প্রিয়নবীর সম্মানিত পিতা-মাতা মু’মিন ছিলেন

প্রিয়নবীর সম্মানিত পিতা-মাতা মু’মিন ছিলেন

মূল: আল্লামা আবূ তানভীর মুহাম্মদ রেযাউল মোস্তফা আল-ক্বাদেরী
ভাষান্তর : অধ্যক্ষ মাওলানা আবূ আহমদ জামেউল আখতার চৌধুরী

ভূমিকা: নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মানিত পিতা-মাতার ইন্তেক্বাল হয়েছিল হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালামের নুবূয়তের যুগের পর এবং ইসলামের আবির্ভাব হওয়ার পূর্বে। সুতরাং এ সময় তাঁরা ছিলেন তাওহীদ ও ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ তথা আল্লাহ্র একত্ববাদে বিশ্বাসী। প্রিয়নবীর সময় মহামহিম রব স্বীয় হাবীবে পাকের ওসীলায় তাঁদের ঈমানের পরিপূর্ণতা প্রদানের জন্য আসহাবে কাহফ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম)-এর ন্যায় তাঁদেরকে পুনর্জীবিত করেছেন আর তাঁদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নুবূয়তের উপর ঈমান আনার ও সাহাবিয়াতের মহা মর্যাদা লাভের সুযোগ দান করে ধন্য করেন। ইসলামী যুগের পূর্বে হুযূর-ই আক্রামের শুধু পিতা-মাতাই নন, বরং তাঁর আদি পিতা-মাতাগণও হযরত আদম ও হযরত হাওয়া আলায়হিমাস্ সালাম পর্যন্ত বংশীয় পরম্পরায় একত্ববাদী ছিলেন এবং তাঁরা কুফর ও র্শিকের অপবিত্রতা ও যে কোন চরিত্রগত কলুষতা এবং জাহেলী যুগের যাবতীয় পাপাচার থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র ছিলেন। মহান রব স্বীয় মাহবূবে করীম আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর পবিত্র নূরকে পবিত্র পিতৃপুরুষদের ঔরশ এবং পবিত্র মাতাগণের গর্ভের মাধ্যমে স্থানান্তরিত করেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-

আয়াত – ১
Ο اَلَّذِىْ يَرَاكَ حِيْنَ تَقُوْمُ وَتَقَلُّبَكَ فِىْ السَّاجِدِيْنَ
তরজমা: ২১৮. যিনি আপনাকে দেখেন যখন আপনি দন্ডায়মান হন; ২১৯. এবং নামাযীদের মধ্যে আপনার পরিদর্শনার্থে ভ্রমণকেও।
[সূরা শু‘আরা: আয়াত- ২১৮-২১৯, কান্যুল ঈমান] এ আয়াতে করীমায় وَتَقَلُّبَكَ فِى السَّاجِدِيْنَ তাফসীরে মুফাস্সিরকুল সরদার সাইয়্যেদুনা হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন- এ আয়াত দ্বারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মহান স্বত্তার, তাঁর পবিত্র পূর্বপুরুষগণের-এর পৃষ্ঠদেশে পরিভ্রমণ করা বুঝায়। অর্থাৎ এক পিতৃপুরুষ হতে অপর পিতৃপুরুষের পৃষ্ঠদেশে স্থানান্তর করা। পরিশেষে, তিনি এ উম্মতের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন।
[তাফসীরে খাযিন ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৭, মাদারিজুন্ নুবূয়ত ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬] وَتَقَلَّبَكَ فِى السَّاجِدِيْنَ -এর অপর এক তাফসীর এরূপও যে, আঁ-হযরত সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নূর শরীফ এক সাজদাকারী হতে অন্য সাজদাকারীর প্রতি স্থানান্তরিত হয়েই আগমন করেছে।
অতএব, এ থেকে একথা স্পষ্টরূপে প্রকাশ পায় যে, তাঁর সম্মানিত পিতা-মাতা হযরত আবদুল্লাহ্ ও হযরত আমেনা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা) ঈমানদার ও জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত। কেননা, তাঁরা ওইসব বান্দার মধ্যে নিকটতম, যাঁদেরকে আল্লাহ্ তা‘আলা হুযূর আলায়হিস্ সালামের জন্য বেছে নিয়েছিলেন আর এ বক্তব্যই সঠিক ও শুদ্ধ। [ইমাম ইবনে হাজর হায়তমী প্রণীত ‘আফদ্বালুল ক্বোরা লেক্বোরায়ে উম্মিল ক্বোরা’] وَتَقَلَّبَكَ فِى السَّاجِدِيْنَ -এ ‘সাজেদীন’ -এ সাজদাকারী দ্বারা ‘ঈমানদার’ বুঝানো হয়েছে এবং আয়াতে করীমার অর্থ দাঁড়ায়- ‘হে হাবীব (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়কা ওয়াসাল্লাম)! আল্লাহ্ তা’আলা আপনার পবিত্র নূরের, ঈমানদার পিতৃপুরুষদের পৃষ্ঠদেশে এবং ঈমানদার মাতাগণের গর্ভসমূহে, অর্থাৎ হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম হতে আরম্ভ করে হযরত আবদুল্লাহ্ পর্যন্ত এবং হযরত হাওয়া থেকে হযরত আমেনা পর্যন্ত স্থানান্তরিত হওয়া অবলোকন করতে থাকেন। [তাফসীর-ই জালালাঈন-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ তাফসীরে সাভী: ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৪]

