প্রশ্নোত্তর -অধ্যক্ষ মুফ্তী সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান

প্রশ্নোত্তর -অধ্যক্ষ মুফ্তী সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান

 মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন রবি
শিক্ষার্থী, আরবী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিরা, চট্টগ্রাম
প্রশ্ন: নামাজে সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করে তেলাওয়াতে সিজদা আদায় করেনি। এই সিজদা কি রুকু সিজদায় আদায়ের কোন সুযোগ আছে? বিস্তারিত জানতে আগ্রহী।
উত্তর: কুরআন মজীদে হানাফী মাযহাব মোতাবেক ১৪ টি আয়াতে সিজদা রয়েছে। উক্ত আয়াতসমূহ নামাযের ভিতরে বা বাহিরে তেলাওয়াত করা হলে বা শ্রবণ করলে তেলাওয়াতকারী ও শ্রবণকারী উভয়ের উপর তেলাওয়াতের সিজদা দেওয়া ওয়াজিব। সিজদার আয়াত নামাযে তেলাওয়াত করা হলে তৎক্ষণাৎ সিজদা করা ওয়াজিব। ইচ্ছাকৃত দেরী করা হলে গুনাহ্গার হবে। তেলাওয়াতে সিজদার কথা ভুলে গেলে যতক্ষণ পর্যন্ত নামাযের অবস্থায় থাকবে তথা নামাযকে ভঙ্গ করে এমন কাজ না করলে ওই সময়ে উক্ত সিজদায়ে তেলাওয়াত আদায় করবে। যদিও নামাযের সালাম ফিরিয়ে ফেলা হয়- তারপর সাহু সিজদা করবে। নামাযে আয়াতে সিজদা পাঠ করা হলে উক্ত সিজদা নামাযেই আদায় করতে হবে। নামাযের বাইরে আদায় করলে হবে না। ইচ্ছাকৃতভাবে তেলাওয়াতে সিজদা আদায় করা না হলে গুনাহ্গার হবে এবং তাওবা করতে হবে। আর যদি নামাযের কেরাতে আয়াতে সিজদা পাঠের সাথে সাথে ইমাম বা হাফেজ সাহেব রুকু সিজদা করে, তখন উক্ত রুকু ও সিজদার দ্বারা তেলাওয়াতে সিজদার হুকুম আদায় হয়ে যাবে। নামাযে আয়াতে সিজদা তিলাওয়াতের সাথে সাথে রুকু করা না হলে আয়াতে সিজদার জন্য পৃথকভাবে সিজদা করা আবশ্যক। ইচ্ছাকৃতভাবে সিজদায়ে তেলাওয়াত ছেড়ে দেওয়া অপরাধ। সুতরাং নামাযে তারাবীহর খতমে কুরআনে কোন হাফেজ সাহেব নামাযের মধ্যেই ইচ্ছাকৃত সিজদায়ে তেলাওয়াত না দিলে সে আল্লাহর দরবারে মারাত্মক অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবে এবং তার জন্য তাওবা করা আবশ্যক হবে। আর যদি তা ভুলবশতঃ না করে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করে ফেলে তখন ইমাম বা হাফেজ সাহেব আন্তরিকভাবে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। [দুররুল মোখতার, ও রদ্দুল মুহতার ইত্যাদি]

