চারটি হাদীস সম্পর্কে বিভ্রান্তির নিরসন

চারটি হাদীস সম্পর্কে বিভ্রান্তির নিরসন

মাওলানা কাযী মুহাম্মদ মুঈন উদ্দীন আশরাফী 
আপত্তি
‘জুমার খুতবায় জাল হাদিস বয়ান প্রসঙ্গে খতিবের কাছে খোলা চিঠি’ শিরোনামে মুহাম্মদ ফজলুল করীম লিখিত বিগত ১৮ এপ্রিল, ২০১২ইং ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত বক্তব্যের প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। এতে উক্ত লেখক বলেন-
গত ২৭ জানুয়ারী, ২০১২ইং বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতীব মাওলানা সালাহ উদ্দীন সাহেব জুমার খুতবাপূর্ব বয়ানে কয়েকটি হাদীস বয়ান করেছেন, যা ২৮ জানুয়ারী দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি আমার (খোলা চিঠি লেখক) দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমার অনুসন্ধান মতে খতীব সাহেব তাঁর বয়ানে কমপক্ষে ৪টি জাল হাদীস উল্লেখ করেছেন।
তার উল্লিখিত হাদিসগুলোর-
প্রথমটি হচ্ছে- হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালামকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনার বয়স কত? তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্, আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না; তবে এ সম্পর্কে এতটুকু বলতে পারি, চতুর্থ আসমানে একটি সিতারা (নক্ষত্র) আছে, যা ৭০ হাজার বছর পরপর উদিত হয়, আমি এ যাবত ওই সিতারাটি ৭২ হাজার বার দেখেছি।’’ এটা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে জিব্রাঈল, শপথ মহান আল্লাহর, আমিই সেই সিতারা।’’
দ্বিতীয়টি হচ্ছে- হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ আমার মাতা-পিতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোক, আপনি আমাকে অবহিত করুন, সর্বপ্রথম আল্লাহ্ পাক কোন্ বস্তু সৃষ্টি করেছেন? তিনি উত্তর দিলেন, হে জাবির, আল্লাহ্ পাক সর্বপ্রথম তাঁর নূর থেকে তার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।
তৃতীয়টি হচ্ছে- মারফু’ সূত্রে হাদিস বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার কাছে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম এসে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ‘‘আল্লাহ্ পাক বলেছেন, আমি যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম তাহলে বেহেশত সৃষ্টি করতাম না। যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম তাহলে দোযখও সৃষ্টি করতাম না।’’
চতুর্থটি হচ্ছে-আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আদম আলায়হিস্ সালামকে সৃষ্টি করার হাজার হাজার বছর আগে নবী ছিলেন, আল্লাহ পাকের নূর রূপে, তাঁর তাসবিহ পাঠ করতেন।’’ [আমার দেশ- পৃ. ৬, ক. ২ ও ৩] (অতঃপর খোলা চিঠির লেখক বলেন)- এ হাদিসগুলোর বিষয়ে আমাদের প্রথম কথা এ যে, আপনি এ ৪টি হাদিস দ্বারা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর মর্যাদার বিষয়ে যে কথাগুলো প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন ওইগুলোর সবই ঈমান ও আক্বিদার বিষয়। আর শরীয়তের বিধান হলো ঈমান ও আক্বিদার কোন বিষয় প্রমাণের জন্য সে ব্যাপারে এমন দলীল থাকা অপরিহার্য, যা হবে অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং এর বক্তব্য হবে অত্যন্ত সুস্পষ্ট।
অতএব, আক্বিদার কোনো মাসআলা প্রমাণের জন্য অবশ্যই ক্বোরআনের আয়াত কিংবা হাদিসে মুতাওয়াতের থাকা প্রয়োজন। আর বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত খবরে ওয়াহেদ নামক কোন হাদিস অকাট্য দলিল না হওয়ার কারণে (তথা দলিলে জন্নি হওয়ার কারণে) আক্বিদার ক্ষেত্রে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলো ১১টি শর্তে শুধু আমলের ক্ষেত্রে গ্রহণ করা যায়; অথচ আপনি (অর্থাৎ জাতীয় মসজিদের খতিব মহোদয়) রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপারে উল্লিখিত আক্বিদার মাসয়ালাগুলো সাব্যস্ত করার জন্য যে ৪টি হাদিস উল্লেখ করেছেন তার প্রথম যে হাদিসটি (অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম চতুর্থ আকাশে লাখ লাখ বছর তারকারূপে ছিলেন) সব হাদিস বিশারদের ঐক্যমতেই এ হাদিসটি জাল। এটি কোন হাদিসের কিতাবে নেই। [আমার দেশ পৃ. ৬, ক.৩ ও ৪]
খন্ডন
প্রথম আপত্তির জবাব
আপত্তিকারী যে চারটি হাদীসের প্রসঙ্গে সেগুলো ‘জাল’ বলে আপত্তি উত্থাপনের ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, সেগুলোর কোনটি যে জাল নয়, তা আমি নি¤েœ প্রমাণ করার প্রয়াস পাচ্ছিঃ
প্রথম হাদীসটি যে জাল নয় বরং এর পক্ষে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে তা নি¤েœ প্রদত্ত হলো-
এক. হাদীসটি তাফসীরে রহুল বয়ান, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫৪৩-এ বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ اَبِیْ هُرَیْرَۃَ اَنَّهُ عَلَیْہِ السَّلاَمُ سَأَلَ جِبْرِیْلَ عَلَیْهِ السَّلاَمُ فَقَالَ یَا جِبْرِیْلُ کَمْ عُمْرُکَ مِنَ السِّنِیْنَ فَقَالَ یَا رَسُوْلَ اللّٰہِ لَسْتُ اَعْلَمُ غَیْرَاَنَّ فِی الْحِجَابِ الرَّابِعِ نَجْمًا یَطْلَعُ فِیْ کُلِّ سَبْعِیْنَ اَلْفَ سَنَةٍ مَرَّۃً رَاَیْتُهٗ اِثْنَیْنِ وَسَبْعِیْنَ اَلْفَ مَرَّۃٍ فَقَالَ عَلَیْهِ السَّلاَمُ یَا جِبْرِیْلُ وَعِزَّۃِ رَبِّیْ اَنَا ذَالِکَ الْکَوْکَبُ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালামকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার বয়স কত? তিনি উত্তর দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না; তবে এ সম্পর্কে এতটুকু বলতে পারি, চতুর্থ হিজাবে একটি সিতারা (তারকা) আছে, যা ৭০ হাজার বছর পরপর উদিত হয়, আমি এ যাবত ওই সিতারাটি ৭২ হাজার বার দেখেছি। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে জিব্রাঈল, শপথ মহান আল্লাহর, আমিই সেই সিতারা।’’
দুই. সীরাত বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কিতাব ‘ইনসানুল ‘উয়ূন ফী সীরাতিল আমীনি ওয়াল মা’মূন’ প্রকাশ সীরাতে হালাবিয়া: ৩৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
عَنْ اَبِیْ هُرَیْرَۃَ رَضِیَ اللہُ عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللہُ ﷺ سَأَلَ جِبْرَیِلَ عَلَیْهِ السَّلاَمُ فَقَالَ یَا جِبْرِیْلُ کَمْ عُمْرُکَ مِنَ السِّنِیْنَ فَقَالَ یَا رَسُوْلَ اللہِ لَسْتُ اَعْلَمُ غَیْرَ اَنَّ فِی الْحِجَابِ الرَّابِعِ نَجْمٌ یَطْلَعُ فِیْ کُلِّ سَبْعِیْنَ اَلْفَ سَنَةٍ مَرَّۃً رَأَیْتُهٗ اِثْنَیْنِ وَسَبْعِیْنَ اَلْفَ مَرَّۃٍ فَقَالَ یَا جِبْرِیْلُ وَعِزَّۃِ رَبِّیْ جَلَّ جَلاَ لُهٗ اَنَا ذٰلِکَ الْکَوْکَبُ ـ
অর্থাৎ: হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম জিব্রাইল আলায়হিস্ সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন- তোমার বয়স কত? তিনি বললেন, ‘‘আমি জানি না; তবে এতটুকু বলতে পারি যে, চতুর্থ হিজাবে একটি তারকা আছে, যা সত্তর হাজার বছর পরপর উদিত হয়। আমি এ যাবৎ তারকাটি বাহাত্তর হাজার বার দেখেছি।’’ তখন রসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, ‘‘আমার মহামহিম রবের শপথ, আমিই হলাম ওই তারকা।’’
[সীরাতে হালাবিয়া-১ম খণ্ড, পৃ. ৩৬, মাতবা‘আহ্-এ মোস্তফা মুহাম্মদ, মাকতাবাতু তেজারিয়াতিল কুবরা, মোহাম্মদ আলী সড়ক, মিশর] এ কিতাবের ভূমিকায় সংকলক আল্লামা আলী ইবনে বুরহান উদ্দীন আল হালাবী আশ্শাফে‘ঈ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি (ওফাত ১০৪৪হি.) বলেন-
