সৌদী আরবে মাজার শরীফ ধ্বংসকারী সালাফি ওয়াহাবি মতবাদের জনক ইবনে আব্দুল ওয়াহাব নজদী

সৌদী আরবে মাজার শরীফ ধ্বংসকারী সালাফি ওয়াহাবি মতবাদের জনক ইবনে আব্দুল ওয়াহাব নজদী

গত ১২,১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় সালাফী ওয়াহাবী মতবাদের জনক ইবনে আবদুল ওহায়াব নজদী শিরোনামে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি পৃথক ৩টি শিরোনামে চরমপন্থী, পথভ্রষ্ট সম্প্রদায় ওয়াহাবি ইজমের বহু অজানা তথ্য উন্মোচন হয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী সুন্নি ওলামা কেরাম বহু আগে থেকে বিভ্রান্ত, চরমপন্ত্রী ওয়াহাবি সম্প্রদায় সম্পর্কে সরলমনা মুসলমানদেরকে সতর্ক করে আসছেন। প্রতিবেদনগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় মাসিক তরজুমান পাঠকদের জন্য হুবহু প্রকাশ করা হলোঃ

ওয়াহাবি তরিকা ইসলামের একটি অতিচরমপন্থী রাজনৈতিক সংস্করণ, যা ইসলামের প্রোটেস্ট্যান্টবাদ বা বিশুদ্ধবাদী ও চরমপন্থী আন্দোলন হিসেবে পরিচিত এবং সুন্নি তরিকা থেকে ভিন্ন। ৯/১১-এর সহিংস সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে ওয়াহাবিবাদ আলোচনায় আসে এবং সমালোচিত হয়। এরপর, ২০১৮ সালের ২২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে ওয়াহাবি কার্যক্রম নিয়ে ‘সউদী প্রিন্স ডিনাইস কুশনার ইজ ইন হিজ পকেট’ শীর্ষক ৭৫ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকার দেন সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান।
প্রিন্স সালমান সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধের সময় পশ্চিমা দেশগুলোর অনুরোধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবেলায় সউদী আরব মুসলিম দেশগুলোতে ওয়াহাবি মতবাদ বিস্তারে অর্থায়ন করে। এর লক্ষ্য ছিল, মুসলিম বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে পশ্চিমাদের জয়লাভ পাইয়ে দেয়া। রাশিয়াভিত্তিক স্পুটনিক নিউজ, আরটিসহ বিশ্বের আরো কয়েকটি গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়।
প্রাচীনতম সূত্র অনুসারে, ওয়াহাবিবাদের জনক মুহাম্মদ ইব্নে আব্দুল আল-ওয়াহাব মনে করতেন যে, কুরআনের মতো পবিত্র গ্রন্থ ঐশ্বরিক নয়। ডেনিশ পরিব্রাজক খাস্তেঁ নিবুহ্ তার ‘বেশাঁইবুং ফন আহাবিয়ন বা ‘আরবের বর্ণনা’ (১৭৭২) গ্রন্থে ওয়াহাবিদেরকে দেবতাবাদী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নিবুহ্রের মতে, মুহাম্মদ ইবনে আব্দ আল ওয়াহাব বিশ্বাস করতেন না যে, নবী মুহাম্মদ একজন নবী ছিলেন, বরং তিনি তাকে একজন মহান পন্ডিত বলে মনে করতেন।
ওয়াহাবিবাদ অনুসারে, নবীদের আত্মার কাছ থেকে সুপারিশ চাওয়া, বুজুর্গদের কবর জিয়ারত করা এবং তাদের ওছিলায় প্রার্থনা করা, কবরের ওপর মাজার নির্মাণ করা এবং নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং পীর-পয়গম্বরদের রেখে যাওয়া স্মৃতিচিহ্নগুলোর প্রতি সম্মান জানানো হ’ল শিরক। এ মতবাদ অনুসারে, যারা এসব কাজ করে এবং নামাজ পড়ে না, তাদের কাফের বলে গণ্য করা হয়।
সউদী আরবের মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব (জন্ম ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে, মৃত্যু ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে) ছিলেন একজন সালাফি পন্ডিত এবং ওয়াহাবি তরিকা বা মতবাদের জনক। মূলত তার নামানুসারে এ তরিকার নামকরণ করা হয়েছে। তিনি মক্কা ও মদিনাসহ বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করেন এবং বহু বছর ধরে বসরায় অবস্থান করেন, যেখানে পূর্ব ভারতীয় কোম্পানিগুলো অত্যন্ত সক্রিয় ছিল। তিনি এরিস্টটলীয় দর্শন অধ্যয়নের জন্য ইরানে যান এবং ইসমাইলি ধর্মপ্রচারক আল-মাকরামির সাথে সাক্ষাৎ করেন।