আয়াত- ২
لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ …الاية
তরজমা: ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে এক মহান রসূল এসেছেন…।’ [সূরা তাওবাহ্ : আয়াত-১২৮] আল্লামা ইসমাঈল হক্বক্বী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর ‘তাফসীরে রুহুল বয়ান’-এ লিখেছেন- وَقُرِئَ مِنْ اَنْفَسِكُمْ بِفَتْحِ الْفَآءِ اَىْ اَفْضَلِكُمْ وَاَشْرَفِكُمْ
অর্থাৎ- কোন কোন ক্বিরাআতে ‘ফা’-এর উপর যবর সহকারে ‘আনফাসিকুম’ পড়া হয়েছে, যার অর্থ হলো- ‘নিশ্চয় তোমাদের নিকট এমন সম্মানিত রাসূল এসেছেন, যিনি তোমাদের সবার চাইতে বহুগুণ বেশী সম্মান ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী।
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ আয়াতটি তেলাওয়াত করার সময় اَنْفَسِكُمْ -এর ‘ফা’ বর্ণে যবর পড়লেন এবং এরশাদ করলেন, আমি তোমাদের সবার চাইতে পিতা-মাতার বংশধারা এবং স্বীয় বংশীয়দের দিক থেকে অধিকতম উত্তম (পবিত্র)। আমার পিতা ও দাদাদের মধ্যে কেউই ‘সিফাহ্’ (ব্যভিচার)-এ অংশ নেয়নি। বংশীয় পরম্পরায় হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম পর্যন্ত বিবাহের প্রথা সকলের মধ্যে অক্ষুন্ন ছিলো। [খাসা-ইসে কুবরা: ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৯, মাওয়াহিবে লাদুনিয়াহ্: ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩, মাদারিজুন্ নুবূয়ত: ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬] নোট: ‘সিফাহ’ শব্দের অর্থ হলো যিনা বা ব্যভিচার। অর্থাৎ কোন নারীকে ইসলাম বহির্ভূত পন্থায় নিজের কাছে রাখা। [আল মুনজিদ: পৃষ্ঠা ৩৪৬] স্মর্তব্য যে, ইসলামের পূর্বে লোকেরা বিবাহ ব্যতিরেকেই কোন নারীকে কিছুদিন নিজের কাছে রাখত। এরপর বিবাহ করত। সাইয়্যেদে আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এমন ঘৃণ্য কাজ করতে নিষেধ করেন এবং এরশাদ করেন- ‘‘আমার পিতা-মাতা হতে শুরু করে হযরত আদম ও হাওয়া আলায়হিমাস্ সালাম পর্যন্ত সকল পূর্বপুরুষ ও মাতাগণ ঈমানদার ছিলেন।’’ [হিদায়তুন নবী ইলা ইসলামে আবা-ইন নবী: পৃষ্ঠা ৭]