মুহাম্মদ রাকিব
শাহরাস্তি, চাঁদপুর, কুমিল্লা।
প্রশ্ন: মৃত আত্মীয় স্বজনকে স্বপ্ন দেখলে করণীয় কি? বিস্তারিত জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
উত্তর: সহীহ্ বোখারী শরীফে রয়েছে- عن قتادة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال الرويا من الله والحلم من الشيطان (رواه البخارى) অর্থাৎ জলীলুল কদর সাহাবী হযরত আবু কাতাদাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, উত্তম স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ হতে এবং খারাপ বা মন্দ স্বপ্ন হয়ে থাকে শয়তানের পক্ষ থেকে।
[সহীহ্ বুখারী শরীফ, কিতাবুত তাওহীদ]
আর মন্দ স্বপ্ন দেখলে তার সম্পর্কে হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে, যদি কেউ মন্দ স্বপ্ন দেখে তার জন্য শয়তানের ক্ষতি করা হতে সে আল্লাহর আশ্রয় চেয়ে নেবে এবং তিনবার বাম-দিকে থুথু নিক্ষেপ করবে এবং কারো নিকট তা প্রকাশ করবে না, তাহলে সে ক্ষতি হতে রক্ষা পাবে। [সহীহ্ বুখারী শরীফ, কিতাবুত্ তাবারী]
মৃত আত্মীয়-স্বজন অথবা মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখা প্রসঙ্গে প্রখ্যাত তাবেয়ী ও বিখ্যাত স্বপ্ন ব্যাখ্যাকারী আল্লামা ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সীরিন রাহমাতুল্লিাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন, যদি স্বপ্নে কেউ মৃত ব্যক্তিকে দেখে তাহলে তাকে যে অবস্থায় দেখবে সেটাই বাস্তব বলে ধরা হবে। কারণ সে (মৃত ব্যক্তি) এমন জগতে অবস্থান করছে যেখানে সত্য ব্যতীত আর কিছুই নেই। মৃত ব্যক্তিকে যা করতে বা বলতে শুনবে সেটাই সত্য বলে ধরা হবে। তবে যদি কেউ মৃত ব্যক্তিকে ভালো পোশাক পরিহিত অবস্থায় বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী দেখে তাহলে বুঝতে হবে যে মৃত ব্যক্তি ভাল অবস্থায় আছেন। আর যদি জীর্ণ, শীর্ণ, অস্বাস্থ্যবান বা খারাপ পোশাকে দেখে তাহলে বুঝতে হবে পরকালে তার অবস্থা তেমন ভালো নয়। তখন তার জন্য বেশি বেশি মাগফিরাত কামনা ও দোয়া-প্রার্থনা, দান-সদকা করবে। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে তাঁর জীবদ্দশায় স্বপ্ন দেখলাম যে তার ইন্তেকালের সংবাদ তাকে জানাব, এটা কি করে হয়? কিন্তু এর কয়েক দিন পরে স্বপ্নটা সত্যি হয়ে গেল, আমিরুল মু’মিনিন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু শহীদ হয়ে গেলেন। উল্লেখ্য, পরবর্তী জগৎটা সত্য আর সত্য জগত হতে যা আসে তা মিথ্যা হতে পারে না। তবে যিনি এ ধরনের স্বপ্ন দেখে তার ঈমান ও আমল সুন্দর হতে হবে।
[তাবীরুর রুইয়া, কৃত. আল্লামা ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সিরীন রহ.]

কাজী আসমা তাহের পেশওয়া
শিক্ষার্থী- জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মহিলা ফাযিল মাদরাসা,
ষোলশহর, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: আমরা যুগ যুগ ধরে খতমে গাউসিয়া শরীফ আদায় হতে দেখেছি, বর্তমানে গাউসিয়া আলিয়া নামক অন্য দাওয়াত প্রচলন হয়েছে, এটা পড়াতে পারব কি? কোনটার ফজিলত কি? জানানোর বিনীত অনুরোধ করছি।
উত্তর: গাউসে পাক, পীরানে পীর দস্তগীর, মাহবুবে সুবহানী, কুতবে রব্বানী পীর মীর শেখ মহিউদ্দীন আব্দুল কাদের জিলানী বড়পীর কর্তৃক প্রবর্তিত ও মাশায়েখ হযরাতের নিদের্শিত অতি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ আমল হচ্ছে খতমে গাউসিয়া শরীফ। খতমে গাউসিয়া শরীফ মূলত পবিত্র কুরআন শরীফের অতি ফযিলতপূর্ণ সূরা, আয়াত বা আয়াতের অংশ এবং হাদীসে পাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যে সমস্ত দোয়া ও অজিফা শিক্ষা দিয়েছেন সেগুলো তেলাওয়াত ও পাঠ করার মাধ্যমে যে খতম শরীফ আদায় করা হয় তাকে খতমে গাউসিয়া শরীফ বলা হয়। সকল পীর ভাই মিলে খতমে গাউসিয়া আদায় করবেন এটাই উত্তম। তাছাড়া খতমে গাউসিয়া শরীফ আদায়ের পাশাপাশি অন্যান্য খতমাত আদায় করতে অসুবিধা নেই। তবে আমাদের মাশায়েখ হযরাত যেভাবে খতমে গাউসিয়ার তারতিব ও নিয়ম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যা আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট কর্তৃক প্রকাশিত সাজরা শরীফে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাতে ফয়েজ-বরকত বেশী। তা আদায় করে অন্যান্য তারতিব ও নিয়ম মোতাবেক যে কোন খতম আদায় করতে অসুবিধা নেই। এগুলো নফল ও মুস্তাহাব ইবাদত। মুহাব্বত ও আন্তরিকতার সাথে আদায় করলে বরকত ও সওয়াব পাওয়া যায় নিঃসন্দেহে।

মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
ঈশ্বরদী, পাবনা।
প্রশ্ন: সরকারী-বেসরকারী অফিস ও শিল্প কারখানায় প্রভিডেন্ট ফান্ড নামে টাকা জমা রাখার ব্যবস্থা চালু আছে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের যাকাত দিতে হবে কিনা? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: প্রভিডেন্ট ফান্ডের মূল ও অতিরিক্ত টাকা হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর তাই হস্তগত হওয়ার পর বিগত বছরের যাকাত দিতে হবে না। সরকারী বা বেসরকারী যে কোন প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানা ইত্যাদিতে বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডে যে টাকা কেটে রেখে দেয়া হয় বা জমা রাখা হয় তা উঠিয়ে ফেলার কোন প্রকার সুযোগ যদি চাকুরিজীবীর না থাকে তাহলে উক্ত ফান্ডের জমাকৃত টাকার উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। যাকাত দিতে হবে না। যেহেতু উক্ত টাকার মালিকানা উক্ত কর্মচারী/চাকুরীজীবীর সাব্যস্থ হয়নি। পক্ষান্তরে যদি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা যদি স্বেচ্ছায় জমা রাখে অর্থাৎ ইচ্ছে করলেই উক্ত জমাকৃত টাকা চাকরিজীবী তুলে ফেলতে পারে বা সক্ষম, তাহলে উক্ত টাকার ওপর যাকাত ফরয। যাকাত দিতে হবে। প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাকৃত টাকা খরচ করার ব্যাপারে চাকুরিজীবীর স্বাধীনতা থাকলে অর্থাৎ যেকোন সময় উঠানো সম্ভব হলে যাকাত দিতে হবে। আর স্বাধীনতা না থাকলে যখন হস্তগত হবে তখন যাকাত দিতে হবে। কারণ সম্পদের যাকাত ফরয হওয়ার কয়েকটি শর্তের মধ্যে একটি অন্যতম শর্ত হল- সম্পদের ওপর মালিকের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা। সুতরাং প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা হস্তগত হওয়ার উপর ১ বছর পূর্ণ হলে তা যদি নিসাব পরিমাণ হয় তবে যাকাত দিতে হবে। [ফিকহুস্ সুন্নাহ্, ১ম খন্ড, ৩৯৫পৃ. আল বাহরুর রায়েক, ২য় খন্ড, পৃ. ২০৭ ইত্যাদি]

সাজেদা বেগম
পটিয়া পৌরসভা, ট্টগ্রাম
প্রশ্ন: মুসলিম মেয়েরা পায়ে মেহেদি ব্যবহার করতে পারবে কিনা?
উত্তর: শোভা বর্ধনের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদী লাগানো পুরুষের জন্য বৈধ নয়। তবে পুরুষগণ চুলে ও দাঁড়িতে ব্যবহার করতে পারবে। আর মহিলারা হাতে, পায়ে ও চুলে মেহেদী লাগাতে পারবে এতে কোন অসুবিধা নেই। কেউ কেউ মহিলাদের পায়ে মেহেদী ব্যবহার মাকরুহ বললেও, ‘আশবাহ্ ওয়ান্ নাযায়ের সহ প্রসিদ্ধ অনেক কিতাবে মহিলাদের পায়ে মেহেদী লাগানো জায়েজ বা বৈধ বলা হয়েছে। [যুগজিজ্ঞাসা ও মাসিক তরজুমান]