وَلاَ یَخْفٰی اَنَّ السِّیَرَ تَجْمَعُ الصَّحِیْحَ وَالسَّقِیْمَ وَالضَّعِیْفَ وَالْبَلاَغَ وَالْمُرْسَلَ وَالْمُنْقَطِعَ وَالْمَعْضَلَ دُوْنَ الْمَوْضُوْعِ
অর্থাৎ- সীরাত গ্রন্থসমূহে সহীহ্, সাক্বীম, দ্বা‘ঈফ, বালাগ, মুরসাল, মুনক্বাতি’ ও মু’দ্বাল হাদিসসমূহ সংকলন করা হয়; তবে ‘মাউদ্বূ’ বা জাল হাদীস নয়।’’
[সীরাতে হালাবিয়া: ১ম খণ্ড, পৃ. ২] সুতরাং বুঝা গেলো যে,, তিনি তাঁর এ সীরাত গ্রন্থে কোন ‘মাউদ্বূ’ বা জাল হাদীস বর্ণনা করেননি। সুতরাং আর যাই হোক, অন্তত বর্ণিত হাদিসটি ‘মাউদ্বূ’ বা জাল হতে পারে না। অতঃপর পরবর্তী নির্ভরযোগ্য আলিমগণ বিশুদ্ধ সীরাত গ্রন্থসমূহের তালিকায়ও ‘‘সীরাতে হালাবিয়াকে’’ স্থান দিয়েছেন। যেমন-এক সময়ের হারাম শরীফের অন্যতম শিক্ষক মক্কা শরীফে শাফে‘ঈ মাযহাবের অন্যতম মুফতী আল্লামা সাইয়্যেদ আহমদ (প্রকাশ দাহ্লান রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, ওফাত-১৩০৪হি.) বলেন-
اِنَّهٗ لَمَّا مَنَّ اللہُ تَعَالٰی عَلَی بِقِرَأَۃِ الشِّفَا فِیْ حُقُوْقِ النَّبِیّ الْمُصْطَفٰی ﷺ وَکَانَ ذٰلِکَ بِمَدِیْنَةِ الْمُنَوَّرَۃِ فِی الْعَامِّ الثَّامِنِ وَالسَّبْعِیْنَ بَعْدَ الْمِاءَتَیْنِ وَالْاَلْفِ یَسَّرَ اللہُ لِیْ مُطَالَعَةَ جُمْلَةٍ مِنْ شُرُوْعِ الشِّفَا مَعَ مُرَاجَعَةِ الْمَوَاهِبِ وَشَرْحِهَا لِلْعَلاَّمَةِ الزَّرْقَانِیِّ وَمَعَ مُرَاجَعَةِ شَئٍ مِّنْ کُتُبِ السِّیَرِ کَسِیْرَۃٍ اِبْنِ سَیَّدِ النَّاسِ وَسِیْرَۃٍ اِبْنِ هِشَامٍ وَالسِّیْرَۃِ الشَّامِیَّةِ وَالسِّیْرَۃِ الْحَلَبِیَّةِ وَهٰذِہِ الْکُتْبُ هِیَ اَصَحُّ الْکُتُبِ الْمُؤَلَّفَةِ فِیْ هَذَا الشَّأْنِ
অর্থাৎ- যখন আল্লাহ্ তা‘আলা আমার প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ করলেন, তখন আমি ১২৭৮ হিজরীতে মদীনা মুনাওয়ারায় (ইমাম ক্বাযী আয়ায রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি রচিত) ‘আশ্শেফা’ ফী হুক্বূক্বিন্ নবিয়্যিল মোস্তফা’-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহ সহকারে পাঠ করি। সাথে সাথে ‘মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’ ও এর ইমাম যারক্বানী রচিত ব্যাখ্যাগ্রন্থ এবং অন্যান্য ‘সীরাত গ্রন্থ’, যেমন ‘সীরাতে ইবনে সাইয়্যেদিন্নাস, ‘সীরাতে ইবনে হিশাম’, ‘সীরাতে শামিয়া’ ও ‘সীরাতে হালাবিয়া’ পাঠ করি। এ কিতাবগুলো হচ্ছে ‘সীরাত’ (জীবনী) বিষয়ে বিশুদ্ধতম কিতাবাদির মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
[আস্সীরাতুন্ নবভিয়্যাহ্ ওয়াল আ-সারুল মুহাম্মাদিয়া-এর ভূমিকা-এটি সীরাতে হালাবিয়ার সাথে মুদ্রিত।]
এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ‘সীরাতে হালাবিয়া’ একটি নির্ভরযোগ্য সীরাতগ্রন্থ। এতেই ‘খোলা চিঠি’ লেখকের ভাষায় ‘জাল হাদীস’ হিসেবে চিহ্নিত প্রথম হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। উল্লেখ্য, আলোচ্য হাদিসকে কোন্ মুহাদ্দিস, কোন্ কিতাবে ‘জাল হাদীস’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তার কোন রেফারেন্স উক্ত ‘খোলা চিঠি’তে উল্লেখ নেই। এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে লেখকের নিকট কোন রেফারেন্স থাকলে তা তিনি পেশ করবেন। অন্যথায় তাকে জঘন্য অপবাদ রচনাকারী হিসেবে গণ্য করতে বাধ্য হবো। আমরা ইনশা-আল্লাহ্ এ হাদীসের পক্ষে আরো অকাট্য প্রমাণাদি পেশ করতে পারবো; কিন্তু বেচারা আপত্তিকারী যে তার দাবী প্রমাণ করতে পারবে না তা নিশ্চিত। এ ধরনের লোকেরা একদিকে তাদের নবী-বিদ্বেষ প্রকাশ করা, অন্যদিকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যই এমনটি করে থাকে।
দ্বিতীয় আপত্তির জবাব
আপত্তিকারী এ হাদীস শরীফকেও জাল বলার ধৃষ্ঠতা দেখালেন- ‘হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোন, আপনি আমাকে অবহিত করুন, সর্বপ্রথম আল্লাহ্পাক কোন্ বস্তু সৃষ্টি করেছেন? তিনি উত্তর দিলেন, ‘‘হে জাবির, আল্লাহ্ পাক সর্বপ্রথম তাঁর নূর থেকে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।’’ বস্তুত: সর্বপ্রথম সৃষ্টি হলেন হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। তিনি যে সর্বপ্রথম সৃষ্টি এ বিষয়টি পবিত্র ক্বোরআন ও হাদীস শরীফ দ্বারা তো অকাট্যভাবে প্রমাণিত, অনুরূপ উম্মতের অধিকাংশ (প্রায় সব) আলিমও এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। এমনকি ওলামায়ে দেওবন্দও এ ব্যাপারে একমত। অতএব, আমরা এখানে প্রথমত প্রমাণ করছি যে, রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম সৃষ্টি। অতঃপর আমরা আলোচ্য হাদীসগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি-
প্রথমত, আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-
قُلْ اِنَّ صَلٰوتِیْ وَنُسُکِیْ وَمْحَیَایَ وَمَمَاتِی لِلہِ رَبِّ الْعَالَمِیْنَ لاَشَرِیْکَ لَهٗ وَبِذَالِکَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوُّلُ الْمُسْلِمِیْنَ
অর্থাৎ হে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম!) আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার হজ্ব, আমার ক্বোরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। তাঁর কোন সমকক্ষ নেই। আর এটাই আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর আমি সর্বপ্রথম মুসলমান।
[সূরা আন্‘আম: আয়াত-১৬৩, ১৬৪] আলোচ্য আয়াতের শেষ বাক্য, যার অর্থ ‘আমি সর্বপ্রথম মুসলমান’ একটি গবেষণাযোগ্য বাক্য। এখানে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে বলছেন যে, ‘মহান ¯্রষ্টা এ জগতসমূহ সৃষ্টি করেছেন, যিনি সৃষ্টির কোন অংশীদারিত্ব বিহীন প্রতিপালক, তিনিই আমাকে এ মর্যাদা দান করেছেন যে, সৃষ্টিতে সবার আগে তাঁর সম্মুখে মস্তক অবনতকারী আমিই। অন্য কোন সৃষ্টি ছিল না, যা মাথা অবনত করতো এবং তাঁর রাবূবিয়াতকে মেনে নিতো।’ দেখার বিষয় হলো এ সৃষ্টি জগতে কোন্ কোন্ সৃষ্টি আল্লাহ্ তা‘আলাকে সাজদা করে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র ক্বোরআনে বর্ণিত হয়েছে-
وَلَهٗ اَسْلَمَ مَنْ فِی السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَکَرْهًا وَاِلَیْهِ یُرْجَعُوْنَ
অর্থাৎ আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, প্রত্যেকে স্বেচ্ছায় কিংবা বাধ্য হয়ে তাঁর আনুগত্য অবলম্বন করেছে। আর সবকিছু তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।
[আলে ইমরান] অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-
اِنْ کُلُّ مَنْ فِی السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ اِلَّا اَتَی الرَّحْمٰنَ عبدًا
অর্থাৎ আসমান ও যমীনে যারা অবস্থান করছে, তারা আল্লাহর নিকট বান্দা হিসেবে উপস্থিত হবে।
যেহেতু হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম সাজদাকারী, ইবাদতকারী, আল্লাহর বান্দা এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান স্থাপনকারী, সেহেতু প্রমাণিত হলো- তাঁর আগে আল্লাহ্র কোন সৃষ্টি ছিল না। যদি কোন সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকত, তাহলে সে-ই আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি সর্বপ্রথম ঈমান আনত এবং আনুগত্য স্বীকার করত।
