মাদকাসক্তি প্রতিরোধে ইসলাম

মাদকাসক্তি প্রতিরোধে ইসলাম

মাদকাসক্তি প্রতিরোধে ইসলাম-

মাওলানা মুহাম্মদ জিয়াউল হক রিযভি

====
ভূমিকা
মানবজাতি আল্লাহ্ তা’আলার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মেধাই তাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে উন্নীত করেছে। সভ্যতা ও চরিত্র গুণে তাদেরকে আলাদা করে চেনার সহজ উপায়। একজন মুসলিম তার ইহ-পরকাল জীবন সুবিন্যস্ত করতে পারে আল্লাহ্র প্রিয় রাসূলের কোমল স্বভাব লালন করার মধ্য দিয়ে। আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারিমের মহানাদর্শ তাঁরই প্রিয় শ্রেষ্ঠ রাসূলের মধ্যে গ্রথিত করে বিশ্ববাসীকে তা অনুসরণ করার নিদের্শ প্রদান করেছেন। র্ইশাদ হচ্ছে-“নিশ্চয় আপনিই সর্বোত্তম গুণে গুণান্বিত।”একজন মুসলিমের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকসহ সার্বিক জীবন পরিমার্জন করতে গেলে মহানবীর আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই। প্রাক-ইসলামি যুগে নৈতিকতা ও সভ্যতা হারিয়ে যখন মানব সমাজ উদ্ভ্রান্ত হয়ে দিকবিদিক ঘুরপাক খাচ্ছিল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার কোমল স্বভাব দিশারী হয়ে সভ্যতা ও মানবতার বীজ বপন হয়। সমাজ থেকে মদ, জুয়া, ব্যভিচার-অনাচারসহ সব ধরণের অশ্লীলতা মূলোৎপাটিত হয়। বিশেষত মাদকাসক্তিতে আরব সমাজ নিমজ্জিত ছিল। তা তাদের শিরা-উপশিরায় এমন ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের মাদকাসক্তির ছোবল থেকে বের হওয়ার কোন উপায় ছিল না।

প্রাক-ইসলামি যুগে মাদকাসক্তি
প্রাক-ইসলামি যুগ বলতে আমরা বুঝি আল্লাহ্র প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার নুবুওয়াতের অব্যবহিত পূর্বে ঐতিহাসিক তথ্যানুসারে হযরত ‘ঈসা আলাইহিস্সালাম আসমানে উত্থিত হওয়ার পর সাইয়্যির্দুরুসুল খাতামুল আম্বিয়া হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার আবির্ভাব পূর্ব প্রায় পাঁচশত বছর সময়কে বলা হয় প্রাক-ইসলামি যুগ। সঠিক মানবতাবোধের চর্চা ও মনুষ্যত্ব বিলুপ্ত হওয়ায় এ যুগকে আইয়্যামে জাহিলিয়্যা বা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ বলা হয়। এ যুগে আরবদের সাধারণ রীতি-নীতির মধ্যে মদ্যপানও স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। প্রিয় নবীর মদিনাহ্ মুনাওয়ারাহ্য় হিজরতের পরেও মদিনাবাসীদের মধ্যে মদ্যপান ও জুয়ার প্রথা ছিল। আরবের সাধারণ লোকদের এ দু’টির অন্তর্নিহিত অকল্যাণ সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় এত আসক্ত ছিল। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু বুদ্ধিমান ব্যক্তিও আছেন, যারা বিবেক-বুদ্ধিকে অভ্যাসের উর্ধ্বে স্থান দেন। যে অভ্যাস বিবেক ও যুক্তির পরিপন্থী ঐ অভ্যাসের ধারে-কাছেও যাওয়া তারা সমীচীন মনে করেন না। সাহাবায়ে কিরামের মধ্যেও এমন কিছুসংখ্যক লোক সাহাবী ছিলেন, যাঁরা হারাম হওয়ার পূর্বেও মদ্যপান তো দূরের কথা, তা স্পর্শও করেননি।

