প্রশ্নোত্তর- ইল্লাল্লাহ্ জিকির করা যাবে কিনা?

প্রশ্নোত্তর- ইল্লাল্লাহ্ জিকির করা যাবে কিনা?

মুহাম্মদ আবদুল কাদের- সিলেট।

প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় খতমে গাউসিয়া নিয়মিত আদায় করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছু কিছু মওলভী ও অল্পশিক্ষিত ব্যক্তি একটি ইসিম নিয়ে আপত্তি করে- তাহলো ‘ইল্লাল্লাহ্’ জিকির করা নাকি তাদের মতে না-জায়েয। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর বিনীত আবেদন করছি।

উত্তর: তরিকতের সবকে ‘ইল্লাল্লাহ্’ যে সবক খানা রয়েছে,তা তরিকতের শেখগণ স্বীয় মুরীদানকে অজিফা হিসেবে প্রদান করেছেন অর্থগত দিক দিয়ে সম্পূর্ণ শুদ্ধ। এই জিকিরটার অর্থ আল্লাহ্ নেই, আল্লাহ্ ছাড়া ইত্যাদি বলা অজ্ঞতা ও মুর্খতার নামান্তর। মূলত ‘ইল্লাল্লাহ্’ জিকিরটির আসলরূপ হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’। অর্থাৎ আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। সাধারণত: ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ জিকির করার পর ‘ইল্লাল্লাহ্’ জিকির করা হয়। তাই এখানে ‘ইল্লাল্লাহ্’ জিকির এর ক্ষেত্রে ‘লা-ইলাহা’ প্রকাশ্যভাবে উল্লেখ না থাকলেও তা উহ্য থাকবে। আর তা উহ্য থাকার করিনা বা নিদর্শন হল ‘ইল্লাল্লাহ্’ জিকির করার পূর্বে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’-এর জিকির করা হয়। তখন ‘ইল্লাল্লাহ্’-এর অর্থ হবে আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ/উপাস্য নেই। যেমন নতুন চাঁদ উদিত হলে আরববাসীরা ‘হিলাল হিলাল’ তথা চাঁদ চাঁদ বলে চিৎকার করে। অথচ জাহেরীভাবে এটি বাক্য হিসেবে অসম্পূর্ণ। কেননা এখানে বিধেয় আছে উদ্দেশ্য উল্লেখ নেই।
সুতরাং এখানে ‘হাজা’ মুবতাদা তথা উদ্দেশ্যকে উহ্য মানতে হবে। তখন হবে ‘হাজা হিলালুন্’ অর্থাৎ এটা নতুন চাঁদ। পূর্ণ বাক্য। যদিও বা উচ্চারণের ক্ষেত্রে সংক্ষেপ করে ‘হিলাল’ বলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ‘হাজা’ শব্দটি উহ্য মানতে হবে। অর্থ হবে এটা নতুন চাঁদ, তদ্রƒপ ‘ইল্লাল্লাহ্’ এর অর্থ হবে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’। তাই এ সবক বা অজিফা আদায়কালে ২০/৩০ বার ৫০/১০০ বার পড়ার পর ‘ইল্লাল্লাহ্’ সহ মিলিয়ে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ সম্পূর্ণ পড়া বা উচ্চারণ করা হয়। এ রকম বহু উদাহরণ ক্বোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ এবং আরবী ভাষায় ব্যবহৃত বা উল্লেখ আছে। তাছাড়া ‘ইল্লা’ শব্দটির একটি অর্থ হয় ‘একমাত্র’। তখন ‘ইল্লাল্লাহ্’-এর অর্থ হবে একমাত্র আল্লাহ্ই উপাস্য। তাই এটাকে আরবী ব্যাকরণ মতে অশুদ্ধ বলার কোন অবকাশ নেই। সুতরাং ‘ইল্লাল্লাহ্’ জিকিরকে না-জায়েয বলা মূলত জ্ঞান শূন্যতা ও মূর্খতার পরিচয়।
সহীহ বোখারী শরীফ ২য় খন্ডের মাগাজী অধ্যায়ে এবং মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে- হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মোত্তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা-এর বাণী ‘ইল্লাল্ ইজখার’ অর্থাৎ- ইজখার ঘাস ব্যতীত পবিত্র হেরেমের অন্যান্য ঘাস কাটা যাবে না বা ‘ইল্লাল ইজখার’ অর্থাৎ- একমাত্র ইজখার বাক্যাংশটি বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু ‘মুসতাছ্না মিনহু’ কে উহ্য রেখে ‘মুসতাছনা’কে উল্লেখ করা, ‘মাওসুফ’কে উহ্য রেখে ‘সিফত’কে উল্লেখ করা এবং ‘মুবতাদা’কে উহ্য রেখে ‘খবর’কে উল্লেখ করা আরবী সাহিত্যের সৌন্দর্য। এতটুকু জ্ঞান যার কাছে নেই তার জন্য ক্বোরআন-হাদীসের অনুবাদ করা হারাম। আর যদি ‘ইল্লাল্লাহ্’ না-জায়েয হয় তবে সহীহ বুখারীর হাদীসের উক্ত বাক্যাংশ ‘ইল্লাল ইজখার’ও কি বৈধ নয়? না’উযুবিল্লাহ। অতএব, বৈধ জিকিরকে অবৈধ বলা ও না-জায়েয বলা জঘন্যতম মিথ্যা ও মারাত্মক অপরাধ। এসব বদমাযহাবী, তরিকত বিদ্বেষী হতে আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের হেফাজত করুক।
আ-মী-ন।
এ বিষয়ে তরজুমান প্রশ্নোত্তর বিভাগে পূর্বে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

Share:

Leave Your Comment