দ্বিতীয়ত, আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَمَآ اَرْسَلْنٰاکَ اِلاَّ رَحْمَةً لِلْعَالَمِیْنَ
অর্থাৎ হে প্রিয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়কা ওয়াসাল্লাম) আমি আপনাকে জগতসমূহের জন্য রহমত করেই প্রেরণ করেছি।
আলোচ্য আয়াতের প্রতি যদি গভীরভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়, তাহলে রহমতের বিভিন্ন পর্যায় দেখা যায়, যা জগত সৃষ্টি ও তার লালন-পালনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কোন সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রথম রহমত হলো তাকে অস্তিত্ব দান করা। যেমনিভাবে অস্তিত্ব লাভ করা রহমত, তেমনিভাবে তার অস্তিত্ব টিকে থাকা এবং পর্যায়ক্রমে পূর্ণতা লাভ করাও রহমত। সকল রহমত যে কোন সৃষ্টির জীবনের ক্ষেত্রে পতিত হয়, ওইসব তার অস্তিত্ব হবার উপর সীমাবদ্ধ। যদি কোন সৃষ্টি অস্তিত্বই লাভ না করে, তাহলে তার প্রতি রহমতের প্রশ্নই আসে না। সুতরাং সর্বপ্রথম রহমত হলো কোন সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করা।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন- هَلْ اَتٰی عَلَی الْاِنْسَانِ حِیْنٌ مِّنَ الدَّهْرِ لَمْ یَکُنْ شَیْءً مَّذْکُوْرًا
অর্থাৎ ‘নিশ্চয় মানুষের উপর এমন এক সময় অতীত হয়েছে, যখন সে কোন উল্লেখযোগ্য বস্তু ছিল না।’ [৭৬:১] এ বিষয়টি স্মরণ করার জন্য পবিত্র ক্বোরআনে মানবজাতিকে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। যেসব আয়াত দ্বারা এ বিষয়টি স্পষ্ট করাই মূল উদ্দেশ্য যে, কোন সৃষ্টির প্রতি আল্লাহ তা‘আলার সর্বপ্রথম রহমত হলো- তাকে অস্থিত্ব দান করা, রহমতের সূচনাই তখন হয় যখন কোন কিছু অস্তিত্ব লাভ করে। আর হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘‘আপনাকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত করে প্রেরণ করা হয়েছে।’’ বুঝা গেল যে, জগতের সবকিছুর অস্তিত্ব হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ওসীলায় হয়েছে। অতএব, যদি জগতসৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর রহমত শামিল ছিল বলে মেনে নেয়া না হয়, তাহলে তিনি রাহমাতুল্লিল আলামীন কিভাবে হলেন? আর যদি জগতসৃষ্টির সূচনায় রহমত শামিল না হয়, তাহলে তাঁর ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ হওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করা হয়। এজন্যই তাঁকে বলা হয়েছে- ‘হে প্রিয় নবী! আমি আপনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক স্তরের জন্য রহমত করে প্রেরণ করেছি।’ এতে প্রমাণিত হলো যে, সৃষ্টিজগতের প্রত্যেক কিছু তার অস্তিত্বে টিকে থাকতে এবং পূর্ণতা অর্জনের প্রতিটি স্তরে ও ক্ষেত্রে রাহমাতুল্লিল আলামীন-এর মুখাপেক্ষী। আর অমোঘ বিধান হচ্ছে এ যে, محتاج (অর্থাৎ মুখাপেক্ষী) محتاج الیه (অর্থাৎ যার মুখাপেক্ষী)-এর পরেই অস্তিত্ব লাভ করে। যেমন আমরা বেঁচে থাকার জন্য বাতাসের মুখাপেক্ষী।
অতএব, যদি বাতাস আগে থেকে না থাকত, তাহলে আমরা কখনো অস্তিত্ব লাভ করতে পারতাম না। কারণ, বাতাস ছাড়া জীবিত থাকার বিষয়টি কল্পনাই করা যায় না। তাই আল্লাহ্ তা‘আলা প্রথমে বাতাস সৃষ্টি করেছেন, তারপর আমাদেরকে জীবন দান করেছেন। একইভাবে পানির ক্ষেত্রেও বলা যায়। তেমনিভাবে সন্তানের অস্তিত্বের আগে মাতা-পিতার অস্তিত্ব থাকতে হবে।
যেহেতু সমগ্র সৃষ্টিজগত অস্তিত্ব লাভের ক্ষেত্রে রহমতের মুখাপেক্ষী, সেহেতু সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলো যে, সমগ্র সৃষ্টিজগত অস্তিত্ব লাভ করেছে পরে, আর সমগ্র জগতের রহমত নবী, যাঁর রহমতের মুখাপেক্ষী সমগ্র সৃষ্টিজগত, তাঁর সৃষ্টি সবার আগে।
তৃতীয়ত
هُوَالْاَوَّلُ وَالْاٰخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِکُلِّ شَئٍ عَلِیْمٌ
অর্থাৎ তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি স্পষ্ট, তিনি গুপ্ত, তিনি সব বিষয়ে অবহিত।
[৫৭:৩] ভারত উপমহাদেশের সর্বজনমান্য মুহাদ্দিস আল্লামা শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর প্রখ্যাত সীরাত গ্রন্থ ‘‘মাদারিজুন্নুবুয়ত’-এর ভূমিকা এ আয়াত দিয়ে আরম্ভ করে বলেন-
ایں کلمات اعجاز سمات ہم مشتمل برحمد وثناء الہی ست تعالٰی وتقدس کہ درکتاب مجید خطبہ کبر یائی خود بداں خواندہ وہم متضمن نعت ووصف حضرت رسالت پنا ہی ست ﷺ کہ وی سبحانہ اورابداں تسمیہ وتوصیف نمودہ وچندیں اسماء حسنی الہی جل شانہ ست کہ دروحی متلووغیر متلوحبیب خودرا بداں نامیدہ وحلیہ جمال وحلی کمال وی ساختہ اگر چہ وی ﷺ بتمامہ اسماء وصفات الہی متخلق ومتصف است باوجود آں بہ بعض ازاں بخصوص نامزد ونا مور گشتہ است مثل نور ‘حق ‘ علیم ‘ حکیم‘ مؤمن ‘ مہیمن ‘ ولی‘ ہادی‘ رؤف‘ رحیم ‘ وجزآں وایں چہار اسم اول ‘ آخر ظاہر وباطن نیز ازآں قبیلست ـ
অর্থাৎ ক্বোরআনে পাকের এ শব্দসমূহ যেমনিভাবে মহান আল্লাহ্ তা‘আলার হামদ ও প্রশংসা সম্বলিত, যা পবিত্র ক্বোরআনে তিনি তাঁর মহানত্বের বর্ণনায় এরশাদ করেছেন, তেমনিভাবে রসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রশংসা ও গুনগানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে এ সকল শব্দ দ্বারা গুণান্বিত করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলার এ কতেক পবিত্র নাম, যা পবিত্র ক্বোরআনে এবং হাদীস শরীফে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর হাবীবকে এসব শব্দ দ্বারা নামকরণ করেছেন এবং তাঁকে এগুলো দ্বারা তাঁর অনন্য সৌন্দর্য ও পূর্ণতায় অলংকৃত করেছেন, যদিওবা তিনি (আল্লাহ্ তা‘আলা) সকল নাম ও গুণাবলীর গুণে গুনান্বিত, এতদ্সত্ত্বেও বিশেষ কিছু গুণবাচক নামে তাঁকে বিশেষভাবে নামকরণ করেছেন। যেমন-নূর, হক্ব, আলীম, হাকীম, মু’মিন, মুহাইমিন, ওলী, হাদী, রঊফ, রহীম এগুলো ছাড়াও এ চার গুণবাচক নাম- আউয়াল, আখির, যাহির, বাতেন এসব নামও ওইসব নামের অন্তর্ভুক্ত।
অতঃপর শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
اما اول وی ﷺ اولست درایجادکہ اول ما خلق اللہ نوری اولست در نبوت کہ کنت نبیا وآدم منجدل فی طینتہ واول در عالم در روز میثاق الست بربکم قالوا بلی واول من آمن باللہ وبذالک امرت وانا واول المؤمنین
অর্থাৎ তিনি সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম। কারণ, তিনি এরশাদ করেন, আল্লাহ্ তা‘আলা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন, তা হলো আমার নূর। তিনি নুবূয়াত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম। তিনি এরশাদ করেন, আমি নবী ছিলাম যখন আদমের সৃষ্টি সম্পন্ন হয়নি। তিনি নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার বাণী- ‘আমি কি তোমাদের রব নই’- এর বেলায় সর্বপ্রথম ‘হ্যাঁ’ বলে উত্তরদাতা। তিনি আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি সর্বপ্রথম ঈমান স্থাপনকারী।