পরে, মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল আল-ওয়াহাব নিজের শহরে ফিরে এসে তার ভ্রমণের সময় যে সংস্কারবাদী ধারণাগুলো অর্জন করেছিলেন তা প্রকাশ করেন। তিনি ইসলামিক পন্ডিত ইমাম ইবনে তাইমিয়া এবং তার নিজের মতবাদের সাথে সুন্নিবাদের মাযহাবের ধারণাগুলোকে মিশিয়ে একটি নতুন সম্প্রদায় গঠন করেন। নিজস্ব মতবাদ প্রচারের জন্য তিনি দিরিয়ার প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সউদ আল মুকরিনের সাথে একটি জোট গঠন করেন এবং তার সুরক্ষার অধীনে আশ্রয় নেন।
ব্রিটেনের রানী প্রথম এলিজাবেথের শাসনামলে এবং পরে সংস্কারের মাধ্যমে যখন ব্রিটেনে প্রোটেস্ট্যান্টবাদ বা কট্টর খ্রিস্টবাদের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল, তখন সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধিতে বিশ্বাস, মৃতদের জন্য প্রার্থনা করা, সাধুদের কাছে আবেদন জানানো এবং পবিত্র ধ্বংসাবশেষকে শ্রদ্ধা নিবেদনের বিরোধিতা করা হয়েছিল। মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল আল-ওয়াহাব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ওয়াহাবিবাদও একসময় ইসলামের প্রোটেস্ট্যান্টবাদে পরিণত হয়।
বর্তমানে বিশ্বের ওয়াহাবী মতবাদে বিশ্বাসীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কাতার (৪৬.৮৭ শতাংশ), সংযুক্ত আরব আমিরাত (৪৪.৮ শতাংশ), এবং সউদী আরবে (২২.৯ শতাংশ) বাস করে। এছাড়া, বাহরাইনের ৫.৭ শতাংশ এবং কুয়েতের ২.১৭ শতাংশ জনগণ ওয়াহাবীপন্থী। সউদী আরবের ওয়াহাবীপন্থীদের অধিকাংশ নজদ (রিয়াদ) অঞ্চলে বাস করে। সউদী আরব, কাতার, শারজাহ এবং রা’স আল খাইমাহ’তে সরকারিভাবে ওয়াহাবী তরিকা অনুসরণ করা হয়। সূত্র : ডেইলি সাবাহ, উকিপেডিয়া।

কবর ও স্মৃতি ফলক ধ্বংস করে সউদরা
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট মিশরে থাকাকালীন তার কাছে পেশ করা একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, ওয়াহাবি তরিকার জনক মুহাম্মদ ইবনে আব্দ আল-ওয়াহাব একজন ধর্মান্তরিত ফরাসি জেসুই ছিলেন। ফরাসি জেসুই হ’ল খ্রিস্টান যাজক এবং ব্রাদারদের সমন্বয়ে গঠিত একটি চরমপন্থী রোমান ক্যাথলিক আদর্শ, যা অর্ধ সহস্রাব্দ আগে সৈনিক থেকে ধর্মান্ধতে পরিণত ইগনাশিয়াস অফ লয়োলার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব ফরাসী না হলেও, তিনি জেসুই আদর্শের ছায়া অনুসরণ করে একই ধরণের উগ্রবাদী হয়ে উঠেছিলেন।
মুহাম্মদ ইবনে আব্দ আল-ওয়াহাবের পর সউদ পরিবার ওয়াহাবিবাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করে। তারা মধ্য আরবে তাদের নিজস্ব সউদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। যেহেতু সুন্নি এবং শিয়ারা ওয়াহাবি মতবাদ অনুসারে ওয়াহাবিদের দৃষ্টিতে কাফের বলে বিবেচিত হত, তাই তারা মুহাম্মদ বিন সউদ আল মুকরিনের পুত্র আব্দুল আজিজ বিন মুহাম্মদ আল সউদের শাসনামলে তাদের উপর আক্রমণ এবং গণহত্যা শুরু করে। সেই সময়ে, অটোম্যান সাম্রাজ্য তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং রাশিয়া ও ইউরোপের হুমকি মোকাবেলায় ব্যস্ত ছিল। একারণে ক্রমেই আরব ভূমিতে অটোম্যানদের আধিপত্য দুর্বল হতে থাকে। আব্দুল আজিজ বিন মুহাম্মদ আল সউদের পুত্র সউদ বিন আব্দুল আজিজ আল সউদ এই সুযোগে তখন মক্কা ও মদিনা দখল করেন। এরপর ওয়াহাবি আদর্শের নেতৃত্বদানকারী সউদ পরিবার এবং তাদের অনুসারীরা সেখানকার বুজুর্গদের কবর ও অন্যান্য গূরুত্বপূর্ণ স্মৃতি ফলকগুলি ধ্বংস করে দেন এবং মুসলিমদেরকে পবিত্র স্থানগুলিতে হিযরত করতে বাধা দেন।
অবশেষে, সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের আদেশে মিশরের আলবেনিয়ান-অটোমান গভর্নর মুহাম্মদ আলী পাশা তার পুত্র ইব্রাহিমকে ওয়াহাবিদের মোকাবিলা করতে পাঠান। ইব্রাহিম পাশা মক্কা ও মদিনা পুনরুদ্ধার করেন এবং ওয়াহাবিরা নজদে (রিয়াদ) পিছু হটে। যাইহোক, ইব্রাহিম পাশা এই সমস্যাটি নির্মূল করতে এবং এর উপর সিলমোহর লাগানোর জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তিনি নজদের দিকে অগ্রসর হন এবং সউদী আরবের তৎকালীন রাজধানী দিরিয়াহ দখল করে নেন। তিনি সউদ পরিবারের কয়েকজনকে হত্যা করেন এবং সউদ বিন আব্দুল আজিজ আল সউদের বড় ছেলে আব্দুল্লাহ বিন সউদ আল সউদকে ইস্তাম্বুলে প্রেরণ করেন এবং তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রথম থেকেই ওয়াহাবি মতাদর্শী সউদীদের এই উগ্রপন্থী আন্দোলনকে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করে এসেছে। ইসলামের প্রোটেস্ট্যান্ট বা ওয়াহাবিরা সুন্নি অটোম্যানদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের সম্ভাব্য মিত্র ছিল। কষ্টসাধ্য ভ্রমণের পর ব্রিটিশ রয়্যাল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির জেসুই গিফোর্ড পালগ্রেভ, উইলফ্রিড এস. ব্লান্ট এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা লুইস পেলির মতো গুপ্তচররা সউদীদের সাথে যোগাযোগ করতে এবং অবশেষে একটি জোট গঠনের চুক্তি স্বাক্ষর করতে সক্ষম হন।
ব্রিটেন সেসময় ভারতের মাধ্যমে ওয়াহাবিদের কাছে অস্ত্র এবং সউদ পরিবারের কাছে উইলিয়াম শেক্সপিয়ার নামের এক গুপ্তচর পাঠিয়েছিল। পশ্চিমাদের কাছে ইবনে সউদ নামে পরিচিত আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল রহমান আল সউদের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ শুরু করেন শেক্সপিয়ার। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯১৫ সালে একটি সঙ্ঘাতে এক প্রতিদ্বন্দ্বী গোত্রের হাতে নিহত হন। ১৯০৯ সালে সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের পতনের সাথে সাথে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রকৃত অবসান ঘটে এবং এর ক্ষমতা একটি তরুণ তুর্কি কমিটির হাতে চলে যায়, যাকে কমিটি অফ ইউনিয়ন অ্যান্ড প্রগ্রেস বলা হয়। তাদের ক্ষমতায় আরোহনের ক্ষেত্রে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছিল ব্রিটেন। কিন্তু যখন এই ইউনিয়নবাদীদের ওপর থেকে ব্রিটিশ সমর্থন সরিয়ে নেয়া হয়, তখন তারা জার্মানির পক্ষ হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে। সূত্র : ডেইলি সাবাহ্, উইকিপেডিয়া।

সুন্নি ও শিয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে
স্থায়ী পশ্চিমা মিত্র ওয়াহাবি
তরুণ আরবরা, যারা সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে তুর্কিদের সহযোগিতা করেছিল, যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে তাদের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারা তখন নিজেদের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে আত্মনিবেশ করে।
