের ওলামা-ই কেরাম সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করেন। এ জশনে জুলূস এখন লক্ষ-কোটি মুসলমানের (ও বৃহত্তর সুন্নী) ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জশনে জুলূসের পক্ষে আরো কতিপয় অকাট্য দলীল নিম্নে প্রদত্ত হলো-

মক্কা বিজয়ের জশনে জুলূস
ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় মুসলমানদের জন্য এক মহান নি’মাত। শির্ক ও কুফর থেকে ভূ-পৃষ্ঠকে বিশেষত: কা’বা গৃহকে পবিত্র করার প্রয়োজনীয়তা প্রকটভাবে দেখা দিয়েছিলো। সুতরাং আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশে ৮ম হিজরীতে হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মক্কা মুর্কারমার দিকে অভিযান পরিচালনা করেন এবং এ অভিযানে ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় সম্পন্ন হয়েছিলো। হুযূর-ই আকরাম মক্কা বিজয়ের অভিযানে, মক্কা অভিমুখে কয়েকটা জুলূস আকারে সৈন্য বাহিনীকে সাজিয়েছিলেনঃ
১.     সর্বপ্রথম আল্লাহ্র তরবারি হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদকে রওনা করেন, যিনি বনূ সুলায়মের হাজারো বীর পুরুষকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। এ বাহিনীর মধ্যে দু’টি পতাকা উড্ডীন ছিলো।
২.     হযরত খালিদের পর পর হযরত যোবাইর ইবনুল আওয়াম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু পাঁচশ পলোয়ান বীর-যোদ্ধাকে সাথে নিয়ে রওনা হন। তাঁদের ছিলো কালো পতাকা। তাঁরাও না’রা-ই তাকবীর-এর ধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে যান।
৩.     এরপর বনী গিফারের তিনশ’ বীর পুরুষ বের হন। এ সেনাদলের পতাকা হযরত আবূ যার গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর হাতে ছিলো। তাঁরাও তাকবীরের ধ্বনি দিতে দিতে অগ্রসর হন।
৪.     ইত্যবসরে বনূ কা’ব ইবনে ওমর-এর পাঁচশ’ লোক এসে পৌঁছেন। এ জুলূসরূপী সৈন্যদলের পতাকা বিশর ইবনে সুফিয়ানের হাতে ছিলো।
৫.     এরপর ‘মুযায়নাহ্’ গোত্রের হাজার লোকের দলটি (জুলূস আকারে) অগ্রসর হয়। তাঁদের মধ্যে তিনটি পতাকা উড্ডীন ছিলো।
৬.     এরপর জুহায়নাহ্ গোত্রের আটশ’ বীর বাহাদুর বের হন। তাঁদের চারটি পতাকা ছিলো।
৭.     তাঁদের পেছনে আশ্জা’ গোত্রের তিনশ’ লোকের জুলূসরূপী দল অগ্রসর হয়েছিলো।
৮.     এমনকি হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বিশেষ সৈন্য বাহিনী আত্মপ্রকাশ করলেন। হুযূর-ই আকরাম তাঁর নাক্বাহ্ বা উটনীর পিঠে আরোহনরত ছিলেন। এ বাহিনীতে প্রায় পাঁচ হাজার সম্মানিত মুহাজির ও অভিজাত আনসারী অস্ত্র-সজ্জিত ছিলেন। তাঁরাও গগন বিদারী না’রা-ই তাকবীর সহকারে এগুচ্ছিলেন।
বলাবাহুল্য, হুযূর-ই আকরামের নূরানী পরিচালনায় এ অভিযানে মক্কা মুর্কারামার বিজয় সুসম্পন্ন হয়েছিলো।
বিদায় হজ্জের জশনে জুলূস
বিশুদ্ধ অভিমতানুসারে একলক্ষ চব্বিশ হাজার সাহাবা-ই কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম-এর এক আযীমুশ্শান জুলূস সহকারে ঐতিহাসিক বিদায় হজ্ব সুসম্পন্ন হয়েছিলো।  এ সফরে হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এ বিশাল জমা‘আত মদীনা মুনাওয়ারাহ্ থেকে মক্কা মুকাররামার দিকে রওনা হয়েছিলেন। তাঁরা সবাই হুযূর-ই আকরামের সাথে হজ্বের যাবতীয় বিধান পালন করেন। উল্লেখ্য, বায়তুল্লাহ্ শরীফের হজ্ব ইসলামের রুকন ও এক বড় ইবাদত।