পবিত্র ক্বোরআনের এ তিনটি আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নবীয়ে আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামই আল্লাহ তা‘আলার সর্বপ্রথম সৃষ্টি। ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত ও সর্বজনস্বীকৃত অন্যতম হাদিস বিশারদ হযরত আল্লামা শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দেসে দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর প্রখ্যাত সীরাতগ্রন্থ ‘মাদারিজুন্নবুওয়াত’ গ্রন্থের ভূমিকায় আলোচ্য তিন আয়াতের দু’টি আয়াত যথাক্রমে-هُوَ الْاَوَّلُ وَالْاٰخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِکُلِّ شَئٍ عَلِیْمٌ وَبِذَالِکَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْنَ কে রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বপ্রথম সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। তাঁর এ ব্যাখ্যাকে এদেশের বিজ্ঞ কোন আলেম খণ্ডন করেন নি; বরং তাঁর পেশকৃত বক্তব্যকে নিজেদের রচনাবলীতে সমর্থন করে অকুণ্ঠচিত্তে পেশ করেছেন অনেক ওলামা-ই কেরাম। এমনকি দেওবন্দী আলেমদের অন্যতম পেশোয়া মৌং রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের নিকট এতদ্সম্পর্কিত হাদীস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি হযরত আল্লামা শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হির বরাত দিয়ে উত্তর দেন-
سوال : اول ماخلق اللہ نوری اور لولاک لما خلقت الافلاک یہ دونوں حدیثیں صحیح ہیں یا وضعی؟زیدان کو وضعی بتلاتاہے فقط بینواتوجروا
অর্থাৎ মৌং গাঙ্গুহীর নিকট কেউ প্রশ্ন করেন যে, ‘‘সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘আলা যা সৃষ্টি করেছেন, তা হলো- আমার নূর’’ এবং ‘‘আপনাকে সৃষ্টি না করলে আসমানসমূহ সৃষ্টি করতাম না’’ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো বিশুদ্ধ, না কি জাল? যায়েদ এগুলোকে জাল বলছে।
এ প্রশ্নের উত্তরে মৌং গাঙ্গুহী বলেন-
جواب : یہ حدیثیں کتب صحاح میں موجود نہیں ۔ مگر شیخ عبد الحق رحمۃ اللہ عليه نے اول ما خلق اللہ نوری کو نقل کیاہے اور تبایا کہ اس کی کچھ اصل ہے
অর্থাৎ ‘‘এ হাদিসগুলো সিহাহ্-এর কিতাবসমূহে নেই। কিন্তু শায়খ আব্দুল হক্ব রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘‘সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘আলা যা সৃষ্টি করেছেন, তাহলো- আমার নূর’’- হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, এর ভিত্তি আছে।’’
[ফতোয়া-এ রশিদীয়া, পৃ. ৮১, প্রকাশক- মুহাম্মদ আলী, কারখানা-এ ইসলামী কুতুব। উর্দুবাজার, করাচী] এতে প্রমাণিত হলো যে, আলোচ্য হাদীসটি হযরত আল্লামা শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর মত বড় মাপের হাদীস বেত্তা তাঁর লিখিত গ্রন্থে বর্ণনা করাই হাদিসটির ভিত্তি আছে বলে প্রমাণ বহন করে। তাই মৌং গাঙ্গুহী সাহেব উক্ত হাদীসকে ‘জাল’ বলে অভিহিতকারী যায়িদ-এর সাথে একমত হননি, অর্থাৎ তিনি হাদীসটিকে ‘মাউদ্বূ’ বা জাল বলেও অভিহিত করেননি। দেওবন্দী আলিমদের মধ্যে তিনি বড় মুহাদ্দিস ও তাদের বরেণ্য আলেম। তিনি হাদিসটির সমর্থনে বক্তব্য রেখেছেন এবং এর ভিত্তি আছে বলে স্বীকার করেছেন। কিন্তু মৌং গাঙ্গুহী সাহেবদের বর্তমান অনুসারীগণ কোন হাদীসকে ‘জাল’ বলতে চিন্তা-ভাবনা করেন না বলে প্রতীয়মান হয়।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র ক্বোরআনের একাধিক আয়াত দ্বারা স্পষ্ট করা হয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্ব প্রথম মুসলিম, অতএব, সর্বপ্রথম সৃষ্টি। তন্মধ্যে অকাট্যভাবে বর্ণিত- وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْنَ অর্থাৎ আমি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম। এবার আলোচ্য আয়াতের তাফসীরে বিজ্ঞ মুফাস্সিরগণের মতামত তুলে ধরছি, যাতে বিষয়টি আরো ভালভাবে স্পষ্ট হয়ে যায়। যথা-
এক. আল্লামা আ’লুসী বাগদাদী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
وقیل هذا اشارۃ الی قوله علیه الصلوۃ والسلام اول ما خلق اللہ نوری
অর্থাৎ- আলোচ্য আয়াতের তাফসীরে রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘আলা আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।’ এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
[তাফসীরে রুহুল মা‘আনী ৫ম খণ্ড, পৃ. ৯৪, আল মাকতাবাতুত্ তাওফীক্বিয়া, মিশর] দুই. আল্লামা ইসমাঈল হক্বক্বি হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
(وانا اول المسلمین) یعنی اول من استلم عند الایجاد الامر’’کن‘‘ وعند قبول فیض المحبۃ لقوله (یحبهم ویحبونه) والاستلام للمحبة فی قوله یحبونه دل علیه قوله علیه السلام اول ماخلق اللہ نوری
অর্থাৎ- আমি সর্বপ্রথম মুসলিম-এর অর্থ হলো- সর্বপ্রথম সৃষ্টি করার সময় আল্লাহ্ তা‘আলার আদেশ ‘কুন’ (হয়ে যাও)- কে আমি সর্বপ্রথম মেনে নিয়েছি। অনুরূপ, মুহব্বতের ফয়য গ্রহণ করার সময় আমি সর্বপ্রথম গ্রহণ করেছি। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন- তিনি তাঁদের মুহাব্বত করেন। আর তাঁরা আল্লাহ্ তা‘আলাকে মুহব্বত করেন। এ মুহব্বতের ফয়য গ্রহণের বেলায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রথম, যা তাঁর উক্তি ‘‘আল্লাহ তা‘আলা আমার নূরকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন’’ প্রমাণ করছে।
[তাফসীরে রুহুল বয়ান- ৮ম খণ্ড, পৃ. ১২৯।] তিন. আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শওকানী বলেন-
قیل اول المسلمین اجمعین لانه وان کان متاخرا فی الرسالة فهو اولهم فی الخلق ومنه قوله تعالٰی (واذ اخذنا من النبیین میثاقهم ومنک ومن نوح(
অর্থাৎ- হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সকল মুসলমানের মধ্যে সর্বপ্রথম। কেননা তিনি রসূল হিসেবে পরে আবির্ভূত হলেও সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম। আল্লাহ্ তা‘আলার উক্তি ‘‘স্মরণ করুন! যখন আমি মজবুত ওয়াদা নিয়েছি নবীগণ থেকে, আপনার নিকট থেকে এবং নূহ আলায়হিস্ সালাম থেকে’’ এতে ওই কথাই বিবৃত হয়েছে।
[ফাতহুল ক্বদীর আলজামে’ বায়না ফান্নায়র, রেওয়ায়াতি ওয়াদ্ দেরায়াতি মিন্ ইলমিততাফসীর,
২য় খণ্ড, পৃ.২৩৬, দরুল হাদীস, কায়রো, প্রকাশকাল ১৪২৩হি. ২০০২ সাল] চার. আল্লামা সদরুল আফাযিল নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
اولیت یاتواس اعتبارسے ہے کہ انبیاء کا اسلام انکی امت پر مقدم ہوتاہے یا اس اعتبارسے کہ سید عالم صلی اللہ علیہ وسلم اول مخلوقات ہیں
অর্থাৎ- হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হয়তো এ হিসেবে প্রথম মুসলিম যে, নবীগণের ইসলাম উম্মতের ইসলামের আগেই হয়ে থাকে। অথবা এ হিসেবে যে, তিনি সর্বপ্রথম সৃষ্টি।
[তাফসীরে খাযা-ইনুল ইরফান, সূরা আন্‘আম,
আয়াত নম্বর ১৬৪, পাদটীকা নম্বর ৩৪০, পৃ. ২১৭] পাঁচ. হাকীমূল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
میں اللہ کے سارے مطیع بندوں میں پہلا مطیع ہوں حضرات انبیاء واولیا ءساری مخلوق نے مجھ سے اطاعت الہی سیکھی ہے میں نے کروڑوں سال جب اللہ کی اطاعت کی ہے جب کہ میرے نورکے سوا کوئی چیز نہ تھی نہ زمین وآسمان نہ سورج وچاندنہ فرشتے نہ جن وانس وغیرہ مسلمین میں اول حقیقی حضور ﷺ ہیں باقی انبیاء واولیاءاور مؤمنین اضافی اول ہیں حقیقی اول اور اضافی اول میں بہت فرق ہوتاہے ہم اپنی اولاد ‘اپنے بعض دوستوں بعض ماتحتوں شاگردوں مریدوں میں اول مطیع ہوسکتے ہیں مگر حقیقی پہلے عابد حضور ﷺ ہی ہیں ۔
