হজ্জের ফযা-ইল

হজ্জের ফযা-ইল

হজ্জের ফযা-ইল

পবিত্র ক্বোরআনে করীম এবং হাদীসে নবভী শরীফে বায়তুল্লাহর গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফযীলত-বরকত, মরতবা-মহিমা অপরিসীম। নিম্নে তার কিছুটা বিবৃত হলো-

ক্বোরআন করীমে আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন- وَاَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَۃَ لِلّٰہِ অর্থাৎ- (হে মুমিনগণ!) আর তোমরা একমাত্র আল্লাহর জন্য হজ্জ ও ওমরাহ্‌ পরিপূর্ণ করো।   [সূরা বাক্বারা]

অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে- وَلِلّٰہِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْہِ سَبِیْلًاً  অর্থাৎ- মানুষের জন্য একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই ঘরের হজ্জ্‌ করা তার জন্য ফরয যার সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য আছে।। [সূরা আল-ই ইমরান]

উপরোক্ত আয়াতাংশের আলোকে প্রতীয়মান হয় গ্গব, ঈমানদারের জন্য আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের নিশ্চিত মাধ্যম হলো আল্লাহর ঘরের হজ্জ্‌।

হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-

عَنْ اَبِیْ ہُرَیْرَۃَ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ مَنْ حَجَّ لِلّٰہِ فَلَمْ یَرْفَثْ وَلَمْ یَفْسُقْ رَجَعَ کَیَوْمٍ وَلَدَتْہُ اُمُّہٗ [مُتَّفَقٌ عَلَیْہِ]

অর্থাৎ (সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী)সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ হুরায়রাহ্‌ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম রঊফুর রহীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনরূপ অশ্লীল কর্মকাণ্ড কিংবা পাপাচারে লিপ্ত হওয়া ব্যতিরেকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হজ্জ্‌ পালন করবে সে মাতৃগর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে।

وَعَنْ اَبِیْ ہُرَیْرَۃَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ اَلْعُمْرَۃُ اِلَی الْعُمْرَۃِ کَفَّارَۃٌ لِّمَا بَیْنَہُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَیْسَ لَہٗ جَزَآءٌ اِلاَّ الْجَنَّۃُ [مُتَّفَقٌ عَلَیْہِ] অর্থাৎ (নবী প্রেমে নিবেদিত প্রাণ সাহাবী)সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ হুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলে পাক সাহেবে লাওলাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, একটি ওমরাহ্‌ কাফ্‌ফারা হয়ে যায় (অর্থাৎ-আমলনামা থেকে গুনাহসমূহ মোচন করে দেয়) আরেকটি ওমরাহ্‌ পালন করা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত গুনাহ্‌সমূহের। আর হজ্জে মাবরূরের প্রতিদান জান্নাতই।

উল্লেখ্য যে, হজ্জে মাবরূর বলা হয় ওই হজ্জ্‌কে যার সাথে কোন রূপ পাপাচার, লৌকিকতা, লোকদেখানো ইত্যাদি যুক্ত হয় নি।

وَعَنْ اَبِیْ ہُرَیْرَۃَ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالَی عَنْہُ عَنِ النَّبِیِّ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ اَنَّہُ قَالَ اَلْحُجَّاجُ وَالْعُمَّارُ وَفْدُ اللّٰہِ اِنْ دَعَوْہُ اَجَابَہُمْ وَاِنِ اسْتَغْفَرُوْہُ غَفَرَلَہُمْ [رواہ ابن ماجۃ] অর্থাৎ (প্রসিদ্ধ হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী সাইয়্যেদুনা) হযরত আবূ হুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্‌সাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-আল্লাহ্‌র ঘরের হজ্জ এবং ওমরা পালনকারীরা আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি স্বরূপ। তারা যদি আল্লাহ্‌র নিকট দো’আ-ফরিয়াদ করে আল্লাহ পাক তা কবূল করেন এবং তারা আল্লাহ্‌র নিকট মাগফিরাত চাইলে আল্লাহ পাক তাদের (গুনাহসমূহ) মার্জনা করেন। [ইবনে মাজাহ শরীফ]