মদিনা মুনাওয়ারাহ্ পৌঁছার পর কতিপয় সাহাবায়ে কিরাম মদ্যপানের অকল্যাণগুলো অনুভব করলেন। যদ্দরুণ হযরত ফারূক-ই আযম, হযরত মু‘আয ইব্ন জাবাল এবং কিছুসংখ্যক আনসার রাসূল কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, “আপনার উপর আমাদের পিতা-মাতা উৎসর্গ হোন! মদ ও জুয়া মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনা পর্যন্ত বিলুপ্ত করে দেয় এবং আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষতি সাধন করে- এ সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কি? তখন আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে মদের অপকারিতাবিষয়ক আয়াত অবতীর্ণ হয়। ইরশাদ হচ্ছে- يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا
“তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাস করছে। আপনি বলুন, এত্দুভয়ে রয়েছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য কিছুটা উপকার। তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বেশি।”

মাদকাসক্তি প্রতিরোধে কুরআনুল কারিম
এমন পানীয় দ্রব্যকে মদ বলা হয়, যা পান করলে মানুষ নেশাগ্রস্ত হয়। মদকে কুরআনুল কারিমে খাম্র বলা হয়েছে। মহা প্রজ্ঞাময় আল্লাহ্র প্রতিটি বিধান হিকমাতপূর্ণ। আর শরি‘আতের নির্দেশসমূহের প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে প্রতীয়মান হয়, ইসলামি শরি‘আত কোন বিষয়ে কোন হুক্ম প্রদান করতে গিয়ে মানবীর আবেগ অনুভূতিসমূহের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে ; যাতে মানুষ সেগুলোর অনুসরণ করতে গিয়ে বিশেষ কষ্টের সম্মুখীন না হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন, لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ আল্লাহ্ তা‘আলা কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায়, যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে।” এ দয়া ও রহস্যের চাহিদা ছিল ইসলামি শরি‘আতেও মদ্যপান নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা গ্রহণ।

মদ্যপানের ব্যাপারে কুরআনুল কারিমে চার বার পর্যায়ক্রমে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে:
প্রথম আয়াত: মদ্যপান যেহেতু আরবজাতির দৈনন্দিন পানীয় গ্রহণের একটি, তাই প্রাথমিকভাবে এ বস্তুর অপকারিতা বর্ণনা করে এ পানীয় দ্রব্য থেকে সরে আসার ইঙ্গিত প্রদান করা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন, يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا “ “তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আপনি বলুন, এত্দুভয়ে রয়েছে মহাপাপ ও মানুষের জন্য কিছু উপকার। তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বেশি।” আয়াতটিতে বলা হয়েছে, মদ ও জুয়ায় যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে কিছুটা উপকারিতা পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু দু’টির মাধ্যমেই বড় বড় পাপ ও মন্দ কাজের পথ উন্মুক্ত হয়; যা এর উপকারিতার তুলনায় মারাত্মক ক্ষতিকর। পাপ বলতে এখানে সেসব বিষয় বুঝানো হয়েছে, যা পাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন মদ্যপানের দরুণ মানুষের সবচে’ মূল্যবান গুণ অর্থাৎ বুদ্ধি-বিবেক বিলুপ্ত হয়ে যায়; যদ্দরুণ প্রতিটি মন্দ কাজের পথ সুগম হয়ে যায়। বস্তুত আয়াতটিতে মদ্যপান নিষিদ্ধ করা না হলেও মদ্যপান ত্যাগ করার বাস্তবভিত্তিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সুতরাং আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পরপরই অনেক সাহাবী তৎক্ষণাৎ মদ্যপান ত্যাগ করেছেন।