অর্থাৎ-আমি আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগত বান্দাদের মধ্যে প্রথম অনুগত। আম্বিয়া-ই কেরাম, আউলিয়া-ই এযাম এবং সকল সৃষ্টি আমার নিকট থেকে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য শিখেছেন। আমি অনেক বছর যাবৎ আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্য করেছি, যখন আমার নূর ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিল না, না যমীন ছিল, না আসমান, না চন্দ্র ছিল, না সূর্য, না ফেরেশতা ছিল, না জিন- ইনসান ইত্যাদি। মুসলমানদের মধ্যে মৌলিক অর্থে সর্বপ্রথম হলেন হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। অবশিষ্ট নবীগণ, আউলিয়া কেরাম এবং ঈমানদারগণ হলেন তুলনামূলক প্রথম। মৌলিক প্রথম ও তুলনামূলক বা আপেক্ষিক প্রথমের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমরা আমাদের সন্তান, কোন কোন বন্ধু, কোন অধস্তনের শিষ্যদের তুলনায় পথম অনুগত হতে পারি; কিন্তু প্রকৃত অর্থে হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামই প্রথম। [তাফসীরে ন‘ঈমী, ৮ম খণ্ড, পৃ.৩১০] ছয়. আল্লামা পীর করম শাহ্ আযহারী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
یا اولیت سے مراداولیت حقیقیہ ہے کہ سب مخلوقات سے پہلے اللہ تعالٰی کی توحید کا عرفان ہمارے آقاومولا محمد رسو ل اللہ ﷺ کو ہوا کیونکہ ہر چیز سے پہلے حضورکے نور کی تخلیق ہوئی اور سب سے پہلے حضور نے ہی اپنے رب کی توحید کی شہادت دی قال قتادہ ان النبی ﷺ قال کنت اول الانبیاء فی الخلق وآخرہم فی البعث انہ اول الخلق اجمع [قرطبی[
অর্থাৎ ‘‘আমি সর্ব প্রথম মুসলিম’’ বলতে প্রকৃত অর্থে প্রথমকে বুঝানো হয়েছে। কারণ, সকল সৃষ্টির পূর্বে সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘আলার তাওহিদের পূর্ণ পরিচয় প্রিয়নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অজির্ত হয়েছিল। কেননা, সকল সৃষ্টির আগে তাঁর নূর সৃষ্টি হয়েছে এবং সবার আগে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামই স্বীয় রবের তাওহিদের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। হযরত ক্বাতাদাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, নিশ্চয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমি নবীগণের মধ্যে প্রথম এবং প্রেরিত হবার ক্ষেত্রে তাঁদের সকলের সর্বশেষ। নিশ্চয় আমি সকল সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম সৃষ্টি। [ক্বোরত্ববী] [তাফসীরে যিয়াউল ক্বোরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬২০, যিয়াউল ক্বোরআন পাবলিকেশন্স, গন্জে বখশ রোড, লাহোর] সাত. আল্লামা শায়খ আহমদ সাভী মালেকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
ای المنقادین للہ واستشکل بانه تقدم الانبیاء واممهم واجاب المفسرون بان الاولیة بالنسبة لامته واجیب ایضا بان الاولیة بالنسبة لعالم الذر فھی حقیقة
অর্থাৎ- আমি আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনকারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম। তখন প্রশ্ন আসবে যে, তাঁর পূর্বে আম্বিয়া কেরাম ও তাঁদের উম্মতগণ অতীত হয়েছেন, তাহলে তিনি অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম কিভাবে হলেন? এর উত্তরে তাফসীরকারকগণ বলেছেন- তিনি তাঁর উম্মতের তুলনায় সর্বপ্রথম। আর এভাবেও উত্তর দেয়া হয়েছে যে, ‘রোযে আযল’-এ তিনিই সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘আলার রুবূবিয়াতকে মেনে নিয়েছেন। অতএব, এটা হবে প্রকৃত অর্থে প্রথম। [হাশিয়াতুস্সাভী আলাল জালালাইন, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫৭] আট. বর্তমান আরববিশ্বের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা আলী সাবূনী বলেন-
اول من اقرّ واذعن وخضع اللہ عزوجل
অর্থাৎ- নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি আল্লাহ্ তা‘আলার রাবূবিয়াতকে সর্বপ্রথম স্বীকার করেছেন, দৃঢ়বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রদর্শন করেছেন। [সাফ্ওয়াতুত্ তাফাসীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৩২] নয়. ওলামায়ে দেওবন্দ-এর তাফসীর, যেমন- আল্লামা শাব্বির আহমদ ওসমানী বলেন-
عموما مفسرین وانا اول المسلمین کا مطلب یہ لیتے ہیں کہ اس امت محمدیہ کے اعتبار سے آپ اول المسلمین ہیں لیکن جب جامع ترمذی کی حدیث ’’کنت نبیاو آدم بین الروح والجسدکے موافق آپ اولا الانبیا ء ہیں تو اول المسلمین ہونے میں کیا شبہ ہوسکتاہے
অর্থাৎ- সাধারণত তাফসীরকারকগণ ‘আমি সর্বপ্রথম মুসলিম’-এর ব্যাখ্যা এভাবেই করে থাকেন যে, তিনি উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার তুলনায় সর্বপ্রথম মুসলিম; কিন্তু জামে’ তিরমিযীর হাদীস ‘‘আমি তখন নবী ছিলাম, যখন আদম রূহ ও দেহের মাঝামাঝি অবস্থানে ছিলেন।’’ (অর্থাৎ তাঁর সৃষ্টি হয়নি) এর আলোকে যেহেতু তিনি সর্বপ্রথম নবী, অতএব, তিনি প্রকৃত অর্থে সর্বপ্রথম মুসলিম হওয়াতে কি সন্দেহ থাকতে পারে? (অর্থাৎ তিনি নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম মুসলিম।)
[তরজমায়ে ক্বোরআন কৃত. মৌং মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী, হাশিয়া বা পাদটিকা, মৌং শাব্বির আহমদ ওসমানী। পাদটিকা নম্বর-২, পৃ. ১৯৪, মদীনা প্রেস-বিজনুর, ইউ,পি, ইন্ডিয়া থেকে মুদ্রিত] দশ. মাওলানা মুফতি শফি সাহেব (পাকিস্তান) বলেন-
اور پہلا مسلمان ہونے سے اس طرف بھی اشارہ ہوسکتاہے کہ مخلوقات میں سب سے پہلے رسول کریم ﷺ کانور مبارک پیدا کیاگیاہے اس کے بعد تمام آسمان وزمین اور مخلوقات وجود میں آئے ہیں جیسا کہ ایک حدیث میں ارشاد ہے اول ماخلق اللہ نوری (روح المعانی(
অর্থাৎ- প্রথম মুসলমান বলতে এদিকেও ইঙ্গিত করা হতে পারে যে, সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম রসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নুর মুবারক সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর সকল আসমান-যমীন এবং সকল সৃষ্টি অস্তিত্ব লাভ করে। যেমন একটি হাদীসে ইরশাদ হয়েছে- সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘আলা আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। [রুহুল মা‘আনী] [মা’আরিফুল কুরআন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫১০, ইদারাতুল মা‘আরিফ, করাচী-১৪]
এখানে দশটি তাফসীর গ্রন্থের উদ্ধৃতি পেশ করা হলো। যার সবগুলোতে আয়াতে ক্বোরআন وانا اول المسلمین অর্থাৎ ‘আমি মুসলমানদের সর্বপ্রথম’ এর তাফসীরে একথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম সৃষ্টি। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর এ নূর মুবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন। এরপর আসমান, যমীন, জ্বিন, ইনসান ইত্যাদি সৃষ্টি করেছেন। আলোচ্য আয়াতের দু’টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রথম, উম্মতের তুলনায় নবীর ইসলাম বা মুসলমান হওয়া আগে। সে হিসেবে তিনি প্রথম মুসলমান। দ্বিতীয়ত, তিনিই সৃষ্টির সর্বপ্রথম বিধায় তিনিই প্রথম মুসলমান। অতঃপর তিনি সর্বপ্রথম সৃষ্টি হবার পক্ষে হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। তন্মধ্যে ওই হাদীসও রয়েছে, যাকে ইদানিং ‘মাওদ্বূ’ বা জাল বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আর তাহলো اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللہُ نُوْرِیْ অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা সর্ব প্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। এখানে যেসব তাফসীরকারের নাম এসেছে তাঁদের মধ্যে দেওবন্দী আলেমগণের শীর্ষস্থানীয় হিসেবে পরিচিত, যেমন- মৌং শাব্বির আহমদ ওছমানী ও মুফতী শফি সাহেব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের বিখ্যাত আলেম মুহাম্মদ আলী ইবনে মুহাম্মদ শওকানী। (জন্ম ১১৭৩হি. মৃত্যু-১২৫০হি. মোতাবেক ১৭৬৯-১৮৩৪ ইং)-এর নামও সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