وَعَنْ اَبِیْ ہُرَیْرَۃَ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ یَقُوْلُ وَفْدُ اللّٰہِ ثَلٰثَۃٌ اَلْغَازِیْ وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ [رواہ النسائی والبیہقی فی شعب الایمان] অর্থাৎ-সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ হুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলে খোদা হাবীবে কিব্‌রিয়া সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে এরশাদ করতে শুনেছি, আল্লাহর প্রতিনিধি তিনজন যথা- ১. আল্লাহর পথে জিহাদকারী, ২.আল্লাহর ঘরের হজ্জ্‌ আদায়কারী এবং ৩. ওমরাহ পালনকারী। [নাসাঈ শরীফ ও বায়হাক্বী, শু’আবুল ঈমান]

وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ اِذَا لَقِیْتَ الْحَاجَّ فَسَلِّمْ عَلَیْہِ وَصَافِحْہُ وَمُرْہُ اَنْ یَسْتَغْفِرَلَکَ قَبْلَ اَنْ یَدْخُلَ بَیْتَہٗ فَاِنَّہٗ مَغْفُوْرٌ [رواہ احمد] অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম হাবীবে রহমান সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যখন তুমি কোন হাজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন তাকে সালাম করবে, তার সঙ্গে করমর্দন করবে এবং তাকে বলবে যেন তার ঘরে প্রবেশ করার পূর্বেই তোমার জন্য মাগফিরাত কামনা করে। কেননা, হাজীর মাগফিরাত হয়ে গেছে।                 [মুসনাদে আহমদ]

وَعَنْ اَبِیْ ہُرَیْرَۃَ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ مَنْ خَرَجَ حَاجًّا اَوْ مُعْتَمِرًا اَوْ غَازِیًا ثُمَّ مَاتَ فِیْ طَرِیْقِہٖ کَتَبَ اللّٰہُ لَہٗ اَجْرَ الْحَاجِّ اَوِ الْغَازِیِّ اَوِالْمُعْتَمِرِ [رواہ البیہقی فی شعب الایمان]  অর্থাৎ সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ হুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে খোদা হাবীবে কিবরিয়া সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরের হজ্জ্‌ কিংবা ওমরাহ্‌ পালন করার উদ্দেশ্যে অথবা আল্লাহর পথে জেহাদ করার সংকল্প নিয়ে ঘর হতে বের হয়ে পথিমধ্যে ইন্তেকাল করলো, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার আমলনামায় আল্লাহর ঘরের হজ্জ্‌ কিংবা ওমরাহ্‌ আদায়কারীর অথবা জেহাদকারীর সাওয়াব লিপিবদ্ধ করে দেবেন।[বায়হাক্বী-শু’আবুল ঈমান]

وَعَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ مَنْ اَرَادَ الْحَجَّ فَلْیَتَعَجَّلْ [رواہ ابوداؤد والدارمی] অর্থাৎ মুফাস্‌সিরকুল সরদার, সাহাবী-ই রাসূল সাইয়্যেদুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ্জ্‌ করার ইচ্ছে করে সে যেন তাড়াতাড়ি আদায় করে নেয় । [আবূ দাঊদ শরীফ ও দারেমী শরীফ]

قَالَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ حُجُّوا فَاِنَّ الْحَجَّ یَغْسِلُ الذُّنُوْبَ کَمَا یَغْسِلُ الْمَاءُ الدَّرَنَ অর্থাৎ রাসূলে খোদা আশরাফে আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা হজ্জ্‌ পালন করো। কেননা, হজ্জ্‌ গুনাহসমূহকে এমনভাবে ধৌত করে ফেলে যেভাবে পানি ময়লা ধৌত করে (পরিচ্ছন্ন করে)।

উপরোক্ত রেওয়ায়তসমূহের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, হজ্জ্‌ ও ওমরাহ্‌ এমন তাৎপর্যবহ ও মহিমান্বিত ইবাদত, যার বদৌলতে বান্দা আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়, হজ্জ্‌ ও ওমরাহ্‌ আদায়কারীর সমুদয় গুনাহ মাফ হয়ে যায়, ইহকালীন জীবন পূতঢ়পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হয়ে যায় এবং পরকালীন জীবনে বেহেশতী ও দীদারে ইলাহীর উপযোগী হয়।