শুরু হলো হিজরি ১৪৪৪
বর্ষ পরিক্রমায় আমাদের মাঝে ফিরে এলো নতুন বছর ১৪৪৪ হিজরি। স্বাগতম হিজরি নববর্ষ। মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিজরি সাল। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম হলেও এ হিজরি সাল সম্পর্কে অনেকেই বেখবর। হিজরি বর্ষের সাথে মুসলমানদের বহু ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত। হিজরি নববর্ষে মুসলিম উম্মাহ্ ইসলামের প্রকৃত চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য সংহতি-শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করুক এ কামনা করি। সকলকে জানাই নবর্ষের শুভেচ্ছো।
এ মাসে সংঘটিত হয়েছে মানব জাতির ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ঘটনা। এ মাসের ১০ তারিখ আল্লাহ্র অসীম কুদরতী অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এদিনেই সৃষ্টির প্রথম মানব হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের খলীফারূপে প্রথিবীতে আগমন করেন এবং এদিনেই তাঁর তাওবা কবুল হয়। হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম এদিনেই মহাপ্লাবন শেষে সকল আরোহী সহ নিরাপদে ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করেন। আল্লাহ্র মনোনীত পয়গাম্বরগণ এদিনে বহু পরীক্ষার সম্মুখীন হন এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হন। হাদীস শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী এ দিনেই সংঘটিত হবে কিয়ামত। ইয়াওমে আশুরা নামে খ্যাত এদিনটি অত্যন্ত ফজিলমতয় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিবস হিসেবে মুসলিম উম্মাহর কাছে স্বীকৃত।
বিশেষত উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এদিন সবিশেষ স্মরণীয় ও সমাধিক তাৎপর্যপূর্ণ- ৬১ হিজরির ১০ মুর্হারম তারিখে সংঘটিত হয় এমন এক হৃদয় বিদারক ঘটনা, যা আশুরার গুরুত্বে নতুন মাত্রা যোগ করে। ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে জান্নাতি যুবকদের সরদার নবী দৌহিত্র হযরত মা ফাতিমার নয়নমনি ইমাম আলী মকাম সৈয়্যদুশ্ শোহাদা হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তাঁর নিষ্পাপ শিশু সন্তান, পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীসহ এক অসম যুদ্ধে কুখ্যাত ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। হিজরি ৬০ সনে হযরত আমিরে মু’য়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র ওফাতের পর তাঁর পুত্র ইয়াজিদ নিজেকে খলীফা ঘোষণা করে। সে মদীনার গভর্ণরের মাধ্যমে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে তার পক্ষে বায়আত গ্রহণের নির্দেশ দেয়।
পাপিষ্ট, দুরাচার ইয়াজিদ খেলাফতের উপযুক্ত তো নয়ই বরং এ পদ্ধতিও ইসলাম পরিপন্থী। এ অবস্থায় তাকে খলীফা স্বীকার করা মানে প্রিয়নবীর দ্বীনের মূলে কুঠারাঘাত হানার শামিল। তাই তিনি এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। অপর দিকে কুফাবাসী অসংখ্য মুসলিম তাঁকে ফাসিক ইয়াজিদের অপশাসন থেকে রক্ষার আকুতি জানান। ইসলামের সুশোভিত বাগানকে পাপিষ্ট ইয়াজিদের খপ্পর থেকে রক্ষার জন্য তিনি ৭২ জনের ক্ষুদ্র অথচ ঈমানী তেজে উজ্জীবিত দল ইয়াজিদের বিশাল বাহিনীর সাথে লড়ে অবশেষে শাহাদাতের সুধা পান করেন। এ বিশাল আত্ম-ত্যাগের মাধ্যমে তিনি এ শিক্ষা দিয়ে গেছেন একজন মুসলমান মাত্রই অন্যায় অবিচার, স্বেচ্ছাচার, জুলুম, অরাজকতা ও ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড সমর্থন করতে পারে না। কারবালার এ নজির বিহীন ঘটনা মুসলমানদেরকে যুগে যুগে অসত্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সংগ্রামে প্রেরণা যোগাবে। তাই কারবালার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বর্তমান সমাজের চারদিকে অন্যায়-অবিচার, অশ্লীলতা-পাপাচার ইত্যাদি গর্হিত অপকর্মের বিরুদ্ধে সকল মুসলমান ঈমানী বলে বলিয়ান হয়ে হোসাইনী প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবাদ জানাতে হবে। এটাই হবে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর প্রতি প্রকৃত ভালবাসার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
মহান রাব্বুল আলামীনের অশেষ রহমতে মাসিক তরজুমান পদার্পণ করেছে নিয়মিত প্রকাশনার ৪৪তম বর্ষে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এ পত্রিকা ইসলামি মূল্যবোধ সৃষ্টি, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আদর্শ তুলে ধরা, ঈমান আক্বিদা দৃঢ় করণে সিলসিলা-ই কাদেরিয়ার প্রচার-প্রসারে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সর্বস্তরের সুন্নি মুসলমানদের নিকট জনপ্রিয় পত্রিকা হিসেবে এটা শুধু বাংলাদেশ নয় বহির্বিশ্বেও সমাদৃত হচ্ছে। এ শুভ মুহূর্তে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আওলাদে রাসূল রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীক্বত মুর্শিদে বরহক আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হিকে। যাঁর সদয় নির্দেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে সুফিবাদ সত্যসন্ধানীদের আলোর দিশারি এ পত্রিকা। যাঁরা মূল্যবান লেখা দিয়ে মাসিক তরজুমানকে সমৃদ্ধ করেছেন, বিজ্ঞাপন দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, যারা বিপণনে, প্রচার-প্রসারে সহায়তা দিচ্ছেন তাদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সম্মানিত লেখক, পাঠক, গ্রাহক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়িদের জানাই শুভেচ্ছা।