তিনি তাঁর তাফসীরগ্রন্থে রসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যে বিষয়টি পবিত্র ক্বোরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত, সে বিষয়ে কোন ঈমানদার মাত্রই অস্বীকার তো দূরে থাক, ন্যূনতম সন্দেহও পোষণ করতে পারে না।
ইতোপূর্বে বরেণ্য ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরকারদের মতামতের আলোকে ‘‘প্রিয়নবী হুযূর পূরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ‘নূর’ যে প্রথম সৃষ্টি, তিনিই যে, আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি এ বিষয়টি পবিত্র ক্বোরআনের আয়াতের অংশ وانا اول المسلمین অর্থাৎ ‘আমি সর্ব প্রথম মুসলমান’-এর ব্যাখ্যা পাঠক সমীপে পেশ করা হয়েছে। এতে দেওবন্দী ও আহলে হাদীস বা সালাফীদের নির্ভরযোগ্য আলেমদের মতামতও হুবহু পেশ করা হয়েছে। এবার ধারাবাহিকভাবে অবশিষ্ট ৩টি হাদীস কোন্ কোন্ কিতাবে বর্ণিত আছে, তা পাঠক সমীপে পেশ করা হচ্ছে, যাতে বিভ্রান্তির ভালভাবে নিরসন হয়। অতঃপর ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকায় আলোচ্য চারটি হাদীস সম্পর্কে ‘খোলা চিঠি’ দাতার বক্তব্যের উপর আলোচনা আসবে।
দ্বিতীয় হাদিস- হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার মাতা-পিতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোন, আপনি আমাকে অবহিত করুন, সর্বপ্রথম আল্লাহ্পাক কোন বস্তু সৃষ্টি করেছেন?’’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘‘হে জাবির, আল্লাহ্ পাক সর্বপ্রথম তাঁর নূর থেকে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।’’
আলোচ্য হাদিসটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার অবকাশ রয়েছে। তাই যথাসম্ভব এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি। আশা করি আপনারা গভীর মনযোগ ও একান্ত আগ্রহচিত্তে পাঠ করবেন-
প্রথমত, আলোচ্য হাদিসটি অনেক বিশ্ববরেণ্য হাদীসবিদ ও নির্ভরযোগ্য ইমামগণ বর্ণনা করেছেন, প্রত্যেক বিশ্ববরেণ্য হাদীসের ইমাম, ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির দাদা, হাফেযুল হাদীস ইমাম আবু বকর আবদুর রায্যাক ইবনে হুম্মাম ইবনে নাফে’ আল হিম্ইয়ারী আস্সান্‘আনী আল ইয়ামনী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি সংকলিত নির্ভরযোগ্য হাদীসগ্রন্থ ‘‘আল মুসান্নাফ’’-এর বরাত দিয়েই বর্ণনা করেছেন। নিম্নে তাঁদের কয়েকজনের বর্ণনা পেশ করা হলো-
বুখারী শরীফের অন্যতম ব্যাখ্যাকারী ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবী বকর আলখতীব আল ক্বাস্তলানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বর্ণনা করেন-
رَوٰی عَبْدُ الرَّزَّاقِ بِسَنَدِہٖ عَنْ جَابِرٍ بْنِ عَبْدِ اللّٰہِ الْاَنْصَارِیْ قَالَ قُلْتُ یَا رَسُوْلَ اللّٰہِ بِاَبِیْ اَنْتَ وَاُمِّیْ اَخْبِرْنِیْ عَنْ اَوَّلِ شَئٍ خَلَقَہُ اللّٰہُ تَعَالٰی قَبْلَ الْاَشْیَاءِ قَالَ یَاجَابِرُ اِنَّ اللہَ خَلَقَ قَبْلَ الْاَشْیَاءِ نُوْرَ نَبِیَّکَ مِنْ نُوْرِہٖ فَجَعَلَ ذَالِکَ النَّوْرَ یَدُوْرُ بِالْقُدْرَۃِ حَیْثُ شَاءَ اللہُ تَعَالٰی وَلَمْ یَکُنْ فِیْ ذَالِکَ الْوَقْتِ لَوْحٌ وَلاَقَلَمٌ وَلاَجَنَّۃٌ وَلاَ نَارٌ وَلاَمَلَکٌ وَلاَسَمَاءٌ وَلَا اَرْضٌ وَلَا شَمْسٌ وَلاَ قَمَرٌ وَلَاجِنٌّ وَلَا اِنْسٌ فَلَمَّا اَرَادَ اللہُ اَنْ یَخْلُقَ الْخَلْقَ قَسَمَ ذَالِکَ النُّوْرَ اَرْبَعَة اَجْزَاءٍ فَخَلَقَ مِنَ الْجُزْءِ الْاَوَّلِ الْقَلَمَ وَمِنَ الثَّانِیْ اللَّوْحَ وَمِنَ الثَّالِثِ الْعَرْشَ ثُمَّ قَسَمَ الْجُزْءَ الرَّابِعَ اَرْبَعَةَ اَجْزَاءٍ فَخَلَقَ مِنَ الْجُزْءِ الْاَوَّلِ حَمَلَةَ الْعَرْشِ وَمِنَ الثَّانِی الْکُرْسِیَّ وَمِنَ الثَّالِثِ بَاقِیَ الْمَلائِكَةِ ثُمَّ قَسَمَ الْجُزْءَ الرَّابِعَ اَرْبَعَةَ اَجْزَاءٍ فَخَلَقَ مِنَ الْاَوَّلِ السَّمَاوَاتِ وَمِنَ الثَّانِی الْاَرْضِیْنَ وَمِنَ الثَّالِثِ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ ثُمَّ قَسَمَ الرَّابِعَ اَرْبَعَةَ اَجْزَاءٍ فَخَلَقَ مِنَ الْاَوَّلِ نُوْرَ اَبْصَارِ الْمُؤْمِنِیْنَ وَمِنَ الثَّانِیْ نُوْرَ قُلُوْبِهِمْ وَهِیَ الْمَعْرِفَةُ بِاللہِ وَمِنَ الثَّالِثِ نُوْرَ اِنْسِهِمْ وَهُوَ التَّوْحِیْدُ لَآاِلٰهَ اِلاَّ اللہُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللہِ
অর্থাৎ: ইমাম আব্দুর রায্যাক্ব রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁর সনদ সূত্রে হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা মাতা আপনার উপর উৎসর্গ হোন, আপনি আমাকে অবহিত করুন- আল্লাহ্ তা‘আলা সবকিছু সৃষ্টি করার পূর্বে সর্বপ্রথম কোন্ জিনিস সৃষ্টি করেছেন। উত্তরে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- ‘‘হে জাবির! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা সবকিছুর আগে তোমার নবীর নূরকে তাঁর নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর ওই নূর আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছানুসারে তাঁর শক্তিতে ঘুরতে থাকলো। তখন লওহ, কলম, বেহেশত, দোযখ, ফেরেশতা, আসমান, যমীন, সূর্য, চন্দ্র, জিন ও ইনসান কিছুই ছিলো না। অতঃপর যখন আল্লাহ্ তা‘আলা অপরাপর মাখলুখ সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন, তখন ওই নূরকে চার ভাগে ভাগ করলেন- তারপর প্রথম অংশ থেকে ‘ক্বলম’ (তাক্বদীর লিখার কলম), দ্বিতীয় অংশ থেকে ‘লওহ’, তৃতীয় অংশ থেকে ‘আরশ’ সৃষ্টি করলেন। অতঃপর চতুর্থ অংশকে চার ভাগে বিভক্ত করলেন। এর প্রথম অংশ থেকে আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণ, দ্বিতীয় অংশ থেকে ‘কুরসী’ ও তৃতীয় অংশ থেকে অবশিষ্ট ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন। তারপর চতুর্থ অংশকে চার ভাগে ভাগ করলেন, এর প্রথম অংশ থেকে আসমানসমূহ, দ্বিতীয় অংশ থেকে যমীনসমূহ, তৃতীয় অংশ থেকে জান্নাত-দোযখ সৃষ্টি করলেন। তৎপর চতুর্থ অংশকে চারভাগে ভাগ করলেন। এর প্রথম অংশ থেকে ঈমানদারগণের চোখের জ্যোতি, দ্বিতীয় অংশ থেকে তাদের ক্বলবের নূর অর্থাৎ আল্লাহর পরিচয়, তৃতীয় অংশ থেকে তাদের আত্মার জ্যোতি আর তা হলো তাওহীদের বাণী- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মুদর রসূলুল্লাহ।’’
[মাওহিবে লাদুনিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ.-৯, দারুল বায, প্রকাশনা, মক্কা মুর্কারমা] উল্লেখ্য, এখানে সর্বশেষ চতুর্থ অংশের বর্ণনা নেই। তার একাধিক কারণ থাকতে পারেঃ প্রথমত, পাণ্ডুলিপির তারতম্যের কারণে, যা হাদীস বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওলামা কেরাম ভালভাবেই অবহিত আছেন। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় বর্ণনাকারী সংক্ষিপ্ত করে বর্ণনা করেন। হতে পারে এখানেও এ ধরনের কোন কারণে চতুর্থ অংশের বর্ণনা আলোচিত হয়নি। আবার অনেক সময় পাণ্ডুলিপি যিনি তৈরি করেন তাঁর ভুলের কারণে কোন অংশ বাদ পড়ে যায়, যা অন্য পাণ্ডুলিপি থেকে শুদ্ধ করে নেয়ার সুযোগ থাকে। কারণ, একটি গ্রন্থের একাধিক পাণ্ডুলিপি থাকতে পারে। কেননা- সংকলক থেকে তাঁর একাধিক শীষ্য কপি করে থাকেন।