প্রশ্ন: আযান কখন কিভাবে প্রচলন হয়? আযানের হুকুম বর্ণনা করার নিবেদন রইল।
উত্তর: আযানের প্রচলন হিজরতের প্রথম বছর শুরু হয়েছে। আযান উম্মতে মুহাম্মদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য, ইসলামের নিদর্শন ও সারমর্ম। এতে তৌহিদ, রিসালত ও আমলের উল্লেখ রয়েছে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য পাঁচবার আযান দেয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আযানের শব্দগুলো মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা এবং এর জবাব দেয়া মুস্তাহাব। আযান শুনে মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায আদায় করা ওয়াজিব। আযানের প্রচলন সম্পর্কে হাদীস শরীফের বিভিন্ন কিতাবে লম্বা একটি হাদীসে পাক পরিলক্ষিত হয়। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে যায়িদ আবদে রাব্বিহী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ঘন্টা বাজানোর নির্দেশ দিলেন, যাতে তা নামাযের জন্য একত্রিত হতে মানুষের উদ্দেশ্যে বাজানো হয়। তখন স্বপ্নে আমার কাছে একজন লোক উপস্থিত হল, যে নিজের হাতে একটা ঘন্টা ধারণ করছিল। আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর বান্দা, এ ঘন্টাটি তুমি বিক্রয় করবে কি? সে বলল, এটা দিয়ে তুমি কি করবে? আমি বললাম, এর দ্বারা আমরা নামাজের জন্য আহ্বান করব। সে বলল, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম পদ্ধতি বলে দিব না? আমি বললাম হ্যাঁ, হযরত আব্দুল্লাহ্ বলেন, তখন সে আল্লাহু আকবর থেকে শুরু করে আযানের শেষ পর্যন্ত সবগুলো শব্দ বলল, এভাবে একামতেরও। যখন আমি ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম এবং রাতে যা দেখেছি তা তাঁকে বললাম, তখন তিনি বললেন, ইনশা-আল্লাহ্ এটি সত্য স্বপ্ন। যাও বেলালের নিকট গিয়ে তাকে বলে দাও যা তুমি দেখেছ সে শব্দাবলী দ্বারা যেন সে আযান দেয়, কেননা সে তোমার অপেক্ষা উচ্চ কণ্ঠস্বরের অধিকারী। সুতরাং আমি বেলালের সাথে গেলাম আর তাকে উক্ত শব্দাবলী বললাম। অতঃপর তিনি (হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) তা দ্বারা আযান দিলেন। আবদুল্লাহ্ বলেন, হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ঘর থেকে এ আযান শুনলেন আর নিজের চাদর টানতে টানতে বের হয়ে আসলেন এবং বলতে লাগলেন- والذى بعثك بالحق يا رسول الله لقد رأيت مثل مارأى فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم فلله الحمد ـ অর্থাৎ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ করে বলছি, আমিও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি, যা তাকে দেখানো হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন। [আবূ দাউদ, দারেমী, ইবনে মাজাহ্ ও তিরমিযি শরীফ এবং মিশকাত, পৃ. ৬৪]

আযানের ফযিলত অনন্য। কেননা হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে- عن جابر قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان الشيطان اذا سمع النداء بالصلاة ذهب حتى يكون مكان الروحاء وقال الراوى والروحاء من المدينة ستة وثلاثون ميلاً অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। নিশ্চয় শয়তান যখন নামাযের আযান শুনে তখন সে পালাতে থাকে, যে পর্যন্ত রাওহা নামক জায়গায় পৌঁছে। রাবী বলেন রাওহা হলো মদিনা শরীফ হতে ৩৬ মাইল দূরে। [মুসলিম শরীফ]
অপর হাদীস পাকে উল্লেখ রয়েছে, যে ব্যক্তি সাত বছর যাবৎ কেবল সাওয়াবের উদ্দেশ্যে আযান দিবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লিপিবদ্ধ করা হয়। [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, আবু দাউদ ও মিশকাত শরীফ, পৃ. ৬৫পৃ.]
তাছাড়া যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে আযান দেন আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন।