আয়াত-৩
وَلَعَبْدٌ مُوْمِنٌ خَيْرٌ مِنْ مُّشْرِكٍ
তরজমা: মুসলমান গোলাম মুশরিক হতে শ্রেয়। আরো এরশাদ হয়েছে-وَلَامَةٌ مُؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ- ঈমানদার বাঁদী মুশরিক নারী অপেক্ষা শ্রেয়।
[সূরা বাক্বারা: আয়াত-২২০: কান্যুল ঈমান] এ আয়াতে করীমা থেকে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি স্বীয় কিতাবে প্রিয়নবীর সম্মানিত পিতা-মাতার ঈমান গ্রহণ সম্পর্কে এ মর্মে দলীল স্থির করেছেন যে, কোন কাফির যতই সম্ভ্রান্ত বংশের হোক না কেন, কোন মু’মিন গোলাম কিংবা মু’মিন বাঁদী হতে কখনো শ্রেয় হতে পারে না। এই জন্যই সরকারে দু’আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপন পিতৃপুরুষগণ এবং মাতা ও মাতামহীদের সম্পর্কে হাদীস শরীফে বলে দিয়েছেন যে, ‘তাঁরা আল্লাহ্র কাছে পছন্দনীয়। তাঁরা সকলেই পবিত্র।’ আর মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ্র এরশাদ রয়েছে- اِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ ; অর্থাৎ মুশিরকগণ হলো অপবিত্র। [সূরা তাওবাহ্, আয়াত-২৮] সুতরাং কোন মুশরিক ও কাফিরকে ‘সম্মানিত’ (করীম), পবিত্র (তাহের) ও মুখতার (পছন্দনীয় বা ইখতিয়ারপ্রাপ্ত) বলা যায় না।
[আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ আবদুল গাফ্ফার প্রণীত হিদায়াতুন্নবী: পৃষ্ঠা ৬০৫] নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- بُعِثْتُ مِنْ خَيْرِ قُرُوْنِ بَنِىْ اٰدَمَ قَرْنًا فَقَرْنًا حَتَّى كُنْتُ فِىْ الْقَرْنِ الّذِىْ كُنْتُ فِيْهِ-
অর্থাৎ ‘আমি প্রত্যেক যুগ ও স্তরের মধ্যে সমস্ত বনী আদমের যুগগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম সময়ে প্রেরিত হয়েছি; এমনকি ওই যুগেও, যা’তে আমি আবির্ভূত হয়েছি।’ [বোখারী শরীফের উদ্ধৃতিতে, খাসা-ইসে কুবরা ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৬] সাইয়েদুনা মাওলা আলী শেরে খোদা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত যে, এ পৃথিবীপৃষ্ঠে সর্বদা ন্যূনতম সাতজন মুসলমান অবশ্যই বর্তমানে থাকে। তাঁরা না হলে পৃথিবী ও এর অধিবাসীরা ধ্বংস হয়ে যেত। [যারক্বানী শরহে মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া: ১ম খণ্ড, পৃ. ১৭৪]

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা হতে সহীহ হাদীস বর্ণিত, হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম-এর পর হতে ভূপৃষ্ঠ কখনো সাতজন এবাদতকারী হতে শূন্য হয়নি। তাঁদেরই কারণে আল্লাহ্ তা’আলা পৃথিবীবাসীর উপর হতে আযাব দূরীভূত করেন। [প্রাগুক্ত] বিশেষ দ্রষ্টব্য: সহীহ হাদীসসমূহ দ্বারা যখন প্রমাণিত হলো যে, প্রত্যেক যুগ ও স্তরে কমপক্ষে সাতজন মাক্ববুল এবাদতপরায়ণ মুসলমান অবশ্যই বর্তমান থাকছেন এবং স্বয়ং বোখারী শরীফের হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, যাঁদের ঔরশক্রমে হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীপৃষ্ঠে তাশরীফ এনেছেন, তাঁরা প্রত্যেকে শ্রেষ্ঠ যুগের শ্রেষ্ঠ সময়ের প্রতিনিধিত্বকারী ছিলেন এবং ক্বোরআনের আয়াতসমূহ ও স্পষ্টভাবে বলছে যে, কোন কাফির যতই সম্ভ্রান্ত বংশের হোক না কেন, কোন মুসলমান গোলাম বা বাঁদী থেকেও শ্রেয়তর হতে পারেনা, তখন এটা নিশ্চিত হলো যে, হযরত নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পিতৃপুরুষগণ এবং মাতা ও মাতামহীগণ প্রত্যেক যুগ ও স্তরের ওই সব নেক্কার ও মাক্ববুল বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত; অন্যথায় (আল্লাহ্রই আশ্রয়) সহীহ বোখারী শরীফে উদ্ধৃত প্রিয় নবীর বাণী এবং ক্বোরআনে মজীদে উল্লিখিত আল্লাহ্র বাণী অবাস্তব হয়ে যাবে। (না‘ঊযুবিল্লাহ্)