উপরোক্ত হাদীস সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য নিম্নরূপঃ
প্রথমত, ‘সীরাতে হালাবিয়া’ ৩৬ পৃষ্ঠায় হাদীসটির শেষে رواه البخارى (অর্থাৎ হাদীসটি ইমাম বোখারী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেছেন) এমন একটি মন্তব্য বিদ্যমান। অতঃপর নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ইমাম বোখারী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর বিশ্বখ্যাত ও সবচেয়ে বিশুদ্ধ হাদীসগ্রন্থ ‘বোখারী শরীফ’ সংকলন করেননি; কিন্তু তিনি তো আরো অনেক গ্রন্থ রচনা বা সংকলন করেছেন। এসবের কোন একটিতে হাদীসটি বিদ্যমান থাকার কথাই বলা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত ‘তাফসীরে ফউযুল আযীয’-এর ৬৫৭ পৃষ্ঠা, উক্ত হাদীসটির সূত্র প্রসঙ্গে রয়েছে رواه البخارى فى تاريخه অর্থাৎ হযরত ইমাম বোখারী তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘তারীখে বোখারী’তে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আলোচ্য হাদীসটি ইমাম বোখারী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর কোন গ্রন্থে পাওয়াটাই যথেষ্ট।
তৃতীয়ত,النجم বা তারকা আকৃতিতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থানের সাথে পবিত্র ক্বোরআনে পাকের সূরা ‘ওয়ান্নাজম’-এর মধ্যে মজবুত যোগসূত্র পাওয়া যায়। কারণ, অনেক তাফসীরকার উক্ত সূরায় ‘আন্নাজম’ বলতে রসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বুঝিয়েছেন। যথা-
হযরত ইমাম জা’ফর সাদেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- النجم انه محمد صلى الله عليه وسلم অর্থাৎ সূরায়ে ওয়ান্ নাজ্মে ‘নাজ্ম’ বা তারকা বলতে রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরে রুহুল মা‘আনী, পারা-২৭, পৃ.৪৫), কৃত. আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আ’লূসী বাগদাদী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (ওফাত ১২৭৪হি.), তাফসীরে মাযহারী ৯ম খণ্ড, পৃ. ১০৩, কৃত. আল্লামা কাযী সানাউল্লাহ্ পানিপথী রাহমাতুল্লাহি, আলায়হি। ওফাত-১২২৫হি.’ ‘কিতাবুল মুফরাদাত ফী গারা-ইবিল ক্বোরআন’ কৃত, ইমাম হোসাইন ইবনে রাগেব ইসফাহানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, ওফাত ৫০২হিজরী। অনুরূপ ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘তাফসীরে কবীরে’, ইমাম খাযেন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ওফাত ৭২৫ হিজরী, ‘তাফসীরে সা’ভী ৪র্থ খণ্ড, ১২৯ পৃ., কৃত. আল্লামা শায়খ আহমদ সাভী মালেকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, ইমাম রোযবাহান বকলী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, ‘তাফসীরে আরা-ইসুল বয়ানে’ আলোচ্য আয়াতে ‘আন্নাজ্ম’ বলতে রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বুঝিয়েছেন। বিশ্ববরেণ্য তাফসীরকারকগণের তাফসীর ও আলোচ্য হাদীসটির মধ্যে মজবুত যোগসূত্র পাওয়া যায়।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম আক্বিদা ও বিশ্বাস- আল্লাহ্ তা‘আলা সর্বপ্রথম নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নূরকে সৃষ্টি করেছেন এবং স্পষ্টত ভিত্তি হলো প্রখ্যাত নির্ভরযোগ্য হাদিসগ্রস্থ ‘মুসান্নাফে আবদির রায্যাক্ব’-এর হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস। আলোচ্য হাদীসটি পূর্ববর্তী নির্ভরযোগ্য ইমামগণ নিজেদের লিখিত কিতাবাদিতে ‘মুসান্নাফ-এ আবদির রায্যাক্ব’-এর বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন। কিন্ত সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন দেশে এক শ্রেণীর লোক থেকে এমন একটি আওয়াজ উঠল যে, আলোচ্য হাদীসটি উক্ত হাদিস গ্রন্থে নেই। বিষয়টি সুন্নী ওলামা কেরামের নিকট কোনভাবেই বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। কারণ, ইতোপূর্বে লিখিত প্রায় সব সীরাত গ্রন্থে হাদীসটি ‘মুসান্নাফ-এ আবদির রায্যাক্ব’-এর বরাতে বর্ণিত হয়ে আসছে। সুতরাং এটা কোনভাবেই ভিত্তিহীন হতে পারে না। এর কয়েকটি রেফারেন্সে ওহাবী-দেওবন্দীদের সর্বজন স্বীকৃত আলেম আশরাফ আলী থানভী সাহেবের ‘নাশ্রুত্বত্বীব’ রয়েছে। হাদিসটি ‘মুসান্নাফ-এ আবদির রায্যাক’ গ্রন্থে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে প্রকাশিত খবর সুন্নী ওলামা-ই কেরামকে সেটার পুনঃ অšে¦ষণে নামতে বাধ্য করল। তন্মধ্যে দুবাই ‘আওক্বাফ’-এর সাবেক পরিচালক ড. আল্লামা ঈসা মানে’ হিমইয়ারী (মু.যি.আ.)-এর নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। অতঃপর পাকিস্তানের বরেণ্য আলেম আল্লামা আবদুল হাকীম শরফ ক্বাদেরী রহমাতুল্লাহি আলায়হিও একই সাথে নেমে পড়েন সেটার অন্বেষণে। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য উল্লেখ করা জরুরী।
তিনি বলেন, ‘‘মুসান্নাফে আবদির রায্যাক্ব’’ ১৯৭০ সনে বৈরুতে মুদ্রিত হয়। এটি পুনঃযাচাই করেছেন একজন দেওবন্দী আলেম-হাবীবুর রহমান আ’যমী। ১৯৭৫ সনের দিকে কূছা-ই গাউসিয়া, নাওয়া বাজার, লাহোর-এর লাইব্রেরীর মালিক উক্ত মুদ্রিত ‘মুসান্নাফ-এ আবদির রায্যাক’ সংগ্রহ করে আনেন। কিতাব আসার আগেই ওই মালিক এ কথা বলতে শুরু করল, সুন্নীরা ‘হাদীসে নূর’-এর ক্ষেত্রে ‘মুসান্নাফ-এ আবদির রায্যাক্ব’-এর বরাত দিয়ে থাকেন। এখন তা কি সত্য না মিথ্যা প্রমাণিত হবে।’’ অতঃপর একটি শ্রেণী লেখনী ও বক্তব্যে এর ভিত্তিতে বেশ তোড়জোড় শুরু করল যে, ‘এ হাদীসের ‘সনদ’ বা বর্ণনা সূত্র কি? এর রেফারেন্স কোথায়?’ ফলে এর ‘রেফারেন্স’ অšে¦ষণে আমি (আল্লামা আবদুল হাকীম শরফ কাদেরী রহমাতুল্লাহি আলায়হি)ও তৎপর হই। কেননা, আলোচ্য হাদীসটি হাদীসের সম্মানিত ইমামগণ বর্ণনা এবং গ্রহণ করেছেন। এটা ভাবাও অপরাধ হবে যে, তাঁরা মিথ্যে বলেছেন। অতঃপর বৈরুত থেকে মুদ্রিত যে কিতাব (মুসান্নাফে আবদির রায্যাক্ব) এসেছে-সেটা পরিপূর্ণ ছিল না, বরং অসম্পূর্ণ, যা স্বয়ং নিরীক্ষক (মৌং হাবীবুর রহমান আ’যমী)ও স্বীকার করেছেন।
ফলে আমি বিভিন্ন বিজ্ঞ আলিমের নিকট সরাসরি এবং কারো কারো নিকট পত্রযোগে আবেদন করেছি যেন উক্ত কিতাবের কোন হস্তলিখিত পাণ্ডলিপির সন্ধান দেন যাতে উক্ত ‘হাদীসে নূর’ বিদ্যমান। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পেলাম না। একবার আমি (আল্লামা আবদুল হাকীম শরফ কাদেরী রহমাতুল্লাহি আলায়হি) ইসলামাবাদে গেলাম। সেখানে ‘এদারা-এ তাহক্বীক্বাতে ইসলামী’-এর গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত ‘মুসান্নাফ-এ আবদির রায্যাক্ব’-এর ফটোকপি ছিল। তা দেখলাম, কিন্তু হাদীসটি তাতেও পাওয়া গেল না।