মুহাম্মদ বেলাল উদ্দীন (ইলহাম কাদেরী)
আলিম ২য় বর্ষ, শাহচান্দ আউলিয়া কামিল মাদরাসা,
পটিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: নামাযে কিরাত উল্টোভাবে তেলাওয়াত করার হুকুম বর্ণনা করলে উপকৃত হব।
উত্তর: কুরআন মজীদ উল্টোভাবে তেলাওয়াত করা অর্থাৎ ১ম রাকাতে পরবর্তী সূরা পড়া আর ২য় রাকাতে তার পূর্ববর্তী সূরা পড়া অত্যন্ত গুনাহ। যেমন প্রথমে সূরা ইখলাস আর ২য় রাকাতে সূরা লাহাব পড়া অথবা সূরার আয়াতের অংশ উল্টোভাবে তেলাওয়াত করাও এই হুকুম। উল্টোভাবে কুরআন শরীফ পড়ার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি উল্টো দিক থেকে কুরআন পড়ে সে কি এ ভয় করে না যে, আল্লাহ্ তার অন্তর উল্টো করে দেবেন। [বাহারে শরীয়ত]
যদি ইমাম ভুলবশত তরতীবের বিপরীত (উল্টোভাবে) কিরাত পড়ে, তবে এতে না গুনাহ্ আছে, না এ জন্য সাজদায়ে সাহু দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না বরং নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। আর ইচ্ছাকৃত করে থাকলে তাওবা করবে এবং ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক থাকবে।

প্রশ্ন: মহল্লা ভিত্তিক জামে মসজিদে রমজান মাসে ই’তিকাফ থাকা বাধ্যতামূলক কিনা?
উত্তর: রমজান শরীফের শেষ দশ দিন ইতিকাফ পালন করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়া, কোন একজন মহল্লার পক্ষ হতে পালন করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষে আদায় হয়ে যাবে। আর ১জনও ইতিকাফ না করলে সকলেই গুনাহ্গার হবে। [দুররে মুখতার, ২/৪৪০পৃ.]
ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান মসজিদুল হারাম, এরপর মসজিদে নববী, এরপর মসজিদে আকসা, এরপর জুমআ মসজিদ এবং মহল্লার যেসব মসজিদে নিয়মিত পঞ্জেগানা নামায জামাত সহকারে আদায় করা হয় এবং ইমাম নিযুক্ত আছেন।

