বিধর্মীদের সাথে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

বিধর্মীদের সাথে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

বিধর্মীদের সাথে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? অমুসলিমদের সাথে সবসময় মেলামেশা এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব করা কি জায়েজ?

  لَّا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۖ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَن تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً ۗ وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ ۗ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ (28 (

তরজমা: মুসলমান কাফিরদেরকে যেন আপন বন্ধু না বানিয়ে নেয়, মুসলমানগণ ব্যতীত। আর যে ব্যক্তি এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক রইলোনা: কিন্তু এ যে, তোমরা তাদেরকে কিছুটা শংকা করবে; এবং আল্লাহ্ তোমাদেরকে আপন ক্রোধ সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করছেন এবং আল্লাহরই প্রতি প্রত্যাবর্তন করতে হবে। [সূরা আল-ই ইমরান, আয়াত- ২৮, কানযুল ঈমান ও খাযাইনুল ইরফান]

 শানে নুযুল: হযরত ওবাদাহ্ ইবনে সামিত (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) আহযাব যুদ্ধের (খন্দকের যুদ্ধ) দিন সৈয়দে আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের দরবারে আরয করলেন, ‘‘আমার সাথে পাঁচশ ইহুদী রয়েছে, যারা আমার সাথে বন্ধুত্ব সূত্রে আবদ্ধ। আমার প্রস্তাব হচ্ছে যে, আমি শত্রুর মুকাবিলায় তাদের থেকে সাহায্য গ্রহণ করবো।’’ এর জবাবে এ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়েছে এবং কাফিরদেরকে বন্ধু ও সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা রাখা নিষিদ্ধ ও হারাম। তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা এবং তাদের সাথে সম্প্রীতিমূলক লেন-দেন করা অবৈধ।অবশ্য, যদি প্রাণ বা সম্পদের ভয় থাকে, এমনি পরিস্থিতিতে শুধু বাহিক্যকভাবে সম্পর্ক রাখা জায়েয।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ (118 (
তরজমা: হে ঈমানদারগণ! (আপন লোকদের ব্যতীত) অপর লোকদেরকে নিজেদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা।তারা তোমাদের ক্ষতি সাধনে কোনরূপ ত্রুটি করে না। তাদের কামনা হচ্ছে- যত কষ্টই আছে তোমাদের নিকট পৌঁছুক! শত্রুতা তাদের কথাবার্তা থেকে স্পষ্টরূপে প্রকাশ পেয়েছে। এবং তারা যা অন্তরে গোপন রেখেছে তা আরো জঘন্য। আমি (আল্লাহ্) তোমাদেরকে নিদর্শনসমূহ বিস্তারিতভাবে শুনিয়ে দিয়েছি যদি তোমাদের বিবেক-বুদ্ধি থাকে। [সূরা আল-ই ইমরান, আয়াত-১১৮, কানযুল ঈমান ও খাযাইনুল এরফান]

۞ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (51 (

তরজমা: • হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। (১৩২) তারা একে অপরের বন্ধু। (১৩৩) এবং তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।(১৩৫) [আল মায়িদা: 51]

টিকা: ১৩২. এ আয়াতের মধ্যে ইহুদী ও খৃস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা, তাদের সাহায্য করা, তাদের থেকে সাহায্য চাওয়া এবং তাদের সাথে ভালবাসার সম্পর্ক রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নির্দেশ ব্যাপক, যদিও আয়াতটার অবতরণ কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই হয়েছে।

শানে নুযুল: এ আয়াতে শরীফ হযরত ওবাদাহ্ ইবনে সামেত সাহাবী এবং আবদুল্লাহ্ ইবনে ‍উবাই সুলূল-এর প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে, যে মুনাফিকদের সরদার ছিলো। হযরত ওবাদাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আরয করলেন, ‘‘ইহুদীদের মধ্যে আমার অনেক বন্ধু রয়েছে, যারা খুবই প্রভাবশালী ও শক্তিশালী লোক। এখন আমি তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে নারায এবং আল্লাহ্ ও রসূল ব্যতীত আমার অন্তরে অন্য কারো বন্ধুত্বকে স্থান দেয়ার অবকাশ নেই।’’ এরপর আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই বললো, ‘‘আমিতো ইহুদীদের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে নারায হতে পারি না। ভবিষ্যতে আমার বিপদাপদের আশঙ্কা রয়েছে এবং তাদের সাথে আমার বন্ধুত্ব রাখা আবশ্যক।’’

হুযুর বিশ্বকুল সরদার (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) তার উদ্দেশ্যে এরশাদ ফরমালেন, ‘‘ইহুদীদের সাথে সম্পর্ক রাখা তোমারই কাজ, এটা ওবাদার কাজ নয়।’’ এ প্রসঙ্গে এ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়েছে। [খাযিন]

টিকা: ১৩৩. এ থেকে বুঝা গেলো যে, কাফির যে কেউ হোক না কেন, তাদের মধ্যে যতই বিরোধ থাকুক না কেন, মুসলমানদের মুকাবিলায় তারা সবাই এক- اَلْكُفْرُ مِلَّةٌ وَّاحِدَةٌ অর্থাৎ ‘কুফর’ বলতেই একটা মাত্র ধর্ম’। [মাদারিক]

এর মধ্যে এমর্মে অতি কঠোরতা ও তাকীদ রয়েছে যে, মুসলমানদের জন্য ইহুদী ও খৃস্টান এবং প্রত্যেক দ্বীন-ইসলাম-বিরোধী (চক্র) থেকে আলাদা ও পৃথক থাকা আবশ্যক। [মাদারিক ও খাযিন]

টিকা: ১৩৫. যে ব্যক্তি কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করে নিজের আত্মার উপর জুলুম করে। হযরত আবূ মুসা আশ‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সচিব ছিলো একজন খৃস্টান। হযরত আমীরুল মু’মিনীন ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) বলেন, ‘‘খৃস্টানদের সাথে কিসের সম্পর্ক? তুমি কি এ আয়াত শরীফ শোনোনি? অর্থাৎ যে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা…আল আয়াত] [সূরা মা-ইদাহ্, আয়াত-৫১, কানযুল ঈমান ও খাযা-ইনুল ইরফান]