অতঃপর আমি বিভিন্ন দেশে আমার পরিচিত নি¤œবর্ণিত জ্ঞানীজনদের নিকট পত্র লিখলামঃ ড. কমরুন্নেসা, হায়দারাবাদ, ভারত, ড. আবদুস সত্তার, শিকাগো, আমেরিকা, শায়খ মুহাম্মদ ইউসুফ আলাহুত, বৈরুত, মিশর ‘জামেউল আযহারে’ অধ্যয়নরত ড. আবদুল ওয়াহেদ এবং ড. মুমতায আহমদ সাদীদী আযহারী পত্রে আমি তাঁকে লিখলাম, আপনি মিশর ‘দারুল কুতুব’ কায়রো থেকে জেনে নিন। কিন্তু কোন স্থান থেকে সন্তোষজনক অর্থাৎ হ্যাঁ সূচক উত্তর পেলাম না। তৎপর আন্তর্জাতিক ইসলাম প্রচারক পীরে তরীক্বত সৈয়দ ইয়ূসুফ সৈয়দ হাশেম রেফা‘ঈ (মু. যি.আ.) (যিনি ইতোপূর্বে আমাদের বাংলাদেশে এমনকি চট্টগ্রামে একাধিকবার তাশরীফ এনেছেন)-এর সাথে এক সাক্ষাতে আরয করলাম, আমি শুনেছি-ইয়েমেনের রাজধানী সানাতে এক ব্যক্তির নিকট ইমাম আবদুর রায্যাক্ব রাহমাতুল্লাহি আলায়হির হস্তলিখিত কপি আছে। আপনি একটু তাঁর নিকট জেনে নিন। তদুত্তরে তিনি বললেন, ওই লোক তো ওটা কাউকে দেখাননি। ‘খানিওয়াল’-এর এক হেকিম সাহেব বললেন, আমি বাগদাদ শরীফ থেকে উক্ত হাদীসের ফটোকপি এনেছি। কিন্তু বারবার চেয়েও ওই হেকিম সাহেবের ফটোকপি দেখার সুযোগ হলো না। অবশেষে ওই ব্যক্তি ইন্তেকাল করেন। অপর এক জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন, ‘‘মুসান্নাফ-ই আবদির রায্যাক্ব’-এর হস্তলিখিত কপি মদীনা ইউনিভার্সিটির গ্রন্থাগারে আছে এবং তাতে ‘হাদীসে নূর’ও বিদ্যমান। আমি এর ফটোকপি এনেছি। কিন্তু, কোথায় রেখেছি তা স্মরণ নেই।’’ কিছুদিন পর জানতে পারলাম ওই ব্যক্তি ‘ওমরাহ’-এর উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ যাচ্ছেন। আমি তাঁকে বললাম- যেন ‘হাদীসে নূর’-এর ফটোকপি আনতে না ভুলেন। তিনি ওমরাহ্ করে ফিরে এলে আমি তাঁকে ফোন করলাম। সংযোগ পেতেই কোন ভূমিকা ছাড়াই জিজ্ঞেস করলাম উক্ত হাদীস শরীফের ফটোকপি এনেছেন কিনা। ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘যেদিন আমি মদীনা মুনাওয়ারায় উপস্থিত হই, ওই দিন ইউনিভার্সিটি বন্ধ ছিল। পরদিন আমার চলে আসার সময়, কাজেই আনতে পারিনি।’’
অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলার অপার অনুগ্রহে ১৯৯৪ সনে হারামাঈনে শরীফাঈন যাওয়ার সৌভাগ্য হয়। আমি মদীনা ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরী পরিচালকের সাথে সাক্ষাত করে ‘মুসান্নাফ’-এর হস্তলিখিত কপি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করি। তিনি জানতে চাইলেন- কেন দেখতে চাচ্ছি। আমি বললাম, ‘মুসান্নাফ’-এর মুদ্রিত কপিগুলো অসম্পূর্ণ। আমি দেখতে চাই যে, এখানকার হস্তলিখিত কপিটা সম্পূর্ণ কিনা। তখন তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট এ বিষয়টি জানতে চাইলে উক্ত কর্মকর্তা বললেন, ‘‘আমাদের নিকট ‘মুসান্নাফ’-এর কোন হস্তলিখিত পাণ্ডলিপিই নেই।’’ তারপর তিনি মদীনা মুনাওয়ারার মুহাদ্দিস শায়খ হাম্মাদ আনসারীকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন, পাকিস্তানের কিছু লোক ‘মুসান্নাফ’-এর হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি দেখতে চান, আমাদের গ্রন্থাগারে কি ওটা আছে? ওই মুহাদ্দিস সাহেব বললেন, ‘‘নেই।’’ৎ
আলোচ্য হাদীসটি হাতে পেতে আমার (আল্লামা আবদুল হাকীম শরফ কাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি) এটার প্রতি আগ্রহের বিষয় পাঠক নিশ্চয় অনুমান করতে পারেন উপরিউক্ত বর্ণনা থেকে। না জানি এমনিভাবে আরো কতো নবীপ্রেমিক ‘হাদীসে নূর’-এর জন্য অস্থির। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ‘হাদীস শরীফটি’ হস্তগত হলে কি পরিমাণ আনন্দ অনুভূত হতে পারে, তাও অনুমান করা যায়। যে বস্তুটির অন্বেষণ যতো কঠিন ও দীর্ঘ হবে, তা অর্জনে আনন্দও হবে সীমাহীন।
জনাব সৈয়দ মুহাম্মদ আরেফ মাহজূব রেজভী গুজরাট ‘মুসান্নাফ’-এর হারিয়ে যাওয়া ‘দশ অধ্যায়’ হস্তগত হবার তারিখকে আবজাদের সংখ্যা হিসেবে ‘মাখযানে হাদিসে জাবের’ বের করেছেন। যার সংখ্যা দাঁড়ায়- ১৪২৫। অর্থাৎ অবশেষে ১৪২৫ হিজরী সনে আলোচ্য হাদীসটি হস্তগত হয়। এ পাওয়ার আনন্দে সৈয়দ মুহাম্মদ আরেফ মাহজূব, যার অনুবাদ হচ্ছে দু’টি শে’র লিখেছেন, যে দু’টি অর্থ হয় নিম্নরূপঃ
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের ‘নূর’ হওয়ার বিষয়ে অস্বীকারকারীগণ লজ্জিত হয়েছে। কারণ, ‘হাদীসে নূর’ এর ভিত্তি পাওয়া গেছে। ২. ঈমানদারগণের আনন্দ দেখার মতো ‘মাহজুব’-এর আনন্দে আত্মহারা হবার বিষয় জিজ্ঞেস করোনা। [মাসিক রযায়ে মোস্তফা, সংখ্যা জানুয়ারী, ২০০৬, পৃ.৯] আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হির পীর-পরিবার, মারহারা শরীফ-এর সাজ্জাদানশীন হযরত মাওলানা সৈয়দ আমীন মিঞা (মু.যি.আ.) ও মুজাহিদে ইসলাম হাজী মুহাম্মদ রফিক বরকাতী (মু.যি.আ.)-এর অনন্য প্রচেষ্টা ‘মুসান্নাফ’-এর হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি হাতে আসার ক্ষেত্রে সত্যিই অশেষ মুবারকবাদ ও কৃতজ্ঞতার যোগ্য।
দুবাই, ‘আওকাফ’-এর সাবেক ডাইরেক্টর ড. ঈসা মানে’ (মু.যি.আ.) কর্তৃক ‘মুসান্নাফ’-এর হারিয়ে যাওয়া দশ অধ্যায় এর উপর লিখিত ভূমিকা ও জ্ঞানসমৃদ্ধ পাদটিকা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। ‘মুসান্নাফ’-এর হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি আফগানিস্তানের এক কিতাব ব্যবসায়ীর নিকট থেকে হস্তগত হয়েছে। এটা ৯৩৩হিজরিতে শায়খ ইসহাক্ব ইবনে আবদির রহমান সালমানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বাগদাদ শরীফে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ড. আল্লামা ঈসা মানে’ (মু.যি.আ.)-এর লিখিত ভূমিকা ও পাদটীকা সহকারে এটা সর্বপ্রথম বৈরুত থেকে প্রকাশিত হয়। অতঃপর ‘মুজারুসসাতুশ্শরফ’, লাহোর-এর প্রকাশনার সৌভাগ্য লাভ করে। তারপর এর উর্দু অনুবাদ, প্রকাশিত হয় উর্দুভাষীদের সুবিধার্থে।
এর উর্দু অনুবাদ ও প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী উর্দুভাষায় ভাষান্তর করেন হযরত আল্লামা আবদুল হাকীম শরফ ক্বাদেরী রহমাতুল্লাহি আলায়হি, পাকিস্তান। তিনি বলেন, আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ খান ক্বাদেরী বৈরুতে প্রকাশিত কপি আমাকে যোগাড় করে দেন। ড. মুমতায আহমদ সাদিদী আযহারী অ্যাস্সিটেন্ট প্রফেসর, দি ইউনিভার্সিটি অফ ফয়সালাবাদ, পাকিস্তান এবং আমার প্রিয় হাফেয নেছার আহমদ ক্বাদেরী দিনরাত পরিশ্রম করে এ অমূল্য গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা এ পুণ্যময় কাজে অংশগ্রহণকারী সকল সম্মানিত ব্যক্তি ও বন্ধুদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। আ-মী-ন।
পাকিস্তানের সুন্নী ওলামা কেরাম আলোচ্য ‘হাদীসে নূর’ প্রাপ্তির শোকরিয়া ও আনন্দ প্রকাশের নিমিত্তে ‘হাদীসে নূর কনফারেন্স (১৫ জানুয়ারী), ২০০৬ রোববার’ শিরোনামে বিশাল আয়োজন করেন লাহোরে।
ক্বোরআন পাক ও হাদীস শরীফ-এর অসংখ্য বাণী সম্বলিত অনেক অমূল্যগ্রন্থ পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যাঁরা পরবর্তীদের জন্য জ্ঞানের মণি-মুক্তা সংগ্রহ করে রেখে গেছেন, তাঁদের অসাধারণ অবদান চিরকাল মুসলমানদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করতে হবে। আবার অনেক অমূল্য গ্রন্থ কখনো যতেœর অভাবে, কখনো অমুসলিমদের আগ্রাসনের শিকার হয়ে কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে। তাই মুসলমানদের উচিত ইসলামী জ্ঞান ভাণ্ডার সংরক্ষণে সদা সচেষ্ট থাকা। আমাদের দেশেও অনেক প্রবীণ আলেমের সংগৃহীত জ্ঞান ভাণ্ডার অবহেলায় অযতেœ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই প্রতিটি সুন্নী মাদরাসায় সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ও তার যথাযথ সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন।
পরিশেষে, তৃতীয় ও চতুর্থ আপত্তির জবাবও আনুষঙ্গিকভাবে এ দীর্ঘ নিবন্ধে এসে গেছে। তাই, কলেবর বৃদ্ধি এড়ানোর জন্য এখানে পৃথকভাবে তা উল্লেখ করলাম না। পরবর্তীতে সময়-সুযোগ হলে তাও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার প্রয়াস পাবো। ইনশা-আল্লাহ।