মুহাম্মদ করিম উদ্দীন / মুহাম্মদ নুরুজ জমান/ মুহাম্মদ আবু তাহের
আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: আমার পিতা মরহুম আহমদ হোসাইন আনোয়ারা, জেলা- চট্টগ্রাম ১০ গন্ডা বা ২০ শতক সম্পত্তি ফোরকানিয়া মাদরাসার নামে ‘ফি সাবিলিল্লাহ্’ ওয়াক্ফ করে ইন্তেকাল করেছেন। উক্ত ফোরকানিয়া মাদরাসা বেশ কয়েক বছর সুন্দরভাবে কুরআন শিক্ষাসহ নামায-কালাম আদায় করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমার এলাকার কিছু গন্যমান্য ব্যক্তি উক্ত ফোরকানিয়া মাদরাসাটি পরিচালনা করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিগত কয়েক বছর আগ থেকে ফোরকানিয়া মাদরাসা সুন্দরভাবে তারা পরিচালনা করছেন না বিধায় বিগত কয়েক বছর ধরে উক্ত ফোরকানিয়া মাদরাসায় লেখা-পড়া, কুরআন শিক্ষা ও নামায-কালাম আদায় বন্ধ আছে। সুতরাং আমি আমার ছেলে-সন্তান, এলাকাবাসী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে উক্ত বারখাইন ফোরকানিয়া মাদরাসাটি পুনরায় চালুর ইচ্ছা পোষণ করেছি। এবং সাথে সাথে আমাদের এলাকায় ও আমাদের পাড়ায় যেহেতু মসজিদ নাই সেহেতু জামাআত সহকারে নামায আদায় করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। তাই এলাকাবাসী ও সকলের সম্মতিক্রমে ফোরকানিয়া মাদরাসার পার্শ্বে আমার মরহুম পিতার ওয়াকফকৃত ‘ফি সাবিলিল্লাহ্’র সম্পত্তি ও জায়গায় আহমদ ফোরকানিয়া মাদরাসা ও জামে মসজিদ নামকরণ করে এলাকার মানুষের জামাতসহ নামায আদায় করার সুবিধার্থে সুযোগ করে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি। তৎ বিষয়ে আমাদের সমাজের পাড়ার ও এলাকাবাসীসহ কারো কোন প্রকার দ্বীমত নাই। উপরোক্ত বিষয়ে সম্মানিত ওলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজামের খেদমতে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ফতোয়া/ফায়সালার জন্য আবেদন করছি।
উত্তর: মরহুম আহমদ হোসাইন আনোয়ারা, জেলা চট্টগ্রাম ১০ গন্ডা বা ২০ শতক সম্পত্তি ফোরকানিয়া মাদরাসার নামে ‘ফি সাবিলিল্লাহ্’ ওয়াকফ কৃত জায়গায় দোকান, মার্কেট ও অফিস তথা কারো স্বীয় স্বার্থে দুনিয়াবী কোন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা ইসলামী শরীয়তের বিধান মোতাবেক শুদ্ধ ও বৈধ হবে না। যেহেতু ওয়াক্ফকারী মরহুম মীর আহমদ উক্ত ওয়াকফকৃত জমি/জায়গা বেচা-বিক্রি ও হেবা করার ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক অনুমতি নেই। তাই উক্ত ওয়াকফকৃত জায়গা শুধু মাদরাসার স্বার্থে ব্যবহার করা যাবে। বিশেষ প্রয়োজনে ওয়াক্বফকৃত জমি/জায়গা استبدال তথা তার চেয়ে উন্নত মানের জমির পরিবর্তে বদল করা শর্ত সাপেপেক্ষ ফোকাহায়ে কেরাম জায়েয বলেছেন কিন্তু ফোকাহায়ে কেরামের উক্ত অভিমত এখানে প্রযোজ্য হবে না।
নি¤েœ ফিক্বহ্ ফতোয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের উদ্ধৃতি পেশ করা হল-
১. আ’লা হযরত ইমাম শাহ্ আহমদ রেযা ফাজেলে বেরলভী (রহ.) আদদুররুল মোখতার কৃত. ইমাম আলা উদ্দিন খাচকপি হানাফী রহ.’র ‘কিতাবুল ওয়াকফ’র বরাতে ফতোয়ায়ে রজভীয়া শরীফে উল্লেখ করেন-
جو چيز جس غرض كے لۓ وقف كي گئ دوسري غرض كي طرف اسے پھيرنا جائز هے ا‏گرچه وه غرض بهى وقف هي كے فائده كي هوكه شرط واقف مثل نص شارع صلى الله عليه وسلم واجب الابتاع هے – در مختار كتاب الوقف فروع فصل شرط الواقف كنص الشارع في وجوب العمل به ولهذا خلاصة ميں تحرير فرمائي كه جو ‏گھوڑ اقتال مخالفين كے لۓ وقف هوا هوا اسے كرايه پر چلانا ممنوع وناجائز هے –
(العطايا النبوية فى الفتاوى الرضويه معروف فتاوي رضويه – ازامام اعلى حضرت شاه احمد رضا رحمة الله عليه ـ صفحه ـ ৪৫৫/৬:ج)