দ্বিতীয় আয়াত: প্রাথমিকভাবে মদ্যপানের ক্ষতির দিক বর্ণনা করে যদিও তা একেবারে নিষিদ্ধ করা হয়নি, তবে তা পান করে নামাযে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ “ হে ঈমান্দারগণ তোমরা নেশাগ্রস্তাবস্থায় নামাযের কাছে যেও না, যতক্ষণ না তোমরা বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু বলছ”। এক মুসলিম তার জ্ঞান, হুঁশ এবং বিবেক-বুদ্ধি ঠিক রেখে ইখ্লাসের সাথে নামাযে দৃায়মান হওয়া শরি‘আতের নির্দেশ। মদ্যপান যেহেতু একজন মানুষের ভারসাম্য হারিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা হতে তাকে অস্বাভাবিক করে, সেহেতু নামায পূর্ব মদ্যপান ছাড়তে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এটি মহা প্রজ্ঞাময় আল্লাহ্ তা‘আলার হিকমাত এবং রাসূল কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামার গোপন রহস্য, যা ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আল্লাহ্র প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম প্রচারকার্যে অতীব সূক্ষ্ম ও যৌক্তিক নীতি অনুসরণ করে মাত্র তেইশ বছরে বিশ্ববুকে ইসলামের অনুপম আদর্শ রচনা করতে সক্ষম হয়েছেন। নবীজীর এই অনুসৃত নীতি প্রসঙ্গে কুরআনুল কারিমে এরশাদ হয়েছে এভাবে ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ “হে রাসূল আপনি আপনার প্রতিপালকের পথে হিকমাত ও সুন্দর উপদেশ দিয়ে আহ্বান করুন”।
আয়াত সংশ্লিষ্ট ঘটনা: মদ্যপান সংক্রান্ত দ্বিতীয় আয়াত ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ ) অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট হচ্ছে- একদিন হযরত ‘আব্দুর রহমান ইব্ন আউফ রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আন্হু তাঁর বাসভবনে কতিপয় বন্ধুদের দাওয়াত করলেন। ‘আরবের প্রথা অনুযায়ী আহারের পর মদ্যপানের ব্যবস্থা করা হলো এবং সকলে মদ্যপান করলেন। এমতাবস্থায় মাগরিবের নামাযের সময় হলে সবাই নামাযে দাঁড়িয়ে যান এবং একজনকে ইমামতি করতে এগিয়ে দিলেন। ইমাম সাহেব নামাযে সূরা কাফিরূন তিলাওয়াত করলেন। তবে তিনি মদ্যপানে নেশাগ্রস্ত হওয়ায় ভুলে সূরা হতে لَا অব্যয়টি বাদ দিলেন। তখনই মদ্যপান থেকে পুরোপুরি বিরত থাকার জন্য দ্বিতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, হযরত ‘আত্বান ইব্ন মালিক আনসারি বাদ্রি রাদিয়াল্লাহ্ তা‘আলা ‘আন্হু কয়েকজন সাহাবায়ে কিরামকে নিজ বাসায় দাওয়াত দেন। দাওয়াতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে হযরত সা‘দ ইব্ন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আন্হুও ছিলেন। খাদ্য পর্ব শেষ হওয়ার পর মদ্যপানের আয়োজন হল। সাথে সাথে ‘আরবের প্রথা মতে নেশাগ্রস্তাবস্থায় কবিতা প্রতিযোগিতা এবং নিজেদের বংশ ও পূর্ব-পুরুষদের অহংকারমূলক বর্ণনা শুরু হয়। সা‘দ ইব্ন আবি ওয়াক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর আবৃত কবিতা নিজেদের প্রশংসা এবং আনসারীদের বিরুদ্ধে যায়। হযরত সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র কবিতা শুনে এক আনসার যুবক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং মুহূর্তেই উটের গৃদেশের একটি হাড় হযরত সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মাথায় ছুঁড়ে মারেন। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। হযরত সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু পরবর্তীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার কাছে গিয়ে আনসার যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করেন এ বলে- اللهم بين لنا في الخمر بيانا شافيا “ হে আল্লাহ্! মদ্যপান সম্পর্কে আমাদেরকে একটি চূড়ান্ত বিধান দান করুন।”