হুযূর-ই আকরামের সম্মানিত পিতা-মাতাকে
পুনরায় জীবিত করা হয়েছে
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَزَلَ الْحَجُوْنَ كَئِيْبًا حَزِيْنًا فَاَقَامَ بِهَا مَاشَاءَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ ثُمَّ رَجَعَ مَسْرُوْرًا قَالَ سَأَلْتُ رَبِّىْ فَاَحْيَالِىْ اُمِّى فَاٰمَنَتْ بِىْ ثُمَّ رَدَّهَا- (رواه الطبرانى فى المعجم الاوسط)
অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম (বিদায় হজ্বের প্রাক্কালে) ‘হাজূন’ (মক্কার এক কবর স্থান)-এ অবতরণ করলেন। এ সময় তিনি সীমাহীন পেরেশান ও দুঃখ-ভারাক্রান্ত ছিলেন। তিনি সেখানে আল্লাহর ইচ্ছানুসারে কিছুক্ষণ অবস্থান করলেন। এরপর সরকারে দো’আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আনন্দিত অবস্থায় আমার কাছে তাশরীফ আনলেন এবং এরশাদ করলেন, ‘‘হে আয়েশা! আমি আমার রবের দরবারে প্রার্থনা করেছি। তিনি স্বীয় দয়া ও মেহেরবাণীতে আমার মাতাকে জীবিত করেছেন। তখন তিনি আমার (রিসালতের) উপর ঈমান এনেছেন। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে পুনরায় ওফাত প্রদান করেছেন।’’
[হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন: পৃ. ৪১২, যারক্বানী: ১ম খণ্ড পৃ. ১৬৬, মা- সাবাতা বিস্সুন্নাহ্: পৃ. ৩৭, তাফসীরে রুহুল বয়ান (দেওবন্দে প্রকাশিত):
১ম খণ্ড পৃ. ১৪৭ এবং ইমাম সুয়ূত্বী প্রণীত আত্তা’যীম ওয়াল মিন্নাহ্]

আপত্তি
মাতা-পিতাকে জীবিত করা সম্পর্কীয় হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়। কেননা আল্লামা ইবনে জওযী একে মাওদ্বূ’ (মিথ্যা-বানোয়াট) হাদীসসমূহে গণ্য করেছেন।

জবাব
আল্লামা সৈয়দ আহমদ হুমুভী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি) এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা কেবল কতিপয় কাণ্ডজ্ঞানহীন, নির্বোধ লোকের নিজস্ব ধারণা। কেননা, গ্রহণযোগ্য এবং বিশুদ্ধতর কথা হলো যে, এটা দুর্বল হতে পারে; কিন্তু মওদ্বূ’ বা মিথ্যা-বানোয়াট কিছুতেই হতে পারেনা। দেখুন হযরত হাফেয নাসিরুদ্দীন দামেশ্ক্বী ছন্দে কি সুন্দর কথা বলেছেন-
حَبَا اللهُ النَّبِىَّ مَزِيْدَ فَضْلٍ -عَلَى فَضْلٍ فَكَانَ بِهٖ رَؤٗفًا
فَاحْيَا اُمَّهُ وَكَذَا اَبَاهُ – لِاِيْمَانٍ بِهٖ فَضْلًا لَطِيْفًا
مُسَلَّمٌ فَالْاِلٰهُ بِهِ قَدِيْرًا – وَاِنْ كَانَ الْحَدِيْثُ بِهٖ ضَعِيْفًا
অর্থাৎ: ১. ‘দয়াময় আল্লাহ্ আপন হাবীবে করীমকে ফযীলতের উপর ফযীলত দান করেছেন। তিনি তাঁর প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র।
২. তাঁর মাতাকে ঈমানের মহাসম্পদে সৌভাগ্যবতী করার জন্য জীবিত করেছেন। এটা তাঁর প্রতি সুক্ষ্ম অনুগ্রহ ছিলো।
৩. এ কথা স্বীকৃত যে, আল্লাহ্ তা‘আলা এতে সক্ষম; যদিও হাদীসটি দুর্বল পার্যায়ের।
[হুমুভী প্রণীত শরহে আশ্বাহ ওয়ান নাযা-ইর: পৃ. ৪৫৩, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন: পৃ. ৪১৬] অন্যান্য মাশা-ইখ ও আলিমগণের কিতাবাদি ছাড়াও আল্লামা সুয়ূত্বী (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি) প্রিয়নবীর পিতা- মাতার ঈমান আনা সম্পর্কে ছয়টি ঈমান সতেজকারী স্বতন্ত্র কিতাব লিখেছেন। এতে তিনি তাঁদের ঈমান আনা প্রমাণ করার সাথে সাথে বিরোধীতাকারীদের পরিপূর্ণ খণ্ডন করেছেন। নিঃসন্দেহে এ কারণেই প্রিয়নবীর দরবারে এ মহান ইমামের অতি মাত্রায় গ্রহণযোগ্যতা অর্জিত হয়েছে।