অর্থাৎ যে বস্তু, যে উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করা হয়েছে তা অন্য উদ্দেশ্যের দিকে নিয়ে যাওয়া/পরিবর্তন করা বৈধ হবে না। যদিও উক্ত উদ্দেশ্যে ফায়েদা ও কল্যাণ রয়েছে। যেহেতু ওয়াক্ফকারীর শর্ত হুযূর পুরনূর শারে’ (شارع) আলায়হিস্ সালামের নস বা বর্ণনা স্বরূপ যার অনুসরণ ওয়াজিব। দূররে মোখতার কিতাবুল ওয়াকফে উল্লেখ করা হয়েছে ওয়াকেফের শর্ত মোতাবেক আমল করা ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে রাসূলে পাক তথা শারে’ আলাইহিস্ সালামের বর্ণনা স্বরূপ। সুতরাং খোলাচা কিভাবে লেখা হয়েছে যে গোড়া দুশমনের (অমুসলিম) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে ওটা ভাড়ায় চালানো নাজায়েয এবং নিষিদ্ধ। [ফাতোয়ায়ে রজভীয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ. ৪৫৫]
২. ফকিহে মিল্লাত মুফতি জালাল উদ্দীন আহমদ আমজাদী (রহ.) তাঁর রচিত ‘ফতোয়ায়ে ফয়জুর রসূল’ এ একই বিবরণ উল্লেখ করেছেন।
(فتاوى فيض الرسول از فقيه ملت مفتى جلال الدين احمد امجدى رحمة الله عليه وسلم صفحه ـ ৫৫, ـ ج ـ৩ )
৩. ওয়াকফের মাসআলায় ছদরুশ শরিয়া মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ আলী রহ. বলেন,
بل نص العلماء قاطبة ان الوقف لايحول الى غير ماهو وقف عليه وان نص الواقف كنص الشارع وجوب الاتباع وان غرض الواقفين واجب اللحاظ قال فى الجوهرة النيرة صفة التعدى ان يستعملها غير ما وقف له انتهى فاذا كان هذا فى عامة الاوقاف فكيف فى المسجد (رسالة قامع الواهيات من جامع الجزئيات لصدر الشرعية المفتى امجد علي رحمة الله عليه) فتاوى امجديه ـ صفحه ـ ৫৫ـ ج ـ ৩
অর্থাৎ ওলামায়ে কেরামগণ দৃঢ়ভাবে বর্ণনা করেছেন, যে উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করা হয়েছে তা ছাড়া অন্য দিকে ওয়াকফকে পরিবর্তন করা যাবে না। যেহেতু ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে ওয়াকফকারীর বর্ণনা শারে’ আলায়হিস্ সালাম-এর বর্ণনা স্বরূপ, আর ওয়াকেফগণের উদ্দেশ্যে লেহাজ করা ওয়াজিব পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। ‘আল জাওহারাতুন নাইয়ারা’ কিতাবে আছে, যে উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করা হয়েছে তার পরিবর্তে অন্য উদ্দেশ্যে ওয়াকফকৃত বস্তু ব্যবহার করা সীমালঙ্ঘন। সাধারণ ওয়াকফের ক্ষেত্রে যদি এ বিধান হয় তবে মসজিদের জন্য ওয়াকফের ক্ষেত্রে কি বিধান হবে?
[ফতোয়ায়ে আমজাদীয়া, পৃ. ৫৫, খন্ড-৩]
সুতরাং ওয়াক্বফকারী মরহুম আহমদ হোসাইন এর ওয়াকফ অনুযায়ী তার পার্শ্বে খালি জায়গায় এলাকাবাসীর নামাযের সুবিধার্থে ফোরকানিয়া মাদরাসার সাথে খালি জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করতে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক অসুবিধা নেই।
দীর্ঘদিন যাবৎ কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি নামায কালাম আদায় করা হয়েছে তাই আহমদ হোসাইন ফোরকানিয়া মাদরাসা ও জামে মসজিদ নামে পুনঃনির্মাণ করা যাবে। উপরোক্ত বিষয়ে এটাই ইসলামী শরীয়তের ফতোয়া/ফায়সালা। অবশ্য ফোরকানিয়া মাদরাসা বিলুপ্ত করে শুধু মসজিদ নির্মাণ করলে ওয়াকফকারীর উদ্দেশ্য আদায় হবে না, বিধায় তখন আপত্তি আসবে। তদুপরি উক্ত ফোরকানিয়া মাদরাসা ও মসজিদ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য ফোরকানিয়া মাদরাসা ও মসজিদের স্বার্থে ওয়াকফকৃত খালি জায়গায় দোকানপাট, ইমাম/মোয়াজ্জিনের থাকার ঘর ও ফোরকানিয়া মাদরাসা ও মসজিদের আসবাব পত্র রাখার ঘর ইত্যাদি নির্মাণ করা যাবে।

দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা  একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে
 প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তরদাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা:
প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।

Share:

Leave Your Comment