তৃতীয় আয়াত: যে অভ্যাস মানুষের জীবনের সাথে ওঁতপ্রোতভাবে জড়িত তা হঠাৎ ত্যাগ করা অত্যন্ত কষ্টকর। তাফসির শাস্ত্রবিদগণ বলেন, শিশুদের যেভাবে মায়ের দুধ ছাড়ানো কঠিন ও কষ্টকর, তেমনি মানুষের কোন অভ্যাসগত কাজ ছাড়ানো এর চেয়েও কষ্টকর। তাই ইসলাম একান্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রথমে মদ্যপানের ক্ষতির দিকগুলো মানবমনে বদ্ধমূল করেছে। অতঃপর নামাযের সময়ে একে নিষিদ্ধ করেছে এবং সর্বশেষ বিশেষ বিশেষ সময়ের পরিবর্তে কঠোরভাবে সর্বকালের জন্যেই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

ইতোপূর্বে বর্ণিত আলোচনায় প্রতীয়মান হয়, যে অভ্যাসের বশীভূত হয়ে একজন মানুষ তার স্বাভাবিক জীবন গঠন করা অসম্ভব, তা কখনো তার জীবনে বৈধ স্বভাবে পরিণত হতে পারে না। ইসলাম মানবজাতির স্বভাবগ্রাহী ধর্ম। ইসলাম মানুষের অপকার ও ক্ষতির বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার। প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার প্রতিটি স্বভাব ও আদর্শ মানব কল্যাণে নিবেদিত। মুসলিম জাতির পারিবারিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য বিনির্মাণে মদ্যপান চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। অতএব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার ঐকান্তিক ইচ্ছা বাস্তবায়নে আল্লাহ্ তা‘আলা সূরা মায়িদাহ্র ৯০ নম্বর আয়াত অবতীর্ণ করে মদ্যপানের বৈধতা স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। র্ইশাদ হচ্ছে- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ “ হে মু’মিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক- যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।”

উপরিউক্ত আয়াতে চার বস্তুকে রিজ্স তথা অপবিত্রতা বলা হয়েছে। আর আরবি ভাষায় রিজ্স বলা হয় এমন নোংরা বস্তুকে, যার প্রতি মানুষের মনে ঘৃণা জন্মে। প্রকৃতপক্ষে আয়াতে বর্ণিত চারটি বস্তুও এমন, সামান্য সুস্থ বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির মনেই এগুলোর প্রতি আপনা-আপনিই ঘৃণা জন্মে।

মদ্যপান নিষেধে চূড়ান্ত বিধান
মুসলিম সমাজ ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বন্ধুত্বপ্রতীম সমাজ গঠন করবে এটাই ইসলাম ধর্মের উদাত্ত আহ্বান। যখন আরব সমাজে মদ্যপানে পরস্পর হিংসা, দ্বেষ, ক্ষোভ এবং দূরত্ব সৃষ্টি করে যাচ্ছে, তাই প্রথাটি কখনো ইসলাম সমাজে বৈধতার অন্তর্ভূক্ত হতে পারে না। পূর্বের আয়াতে কারিমায় মদকে অতীব নিকৃষ্ট ও নোংরা পানীয় দ্রব্য বলে ঘোষণা দিয়ে স্থায়ী নিষিদ্ধ হওয়ার যৌক্তিক দাবিও বলা হয়েছে। অতএব একই সূরার পরবর্তী আয়াত অবতীর্ণ করে মদ্যপানের চূড়ান্ত বিধান বিবৃত হয়। ইরশাদ হচ্ছে- إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ “শয়তান চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহ্র স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে, অতএব তোমরা এখনও কি নিবৃত্ত হবে?”