আল্লামা সুয়ূত্বী ও দীদারে মোস্তফা
আল্লামা সুয়ূত্বী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি) অতি উচ্চ মর্যাদাময় ব্যক্তিত্বের অধিকারী, যিনি জাগ্রতাবস্থায় পঁচাত্তর বার সরকারে দু’আলম আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস সালাম-এর সাক্ষাত লাভ করে ধন্য হয়েছেন। [আল মীযানুল কুবরা: পৃ.৪৪] আল্লামা সুয়ূত্বী ও হাদীসে মোস্তফা
এ মহান মর্যাদাবান মুহাদ্দিস আরো কয়েকটি মাসআলার মতো প্রিয়নবীর সম্মানিত পিতা- মাতার ঈমান সম্পর্কে অনেকগুলো হাদীস বর্ণনা করে উক্ত বিষয়টির পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ করেছেন। মুহাদ্দিসগণের কাছে যদিও কিছু হাদীস ‘দুর্বল’ সাব্যস্ত হয় এবং ফযীলত বর্ণনার ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা সত্ত্বেও আল্লামা সুয়ূত্বী কতিপয় হাদীস যাচাই করার জন্য প্রিয়নবীর কাছে পেশ করে সেগুলোর বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে নিয়েছিলেন। [মীযানুল কুবরা: পৃ.৪৪, ইমাম শা’রানী]

মৌলভী আন্ওয়ার কাশ্মিরী দেওবন্দীর কলমে
কাশ্মিরী সাহেব প্রিয়নবীর দর্শনলাভ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন- জাগ্রত অবস্থায় সরকারে দু’আলম আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর সাক্ষাত লাভ প্রমাণিত হয়েছে। অধিকন্তু এর অস্বীকার করা মুর্খতা মাত্র। যেমন আল্লামা সুয়ূত্বী বাইশ বার তাঁর সাক্ষাত লাভ করেছেন এবং তাঁর মহান দরবারে কতিপয় হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন। তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সেগুলোর ভুল-ভ্রান্তি নির্দেশ করে শুদ্ধ করে দিয়েছেন। (অথচ ইতোপূর্বে কোন কোন মুহাদ্দিস সেগুলোকে দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন।) [ফয়যুল বারী: মিশরী ছাপা: ১ম খণ্ড: পৃ. ২০৪, সংক্ষেপিত]

সাবধান!
আজ অবধি মজবুত দলীলতো দূরের কথা, কোন দুর্বল প্রমাণ দ্বারাও প্রিয়নবীর সম্মানিত পিতা- মাতার মূর্তিপূজা বা কুফরী আক্বীদার কথা সাব্যস্ত হয়নি; বরঞ্চ তাঁদের বিভিন্ন বক্তব্য দ্বারা তাঁদের ঈমানেরই প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন আল্লামা সুয়ূত্বী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি) স্বীয় কিতাব ‘আত্তা’যীম ওয়াল মিন্নাহ্’-এ আবূ নু‘আয়ম লিখিত ‘দালা-ইলুন্ নুবূয়ত’-এর বরাতে বর্ণনা করেন যে, হযরত আমেনা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা স্বীয় ওফাতের প্রাক্কালে হুযূর-ই আন্ওয়ার সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নূরানী চেহারার দিকে ¯েœহভরা দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন এবং তাঁর নিকট থেকে বেদনাবিদূর বিদায়ের কথা স্মরণ করে কিছু কবিতা আবৃত্তি করলেন। সেগুলোর অনুবাদ নিম্নরূপ:
‘‘হে বৎস! আল্লাহ্ তোমায় বরকত দিন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, তুমি মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সমগ্র সৃষ্টির প্রতি নবী হবে এবং হালাল-হারামের মধ্যে পার্থক্য করে দেবে, আরব-আজমে ইসলামকে ছড়িয়ে দেবে। আল্লাহ্ তোমাকে মূর্তি পূজা থেকে বাঁচাবেন এবং তোমার দ্বারাই দ্বীনে ইব্রাহীমী প্রসারিত হবে। আমিতো ওফাত পেয়ে যাব; কিন্তু আমার স্মরণ ক্বিয়ামত অবধি বর্তমান থাকবে। কারণ আমি সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদটুকু (তথা সন্তান) রেখে যাচ্ছি।’’

একটি আপত্তি
হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তাঁর ‘ফিক্বহে আকবর’ গ্রন্থে লিখেছেন-
وَوَالِدَا رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَا عَلَى الْكُفْرِ-
অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পিতা- মাতা কুফরের উপর ইন্তিক্বাল করেছেন।

