কবরবাসীরা কি সাধারণ মানুষের সালামের জবাব দিতে পারেন?

কবরবাসীরা কি সাধারণ মানুষের সালামের জবাব দিতে পারেন?

মুহাম্মদ আলী নেওয়াজ- কাটিরহাট, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

প্রশ্ন: আমরা সাধারণত কবরবাসীকে সালাম প্রদান করি। কিন্তু তাদের ব্যাপারে আমাদের ধারণা হলো তারা মৃত ও নিঃশেষ হয়ে গেছে তাদের কোন অস্তিত্ব নেই। তাহলে সালাম দিই কেন? তারা কি শুনতে বা সালামের জবাব দিতে পারেন? ক্বোরআন-হাদীসের আলোকে জানালে ধন্য হবো।

উত্তর: কবর জিয়ারত করা ও কবরবাসীদের সালাম প্রদান সুন্নাত এবং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আমরা সাধারণত কবরের পার্শ্ব দিয়ে যাওয়ার সময় অথবা জিয়ারত করার সময় কবরবাসীকে সালাম প্রদান করি। হাদীসে পাকে উল্লেখ রয়েছে কবরস্থান অতিক্রমকারীর সালাম কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তি শোনেন এবং সালামের উত্তর প্রদান করেন। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে-
عن ابن عباس رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مامِنْ احدٍ يَمُرُّ بقبرِ أخيه المؤمنِ كان يعرفَة فَسَلَّمَ عَلَيْهِ الَّا عَرَّفهُ وردَّ عَلَيْهِ السلام-
অর্থাৎ- প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের কবরের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করে না কেন কিন্তু সে তাকে চেনে। সে সালাম করলে তাকে সে চেনে এবং সালামের উত্তর দেয়।
[সুনানে নাসায়ী কৃত: ইমাম নাসায়ী রাহ., ও মা’মুলাতে আহলে সুন্নাত কৃত: আল্লামা আবদুল হামিদ কাদেরী বদায়ূনী রাহ., পৃষ্ঠা ৯৮] عن عائشة رضى الله عنها قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما مِنْ رجُلٍ يزُورُ قَبْرَ أَخِيْهِ وَيَجْلس عنده اِلَّا اِستانَسَ به حتّى يقُوم- (بيهقى)
অর্থাৎ- উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘‘যে কোন মানুষ তার ভাইয়ের কবর যিয়ারত করে, তার পাশে বসে, সে কবরস্থান ত্যাগ করা পর্যন্ত মৃত ব্যক্তি এতে শান্তি পায়।
[হায়হাকী: শুয়াবুল ঈমান] ইমাম বায়হাকী তাঁর ‘শুয়াবুল ঈমান’ হাদীস গ্রন্থে আরো বর্ণনা করেন-
عن أبى هريرة رضى الله عنه قال اذا مرّ الرَّجُلُ بقَبْرِ يَعْرِفُهُ فَسَلَّمَ عليه رَدَّ عليه السلام وعَرَفهُ واذا مرَّ بقير لايَعْرِفُهُ فَسَلَّمَ عليهِ رَدَّ عليه السلام- (رواه البيهقى فى شعب الايمان ৮৮৫৭)
অর্থাৎ- সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, কোন মানুষ কোন (পরিচিত মুসলিম) কবরের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করলে এবং তাঁকে সালাম প্রদান করলে কবরের মৃত ব্যক্তি তাকে চেনে, এবং মৃত ব্যক্তি তার সালামের জবাবও দেয়। আর যদি অপরিচিত কোন কবরের পার্শ্বে দিয়ে যাওয়ার সময় সালাম দিলে তার সালামের জবাবও দেয়।
[বায়হাকী: শুয়াবুল ঈমান, পৃষ্ঠা ১১/৪৭৩, হাদীস নং ৮৮৫৭] সহীহ মুসলিম শরীফে উল্লেখ রয়েছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
اِنَّ المَيْتَ أذا وضعَ فى قَبْرهِ اِنَّهُ لِيسمع خَفْقَ نعَالهم اذا انصرفوا- (رواه مسلم)
অর্থাৎ- মানুষ যখন দাফন করে চলে যায়- মৃত ব্যক্তি তাদের জুতোর আওয়াজও শুনতে পায়।
[মুসলিম শরীফ: হাদীস নং ৫১১৬] উপরোক্ত হাদীসে পাক সমূহ হতে প্রতীয়মান হয় যে, সাধারণ মৃত কবরবাসী মুসলমানগণ আল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে কবর হতে সব কিছু দেখতে পান এবং শুনেন শুধু তাই নয় জিয়ারতকারীর সালামের উত্তরও প্রদান করেন। আর আল্লাহর সম্মানিত নবী-রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, শুহাদায়ে এজাম, আউলিয়ায়ে কেরাম এবং প্রকৃত নেক্কার মুমিনদের শান মান ও মর্যাদা অনেক অনেক বেশী। ইনতিকালের পর এবং কবরে দাফনের পর ঈমানদারের মর্যাদা অনেকগুণ বেড়ে যায়। তাই ঈমানদার, অলি, গাউস, কুতুব, শহীদ, আবদাল ও নবী-রাসূলগণের শানে মরে গেছেন, মাটির সাথে মিশে গেছে, লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে না ইত্যাদি বলা বা লেখা জগন্যতম বেয়াদবী ও কটূক্তি। এ ধরনের কটূক্তিকারী সহী নিয়তে তওবা না করলে ঈমান হারা হয়ে যাওয়ার অশঙ্কা বেশী। কবরবাসীদের অবস্থা আমরা না জানলেও আল্লাহর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে যা বলেছেন তা বিশ্বাস ও মান্য করাটাই প্রকৃত ঈমান আর তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করা বেঈমানী ও নাফরমানীর নামান্তর।
[সহীহ মুসলিম শরীফ, সুনানে নাসায়ী, শুয়াবুল ঈমান কৃত: বায়হাকী ও আল বাছায়ের কৃত: হামদুল্লাহ্ দাজরী ইত্যাদি]