খতমে গাউসিয়া শরীফ আয়োজনের ফযীলত

খতমে গাউসিয়া শরীফ আয়োজনের ফযীলত

মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন কাদেরী- কামিল ২য় বর্ষ, শাহাচন্দ আউলিয়া আলিয়া মাদরাসা, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: বিভিন্ন স্থানে যে খতমে গাউসিয়া শরীফ আয়োজন করে থাকে। এর ফযীলত সম্পর্কে জানালে উপকৃত হব।
 উত্তর: কাদেরিয়া তরিকার আউলিয়ায়ে কেরাম কর্তৃক নির্বাচিত এবং কুরআনুল করিম ও হাদীস শরীফ থেকে সংগৃহীত, বরকতমন্ডিত ও ফজিলতপূর্ণ যিকির-আযকার, দোয়া-দরুদ, বিভিন্ন সূরা ও আয়াতের সমষ্টিগত নাম হল খতমে গাউসিয়া শরীফ। উল্লেখ্য যে, খতমে গাউসিয়া শরীফের তরতীবে যে অজিফাগুলো স্থান পেয়েছে তা বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতে পরিপূর্ণ। যা ভক্তি সহকারে পালনের মধ্যে রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের অনেক কল্যাণ ও সফলতা। এটা শরীয়তসম্মত। এটাকে অস্বীকার করা কুরআন-হাদীস তথা শরিয়ত সম্পর্কে অজ্ঞতার নামান্তর এবং সত্যিকার অর্থে আল্লাহর ওলীদের প্রদর্শিত মত ও পথকে অবজ্ঞা করা। খতমে গাউসিয়া ও গেয়ারভী শরীফ এবং এ জাতীয় বরকতমন্ডিত খতমসমূহ যেমন খতমে খাজেগান ইত্যাদি মূলত আমলে সালেহ বা সৎ কর্ম। কেননা এতে রয়েছে- আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের স্মরণ, জিকির-আযকার, দোয়া-দরুদ, ফাতেহাখানি এবং আল্লাহর বান্দাদের মাঝে তবরুক পরিবেশন। এসবই আমলে সালেহ বা নেক আমল। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন-
اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَهُمْ جَنّٰتٌ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِیْرُؕ
অর্থাৎ নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল আমলসমূহ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত তথা বাগিছাসমূহ যার তলদেশে অনেক নহর বা ঝর্ণা ধারা। এটা তাদের জন্য বড়ই সফলতা। [সূরা বুরুজ, আয়াত নং-১১] অপর আয়াতে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন-
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى
وَ هُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْیِیَنَّهٗ حَیٰوةً طَیِّبَةًۚ-
অর্থাৎ ঈমান থাকাবস্থায় পুরুষ বা মহিলা হতে যে ভাল কাজ করবে তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব। [সূরা নাহল, আয়াত-৯৭] তাই খতমে গাউসিয়া, খতমে খাজেগান ও খতমে গেয়ারভী শরীফ ইত্যাদি মূলতঃ কুরআন-হাদীসের বাস্তব আমল। তাছাড়া এ সমস্ত খতমসমূহের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও আলিয়ায়ে কেরামকে স্মরণ করা হয় যা কুরআন-হাদীসের আলোকে যিকরুল্লাহর সামিল। কেননা, আল্লাহর যিকর কয়েক প্রকারঃ ১. সরাসরি আল্লাহর জাত ও তাঁর গুণাবলীকে স্মরণ করা, ২. আল্লাহর নবী-রাসূল এবং তাঁর প্রিয় বান্দাগণের ও তাঁর প্রিয় বরকতমন্ডিত বস্তুসমূহের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা, ৩. আল্লাহর দুশমনদের তিরস্কার ও নিন্দাপূর্বক আলোচনা। কাজেই বুঝা গেল, খতমে গাউসিয়া, খতমে খাজেগান, দরুদে তাজ, সাজরা শরীফ ও সালাত-সালাম শুরু হতে শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহর যিকির ও আল্লাহর অলিদের জিকির/স্মরণ-ভক্তি ও আদব-মুহাব্বত সহকারে এগুলো আদায় করা মানে মহান আল্লাহকে স্মরণ করা। বিশেষত যেসব মুসলমান এসব খতমে শরীক হয়, তাদের অনেকে কুরআন তেলাওয়াত, আসমাউল হুসনা, বরকতময় জিকির-আযকার জানে না। ফলে এসব খতমে তারা সবার সাথে মুখে মুখে উচ্চারণ করে পাঠ করার মাধ্যমে অশেষ ফযিলত হাসিল করে।
সুতরাং এ সমস্ত খতমসমূহ ও দুআ দরুদ ঘরে-বাসায়, দোকানে-অফিসে ভক্তি ও আদবের সাথে আদায় করা অত্যন্ত ফজিলত ও বরকতময়।
