ফরজ নামায জমাতসহকারে আদায হওয়ার পর ইমাম সাহেব মুসল্লিদেরকে সাথে নিয়ে মুনাজাত করা জায়েয কিনা?
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ্- চট্টগ্রাম
প্রশ্ন: ফরজ নামায জমাতসহকারে আদায হওয়ার পর ইমাম সাহেব মুসল্লিদেরকে সাথে নিয়ে মুনাজাত করা জায়েয কিনা? কেউ কেউ এটাকে না-জায়েয ও বিদআত বলে। মুনাজাতের গুরুত্ব আলোচনা করার অনুরোধ রইল।
উত্তর: দো’আ বা মুনাজাত আল্লাহ্ ও বান্দার মাঝে উত্তম সেতুবন্ধন। দো’আ/মুনাজাত মূলত: বিপর্যস্ত হৃদয়ের আশ্রয়স্থল ও ইবাদতের মূল। ইসলাম দো’আকে স্বতন্ত্র ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছে। দো’আ/মুনাজাত প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন-
أجيب دَعْوَةَ الدّاعِ اِذا دَاعَانِ- (البقرة- ১৮৬) অর্থাৎ- আমি আহ্বানকারী/মুনাজাতকারীর আহ্বানে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে বা আমার দরবারে মুনাজাত করে। [সূরা বাক্বারা: আয়াত-১৮৬] তাই আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর দরবারে ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে প্রার্থনার হস্ত সম্প্রসারণকারী বান্দার দো’আ অবশ্যই শুনেন এবং কবুল করেন। ফরয হউক বা নফল যে কোন নামাযের সালাম ফিরিয়ে উভয় হাত উপরের দিকে তুলে মহান আল্লাহর দরবারে দো’আ করা শরীয়ত সম্মত, যা ক্বোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ ও ফুকাহা-ই কেরামের বাণী দ্বারা প্রমাণিত। যেমন মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন- فاذا فَرَغْتَ فَانْصَبْ وَالى رَبِّكَ فَارْغَبْ- অর্থাৎ- (হে প্রিয় হাবীব) যখন আপনি নামায থেকে অবসর হবেন, তখন দো’আর মধ্যে লেগে যান এবং আপনার প্রভুর দিকে মনোনিবেশ করুন। [সূরা ইন্শিরাহ: আয়াত- ৭-৮] উক্ত আয়াতে কারীমা নামাযের পর মুনাজাতের স্পষ্ট প্রমাণ। যেমন বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে জালালাইনে’ উল্লেখ রয়েছে- فاذا فرغتَ مِنَ الصلوة فانْصَبْ اتعب فى الدّعاءِ-
অর্থাৎ- যখন আপনি নামায হতে অবসর হবেন, তখন দো’আয় মনোনিবেশ করুন। নামাযের পর দো’আ করার বা মুনাজাতের নির্দেশ স্বয়ং মহান আল্লাহ্ প্রিয় নবীর মাধ্যমে আমাদেরকে দিয়েছেন। পবিত্র হাদীসে পাকে প্রিয় নবী হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
عن مالك بن يسار قال قال رسول الله صلى الله صلى الله عليه وسلم اذا سألتمُ الله فاسئلُوه بِبُطُونَ اكفكم ولاتسالوه بظهورها فاذا فرَعْتُمْ فامسحُوْا بها وجوهَكُمْ- (رواه ابو داؤود- مشكوة صفه ১৯৬)
অর্থাৎ- প্রিয় নবীর সাহাবী হযরত মালিক ইবনে ইয়াসার রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন ‘‘যখন তোমরা আল্লাহর দরবারে দো’আ করবে তখন তোমাদের হাতের তালু উপরের দিকে করে দো’আ করবে, হাতের পৃষ্ঠ দিয়ে নয়। আর মুনাজাত থেকে অবসর হয়ে উভয় হাতের তালু তোমাদের চেহারায় মসেহ করবে। [আবু দাঊদ ও মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা ১৯৬] ফরয নামাযের জমাতের পর মুনাজাত স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বরকতময় আমল হতে প্রমাণিত। সুতরাং ফরয নামাযের জামাতের পর ইমাম সাহেব মুসল্লিদের সাথে নিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব ও বরকতময়। যেমন- عن الاسود العامرى عن ابيه قال صليتُ مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلمّا سَلّمَ اَنْصَرفَ ورَفَعَ يَدَيه ودَعا-
অর্থাৎ প্রখ্যাত হাদীস বর্ণনাকারী হযরত আসওয়াদ আমেরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে ফজরের নামায পড়েছি। যখন তিনি ফজরের নামাযের সালাম ফিরালেন তখন মুসল্লিগণের দিকে ফিরে বসলেন এবং উভয় হাত উপরের দিকে উঠিয়ে মুনাজাত করলেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা] ফুকাহায়ে কেরাম নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত করা মুস্তাহাব ও উত্তম বলে ফতোয়া দিয়েছেন। যেমন- ‘নুরুল ঈজাহ্’ কিতাবে ইমামত অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে- ثُمَّ يدعُوْن لانفسهِمْ وللمسلمين رافعى اَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَمسِحُوْن بها وجُوهَهُمْ فىِ اخِره-
অর্থাৎ- নামাযের জমাত শেষে হাত তুলে নিজেদের জন্য এবং সমস্ত মুসলমানের জন্য দো’আ করবে। অতঃপর উভয় হাত দ্বারা নিজেদের চেহেরা মসেহ করবে। নামায শেষে মুনাজাত করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আমল হতে প্রমাণিত। সুতরাং ফরজ, সুন্নাত, ওয়াজিব ও নফল তথা প্রত্যেক নামাযের পর উভয় হাত তোলে দো’আ মুনাজাত/ ফরিয়াদ করা যুক্তিযুক্ত, ক্বোরআন-হাদীস তথা শরীয়ত সম্মত। যা অতি বরকতময়, উত্তম ও মুস্তাহাব আমল। এটাকে না-জায়েয ও বিদআত বলা গোমরাহী ও মূর্খতা। [তাফসীরে জালালাইন শরীফ, সুনানে আবু দাঊদ শরীফ, মিশকাত শরীফ ও নুরুল ঈজাহ্ ইত্যাদি]