মাদকাসক্তির প্রতিরোধে হাদিস নববী
মাদকদ্রব্য একজন মানুষকে তার চরিত্র অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যায়। মদ্যপানকারী জীবনের গতি থেকে বিচ্যুত হয়ে ভারসাম্যহীন জীবনে চলে যায়। তাই মদ্যপান সকল অপরাধ ও পাপ কাজের উৎস। মানবতা ও সভ্যতার মহান নবী আল্লাহ্র প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদ্যপানের কুফল বর্ণনা করত তা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে কঠোর আদেশ প্রদান করেন। মাদকদ্রব্য কম হোক বা বেশি হোক উভয়াবস্থায় তা হারাম। নবীজী ইরশাদ করেন¬-
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ. “ হযরত জাবির ইব্ন আব্দিল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে বস্তু অধিক পরিামাণে নেশাগ্রস্ত করে তা বেশী এবং কম পরিমাণও হারাম।”

জ্ঞান মানুষের চিন্তা-চেতনার মূল উপকরণ। জ্ঞান লোপ পেলে সে যা ইচ্ছা করতে পারে। মদ্যপানে নেশাগ্রস্ত হলে তখন এ অবচেতনার দ্বার উম্মুক্ত হয়ে যায়। তাই হাদিস শরিফে মদ্যপানকে সকল পাপের মূল হিসাবে চিহ্ণিত করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে-
الخمر أم الخبائث، فمن شربها لم تقبل صلاته أربعين يوما؛ فإن مات وهي في بطنه مات ميتة جاهلية “মদ্যপান সকল পাপের মূল। যে ব্যক্তি মদ পান করবে চল্লিশ দিন যাবৎ তার নামায কবূল হবে না। অতপর সে যদি পেটে মদ নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে যেন সে জাহেলি যুগে মুত্যৃবরণ করল।”

মূলত মদ্যপান এক অভিশপ্ত কাজ। শুধু তাই নয়, মদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে পাপবৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার কোন সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে- لعن الله الخمر وشاربها وساقيها وبائعها ومبتاعها وعاصرها ومعتصرها وحاملها والمحمولة إليه وآكل ثمنها “ মদ, যে ব্যক্তি পান করে, যে তা পান করায়, যে তা বিক্রি করে, যে তা ক্রয় করে, যে তা তৈরি করায়, যে তা তৈরি করে, যে তা বহন করে, যার জন্য তা বহন করা হয় এবং মূল্য ভক্ষণ করে, সকলের প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলা অভিশাপ দেন। ”

মদ্যপান নিষিদ্ধ হওয়ার পর সাহাবায়ে কিরাম তা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতেন। মদের প্রতি তাদের অন্তরে তীব্র ঘৃণা জন্মে। শুধু তা নয়, মদের আসক্ত সৃষ্টি হয় এমন পাত্র, ব্যবহার্য সামগ্রীসহ এতদ্সংশ্লিষ্ট সবকিছু তাঁরা ঘর থেকে বের করে দেন। এমনকি যাদের ঘরে পূর্ব থেকে এসকল পাত্র সংরক্ষিত ছিল তা জনসমুক্ষে নিক্ষেপ করে দেন। হযরত ‘উমার ফারূক রাদিয়াল্লাহু তাআলা ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার মিম্বরে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন- إنَّهُ قَدْ نَزَلَ تحْرِيمُ الخَمْرِ، وهْيَ مِنْ خَمْسَةِ أشْياءَ: العِنَبِ والتمْر والحِنْطَةِ والشَّعِيرِ والعسَلِ. والخَمْرُ مَا خامَرَ العَقْلَ، “ মদ হারাম হওয়া সাব্যস্ত আছে। আর জেনে রেখ! মদ তৈরি হয় পাঁচটি বস্তু থেকে- আঙ্গুর, খেজুর, গম, যব এবং মধু। আর যে বস্তুই মানুষের বিবেক-বুদ্ধি আচ্ছন্ন করে তা হারাম।”

মাদক দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবসা
ইসলামি শরিয়তে যে সকল বস্তু খাওয়া নিষিদ্ধ ওই সকল বস্তুর ব্যবসা, লেনদেন এবং আদান-প্রদানও নিষিদ্ধ। এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের ব্যবসাকেও হারাম করেছেন। এমনকি অমুসলিমদের সাথেও এ ব্যবসা জায়িয নেই। মদ ও মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, আমদানি, রফতানি সব কিছুই নিষিদ্ধ। এসব কারখানায় কর্মকর্তা ও কর্মচারী হিসাবে চাকরি করাও সমানভাবে নিষিদ্ধ। মদ্যপানের সকল পথ রুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে মদ তৈরিকারীর নিকট আঙুর বিক্রি করাও নবীজী নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, “যে লোক আঙুরের ফসল কেটে তা সঞ্চয় করে রাখে কোন ইয়াহুদি, খ্রিস্টান বা এমন ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে, যে তা থেকে মদ তৈরি করবে, তাহলে সে জেনেশুনেই আগুনে ঝাঁপ দিল।”