খাতূনে জান্নাত রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার জশনে জুলূস
ক্বিয়ামতের দিনে খাতূনে জান্নাত রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার আখেরী জশনে জুলূস বের হবে। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয় কন্যা সাইয়্যেদাতুল মাস্তূরাত হযরত ফাতিমা যাহরার মহা মর্যাদা প্রকাশের নিমিত্তে আরশে মু‘আল্লাহ্র দিক থেকে আহ্বান আসবে- ‘হে মাহশহরবাসীরা! তোমরা সবাই (এখন) তোমাদের চুক্ষুগুলো বন্ধ করে তোমাদের মাথাগুলো নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে নাও। কেননা, খাতূনে জান্নাত জান্নাতের হুরগুলোর দল নিয়ে (পুল) সেরাত পার হবেন। হাফেযুল হাদীস ইবনে হাজার হায়তামী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন-
عَنْ اَبِىْ اَيُّوْبَ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ نَادى مُنَادٍ مِّنْ بَطَانِ الْعَرْشِ يَا اَهْلَ الْجَمْعِ نَكِّسُوْا رُؤْسَكُمْ وَغُضُّوْا اَبْصَارَكُمْ حَتّى تَمُرَّ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ عَلَى الصِّرَاطِ ـ فَتَمُرُّ مَعَ سَبْعِيْنَ اَلْفَ جَارِيَةٍ مِّنْ الْحُوْرِ الْعِيْنِ كَمَرِّ الْبَرْق-
অর্থ: হযরত আবূ আইয়ূব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ফরমায়েছেন, ক্বিয়ামত- দিবসে আরশে মু’আল্লাহর দিক থেকে আহ্বান আসবে, ‘হে হাশরের ময়দানে অবস্থানকারীরা! তোমরা তোমাদের মাথাগুলো নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে নাও, চোখগুলো বন্ধ রাখো যে পর্যন্ত না খাতূনে জান্নাত ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ সত্তর হাজার জান্নাতী হুর (-এর জশনে জুলূস)কে সাথে নিয়ে বিজলীর মতো (পুল) সেরাত পার হবেন।

হিজরতুন্নবীর জশনে জুলূস
যখন আক্বা-ই দু’আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মক্কা মুর্কারামাহ্ থেকে মদীনা মুনাওয়ারায় তাশরীফ নিয়ে যান, তখন সম্মানিত আনসারী সাহাবীগণ সশস্ত্র হয়ে তাঁকে জুলূসের আকারে মদীনা মুনাওয়ারায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সুতরাং বোখারী শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে-
فَثَارُ الْمُسْلِمُوْنَ اِلَى السَّلَاحِ فَتَلَقَّوْا بِظَهْرِ الْحَرَّةِ
অর্থ: মদীনা মুনাওয়ারার মুসলমানগণ অস্ত্র সজ্জিত হয়ে যাহরে র্হারাহ্ নামক স্থানে হুযূর-ই আকরামের সাথে সাক্ষাত করেন। সেখান থেকে জুলূস সহকারে তাঁকে মদীনা তাইয়্যেবায় নিয়ে আসেন।  [বোখারী শরীফ: পৃষ্ঠা- ৫৫৫] বস্তুত: আক্বা-ই দু’জাহান সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মদীনা তাইয়্যেবায় তাশরীফ আনয়ন করা আন্সারের জন্য এক আযীমুশ্শান নি’মাতই। এ কারণে তাঁরা এর শোকরিয়া স্বরূপ তাঁকে যাহরে র্হারাহ্ নামক স্থান থেকে জুলূস সহকারে মদীনা তাইয়্যেবাহ্য় নিয়ে এসেছিলেন।
পরিশেষে, পবিত্র ক্বোরআনের আয়াত ও হাদীস শরীফগুলোর বর্ণনা থেকে একথা প্রমাণিত হয় যে, জশনে জুলূসে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম শুধু জায়েযই নয়, বরং সমস্ত ইবাদতের মূল। কেননা, হুযূর মোস্তফার পবিত্র সত্তার শুভাগমনের কারণে মুসলমানগণ এক কামিল বরং কামিলতম দ্বীন (ধর্ম) পেয়েছেন, অগণিত নি’মাত পেয়ে ধন্য হয়েছেন, যা ঈমানদারদের জন্য নাজাতের অতি মহান ও মজবুত মাধ্যমই। আর হুযূর-ই আকরামের যাতে পাক (পবিত্র সত্তা) মু’মিনদের জন্য আল্লাহর অতুলনীয় নি’মাত, অনুগ্রহ ও দয়া। এর শোকরিয়া স্বরূপ খুশী উদ্যাপন করা, জুলূস বের করা ক্বোরআন-সুন্নাহ্র একেবারেই অনুরূপ। এ জশনে জুলূসে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও।
জশনে জুলূসে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষে প্রমাণাদি আমি (আল্লাহরই মুখাপেক্ষী বান্দা) নিম্নলিখিত কিতাবগুলো থেকে সংক্ষিপ্তাকারে সংকলন করেছিঃ
[১. মাওয়াহিব-ই লাদুন্নিয়াহ্, কৃত: সহীহ বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারী ইমাম ক্বাস্তলানী (আরবী), ২. যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব, কৃত: ইমাম আবদুল বাক্বী যারক্বানী মালেকী, (বৈরূত, লেবাননে মুদ্রিত), ৩. আস্ সাওয়া‘ইকুল মুহরিক্বাহ্, কৃত: হাফেযুল হাদীস ইবনে হাজর হায়তামী মক্কী, আরবী, ইস্তাম্বুলে মুদ্রিত, ৪. মাদারিজ্জুন্নবূয়ত, (উর্দু), পাকিস্তানে মুদ্রিত, ৫. আল্ হাভী লিল ফাতাওয়া, কৃত: ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী, বৈরূত, লেবাননে মুদ্রিত]

লেখক: শায়খুল হাদীস, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম
ভাষান্তরে: মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান, মহাপরিচালক- আনজুমান রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম।