সম্পাদকীয়: গাউসে পাক শরীয়ত-তরিকতের দুই ধারায় দ্বীনে হক্বকে পুণর্জীবিত করেন

সম্পাদকীয়: গাউসে পাক শরীয়ত-তরিকতের দুই ধারায় দ্বীনে হক্বকে পুণর্জীবিত করেন

আল্লাহ পাকের অসীম কুদরতের রহস্য ক্ষুদ্র মানবমন্ডলীর জ্ঞান-প্রজ্ঞায় বুঝে আসা সহজসাধ্য বিষয় নয়। তাঁর সকল কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সুবিন্যস্ত ও সুচারুরূপে সংঘটিত। বিগত মাস ছিল আল্লাহর প্রিয় হাবীব নবীকুল সরদার হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র বেলাদতের পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত মাস রবিউল আউয়াল। এর পরের মাস রবিউস্ সানীও আল্লাহর মহান আলী যিনি ওলীকুল সরদার হযরত গাউসুল আযম আবদুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির স্মৃতি বাহক মাস। পৃথিবীর বুকে যখন আল্লাহর বান্দারা তাওহীদের সরল পথ থেকে বিচ্যুত হচ্ছিল তখনই আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্ পাক এ ধরার বুকে প্রেরণ করে রিসালাতের আলোকে ধরণীকে আলোয় উদ্ভাসিত করেন। হুযূর পাকের জাহেরি হায়াতের প্রায় পাঁচশত বছর অতিক্রান্ত হবার পর পবিত্র ইসলামের শত্রু দ্বারা যখন মুসলিম জাতি ইসলামের সরল সঠিক পথ হতে বিচ্যুত হয়ে অজ্ঞতার অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছিল তখনই আল্লাহ পাকের অসীম দয়ায় আবির্ভাব হয় বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির।

ইতিহাস থেকে জানা যায় গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এমন সময়ে বাগদাদে গমন করেন যখন ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের পতনের যুগ আরম্ভ হয়। যদিও ইসলামী সাম্রাজ্য সুদূর স্পেন থেকে ভারতবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কিন্তু সাম্রাজ্যের অবস্থা এমন দুর্বল হয়ে পড়েছিল যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আল্লামা সুয়ূতী, শিবলি নুমানী, ইবনে জওযী প্রমুখ ঐতিহাসিক সে যুগের যে চিত্র তুলে ধরেছেন তার সারমর্ম হলো, তখন মুসলমানদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও চারিত্রিকসহ সর্বক্ষেত্রে এক নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। এমনকি মুসলিম জগতের তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা দর্শনে ইমাম গাযালী (৪৫২-৫০৫হি.)’র মত মহান ব্যক্তিত্ব চরম অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটান। এমন এক যুগ সন্ধিক্ষণে হযরত আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু খোদা প্রদত্ত রূহানী ও ইলমী শক্তি বলে শরীয়ত তরিকতের দুই ধারায় অসামান্য সংস্কার সাধন করে দ্বীনে হক্বকে পুণর্জীবিত করেন। এ জন্যই তাঁর উপাধি ‘মুহিউদ্দীন’ অর্থাৎ দ্বীনের পুণর্জীবন দানকারী। তিনি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সত্যিকার প্রতিনিধি হিসেবে দ্বীনের প্রচার প্রসারে এবং ইসলামী জটিল তথ্য ও তাত্ত্বিক সমাধানে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অমূল্য বাণীর সঠিক ব্যাখ্যা দানে ইসলামের আসল রূপ জনসম্মুখে তুলে ধরার মাধ্যমে অধঃপতিত মানব সমাজকে তিনি ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত করেন। হুযুর গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সাথে সম্পর্কিত ও তাঁর প্রবর্তিত তরিকার নাম কাদেরিয়া তরিকা। আধ্যাত্মিক পথের অনুসারী বিশ্বের অধিকাংশ তাসাউফপন্থী মুসলমান এ তরিকায় দীক্ষিত। বিশেষত পাক-ভারত উপমহাদেশে কাদেরিয়া তরিকার অনুসারী সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশেও এ তরিকা সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার প্রচার প্রসারে যাঁদের ভূমিকা অগ্রগণ্য তাঁরা হলেন আওলাদে রসূল হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও তাঁর বংশ পরম্পরায় আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও তাঁর শাহ্জাদাদ্বয় খেলাফতপ্রাপ্ত আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মু.জি.আ.) ও পীরে বাঙ্গাল আল্লামা পীর সাবির শাহ্ (মু.জি.আ.)। হুজুর গাউসে পাকের শিক্ষা ও আদর্শের ছোঁয়ায় যেমন তৎকালীন আত্মবিস্মৃত দ্বিধাগ্রস্ত মুসলমানদের হৃদয়ে নবচেতনা ও প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল। তেমনি বর্তমানেও তাঁর প্রতিষ্ঠিত তরিকার শিক্ষা ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হলে বর্তমান মুসলমানদের দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগতে প্রভূত কল্যাণ লাভে সহায়ক হবে।
তাঁর প্রদর্শিত ও প্রবর্তিত তরিকায়ে কাদেরিয়ার মশাল নিয়ে এগিয়ে চলছেন এ মহান শায়খগণ। তাঁরা শরীয়ত ও তরিক্বতের সমন্বয়ে সহীহ আক্বায়েদে আহলে সুন্নাতের প্রচার-প্রসারে এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খানকাহ্ শরীফ, দাওয়াতে খায়র ইত্যাদির মাধ্যমে বিশাল খিদমতে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। অতএব এ কাফেলায় সকলে শরীক হয়ে গাউসিয়াতের পতকা হাতে নিয়ে সকল বাতিলপন্থীর ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে ঈমান-আক্বিদার হেফাজতে আত্মনিয়োগ করুন।
ইসলামের শত্রুরা নানাভাবে মুসলমান সমাজকে বিভ্রান্ত করতে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যৎবাণী করেছেন শেষ জমানায় এমন এমন ফিতনার অবির্ভাব হবে, যখন ঈমান রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে। উম্মতে মুহাম্মদী বর্তমান সে কঠিন সময়ের মোকাবেলা করছে। ইসলামের ছদ্মাবরণে আবির্ভূত নানা বাতিল গোষ্ঠী মুসলমানদের কালেমা, নামায ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ নাজুক সময়ে আল্লাহর প্রিয় নবী, সাহাবীগণ ও হক্কানী ওলামায়ে কেরাম ক্বোরআন-সুন্নাহ্, ইজমা-কিয়াসের যে পথ নির্দেশনা দিয়েছেন তা অনুসরণ-অনুকরণ করুন এবং সদা সর্বদা নিজ ঈমান-আমলের হেফাজতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সাহায্য প্রার্থনা করুন। ওহে দয়াময় রাব্বুল আলামীন! আমাদেরকে সিরাতুল মুস্তাকিমের উপরে অটল রাখুন। আ-মী-ন।

Share:

Leave Your Comment