উপরোল্লিখিত হাদিসসমূহ দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, কোন অমুসলিম ব্যক্তিও যদি কোন মুসলমানের তালগাছ এ উদ্দেশ্যে অর্থের বিনিময়ে নিতে চায় যে, সে ঐ গাছের রস থেকে ওই তাড়ি (মদ তৈরির উপাদান) তৈরী করবে, তবে ঐ গাছ ওই ব্যক্তিকে দেয়া বৈধ হবে না। খেজুর গাছের বেলায় একই হুকম প্রযোজ্য হবে।

ফিক্বহ্বিদগণের অভিমত
ফিকহশাস্ত্রবিদগণ এ কথায় ঐকমত্য পোষণ করেন, যে সব বস্তুর মধ্যে নেশা আছে তার সব নিষিদ্ধ। তা কি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে সেটা বিবেচ্য নয়। সেটা আঙুরের, খেজুরের, মধু, গম, যব অথবা অন্য কিছুর তৈরি হলে তা নিষিদ্ধ। চেতনানাশক দ্রব্যাদিও ব্যবসা-বাণিজ্য হারাম, কেননা এতে শারীরিক ক্ষতি, জ্ঞান লোপসহ বহুবিধ ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়। কাজেই শরি‘আত এসব দ্রব্যের অনুমোদন দিতে পারে না। শুধু তা নয়, এগুলোর চেয়ে কম ক্ষতিকর বস্তুও হারাম। এ ক্ষেত্রে হানাফি মাযহাবের ‘আলিমগণ বলেন, إن من قال يحل الحشيش زنديق مبتدع “ যে ব্যক্তি ভাংকে হালাল বলে, সে ধর্মত্যাগী ও বিদ্‘আতি।” চেতনানাশক দ্রব্যাদির ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত হওয়া মানে আল্লাহ্ তা‘আলার নাফারমানিমূলক কাজে সহায়তা করা। আর এ সহায়তা সম্পূর্ণ হারাম। এভাবে মাদকদ্রব্য তৈরির উদ্দেশ্যে ভাং, আফিম ইত্যাদি উৎপাদন করা এবং এসব দ্রব্যাদির লব্ধ অর্থও হারাম এবং অবৈধ। হযরত ইব্ন আববাস (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, لَعَنَ اللهُ الْيَهُودَ، حُرِّمَتْ عَلَيْهِمِ الشُّحُومُ، فَبَاعُوهَا وَأَكَلُوا أَثْمَانَهَا، وَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا حَرَّمَ أَكْلَ شَيْءٍ، حَرَّمَ ثَمَنَهُ ” “ আল্লাহ্ তা‘আলা ইয়াহুদী জাতিকে অভিসম্পাত করেন, কারণ তাদের ওপর চর্বি নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও তারা তা বিক্রয় করে এবং এর বিক্রয় লব্ধ টাকা ভক্ষণ করে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা যখন কোন বস্তুকে হারাম করেন তখন তার মূল্যকেও হারাম করে দেন।”