জবাব
উপরোক্ত মন্তব্যটি ইমাম আ’যম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু-এর দিকে সম্পৃক্ত হলেও এ সম্পর্কে কয়েকটি অভিমত রয়েছে ঃ
প্রথমত, আল্লামা ইবনে হাজর মক্কী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি) স্বীয় ফাতওয়ায় বলেছেন যে, এটা প্রিয়নবীর সম্মানিত পিতা-মাতা সম্পর্কে ইমাম-ই আ’যম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু-এর মন্তব্য বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা মিথ্যা; কারণ এটা ইমাম আ’যম কর্তৃক লিখিত ‘ফিক্বহে আকবার’ নয়; বরং এ ‘ফিক্বহে আকবর’-এর প্রণেতা হলেন আবূ হানীফা মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ আল-বোখারী; এতেই এ বক্তব্য রয়েছে। আল্লামা বিরজঞ্জী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি) এ বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছেন, সাইয়্যেদী শেখ ইবনে হাজর মক্কী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি) বলেছেন যে, সন্দেহাতীতভাবে শুদ্ধ প্রমাণিত হয়েছে যে, এ ‘ফিক্বহে আকবার’ ইমাম-ই আ’যম আবূ হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর প্রণীত নয়; বরঞ্চ সাদৃশ্যের ধোঁকা সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ হলো কিতাব দু’টির নাম অভিন্ন এবং প্রণেতাদ্বয়ের উপনামও একই। এ কারণে কিছু লোক ধারণা করে সম্ভবত: যে, যে ‘ফিক্বহে আকবার’-এ উক্ত মন্তব্য বিদ্যমান, সেটার লিখক ইমাম আ’যম হবেন; অথচ প্রকৃত পক্ষে সেটা সঠিক নয়।
দ্বিতীয়ত, কতিপয় আলিমের মতানুযায়ী মূল ‘ফিক্বহে আকবার’র ইবারত হচ্ছে – مَا مَاتَا عَلَى الْكُفْرِ- অর্থাৎ হুযূর-ই আক্রামের সম্মানিত পিতা- মাতার ইন্তেক্বাল কুফর অবস্থায় হয়নি। এবারতের مَا (মা) হরফটি কাতিব (কপিকারী)-এর ভুল কিংবা ভিন্ন কোন কারণে বাদ পড়ে গেছে। যেমন ‘এরশাদে গাবী’ ((ارشاد غبى ঃ পৃ. ১৫তে একথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, হানাফী মাযহাবের বিশ্লেষক আলিমগণ বলেছেন, যদিও ধরে নেয়া হয় যে, এটি ইমাম আ’যমের বক্তব্য, তবে সেক্ষেত্রে একথাই মেনে নিতে হবে যে, ইমামে আ’যম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে- مَا تَا عَلَى زَمَانِ الْكُفْرِ অর্থাৎ তাঁরা উভয়ে যমানা-ই কুফর বা কুফরের যুগে ইন্তেকাল করেছেন। (কুফরী আক্বীদার উপর ইন্তিক্বাল করেননি।) [আল্লামা এনায়তুল্লাহ্ সাহেব কৃত ‘তানভীরুল কালাম’: পৃ. ১৫ থেকে সংকলিত]

বিশেষ দ্রষ্টব্য
সুফী আবদুল হামীদ সিওয়াতী দেওবন্দী, (গুজরান ওয়ালাস্থ ‘নুসরাতুল উলুম মাদরাসা’র তত্ত্বাবধায়ক) ‘ফিক্বহে আকবার’-এর অনুবাদ করতে গিয়ে পাদটীকায় একথা স্বীকার করেছেন যে, অনেক কপিতে উক্ত ইবারত নাই। তাই এই ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকাটাই উত্তম। [সংক্ষেপিত: পৃ.৪৬] মোল্লা আলী ক্বারী (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি)-এর ঘটনা
মোল্লা আলী ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এটাকে ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু প্রণীত ‘ফিক্বহে আকবর’ বিবেচনা করে এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ লিখেছেন এবং উল্লিখিত বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে প্রিয়নবীর সম্মানিত পিতা- মাতার ঈমানহীনতার ব্যাপারে নিজ বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছেন। অধিকন্তু তিনি এ বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র পুস্তিকাও লিখে ফেলেছেন। হানাফী ও শাফে‘ঈ মাযহাবের শীর্ষস্থানীয় আলিমগণ সেটার যথার্থ খণ্ডন করেছেন। এমনকি আল্লামা মাহমূদ আলূসী, যিনি ‘তাফসীরে রুহুল মা‘আনী’-এর প্রণেতা, বলেছেন, ‘‘মোল্লা আলী ক্বারীর নাক ধূলিময় হোক। কেননা তিনি এ মাস‘আলায় প্রিয় নবীর পিতা- মাতার ঈমান সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেন। ‘‘মোল্লা আলী ক্বারী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এ অবস্থান গ্রহণ করার পর থেকে বিভিন্নমুখী দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত হয়ে পড়েন। সাইয়্যেদী আল্লামা হুমুভী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু)-এর আপন পুস্তিকা ‘بقوائدالرّحله’-তে বিভিন্ন মুসীবতের কথা উল্লেখ করেছেন, যাতে মোল্লা আলী ক্বারী শেষ বয়সে নিপতিত হন। যেমন অর্থকষ্ট। তাঁর অর্থকষ্ট এতদূর পর্যন্ত পৌঁছেছে যে, তিনি তাঁর অধিকাংশ দ্বীনি কিতাব পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন; এমনিভাবে বিখ্যাত আক্বাইদের কিতাব ‘শরহে আক্বা-ইদে নসফী’র ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘নিবরাস’-এও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মোল্লা আলী ক্বারীর সম্মানিত ওস্তাদ আল্লামা ইবনে হাজর মক্কী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু স্বপ্নে দেখলেন যে, মোল্লা আলী ক্বারী ছাদ হতে পড়ে পা ভেঙ্গে ফেলেছেন এবং তাঁকে বলা হলো এটা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পরম সম্মানিত পিতা-মাতার সম্মানহানি করারই শাস্তি, যা তোমাকে দেয়া হলো। সুতরাং সত্যি সত্যি মোল্লা আলী ক্বারীর পা ভেঙ্গে গিয়েছিল। [নিবরাস: পৃ. ৫২৬]