[শাজরা শরীফ, সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরীয়া, যুগ জিজ্ঞাসা, প্রকাশনায় আনজুমান ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম।] খতমে গাউসিয়া শরীফের ইসিমসমূহের মধ্যে সূরা ইখলাস অন্যতম। সূরা ইখলাসের ফজিলত সম্পর্কে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম একদা সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে এরশাদ করলেন, তোমাদের কারও জন্য এক রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করা কি কঠিন কাজ? তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমাদের কার এমন শক্তি আছে যে, এরূপ পারবে? তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ কররেন, قل هوالله احد تعدل ثلث القران অর্থাৎ ‘কুল হুয়া আল্লাহু আহাদ’ কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [সহীহ্ বুখারী শরীফ, হাদিস নং-৪৬৪৫] অপর এক হাদীসে সূরা ইখলাস সম্পর্কে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِه اِنَّهَا لَتَعْدِلْ ثُلُثَ الْقُرْان
[رواه البخارى] অর্থাৎ আল্লাহর শপথ বা কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, এ সূরা (কুল হুয়া আল্লাহু আহাদ) হলো (সওয়াব ও নেকীর দিক দিয়ে) সমগ্র কুরআনের এক তৃতীয়াংশর সমান। [সহীহ্ বুখারী শরীফ, ৪৬৪৪নং হাদীস, ফাজায়েলে কুরআন অধ্যায়] ‘জামে সগীর’ হাদীসের গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
مَنْ قَرأَ (قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ) عَشَرَ مَرات بَنِى
الله ُلَه بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি দশ বার সূলা ইখলাস পড়বে, আল্লাহ্ তাঁর জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরী করবেন।
[জামে সগীর, হাদিস নং-৬৪৭২] এভাবে আরো বহু হাদীস শরীফ রয়েছে সূরা ইখলাসের ফজিলত সম্পর্কে। আর খতমে গাউসিয়া শরীফে সূরা ইখলাস পাঠ করা হয় (১১১১) এক হাজার একশত একবার।
হাদীস শরীফের ভাষ্য মতে তিনবার পাঠ করলে এক খতম কুরআন পাঠের সাওয়াব অর্জন করার সুযোগ হয় সেখানে ১১১১ বার তেলাওয়াত করলে কত খতমের সাওয়াব মিলবে তা হিসেব করলেই বুঝা যাবে। এছাড়া এমন একটি তাসবীহ্ উক্ত খতমে রয়েছে,
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَان اللهِ الْعَلِىُّ
الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِه اَسْتَغْفِرُ الله
এ তাসবীহ্ সম্পর্কে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
كَلِمَتَانِ حَبِيْبَتَانِ اِلى الرَّحْمنِ خَفِيْفَتَانِ عَلى
اللِّسَانِ ثَقِيْلَتَانِ فِى الْمِيْزَانِ سُبْحَانِ الله
وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ
অর্থাৎ এমন দু’টি বাক্য আছে যা দয়াময় আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। মুখে উচ্চারণ করতে অধিক সহজ, (সওয়াবের ক্ষেত্রে) দাড়ি পাল্লায় পরিমাপে বেশী ভারী। বাক্য দু’টি হলো ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আজীম। [সহীহ্ বুখারী, হাদীস নং-৭০৫১] এভাবে খতমে গাউসিয়া শরীফে ১১১ বার করে দরুদ শরীফ পাঠ করা হয়, যা একবার পাঠ করলে আল্লাহ্ তা‘আলা ১০টি নেকী দান করেন, ১০টি গুনাহ্ মাফ করেন এবং ১০টি দরজাত বুলন্দ করেন।
খতমে গাউসিয়া শরীফ সাজরা শরীফসহ প্রতিটি ইসিম ও প্রত্যেকটি আমলের সওয়াব অনেক বেশী এবং ফজিলতমন্ডিত। তাই খতমে গাউসিয়া শরীফ, কছিদায়ে গাউসিয়া, সাজরা শরীফ ও সালাত-সালাম নেহায়ত ভক্তি ও মহব্বতের সাথে আদায় করার অনুরোধ রইলো। যত বেশি মহব্বত ও আদব ভক্তির সাথে আদায় করা হয় ততবেশি উপকৃত ও লাভবান হওয়া যায়।

Share:

Leave Your Comment