সেসময় মক্কার আমির এবং শরীফ হুসেইন বিন আলী আল হাশিমি একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তুরস্কের মেসোনিক ইউনিয়নবাদীদের অপছন্দ করতেন, যারা অটোম্যান সাম্রাজ্যকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে এসেছিল। তিনি প্রজ্ঞাপন জারি করে তাদের সতর্ক করেন। কিন্তু ইউনিয়নবাদীরা তার কথা শোনেনি। এমনকি, তারা তার বিরুদ্ধে বিরূপ আচরণ করে। এরপর, শরীফ হুসেন তরুণ আরবদের শরণাপন্ন হন এবং তুর্কিদের হাত থেকে আরবকে বাঁচাতে ব্রিটিশদের সাথে যোগ দেন। এদিকে, ব্রিটেন, যারা অটোম্যান সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত করতে চেয়েছিল, তারা ইতিমধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ আরবের স্বাধীনতার দাবিকে সমর্থন করে আসছিল। তারা হুসেইন বিন আলী এবং তার সন্তানদের একটি মহান আরব রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ব্রিটিশ গুপ্তচর টমাস এডওয়ার্ড লরেন্সকে তাদের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োজিত করে।
ব্রিটেন বিন আলীকে এক হাতে রেখে অন্য হাতে সউদ পরিবারকে ক্ষমতা বসার জন্য প্রস্তুত করছিল। শেক্সপিয়ারের হত্যার পর সউদী উপদেষ্টা হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন জন ফিলবি। লরেন্সের বন্ধু গারট্রুড বেল এবং কর্নেল জেরার্ড লিচম্যানও তাকে সমর্থন করেন। কেমব্রিজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ফিলবি তার পরামর্শদাতা এডওয়ার্ড গ্র্যানভিল ব্রাউনের মাধ্যমে গোয়েন্দাবৃত্তিতে যোগ দেন। তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তা হ্যারল্ড ‘কিম’ ফিলবির পিতা, যিনি পরে কেমব্রিজ ফাইভের একজন হিসাবে বিখ্যাত হয়েছিলেন।
ইবনে সউদ সুন্নি তুর্কিদের ও সুন্নি শরীফ হোসেনকে ঘৃণা করতেন এবং তাদেরকে কাফের বলে গণ্য করতেন। তিনি একবার তার উপদেষ্টা ফিলবিকে বলেছিলেন, ‘আমি মক্কার শরীফ বা মক্কার মুসলিমদের ব্যতীত অন্য মুসলিমদের কন্যা গ্রহণ করতে পারি না, যাদেরকে আমরা মুশরিক বলে মনে করি।’ তিনি তাকে বলেছিলেন যে, খ্রিস্টানরা হযরত ইসহাক (আইজাক) এর বংশধর এবং আরবরা হযরত ইসহাকের ভাই হযরত ইসমাইল (ইশমায়েল) এর থেকে এসেছে। তাই তিনি ফিলবিকে নিজের চাচাতো ভাই বলে মনে করেন। ইবনে সউদের মতে, সুন্নি তুর্কিরা তাতার বংশোদ্ভূত এক পিশাচের বংশধর। যুদ্ধের পর ব্রিটেন হুসেইন বিন আলীর সন্তানদের একটি রাষ্ট্রের শাসনভার পাইয়ে দেয়া সত্ত্বেও তার প্রতি তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। ইবনে সউদ, যিনি ব্রিটিশ সমর্থনে মক্কা ও মদিনা দখল করেছিলেন, তাকে ১৯২৬ সালে সউদী আরবের শাসক ঘোষণা করা হয়। ফিলবি তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাদশা আবদুল আজিজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি আমেরিকান তেল এবং অটোমোবাইল কোম্পানিগুলির মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করেন এবং যুদ্ধে তার পরিষেবার জন্য পুরস্কৃত হন।
সউদী আরব প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটেন অন্তরালে চলে যায়, যেমনটি সে বেশিরভাগ জায়গা দখল করে করেছে এবং আরবে নজরদারির ভার যুক্তরাষ্ট্রকে সঁপে দেয়। এইভাবে, সউদী আরব, যে কট্টরপন্থী ইসলামপন্থীদের অর্থায়ণ করে থাকে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিত্র হয়ে ওঠে এবং হিলটন সুইটের মতো আকাশচুম্বী ভবন পবিত্র কাবাকে ঘিরে ফেলে। সূত্র : ডেইলি সাবাহ্। (সমাপ্ত)

সূত্র. দৈনিক ইনকিলাব।