মদ্যপানে ক্ষতির দিকসমূহ
মদ্যপান মানুষের বিভিন্ন দিক ক্ষতি সাধন করে। আর্থিক অপচয়ের সাথে সাথে শারীরিক বহুবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় মদ্যপানে। সর্বপ্রকার মাদকদ্রব্য পানে স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। ¯œায়ুমন্ডলী চেতনা হারিয়ে ফেলে। ফলে এসব বিষাক্ত দ্রব্য পানে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে সমাজদেহে মারাত্মক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, সমাজদেহে পচন ধরে এবং পরিবারে ভাঙ্গন ধরে। ফলে দুর্নীতি ও অসৎ পন্থা অবলম্বনে তাদের কোন কুন্ঠা বা দ্বিধা থাকে না। বর্তমান বিশ্বে অধিক হারে যেসব লোক মাদকদ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়েছে সেগুলো হচ্ছে ফেনসিডিল, হাশিশ, আফিম, গাঁজা, হিরোইন, কোকেন, পেথিড্রিন, ইয়াবা ইত্যাদি। এসব দ্রব্য মদের মতই ক্ষতিকারক; বরং কোন কোন দ্রব্য বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আরো মারাত্মক। বিশেষ ক্ষতিকর দিকসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলঃ

এক. চোখের ক্ষতি : নেশায় অভ্যস্ত ব্যক্তির চোখের মণি সংকোচিত হয়ে যায় এবং দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়। শ্বাস প্রণালী, খুস্খুস্ েকাশি থেকে যক্ষèা, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, ক্যান্সার এবং শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

দুই. হৃদযন্ত্র ও রক্তপ্রণালীর ক্ষয় : মদ্যপানে হৃদযন্ত্রের ভারসাম্য থাকে না। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক উঠা-নামা করে। হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস পায়, রক্ত কণিকার সংখ্যার পরিবর্তন আসে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, এবং রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ইত্যাদি।

তিন. যকৃত ( লিভার) : লিভার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। অতিরিক্ত মদ্যপানে লিভার বিভিন্ন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেমন : জন্ডিস, হেপাটাইটিস, সিরোসিস ও ক্যান্সার ইত্যাদি।

চার : কিডনি : মদ্যপানে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে পায়। ঘন ঘন সংক্রমণ হয়ে পরিশেষে কিডনি অকার্যকর হয়ে যায়।

পাঁচ : খাদ্য প্রণালী : খাদ্য গ্রহণে রুচি হ্রাস পায়। হজমশক্তির হ্রাস, আল্সার, এসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি।

মস্তিষ্কগত ও মানসিক সমস্যা : নেশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রলাপ বকা, আত্মহত্যার ঝুঁকি, পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে অসচেতনতা, চিন্তাশক্তি লোপ, ¯œায়ুবিক দূর্বলতা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, অস্থিরতা এবং বিষন্নতা ইত্যাদি মারাতœক মানসিক রোগ দেখা দেয়। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিমান, গাড়ি বা মেশিন চালালে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি। একই জায়গায় সূঁচ দ্বারা পেথিড্রিন ইনজেকশান নেয়ার ফলে ক্ষত থেকে সংক্রমণ প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ ও সংশ্রব গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। নবিজী ইরশাদ করেন- من كان يؤمن بالله واليوم الاخر فلا يقعد علي مائدة تدار عليها الخمر “ আল্লাহ্ ও আখিরাতের ওপর ঈমানদার ব্যক্তি যেন এমন খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চায় না বসে, যেখানে মদ পরিবেশন করা হয়।” [ইমাম আহমদ, মুসনাদ]

উপসংহার : ইসলামের বিধি নিষেধ মেনে চলার মধ্যে ইহ ও পরকালের প্রকৃত সুখ-শান্তি নিহিত। হালাল বস্তুর মধ্যে মানুষের সার্বিক উপকারিতা বিদ্যমান। হারাম ও নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ কখনো তার আহার্য ও পানীয় হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না। মদ্যপানের পর্যায়ক্রমিক নির্দেশই তা পরিহারের জন্য যথেষ্ট। মদ্যপানসহ সকল ধরনের নেশাদ্রব্য থেকে আমাদেরকে বিরত থেকে আল্লাহ্র প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার সুন্নাত মোতাবিক চলার তাওফিক দান করুন। আ-মী-ন। বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল র্মুসালিন।

লেখক: প্রভাষক-আল্ কুর’আন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, ষোলশহ্র, চট্টগ্রাম।