মোল্লা আলী ক্বারীর তাওবা
যদিও প্রিয়নবীর পিতা-মাতার ঈমানের বিপক্ষে মোল্লা আলী ক্বারী প্রচূর লেখালেখি করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলা প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ওসীলায় তাঁকে তাওবা ও পূর্বের অবস্থান থেকে ফিরে আসার তাওফীক্ব দান করেছেন। যেমন ‘নিবরাস’-এ উল্লিখিত ঘটনার পাদটীকায় বলা হয়েছে-
عَلِىُّ بْنُ سُلْطَانِ نِالْقَارِىْ فَقَدْ اَخَطَأَ وَذَلَّ لَا يَلِيْقُ ذَالِكَ لَهُ وَنُقِلَ تَوْبَتُهٗ عَنْ ذَالِكَ فِىْ القَوْلِ الْمُسْتَحْسَنِ-
অর্থাৎ মোল্লা আলী ক্বারী ভুল করেছেন এবং অপদস্থ হয়েছেন। এমনটা করা তাঁর পক্ষে সমুচিত ছিল না। যা হোক, শুদ্ধতর মত অনুযায়ী, তাঁর তাওবা এবং অভিমত পরিবর্তনের কথা উদ্ধৃত হয়েছে। [হাশিয়া-ই নিবরাস: পৃ. ৫২৬, এবং নাহাদ্বাতুল ইসলাহিয়াহ্]

ইমাম আবদুল বাক্বী যারক্বানী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি)-এর অভিমত, ‘নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মানিত পিতা- মাতা কখনোই কাফির ও মুশরিক ছিলেন না।’ [যারকানী: শরহে মাওয়াহিবে লাদুনিয়া: ১ম খণ্ড: মিশরী ছাপা] আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি) বলেন, ‘তুমি কি একথা জান না, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্ তা‘আলা এ অলৌকিক ক্ষমতা দিয়েছেন যে, তিনি স্বীয় পিতামাতাকে পুনরায় জীবিত করেছেন এবং তাঁরা তাঁর নুবূয়তের উপর ঈমান এনেছেন?
[রদ্দুল মোহ্তার, দুররে মোখতার] শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি) লিখেছেন- ‘ওলামা-ই কেরাম সরকারে দু’আলম আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালামের পিতা-মাতা, বরঞ্চ হযরত আদম ও হাওয়া আলায়হিমাস্ সালাম পর্যন্ত তাঁর উর্ধ্বতন সমস্ত পিতৃপুরুষ এবং মাতা ও মাতামহীগণ ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা প্রমাণ করেছেন। [আশি’‘আতুল লুম‘আত: ১ম খণ্ড]

