ওয়াযের পেশা ও প্রকৃত আলিম-ই দ্বীন

ওয়াযের পেশা ও প্রকৃত আলিম-ই দ্বীন

ওয়াযের পেশা ও প্রকৃত আলিম-ই দ্বীন

আজকাল শুধু স্বল্পজ্ঞানীই নয়, বরং গণ্ড মুর্খলোকও উল্টোসিধে উর্দু -বাংলা দেখে স্মরণ শক্তির জোরে, বুদ্ধির তীক্ষ্মতা ও বাকচাতূর্যকে মানুষ শিকারের জাল বানিয়ে নিয়েছে।

আক্বাইদের ব্যাপারে উদাসীন-গাফিল, মাসআলা-মাসাইল সম্পর্কে মূর্খ জাহেল; কিন্তু ওয়ায করার জন্য তুমুল ঝড়-ঝঞ্ছা। প্রায় জামে মসজিদে, প্রত্যেক গণজমাতে ও মজলিসে, যে কোন মেলা-মাহফিলে মিথ্যা হাদীস, ভিত্তিহীন বর্ণনা এবং উল্টো মাসআলা বর্ণনা করার জন্য দাঁড়িয়ে যায়। নানা ধরনের কলা-কৌশল ব্যবহার করে যতটুকু সম্ভব হয়, পকেটস্থ করে নেয়।

প্রথমত: তার জন্য ওয়ায করা হারাম। কবি বলেন- اوخويشتن كم ست كرار هبريى كند অর্থাৎ যে নিজে পথহারা, সে কাকে পথ দেখাবে?

রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাচ্ছেন- من قال فى القران بغير علم فليتبوا مقعده من النار অর্থাৎ যে জ্ঞানহীন ব্যক্তি ক্বোরআনের অর্থ বা ব্যাখ্যা কিছু বলে সে যেনো নিজের ঠিকানা জাহান্নামে তৈরী করে নেয়।

দ্বিতীয়ত: তাদের ওয়ায শুনা হারাম। এরশাদ হয়েছে- سمعون الكذب (তারা মিথ্যা খুব শোনে) সুতরাং সমগ্র জলসাল কুফল ওয়াযকারীর ঘাড়ে বর্তাবে- `من غير ان ينقص من اوزارهم شيئا অর্থাৎ তাদের গুনাহর বোঝা থেকে কিছুই হ্রাস করা হবে না।

তৃতীয়ত: ওয়ায-নসীহতকে সম্পদ ও উপার্জন কিংবা লোকজনকে নিজের ভক্ত বানানোর মাধ্যম বানানো গোমরাহী ও প্রত্যাখ্যাত এবং ইহুদী ও খৃস্টানদেরই কুপ্রথা। ইমাম ফক্বীহ্ আবুল লাইস যদি বর্তমান যুগের অবস্থা দেখে পারিশ্রমিক নিয়ে আযান, ইক্বামত ও শিক্ষাদান করাকে, পরবর্তীদের ফাত্ওয়া মতো, বেশীরভাগ ইমামগণও নিজের পূর্ববর্তী অভিমত প্রত্যাহার করে আলিম সমাজকে ওয়ায-নসীহতের জন্য গ্রামে-গঞ্জে যাওয়া ও নযর-নেয়ায গ্রহণ করার অনুমতি দিয়ে থাকেন, তবে তা হবে বাধ্য হওয়ার অবস্থায় অনুমতি দান, তাও আবার বিশেষ প্রয়োজন হলে এবং বিশেষ করে ওইসব আলিম-ই দ্বীনের জন্য, যাঁরা ওয়ায-নসীহত করার উপযোগী: মূর্খ বা স্বল্পজ্ঞানী লোকদের জন্য নয়, যাদের জন্য ওয়ায-নসীহত না-জায়েজ। কারণ, তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আলিম সমাজের দায়িত্বভার গ্রহণ করা বর্জন করেছে, তাঁদের ও তাঁদের পরিবার-পরিজনের সমস্ত ব্যয়ভার গ্রহণ করার যেই হক্ব বা কর্তব্য রয়েছে, তা তাঁদের নিকট পৌঁছছে না, ফলে তাঁরা অর্থোপার্জনে ব্যস্ত হয়ে গেছেন, পারিশ্রমিক না নিলে সাধারণ লোকদের হিদায়তের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সুতরাং যে বিশেষ প্রয়োজনের তাগিদে এ নিষিদ্ধ কাজটির অনুমতি দেওয়া হয়, সে কাজটি ওই প্রয়োজন ও প্রয়োজনীয় পরিমাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। لان ما كان بضرورة يقدر بقدرها

(কেননা, যা প্রয়োজন হবার কারণে বৈধ হয় মাত্র, সেটা প্রয়োজন পরিমাণেই বৈধ হয়), বিনা প্রয়োজনে কিংবা ভান্ডার ভর্তি করার জন্য নয়। তারপর এটা নির্ভর করবে নিয়্যতের উপর। যখন আল্লাহ্ আযযা ওয়া জাল্লা, অন্তরের কথা সম্পর্কে অবগত, তার অবস্থা সম্পর্কে জানেন যে, তা তার মূল উদ্দেশ্য মানুষকে হিদায়ত করাই, অর্থ ও উপার্জন করা নয়, তখন তো সে ওই বাধ্য অবস্থার ফাত্ওয়া দ্বারা উপকৃত হতে পারবে।

অন্যথায় ওই গোপন ভেদ ও সর্বাধিক গোপন কথাবার্তা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত আল্লাহ্ আযযা ওয়া জাল্লার মহান দরবারে কোন বাহানা-অজুহাত চলবে না। আর দুনিয়া -ক্রেতা ও দ্বীন-বিক্রেতা হিসেবে নাম পাবে মাত্র। (সাওয়াব-প্রতিদান পাবার আশঅ করতে পারে না।) মহামহিম আল্লাহরই পানাহ্। [আহসানুল ভি‘আ: পৃ. ১২৬-১৩৪]

[সূত্র. ইরশাদাত-ই আ’লা হযরত, পৃ. ৮৯]