সাবধান!
নিশ্চয় নিশ্চয় কখনো ভুল করে হলেও তাঁর মহান সম্মানিত পিতা-মাতা সম্পর্কে মন্দ বলোনা এবং তাঁদের শানে বেয়াদবীমূলক শব্দ ব্যবহার করোনা। কেননা, তাতে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর কষ্ট হয়।’ [মা- সাবাতা বিস্সুন্নাহ্: পৃ. ৮১] ইমাম ফরুদ্দীন রাযী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি)
فَقَالَ اِنّهٗ مَا لَمْ يَكُوْنَا مُشْرِكَيْنَ بَلْ كَانَا عَلَى التَّوْحِيْدِ وَمِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ
অর্থাৎ অতঃপর বলেছেন, নিশ্চয় তাঁর সম্মানিত মাতা-পিতা মুশরিক ছিলেন না, বরঞ্চ তাওহীদ এবং মিল্লাতে ইব্রাহীমের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
[হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন: পৃ.৪১৮] ইমাম কাল্বী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি) বলেন, আমি নবী-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উর্ধ্বতন পাঁচ শত বছরের মাতা ও মাতামহীগণের জীবনী লিখেছি। কোন যুগেই তাঁদের মধ্যে জাহেলিয়াত ও চরিত্রহীনতার কোন প্রভাব পাওয়া যায়নি। [আশ্ শিফা: পৃ.১১] আল্লামা ইউসুফ নাবহানী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি) বলেছেন: এটা প্রিয়নবীর বৈশিষ্ট্যসমূহের অন্তর্ভুক্ত যে, তাঁরই কারণে তাঁর পিতা-মাতার পুনরায় জীবিত হওয়া এবং অতঃপর তাঁর উপর ঈমান আনা। [জাওয়াহেরুল বিহার (অনূদিত): ২য় খণ্ড, পৃ.৪৫৬] আল্লামা মাহমুদ আলুসী (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি) বলেছেন: আমি ওই ব্যক্তির কুফরের আশংকা বোধ করি, যে প্রিয়নবীর সম্মানিত মাতা-পিতা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা)-এর বিরুদ্ধে কিছু বলে। [তাফসীরে রুহুল মা‘আনী: ১ম খণ্ড, পৃ.১৩৮] কাযী আবূ বকর ইবনে আরবীকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, এক ব্যক্তি বলছে, প্রিয়নবীর পিতা-মাতা দোযখে রয়েছেন। (না‘ঊযুবিল্লাহ্)
এ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি জবাবে বলেন, ওই ব্যক্তি মালাঊন বা অভিশপ্ত। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, যেসব লোক খোদা ও রাসূলকে কষ্ট দেয় তার উপর আল্লাহ্ অভিশাপ দিয়েছেন দুনিয়া ও আখেরাতে। [সীরাতে মোস্তফা: পৃ. ১০৪, ইবরাহীম মীর সিয়ালকোটি প্রণীত]

বেয়াদব বীর!
জামায়াতে আহলে হাদীসের এক বেয়াদব বীর! যে স্বীয় মতের বিরুদ্ধবাদীদের নির্বিচারে (পূর্ববর্তী বা পরবর্তী সকল আলিমকে) অভিসম্পাত করার বেলায় নিতান্ত অভ্যস্থ। উক্ত মৌলভী আবুল কাশেম বানারসী বিশেষত: ইমাম সুয়ূত্বী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর প্রতিও অত্যন্ত নাখোশ ও ক্ষুব্ধ-তিনি আঁ-হযরত সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পিতা- মাতাসহ সকল উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের ঈমান সম্পর্কে এমন পুস্তিকাদি কেন লিখলেন! এটাই তার ক্ষোভের একমাত্র কারণ। [সীরাতে মোস্তফা: পৃ.১০৫, প্রণেতা: গায়রে মুকাল্লিদ ইবরাহীম মীর সিয়ালকোটি] অথচ আহলে হাদীসের অপর ব্যক্তি নওয়াব মুহাম্মদ সিদ্দীক্ব হাসান ভুপালী বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর মাতা-পিতাকে জীবিত করেছেন। এমনকি তাঁরা ঈমান এনেছেন। [আশ্ শাম্মামাতুল আন্ব্বরিয়াহ্: পৃ.৭১] গায়রে মুক্বাল্লিদ ওহাবী মীর ইব্রাহীম সিয়ালকোটি তাঁর ‘সীরাতে মোস্তফা’র ৯১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, আঁ-হযরত সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পিতা স্বীয় পূর্বপুরুষদের ন্যায় আপন দাদাপুরুষ হযরত খলীলুল্লাহ্ আলায়হিস্ সালাম-এর ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। কেননা, তাঁদের দ্বারা শিরক ও মূর্তিপূজা কখনো সম্পন্ন হয়নি।
আ’লা হযরত ফাযেলে বেরলভী (আলায়হির রাহমাহ্) প্রিয়নবীর মাতা-পিতার ঈমানের পক্ষে ‘শুমূলুল ইসলাম লিউসূলির রাসূলিল কেরাম’ পুস্তিকায় বিষয়টির পরিপূর্ণ সপ্রমাণ ও বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করেছেন।

—০—

Share:

Leave Your Comment